দ্য লায়ন কিং (২০১৯-এর চলচ্চিত্র)
দ্য লায়ন কিং ২০১৯ সালের জন ফ্যাভেরু পরিচালিত এবং প্রযোজিত জেফ নাথানসন রচিত এবং ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স প্রযোজিত একটি আমেরিকান সংগীত-বহুল কাহিনী চিত্র । এটি ডিজনির ঐতিহ্যবাহী অ্যানিমেটেড চিত্র ১৯৯৪ সালের একই নামে চলচ্চিত্র এর একটি ফটোরিয়ালিস্টিক কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড পুনর্নিমাণ। ছবিতে ডোনাল্ড গ্লোভার, শেথ রোজেন, চিয়েটেল ইজিওফোর, আলফ্রে উডার্ড, বিলি আইচনার, জন কানি, জন অলিভার, ফ্লোরেন্স কাসুম্বা, এরিক আন্দ্রে, কেগান-মাইকেল কী, জেডি ম্যাকক্রি, শাহাদি রাইট জোসেফ, এবং বেওনস নেওয়েলস-কার্টার প্রমুখের কণ্ঠস্বর ব্যবহৃত হয়েছে। পাশাপাশি মূল চলচ্চিত্রের জেমস আর্ল জোনস এর কন্ঠও ব্যবহৃত হয়েছে। একটি তরুণ সিংহ সিম্বা তার কাকা স্কার এর হাতে নিহত তার বাবা মুফাসার হত্যার পরে তার স্বদেশে ফিরে বৈধ রাজ্য উদ্ধার করার কাহিনী এই চিত্রটির মূল উপজীব্য।
দ্য লায়ন কিং | |
---|---|
পরিচালক | জন ফ্যাভেরু |
প্রযোজক |
|
চিত্রনাট্যকার | জেফ নাথানসন |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | হ্যান্স জিমার |
চিত্রগ্রাহক | কালেব দেশচানেল |
সম্পাদক |
|
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
পরিবেশক | ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওস মোশন পিকচার্স |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১৮ মিনিট[১] |
দেশ | যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরাজী |
নির্মাণব্যয় | $২৫০–২৬০ মিলিয়ন[২][৩] |
আয় | $১.৬৫৭ বিলিয়ন[৪] |
১৯৯৪ সালের ছবি দ্য লায়ন কিং এর পুনর্নিমাণের পরিকল্পনা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নিশ্চিত করা হয়। ততো দিনে ডিজনি তাঁদের পুনর্নির্মিত দ্য জঙ্গল বুক (২০১৬) বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পায় এবং সে ক্ষেত্রেও ফ্যাভেরু পরিচালনা করেছিলেন। ফ্যাভেরু ব্রডওয়ে অভিযোজন-এ কয়েকটি চরিত্রের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং মূল চলচ্চিত্রের গল্পের উপাদানের ভিত্তিতে কাহিনীর বিকাশ সাধন করেছিলেন। মূল চরিত্রায়ণের বেশিরভাগ অংশ ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে স্বাক্ষরিত হয় এবং মূল চিত্রগ্রহণ লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি নীল পর্দার মঞ্চ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যভাগে শুরু হয়েছিল। দ্য জঙ্গল বুক এর সিনেম্যাটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত "ভার্চুয়াল-রিয়েলিটি সরঞ্জামগুলি" দ্য লায়ন কিং-এর চিত্রগ্রহণের সময় আরও বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছিল। সুরকার হান্স জিমার, এলটন জন, এবং গীতিকার টিম রাইস যাঁরাই মূলের সাউন্ডট্র্যাকে কাজ করেছিলেন তাঁদেরও স্কোর রচনায় নোয়েলস-কার্টারের পাশাপাশি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। নোয়েলস-কার্টার পুনর্নির্মাণে জনকে সহায়তা করেছিলেন। তিনি সাউন্ডট্র্যাক এবং চলচ্চিত্রের জন্য একটি নতুন গান লিখেছিলেন যার শিরোনাম ছিল "স্পিরিট" যাতে তিনিই কন্ঠদান করেছিলেন। চলচ্চিত্রটিতে চূড়ান্ত কৃতিত্ব হিসাবে অবদান রাখেন সম্পাদক মার্ক লিভোলসি এবং চিত্রটি তাঁর স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত। প্রায় ২৬০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত এই ছবিটি এখনও পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান লাভ করেছে।
চলচ্চিত্রটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় ১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে। বিশ্বজুড়ে এটি $১.৬ বিলিয়ন ডলারের উপর অর্জন করে ফ্রোজেন এর রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়ে সর্বকালের সর্বাধিক উপার্জনকারী অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রর তখমা লাভ করেছে। এটি ২০১৯ সালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ-উপার্জনকারী চলচ্চিত্র এবং সর্বকালের সপ্তম-সর্বোচ্চ সম্মান লাভ করেছে। চলচ্চিত্রটি তার ভিজ্যুয়াল এফেক্টস, সংগীত এবং কণ্ঠ-অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। তবে সমালোচকদের কাছ থেকে ছবিটি মিশ্র পর্যালোচনা পেয়েছে (বিশেষত রোজেন এবং আইচনার) এবং মৌলিকত্বের অভাব এবং চরিত্রগুলির মুখের আবেগের জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। [৬] চলচ্চিত্রটি ৭৭ তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং ২৫ তম সমালোচকদের পছন্দ পুরস্কার এর জন্য সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম এবং মূল সঙ্গীত বিভাগের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। [৭] ভিজ্যুয়াল এফেক্টের জন্য চিত্রটি ৭৩ তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৯২ তম একাডেমি পুরস্কার জন্যও মনোনীত হয়েছিল।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয় যে ব্যারি জেনকিনস কর্তৃক সরাসরি সংযুক্ত একটি ফলো-আপ ফিল্মের বিকাশ সাধন চলছে।[৮]
পটভূমি
সম্পাদনাআফ্রিকার প্রাইড ল্যান্ডস-এ প্রাইড রক থেকে এক গর্বিত সিংহ প্রাণীজগতের উপরে রাজত্ব করে। রাজা মুফাসা এবং রানী সরাবির নবজাতক পুত্র সিম্বা কে রাজ্যের ওঝা এবং উপদেষ্টা রাফিকি ম্যান্ড্রিল সমবেত প্রাণীদের সামনে উপস্থাপন করে।
মুফাসা সিম্বাকে প্রাইড ল্যান্ড দেখায় এবং তাকে রাজত্বের দায়িত্ব এবং "জীবন চক্র" ব্যাখ্যা করে যাতে সমস্ত জীব সংযুক্ত রয়েছে। মুফাসার ছোট ভাই স্কার মুফাসা ও সিম্বাকে সিংহাসন থেকে হটানোর পরিকল্পনা করে এবং চক্রান্ত করে যাতে সে রাজা হতে পারে। সে সিম্বা এবং তার প্রিয় বন্ধু নালা কে নিষিদ্ধ হাতিদের কবরস্থান অন্বেষণ করার জন্য কৌতুহলী করে। সেখানে নির্মম শেহ্নজির নেতৃত্বে হায়েনারা তাদের আক্রমণ করে। মুফাসাকে তার বাজারসরকার হর্নবিল জাজু এই ঘটনার বিষয়ে সতর্ক করে এবং শাবকগুলিকে উদ্ধার করে। সিম্বার উপর বিরক্ত হলেও মুফাসা তাকে ক্ষমা করে এবং ব্যাখ্যা করে যে অতীতের মহান রাজারা রাতের আকাশ থেকে তাদের উপরে নজর রাখে। সেখান থেকে মুফাসাও একদিন সিম্বার উপরে নজর রাখবে। এদিকে হায়েনাদের সাথে স্কার দেখা করে এবং প্রাইড ল্যান্ডের ভূমিতে তাদের শিকারের অধিকারের বিনিময়ে মুফাসাকে উৎখাত করতে সহায়তা করার জন্য তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়।
স্কার তার দাদা এবং ভাইপোর জন্য একটি ফাঁদ পাতে। সিম্বাকে একটি ঘাটে প্রলুব্ধ করে আনে এবং হায়েনাদের দিয়ে এক দল ওয়াইল্ডবিষ্টের পালকে তার দিকে চালিত করে যাতে সিম্বা তাদের পদদলিত হয়ে পিষ্ট হয়ে যায়। রাজা তার ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যাবে জেনে স্কার সিম্বার বিপদ মুফাসাকে জানিয়ে দেয়। মুফাসা সিম্বাকে বাঁচায় কিন্তু ঘাটের কিনারায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলতে থাকে এবং স্কার মুফাসাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করে। পরিবর্তে মুফাসাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তারপরে সে সিম্বাকে বোঝায় যে এই দুর্ঘনায় সিম্বার নিজস্ব দোষ রয়েছে এবং তাকে পরামর্শ দেয় রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে ও কখনই ফিরে না আসতে। নিভৃতে সে হায়েনাদের বাচ্চাটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সিম্বা পালিয়ে যায়। স্কার প্রাইড ল্যান্ডে বলে যে মুফাসা এবং সিম্বা দুজনই হতাহতের ঘটনায় মারা গিয়েছে এবং নতুন রাজা হিসাবে নিজে এগিয়ে যায়। শেহ্নজির বংশকে প্রাইড ল্যান্ডে থাকার অধিকার দেওয়া হয়।
অবসন্ন সিম্বা একটি মরুভূমির মধ্যে নিঃশেষে পড়ে রয়েছে দেখা যায় এবং টিমন ও পুমবা (যথাক্রমে একটি মিরক্যাট এবং ওয়ার্টশূকর) তাকে উদ্ধার করে। সিম্বা তার দুই নতুন বন্ধু এবং তাদের মরূদ্যানে অন্যান্য প্রাণীদের সাথে বেড়ে উঠতে থাকে। তারা "হাকুনা মাতাতা" (সোয়াহিলি ভাষায় অর্থ "কোনও উদ্বেগ নেই") এর মূলমন্ত্রে একটি নির্লিপ্ত জীবনযাপন করত।
এখন এক অল্প বয়স্ক ক্ষুধার্ত সিংহীর হাত থেকে সিম্বা টিমন ও পুমবাকে উদ্ধার করে। এই সিংহীই আসলে এখনকার নালা। নালা এবং সিম্বা পুনরায় মিলিত হয়ে প্রেমে পড়ে এবং সে তাকে দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানায়। সে বলে যে প্রাইড ল্যান্ড স্কারের শাসনাকালে খরা-জর্জরিত জঞ্জাল হয়ে উঠেছে। বাবার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষী বোধ করে সিম্বা ফিরে যেতে অস্বীকার করে। তারপরে মুখোমুখি হয় রাফিকির। রাফিকি বলে যে মুফাসার আত্মা সিম্বায় বেঁচে আছে। রাতের আকাশে মুফাসার ভূত সিম্বার সাথে দেখা করতে আসে এবং তাকে বলে যে তাকে অবশ্যই রাজা হিসাবে তার যথাযথ স্থানটি গ্রহণ করতে হবে। অতীতে আর ফিরে যেতে পারবে না বুঝতে পেরে সিম্বা প্রাইড ল্যান্ডসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বন্ধুদের সহায়তায় সিম্বা প্রাইড রকে হায়েনাদের পাশ কাটিয়ে লুকিয়ে স্কারের মুখোমুখি হয়। তখন সরাবীর সাথে তার সংঘাত চলছিল। মুফাসার মৃত্যুতে সিম্বার ভূমিকার জন্য স্কার সিম্বার বিরুদ্ধে কটূক্তি করে এবং তাকে পাথরের কিনারায় নিয়ে যায়। সেখানেই স্কার মুফাসাকে খুন করেছিল বলে সিম্বার কাছে প্রকাশ করে। ক্ষুব্ধ হয়ে সিম্বা প্রাইড ল্যান্ডের বাকি অংশের কাছে এই সত্যটি প্রকাশ করার চেষ্টা করে। টিমন, পুমবা, রাফিকি, জাজু এবং সিংহীরা হায়েনাদের প্রতিরোধ করতে থাকে। কোণঠাসা স্কার ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং হায়েনাদের উপর তার অপরাধের সব দোষ চাপিয়ে দেয়। সিম্বা তার জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে তবে তাকে চিরতরে প্রাইড ল্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। স্কার হঠাৎ সিম্বাকে আক্রমণ করে। তবে সংক্ষিপ্ত লড়াইয়ের পরে সিম্বা তাকে খাঁড়াই থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। স্কার পড়ে যাওয়ার পরেও বেঁচে ছিল কিন্তু হায়েনারা আক্রমণ করে তাকে মেরে ফেলে। এরপরে সিম্বা রাজত্বভার গ্রহণ করে এবং নালাকে তার রানী করে।
প্রাইড ল্যান্ডস আবার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সাথে সাথে রাফিকি সিম্বা এবং নালার নবজাতক শাবককে জড়ো হওয়া প্রাণীদের সামনে উপস্থাপন ক'রে জীবন বৃত্তকে অব্যাহত রাখে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "The Lion King (PG)"। British Board of Film Classification। জুলাই ৪, ২০১৯। জুলাই ২১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ Giardina, Carolyn (জুলাই ১৯, ২০১৯)। "The Lion King' "Virtual Production" Could Be a Game-Changer for Filmmaking"। The Hollywood Reporter। আগস্ট ১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২, ২০১৯।
- ↑ D'Alessandro, Anthony; Tartaglione, Nancy (জুলাই ১৬, ২০১৯)। "'The Lion King' Expected To Leave A Big Paw Print Around The World With $450M+ Total By Sunday – Preview"। Deadline Hollywood। জুলাই ২২, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৬, ২০১৯।
- ↑ "The Lion King (2019)"। Box Office Mojo। আগস্ট ১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২০, ২০২০।
- ↑ "The Lion King Press Kit" (পিডিএফ)। wdsmediafile.com। Walt Disney Studios। জুলাই ১০, ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ "Movie Review: 'The Lion King' remake is amazingly lifelike, lacks original's soul"। WTOP। জুলাই ১৯, ২০১৯। আগস্ট ১৭, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৭, ২০১৯।
- ↑ "Golden Globes: Full List of Nominations"। The Hollywood Reporter। ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৯, ২০১৯।
- ↑ Fleming Jr., Mike (সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০)। "'The Lion King' Followup Set With 'Moonlight' Director Barry Jenkins To Helm For Walt Disney Studios"। Deadline Hollywood। সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০।