দ্য গডফাদার (চলচ্চিত্র ধারাবাহিক)
দ্য গডফাদার চলচ্চিত্র ক্রমানয়ে তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য অপরাধমূলক চলচ্চিত্রের সমন্বয়ে তৈরী। ইতালীয়-মার্কিন সাহিত্যিক মারিও পুজো রচিত দ্য গডফাদার উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তিনটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। চলচ্চিত্রগুলি মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৯৭২[১], ১৯৭৪[২] এবং ১৯৯০[৩] সালে। তিনটি চলচ্চিত্রেরই মূল কাহিনী কাল্পনিক কর্লিয়নি মাফিয়া পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত। তিনটি চলচ্চিত্রই তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। চলচ্চিত্র ত্রয় এর প্রথম পর্বটিকে সর্বসময়ের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয়।[৪] চলচ্চিত্র ত্রয় যৌথভাবে নয়টি[৫][৬] একাডেমী পুরস্কার পায়।
দ্য গডফাদার | |
---|---|
পরিচালক | ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা |
প্রযোজক | ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা (২–৩) আলবার্ট এস. রুডি (১) গ্রে ফ্রেডরিকসন (২) ফ্রেড রুজ (২) ফ্রেড ফুকস (৩) |
রচয়িতা | মারিও পুজো ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা রবার্ট টাউন (১) |
উৎস | মারিও পুজো কর্তৃক দ্য গডফাদার |
সুরকার | নিনো রোতা কারমাইন কপোলা |
চিত্রগ্রাহক | গর্ডন উইলিস |
সম্পাদক | পিটার জিনার (১–২) ব্যারি মালকিন (২–৩) উইলিয়াম এইচ. রেনল্ডস (১) রিচার্ড মার্কস (২) লিসা ফ্রুটম্যান (৩) ওয়াল্টার মার্চ (৩) |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | প্যারামাউন্ট পিকচার্স |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৫৩৯ মিনিট |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি ইতালীয় স্পেনীয় |
নির্মাণব্যয় | $৭৩.৫ মিলিয়ন |
আয় | $৫৭৪.৮ মিলিয়ন |
চলচ্চিত্র ত্রয়
সম্পাদনাদ্য গডফাদার
সম্পাদনাচলচ্চিত্র ত্রয় এর প্রথম পর্বটি হল, দ্য গডফাদার। চলচ্চিত্রটি ১৯৭২ সালের ১৫ই মার্চ মুক্তি পায়। মারিও পুজোর একই নামের উপন্যাসকে ভিত্তি করে ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটির কাহিনী শুরু হয় এভাবে, ভিটো কর্লিয়নি মাদকসম্রাট ভার্জিল সলোজ্জের মাদক সম্পর্কিত একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। যার কারণে তাকে আততায়ী দ্বারা হত্যার চেষ্টা করা হয়। ভিটো কর্লিয়নি হত্যাচেষ্টায় বেঁচে গেলেও গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এমতাবস্তায় তার বড় ছেলে সনি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এরমধ্যে ছোট ছেলে মাইকেল ভার্জিল সলোজ্জ এবং একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে হত্যা করে, যার কারণে তাকে আমেরিকা ছেড়ে সিসিলিতে পালিয়ে যেতে হয়। মাইকেল আবার আমেরিকায় ফিরে যায় তার বড় ভাই সনির মৃত্যুর খবর পেয়ে। মাইকেলের প্রত্যাবর্তনের পর ভিটো কর্লিয়নি তাকে পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেন। মাইকেল পরিকল্পনা করে যে সে তার ব্যবসা লাসভেগাসে সরিয়ে নেবে। কিন্তু তার আগে সে অত্যন্ত গোপনে পরিকল্পনা করে পাঁচ পরিবারের কর্ণধারদের হত্যা করে যারা কর্লিয়নি পরিবারকে নানাভাবে ক্ষতি করায় তৎপর ছিল। এছাড়াও পার্শ্বকাহিনি হিসেবে কর্লিয়নির মেয়ের নির্যাতিত বৈবাহিক জীবন, পশ্চিমের দুনিয়ায় জনি ফন্টেনের সাফল্য, পারিবারিক ব্যবসায় ভিটোর দ্বিতীয় ছেলে ফ্রেডোর কাহিনি এসেছে।
দ্য গডফাদার পর্ব ২
সম্পাদনাদ্যা গডফাদার পর্ব ২ হলো গডফাদার চলচ্চিত্র ত্রয়ের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০শে ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালে। মারিও পুজোর উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি নির্র্মাণ করেন। ছবিটাতে একই সাথে প্রথম পর্বের আগের এবং পরের কাহিনি এসেছে। চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার সাথে সাথে পূর্বের কিছু ঘটনাও বর্ণনা করে। সংক্ষিপ্ত কাহিনী কিছুটা এরকম, মাইকেল কর্লিয়নি পরিবারের নতুন প্রধাণ এবং ১৯৫৮-১৯৫৯ এর দিকে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ আরো বিস্তৃত করার জন্য তৎপর। ছবির আরেক অংশে ফ্ল্যাশব্যাকে ১৯০১ সালের সিসিলি থেকে নিউ ইয়র্কে কর্লিয়নি পরিবার স্থাপন পর্যন্ত মাইকেলের বাবা ভিটো কর্লিয়নির কাহিনি দেখানো হয়।
দ্য গডফাদার পর্ব ৩
সম্পাদনাগডফাদার চলচ্চিত্র ত্রয়ের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হলো দ্যা গডফাদার পর্ব ৩। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯০ সালের ২৫শে ডিসেম্বর। আবারও ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা পরিচালক হিসেবে ৩য় পর্বটি পরিচালনা করতে আসেন। মারিও পুজোর সাহায্য নিয়ে চিত্রনাট্যটিও লেখেন। চলচ্চিত্রটিতে মাফিয়া সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি মাইকেল কর্লিয়নির কাহিনির সমাপ্তি দেখানো হয়। যে কিনা তার অপরাধ সাম্রাজ্যকে বৈধ করার জন্য নানা চেষ্টায় রত। বাস্তবের কিছু ঘটনার সাথে সংযোগ দেখানো হয়। যেমন, ১৯৭৮ সালে পোপ প্রথম জন পলের মৃত্যু, ১৯৮১ এবং ১৯৮২ তে পোপ আর ব্যাংকের স্ক্যান্ডাল। মাইকেল কর্লিয়নির সাথে ঘটনাগুলোর সম্পৃক্ততা দেখানো হয়।
চতুর্থ চলচ্চিত্র
সম্পাদনাতৃতীয় পর্বের সাড়া দেখে পরিচালক বলেছিলেন চতুর্থ পর্ব নিয়ে আলাপ চলছে। কিন্তু চিত্রনাট্য লিখতে পারার আগেই মারিও পুজো মারা যাওয়ায় কাজটা আর এগোয়নি। কপোলা বলেছিলেন তিনি এবং পুজো দ্বিতীয় পর্বের মত একটা পর্বের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। ভিটো কর্লিয়নি হিসেবে ডি নিরো আবার ফিরবেন। ১৯৩০ এ তরুণ সান্তিনো কর্লিয়নির সাথে মিলে ভিটো কর্লিয়নি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন। অন্য অংশে ১৯৮০ র দিকের কাহিনিতে অ্যান্ডি গার্সিয়া ভিনসেন্ট কর্লিয়নি হিসেবে থাকবেন, কাজিন মেরির মৃত্যু যাকে তখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। দশবছর ব্যাপি যুদ্ধ চালাতে চালাতে পারিবারিক ব্যবসা চালাচ্ছেন। যুদ্ধে হারতে হারতে পরিবারের ক্ষমতা এবং শ্রদ্ধা হারাচ্ছেন। মৃত্যুর আগে মাইকেল কর্লিয়নির সাথে শেষ একটা দৃশ্য থাকবে। অ্যান্ডি গার্সিয়া দাবি করেছিলেন গল্প প্রায় তৈরি আছে। সম্ভাব্য সিক্যুয়েলে পুজোর যে অংশ, ১৯৩০ এর দিকে কর্লিয়নি পরিবারের কাহিনি, সেটাকে ২০১২ সালে এড ফ্যালকো দ্য ফ্যামিলি কর্লিয়নি নামে একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসে রুপ দেন।
ভিডিও আর টেলিভিশন সংকলন
সম্পাদনামুক্তিপ্রাপ্ত তিনটি চলচ্চিত্র ছাড়াও, কপোলা এবং সম্পাদকদ্বয় ব্যারি ম্যালকিন আর ওয়াল্টার মার্চ মিলে বেশ কিছু সংকলন তৈরি করেছিলেন:
- The Godfather Saga (১৯৭৭) – প্রথম দুটো চলচ্চিত্রের উপর ভিত্তি করে সাতঘণ্টার একটা টিভি মিনিসিরিজ বানানো হয়েছিল। সেখানে কিছু বাড়তি দৃশ্যও সংযোজন করা হয়েছিল, যেগুলো চলচ্চিত্রে ছিল না।
- The Godfather 1902–1959: The Complete Epic (১৯৮১) – দ্য গডফাদার সাগার একটা ভিডিও (ভিএইচএস) সংস্করণ।
- The Godfather Trilogy: 1901–1980 (১৯৯২) – ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ এ দশঘণ্টার একটি সংস্করণ সরাসরি ভিডিওতে (ভিএইচএস এবং লেজার ডিস্ক সংস্করণ) মুক্তি দেয়া হয়। এতে তিনটি চলচ্চিত্র ছাড়াও ছিল বাড়তি দৃশ্য, যা এমনকি আগের সাগা এবং এপিকে ছিল না।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "The Godfather (1972) - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "The Godfather: Part II (1974) - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "The Godfather: Part III (1990) - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "IMDb Top 250 - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "The Godfather - Awards - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ "The Godfather: Part II - Awards - IMDb"। IMDb। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৫।