দৌলতখান
দৌলতখান বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ভোলা জেলার একটি ছোট শহর। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরটি দৌলতখান উপজেলার প্রধান শহর। প্রশাসনিক ভাবে দৌলতখান শহর দৌলতখান উপজেলার সদর দফতর।
দৌলতখান | |
---|---|
পৌরশহর ও উপজেলা সদর | |
বাংলাদেশে দৌলতখান শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৬′৪৫″ উত্তর ৯০°৪৫′০২″ পূর্ব / ২২.৬১২৫৩৩° উত্তর ৯০.৭৫০৫৪১° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | বরিশাল বিভাগ |
জেলা | ভোলা জেলা |
উপজেলা | দৌলতখান উপজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | দৌলতখান পৌরসভা |
• পৌরমেয়র | মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার [১] |
আয়তন | |
• মোট | ২.৪৯ বর্গকিমি (০.৯৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ১৬,৭২৮ |
• জনঘনত্ব | ৬,৭০০/বর্গকিমি (১৭,০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৮৩১০ |
জাতীয় কলিং কোড | +৮৮০ |
আঞ্চলিক কলিং কোড | ০৪৯১ |
নামকরণ
সম্পাদনাদৌলতখান শহরের নাম মূলত বহুপূর্বের। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, যখন বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে তখন সুবাহ বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন শায়েস্তা খান। মুঘল বাহিনীর দুর্ধর্ষ সেনাপতি শাহাবাজ খাঁ তার একজন দুঃসাহসিক সামন্ত সেনা দৌলত খাঁর সহায়তায় পর্তুগীজ জলদস্যু ও মগদেরকে বিতাড়িত করে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন । অতপর মুঘলদের রীতি অনুসারে মেঘনা তীরের তাদের বিজিত এলাকা দুইভাগে বিভক্ত করে ইলিশা নদীর উত্তর দিকের নাম রাখা হয় উত্তর শাহাবাজপুর এবং দক্ষিণ অংশের নাম রাখেন দৌলতখান।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনামুঘল আমলের প্রথম দিকেও এই এলাকা ছিল আরাকান রাজ্যের মগ, জলদস্যু ও পর্তুগীজ ফিরিঙ্গিদের আশ্রয়স্থল । বাংলার মুঘল সুবেদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর আমলগীরের মামা এবং সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের ভাই আসক খানের পুত্র শায়েস্তা খানকে বাংলার সু্বেদার নিযুক্ত করা হয়েছিল । তিনি ১৯৬৬ খ্রি. চট্টগ্রামের পর্তুগীজদের দুর্গও জয় করেন । এসময় মুঘল বাহিনীর দুর্ধর্ষ সেনাপতি শাহাবাজ খাঁ তাহার একজন দুঃসাহসিক সামন্ত সেনা দৌলত খাঁর সহায়তায় বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার সঙ্গমস্থল সন্দ্বীপ ও উত্তর দিকে মেঘনার উপকূলে পর্তুগীজ জলদস্যু ও আরাকানের মগদেরকে স্থল ও নৌ যুদ্ধে পরাজিত করে তাদেরকে বিতাড়িত করে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করেন । ভোলা জেলার পূর্বপ্রান্তে মেঘনার তীরে অবস্থিত এ শহর। প্রচলিত কথায়, ইতিহাসের ভাষায় দৌলতখান ভদ্রলোকের বাসস্থান । ১৬৮৬ সালের ঘূর্ণিঝড়ে শাহাবাজপুর, হাতিয়া, সন্দীপ সহ আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ এলাকা ও সমুদ্রউপকূল ভাগের শত শত লোক এবং গৃহপালিত পশু ঐ জলোচ্ছ্বাসে অকালে সলিল সমাধি হয় । ১৬৮৬ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দৌলতখান পুত্র শাহ্ মুহাম্মদ ও আমির মুহাম্মদ স্বীয় পরিবারের লোকজন সহ বৃহৎ পানশি/গদু নৌকায় আরোহণ পূর্বক চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে শিকলবাহ গ্রামে নৌকা নোঙ্গর করেন এবং পরবর্তীতে পুত্র শাহ্ মুহাম্মদ চট্টগ্রামে তৎকালীন মোগল আমলে চট্টগ্রামের ফৌজদারদের সহায়তা করার জন্য শাসন কাজে একজন বকশি এবং রাজস্ব কাজে একজন দেওয়ান নিয়োগ করা হত। বকশি মোহাম্মদ নইম (১৬৮৯-১৬৯৯) এবং দেওয়ান মোহাম্মদ খানের (১৬৮৮-১৬৯৯) অধীন রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মচারী পদে নিযুক্ত হন। এক সময় দৌলতখান ছিল ভোলা অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র । শতবর্ষ পূর্বে এখানে স্থাপিত হয়েছিল মহকুমা সদর ।[২] ১৮৪৫ সালে ভোলাকে নোয়াখালী জেলার অধীনে মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তখন এর প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হয় বর্তমান দৌলতখান শহরে। [৩] তখন সর্বপ্রথম দৌলতখান শহর মহকুমা শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে দৌলতখান পৌরসভা স্থাপিত হলে এ শহর পৌরশহরের মর্যাদা লাভ করে।
অর্থনীতি
সম্পাদনাদৌলতখান শহরের বেশির ভাগ জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মেঘনা নদীর নির্ভরশীল । দৌলতখান থেকে জাতীয় ইলিশ মাছ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ও বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে।এ এলাকায় উৎপাদিত সবজি ও সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গুপ্তগঞ্জ বাজার, মিয়ার হাট, মৃধার হাট, বাংলাবাজার -ইত্যাদি হল দৌলতখান শহরের হাট-বাজার এবং বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল। এখানে অটো রাইস মিল, ইট ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, ফিলিং স্টেশন এবং ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। [৪]
ভৌগোলিক উপাত্ত
সম্পাদনাশহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°৩৬′৪৫″ উত্তর ৯০°৪৫′০২″ পূর্ব / ২২.৬১২৫৩৩° উত্তর ৯০.৭৫০৫৪১° পূর্ব।
জনসংখ্যা
সম্পাদনাবাংলাদেশের আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১ অনুযায়ী মাদারীপুর শহরের মোট জনসংখ্যা ১৬,৭২৮ জন যার মধ্যে ৮,৫৩৫ জন পুরুষ এবং ৮,১৯৩ জন নারী। এ শহরের পুরুষ এবং নারী অনুপাত ১০৩:১০০৷ [৫]
প্রশাসন
সম্পাদনাএ শহরটি দৌলতখান পৌরসভা নামক একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা(পৌরসভা) দ্বারা পরিচালিত হয় যা ৯টি ওয়ার্ড এবং ৯টি মহল্লায় বিভক্ত । ২.৪৯ বর্গ কি.মি. আয়তনের দৌলতখান শহরের পুরোটাই দৌলতখান পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়। এ পৌর শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এ সংস্থার কাজ। [৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৌলতখান পৌরসভার মেয়র"। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০।
- ↑ ক খ "দৌলতখানের পটভূমি"। doulatkhan.bhola.gov.bd। ২০১৯-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩।
- ↑ "ভোলা জেলার পটভূমি"। bhola.gov.bd। ২০১৯-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩।
- ↑ "ব্যবসা বাণিজ্য"। doulatkhan.bhola.gov.bd। ২০১৯-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩।
- ↑ "Urban Centers in Bangladesh"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৫: Urban Area Rport, 2011। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ১৭৪। ২০১৯-০৪-১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১০।
- ↑ "এক নজরে পৌরসভা"। ৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৪।