দেব সাহিত্য কুটীর
দেব সাহিত্য কুটীর ভারতের কলকাতা মহানগরের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রকাশনা সংস্থা৷ সংস্থাটির সূত্রপাত করেন বরদাপ্রসাদ মজুমদার ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে৷ দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত এ টি দেবের অভিধান এবং ধর্মগ্রন্থ প্রথম থেকেই সর্বজনপ্রিয়। সংস্থার পুরাতন চমৎকার বাড়ি টি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী ভবনের তকমা লাভ করেছে। [১] বাড়িটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ যথাক্রমে ২২°৩৪′৪৫″ উত্তর ৮৮°২২′০৭″ পূর্ব / ২২.৫৭৯২০৬° উত্তর ৮৮.৩৬৮৭১৪° পূর্ব
![]() প্রকাশনীর লোগো | |
মালিক প্রতিষ্ঠান | বি পি এম প্রেস |
---|---|
অবস্থা | সক্রিয় |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৬০ |
প্রতিষ্ঠাতা | আশুতোষ দেব |
দেশ | ভারত |
সদরদপ্তর | ২১, ঝামাপুকুর লেন কলকাতা ৭০০০০৯ ভারত |
প্রধান ব্যক্তি | রূপা মজুমদার রাজর্ষি মজুমদার |
প্রকার | অভিধান, ধর্মগ্রন্থ, শিশু-কিশোর পাঠ্যসহ বাংলা সাহিত্য |
ওয়েবসাইট | devsahityakutir |
ইতিহাস
সম্পাদনাবরদাপ্রসাদ মজুমদারের পূর্বপুরুষ ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের হাওড়া জেলার পাঁতিহালের জমিদার। তার শৈশবেই পিতা উমাচরণের মৃত্যু হলে মায়ের সঙ্গে কাশীতে বসবাস করতেন।[২] পরে বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বরদাপ্রসাদ কলকাতার বটতলা অঞ্চলে এসে সম্পূর্ণ নতুন পরিচয়ে "দেব" পদবী নিয়ে নতুন জীবনে শুরু করেন পুস্তক ব্যবসা। প্রথমদিকে পথে পথে বই ফেরী করতেন। সঞ্চিত অর্থে ২১ ঝামাপুকুর লেনে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করেন বি পি এম প্রেস। প্রথমদিকে তারানাথ তর্কবাচস্পতি, কেদারনাথ তর্করত্ন প্রমুখ পণ্ডিতগণের সহায়তায় বহু সংস্কৃত গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করতে শুরু করেন। ঝামাপুকুর লেনের এই প্রেসে বসেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার রচনা সমূহের প্রুফ সংশোধন করতেন। [৩] ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বরদাপ্রসাদের মৃত্যুর পর তার তৃতীয় তথা কনিষ্ঠ পুত্র আশুতোষ দেব (যিনি এ টি দেব নামে সুপরিচিত ছিলেন) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে বি পি এম প্রেসকে দেব সাহিত্য কুটীর নামে প্রকাশনা সংস্থায় উন্নীত করেন। অচিরে আশুতোষের প্রকাশিত অভিধান বাংলার ঘরে ঘরে সমাদৃত হয়। [৪] তিনি ঝামাপুকুর লেনে প্রায় ৫ টি বাড়িসহ কলকাতার প্রায় তিরিশ বাড়ির মালিক হন। ২১ নম্বর লেনের বাড়ির নাম রাখলেন নিজের স্ত্রী চমৎকার সুন্দরী দাসীর নামে- চমৎকার বাড়ি এবং তার পাশে ২১/১ র বাড়ির নাম রাখেন পিতার নামে বরদাকুটীর। বিভিন্ন সময়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শিবরাম চক্রবর্তী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার সাহিত্য জগতের দিকপালেরা নিয়মিতই আসতেন।
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর তার রচনাসমূহ কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দিষ্ট রিসিভারের হাতে চলে যায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ দেব তার দুই পুত্র সুবোধ ও প্রবোধের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ দর দিয়ে বিদ্যাসাগর রচিত বর্ণপরিচয়ের প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগের সমস্ত সত্ত্ব আদালতের রিসিভারের ডাকা নিলামে কিনে নেন এবং তাদের প্রকাশনা সংস্থা তথা দেব সাহিত্য কুটীর হতে "রিসিভারের সংস্করণ" হিসাবে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থস্বত্বের নিয়মানুসারে এ টি দেবের স্বত্বাধিকারের মেয়াদ ফুরানোর পরও প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
এছাড়াও, শিশু ও কিশোরের পাঠ্য নানা ধরনের বই, ইংরেজি ক্লাসিক্সের অনুবাদ এবং শারদীয়া বার্ষিকী প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটীর অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ৷ অধুনা বড় এবং ছোটদের জন্য নানা ধরনের গল্প সংকলন, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি এবং কমিকসও প্রকাশ করে চলেছে এই সংস্থা৷ এই সঙ্গে রয়েছে ছোটদের জন্য অসাধারণ মাসিক পত্রিকা শুকতারা ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ হতে শিবরাম চক্রবর্তী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা সিরাজ, ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, নারায়ণ দেবনাথ প্রমুখ বাংলার দিকপাল সাহিত্যিক ও লেখকের জনপ্রিয় গল্প, উপন্যাস, সিরিজ নিয়ে সগৌরবে এগিয়ে চলেছে৷ অনুরূপভাবে বড়দের মনোরঞ্জন করে চলেছে সংস্থার মাসিক নবকল্লোল পত্রিকা৷ ণ্ডণে ও মানে বাংলা প্রকাশনা শিল্পে দেব সাহিত্য কুটীর এখনও এক এবং অদ্বিতীয়৷
সংস্থার ঐতিহ্যবাহী ভবন
সম্পাদনাকলকাতার সর্বাপেক্ষা প্রাচীন প্রকাশনা সংস্থাটির সদর দপ্তর ২১ ঝামাপুকুর লেনের চমৎকার বাড়ি-টিকে তার বর্ণময় ইতিহাসের কথা বিবেচনা করে সংরক্ষণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট 'ঐতিহ্যবাহী ভবন' হিসাবে ঘোষণা করে [১] এবং ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি কমিশন ঐতিহ্যের নীল ফলকের আবরণ উন্মোচন করে। [৫] বহুদিনের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহে রয়েছে অনেক প্রাচীন সাহিত্যিকের লেখার খসড়া,পুরানো প্রকাশিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ, নানা কার্টুন চরিত্র, পরিবারের পাঁচ প্রজন্মের বিশেষকরে অভিধান প্রণেতা আশুতোষ দেবের ব্যবহৃত সামগ্রী। এই গুলোকে নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি 'বই জাদুঘর' তৈরি পরিকল্পনা করেছে। [৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "সার্কুলার নম্বর- 130/N-1/WBHC/2008-09"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৬।
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪৫৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "কঠিন লড়াই পেরিয়ে ঐতিহ্যের সম্মান"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৫।
- ↑ "On Heritage Week, GB brings the story of how Deb Sahitya Kutir building was saved!"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৬।
- ↑ "ফিরে দেখা দেব সাহিত্য..."। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৭।
- ↑ "কলকাতা দেব সাহিত্য কুটীরে বই জাদুঘরের প্রস্তাব"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৭।