দুবার বল আঘাত করা, বা "দুবার-আঘাত", হল ক্রিকেট খেলায় আউটের একটি পদ্ধতি। আধুনিক ক্রিকেটে এইভাবে আউটের ঘটনাটি খুব বিরল।

সংজ্ঞা সম্পাদনা

ক্রিকেটের আইনের ধারা ৩৪.১য়ে বলা হয়েছে:[১]

৩৪.১ দুবার বল আঘাত করায় আউট
৩৪.১.১ দুবার বল আঘাত করে স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান আউট হবে যদি, বলটি খেলার মধ্যে থাকাকালীন, এটি তার শরীরের যে কোনও অংশকে আঘাত করে বা তার ব্যাটে আঘাত করে এবং, কোন ফিল্ডার দ্বারা বলটি স্পর্শ করার আগে, স্ট্রাইকার ইচ্ছাকৃতভাবে তার ব্যাট বা শরীর দিয়ে এটি আবার আঘাত করে, একমাত্র ব্যাট না ধরা হাতে তার উইকেট রক্ষার উদ্দেশ্য ব্যতীত।
৩৪.১.২ এই আইনের কাছে ‘আঘাতপ্রাপ্ত’ বা ‘আঘাত করা'- স্ট্রাইকারের শরীরের সাথে সংযোগও অন্তর্ভুক্ত।

কোনও খেলোয়াড় তার স্টাম্পগুলিকে আঘাত করা থেকে আটকাতে বলটিকে দুবার আঘাত করতে পারে কিন্তু যে হাতে ব্যাট আছে সেই হাত দিয়ে এটি করা যাবেনা এবং ক্যাচ ধরা আটকাতেও করা যাবেনা (সে ক্ষেত্রে তারা মাঠে প্রতিবন্ধকতা নিয়মে আউট হবে)। বোলার এই উইকেটের কৃতিত্ব পায় না।

ইতিহাস সম্পাদনা

ক্রিকেটকে প্রায়শই একটি মৃদু বিনোদনমূলক খেলা বলে মনে করা হয় কিন্তু এর চূড়ান্ত সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। ক্রিকেটের প্রথম দিনগুলিতে, যখন আধুনিক নিয়মের সর্বজনীন প্রভাব ছিল না, ব্যাটসম্যানরা আউট হওয়া থেকে বাঁচতে অনেক কিছু করে ফেলত। তারা ফিল্ডারদের বাধা দিত বল ধরতে এবং নিজের উইকেট সংরক্ষণের জন্য তারা যতবার পারে ততবার বলটিকে আঘাত করত। একাধিক ক্ষেত্রে এর মারাত্মক পরিণতি হয়েছিল এবং, শেষ পর্যন্ত, ব্যাটসম্যানদের করা শারীরিক আক্রমণ থেকে ফিল্ডারদের বাঁচাতে কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছিল।

১৬২২ সালে, পশ্চিম সাসেক্সের চিচেস্টারের কাছে বক্সগ্রোভে একাধিক প্যারিশবাসীর (নির্দিষ্ট গির্জার যাজকপল্লীর বাসিন্দা) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, ৫ মে রবিবার, একটি গির্জার উঠোনে ক্রিকেট খেলার অভিযোগে। মামলা করার তিনটি কারণ ছিল: একটি হল এটি স্থানীয় উপ-আইন লঙ্ঘন করেছিল; অন্য একটি কারণ ছিল গির্জার জানলার কাঁচ ভাঙার উদ্বেগ নিয়ে; তৃতীয়টি ছিল "একজন অভিজাতবংশীয় তরুণ ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিতে গিয়েছিল"।[২]

পরবর্তী পরিস্থিতিটি হয়েছিল কারণ সেই সময়কার নিয়মে ব্যাটসম্যান একাধিকবার বলে আঘাত করতে পারত আর তাই ব্যাটসম্যানের কাছে ফিল্ডিং করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, পরবর্তী দুটি ঘটনা এটি প্রমাণ করছে।

১৬২৪ সালে, পূর্ব সাসেক্সের হর্স্টেড কেইনসে একটি প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছিল। ব্যাটসম্যান এডওয়ার্ড টাই, কট আউট থেকে বাঁচতে বলকে দ্বিতীয়বার মারতে গিয়ে জ্যাস্পার ভিনাল নামক একজন ফিল্ডারের মাথায় আঘাত করেছিল। ভিনাল ছিল ক্রিকেটের মাঠে প্রথম বলি। বিষয়টি করোনারের আদালতে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, আদালত রায় দিয়েছিল এটি দুর্ঘটনাজনিত হত্যা।[২]

১৬৪৭ সালে, পশ্চিম সাসেক্সের সেলসিতে আর একটি প্রাণঘাতী ঘটনা নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। ব্যাটসম্যান দ্বিতীয়বার বলটি মারার চেষ্টা করায় হেনরি ব্র্যান্ড নামক একজন ফিল্ডারের মাথায় আঘাত লেগেছিল।[২]

কখন দ্বিতীয়বার বলে আঘাত করার নিয়মগুলি পরিবর্তন করা হয়েছিল বা কখন মাঠে প্রতিবন্ধকতা অপরাধ বলে চালু হয়েছিল তা ঠিক করে জানা যায়না, তবে এই দুটি বিধিই ক্রিকেটের আইন এর ১৭৪৪ সালের আইনসংগ্রহে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, এটি তৈরি করেছিলেন লন্ডন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরা। এই আইনগুলি পূর্ববর্তী সংস্করণের আধুনিকীকরণ হতে পারে। ধারণা করা হয় যে এগুলি ১৭৫৫ সাল পর্যন্ত মুদ্রিত হয়নি।[৩]

১৭৮৬ সালের ১৩-১৫ জুলাই, উইন্ডমিল ডাউন অঞ্চলে, হ্যাম্পশায়ার বনাম কেন্ট ম্যাচটিতে, দুবার বল মারার জন্য ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার প্রথম সুনির্দিষ্ট নথিটি পাওয়া যায়। 'স্কোরস অ্যান্ড বায়োগ্রাফিস' বইয়ের লেখা অনুযায়ী হ্যাম্পশায়ারের টম সুয়েটার ছিলেন সেই খেলোয়াড়।[৪]

বিরল আউট সম্পাদনা

১৯০৬য়ের মরশুমে এমন আউটের একটি উদাহরণ দেখা গিয়েছিল যখন জন কিং, দি ওভাল ময়দানে সারের বিপক্ষে লিচেস্টারসেয়ারের হয়ে খেলার সময় বোল্ড আউট হওয়া এড়াতে দুবার বলে আঘাত করে রান নেবার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি যদি রান করার চেষ্টা না করতেন, তিনি আউট হতেন না। খেলার ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে, আউট হবার এই পদ্ধতিটি হল টাইমড আউটের পরে দ্বিতীয় বিরলতম আউট, কেবলমাত্র একুশটি এই ধরনের ঘটনা পাওয়া গেছে, যদিও আধুনিক কালে টাইমড আউট আরও সাধারণ হয়ে উঠেছে।[৫]

একজন ব্যাটসম্যান "দুবার বল আঘাত করে" আউট হওয়ার অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক উদাহরণ কার্ট উইলকিনসনের আউট, ২০০২-২০০৩ রেড স্ট্রাইপ বোল প্রতিযোগিতায় বার্বাডোসের হয়ে অবশিষ্ট লিভার্ড দ্বীপপুঞ্জের বিরুদ্ধে খেলার সময়। এই আউট নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, কারণ, এই সম্পর্কিত ক্রিকেটের আইনের অধীনে প্রয়োজন অনুযায়ী বলটি উইলকিনসন "ইচ্ছাকৃতভাবে" দুবার মেরেছিলেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল।[৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Law 34 – Hit the ball twice"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. Timothy J McCann, Sussex Cricket in the Eighteenth Century, Sussex Record Society, 2004
  3. "A Potted History of Cricket in England"। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২০ 
  4. Arthur Haygarth, Scores & Biographies, Volume 1 (1744-1826), Lillywhite, 1862
  5. Wisden Cricketers' Almanack – 1907 issue
  6. CricInfo report

বাইরের উৎস সম্পাদনা