দারিও ফো

সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী

১৯২৬ সালের ২৪শে মার্চ ছোট্ট শহর লেক মাগজোরের সান জানোতে জন্মগ্রহণ করেন দারিও ফো। ইতালির নোবেলজয়ী নাট্যকার দারিও ফো ছিলেন বহু গুণের অধিকারী: কমেডিয়ান, নাট্যপরিচালক, মঞ্চপরিকল্পনাকারী, গায়ক, গীতিকার, আঁকিয়ে, রাজনৈতিক প্রচারক—এ রকম নানা গুণের সমারোহে বর্ণিল ছিল তার কর্মময় জীবন। আশিটিরও অধিক নাটক রচনা করেন তিনি।[১]

দারিও ফো
Accidental Death of an Anarchist, The Doon School - 2009
ড্যারিও ফো এবং ফ্রাঙ্কা রাম তাদের নবজাতক পুত্র জ্যাকোপোর সাথে।

রাজনীতি নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করা ১৯৯৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী এই নাট্যকারের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিশ শতকের রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক নাটকের এক প্রধান নাম দারিও ফো। তার সেরা কাজগুলোর মধ্যে আছে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’ এবং ‘ক্যান্ট পে ওন্ট পে’।[২] ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’ নাটকটির ১৯৭৭ সালের পরবর্তী সংস্করণ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। গির্জার কর্তৃপক্ষ যথারীতি নিন্দা প্রকাশ করে। টেলিভিশনের ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে জঘন্য ঈশ্বরবিরোধী নাটক বলা হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নাটকের প্রতি কর্তৃপক্ষীয় বিরূপ আচরণ সম্পর্কে নোবেল ভাষণে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার এবং আক্রমণ সহ্য করতে হয়েছে; ডানপন্থী চিন্তার লোকদের অপমানজনক আচরণ ও সহিংসতা হজম করতে হয়েছে। ’ উল্লেখ্য, নাটকে পুলিশের সমালোচনা তুলে ধরার অপরাধে ইতালির ফেডারেল পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন তার স্ত্রী।

সারা জীবন বামপন্থী রাজনীতিকে সমর্থন করে গেছেন দারিও ফো। শৈশবে দাদার কাছে গল্পবলার কৌশল শিখেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তার ওপর বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে যাওয়ার চাপ আসে। কিন্তু কৌশলে তা থেকে নিস্তার পেতে সক্ষম হন। দারিও ও ফ্রাংকার ছেলের নাম জ্যাকোপো। তিনিও একজন লেখক।

দারিও ফো সচেতনভাবেই ইতালির নানা উপভাষা, নানা লাতিন বুলি ব্যবহার করে রম্য ধারার মাধ্যমে জটিল জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। এতে করে কখনো কখনো সেগুলো স্থূল বলেও চিহ্নিত হয়েছে। তবে ফোর বিবেচনায় অভিজাত শ্রেণির মানুষ নয়, শ্রমজীবী দর্শকদের জন্যই তিনি নাটক করতে চেয়েছেন। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। মিলান শহরকে কতিপয় অর্থলোভী লোকদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা হিসেবে তিনি ২০০৬ সালে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্ভীকচিত্তে বলেন, বার্লুসকোনির সহায়তা পাওয়া ‘অর্থলোভী জারজ লোকরা দশকের পর দশক ধরে এই শহর শাসন করে আসছে। ’ এমন সোচ্চারকণ্ঠ ছিলেন দারিও।[১] ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ৯০ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন । [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "নির্ভীকচিত্ত দারিও ফো"কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৯ 
  2. "নোবেল বিজয়ী নাট্যকার দারিও ফো আর নেই"