দাউদ আনাস্তাস হানানিয়া (আরবি: داود حنانيا) (জন্ম ১৯৩৪ জেরুজালেম) হচ্ছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জর্দানীয় হৃৎপেশীর শল্যচিকিৎসক। হানানিয়া জর্দান সেনাবাহিনীতে একজন প্রাক্তন লেফটেনেন্ট জেনারেল ও জর্দান সংসদের প্রাক্তন সিনেটর ছিলেন।[১]

পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও শিক্ষা সম্পাদনা

দাউদ হানানিয়া মূলত প্যালেস্তাইন এর জেরুজালেমের খ্রিষ্ঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনাস্তাস হানানিয়া একজন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। আনাস্তাস ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিম জেরুজালেমে বসবাস করতেন। ১৯৫০ এর প্রথম দিকে স্থায়ীভাবে জর্ডানের আম্মানে চলে আসেন। দাউদের পিতা জর্দান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রিসভায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচার মন্ত্রী, অভিবাসন মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১০৬০-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত গ্রেট ব্রিটেনে জর্দানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে এবং ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সংসদের উচ্চ কক্ষে সেনেটর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

জেরুজালেমের আল-উম্মাহ কলেজ ও কলেজ দেস ফ্রেইরেতে দাউদ হানানিয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ১৭ বছর বয়সে জর্ডানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে সামরিক বৃত্তি দিয়ে ইংল্যান্ডে ভেষজবিদ্যা অধ্যয়ন করার জন্য তাকে পাঠানো হয়। হানানিয়া ১৯৫৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেন্ট মেরি হাসপাতাল থেকে তার এম.বি.বি.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন।

হানানিয়া পরবর্তীতে ১৯৫৯-১৯৬১ সাল পর্যন্ত লন্ডনের রয়েল নর্দার্ন হাসপাতালের হাউস সার্জন এবং সার্জিকাল রেজিস্ট্রার হন। তিনি হৃৎপেশীর অস্ত্রোপাচারে একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অফ সার্জনস এর ফেলো হন। তিনি ১৯৮০ সালে আয়ারল্যাণ্ডের রয়াল কলেজের সম্মানজনক ফেলো হন।

হানানিয়া ১৯৬০-এর শেষদিকে টেক্সাসের হাউস্টন অঞ্চলে ড.মাইকেল ডেবাকি এবং ড. ডেন্টন কুওলি অধ্যাপকের নিয়ন্ত্রণে তিনি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেসময় তিনি বায়োলার ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনে থোরাসিক ও হৃৎপেশির শল্যচিকিৎসার ফেলো ছিলেন।

পেশা সম্পাদনা

দাউদ হানানিয়া উন্মুক্ত হৃদপিণ্ডের শল্যচিকিৎসা (সার্জারী) সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সর্বপ্রথম হৃৎ-ভালভের প্রতিস্থাপন করেন। একইবছর তিনি আরববিশ্বে প্রথম বৃক্ক প্রতিস্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি জর্দানে এবং তার কিছু বছর পর ইরাকে সর্বপ্রথম করোনারী আর্টারী বাইপাস করেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালে তার কাজ সবচেয়ে বেশি প্রখ্যাত হয়েছিল। তিনি সেসময় আম্মানের কিং হুসাইন মেডিক্যাল সেন্টারে সফলভাবে হৃৎপিণ্ডের প্রতিস্থাপন করেন। এটি ছিল পূর্ব মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বে প্রথম সফল প্রতিস্থাপন।[২]

১৯৭৩-৭৬ সালে হানানিয়া কিং হুসাইন মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৬-১৯৮৮ অবধি রয়াল মেডিক্যাল সার্ভিসের পরিচালক হন।

১৯৮৯ সালে সক্রিয় আর্মি লেফটেনেন্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ১৯৮৯-১৯৯৭ ও ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত সংসদে জর্দানের উচ্চকক্ষে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সমাজ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিকন্তু তিনি আমেরিকান জর্দানীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ, ব্রিটিশ জর্দানীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ এবং পোলিশ জর্দানীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সংস্থার সদস্য ছিলেন।

হানানীয়া ১৯৮৮-১৯৯০ অবধি জর্দান ক্যাথলিক সংস্থা ও আরব কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। হানানীয়া পরবর্তীতে আরব সেন্টার ফর হার্ট এন্ড স্পেশাল সার্জারী প্রতিষ্ঠায় গুরুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় আরব মেডিক্যাল সেন্টার।

বর্তমানে হানানীয়া ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা চর্চা করেন। তিনি নিয়মিতভাবে আম্মানে অবস্থিত নব হানানিয়া সেন্টারে রোগী দেখেন। আরব মেডিক্যাল সেন্টারো খালিদি মেডিক্যাল সেন্টারে প্রধানত এবং অনেকসময় ইসলামিক হাসপাতাল ও আম্মান সার্জিক্যাল হাসপাতালে হৃদপিণ্ডের শল্যচিকিৎসা করেন।

তিনি ১৯৯৯ সালে কিং হুসাইন ফাউন্ডেশন বোর্ডের সদস্য হন এবং ২০০৫ সালে লাইফ অব দ্য জর্ডান কার্ডিওথোরাসিক সংস্থার নির্বাচিত সভাপতি হন। তিনি আল কাইদ বিশ্ববিদ্যালয় এর বোর্ড অব ট্রাস্টিতে ছিলেন এবং ডেন্টন এ. কুলি কার্ডিওভাস্কুলার সংস্থা ও মাইকেল ই. ডিব্যাকি ইন্টারনেশনাল কার্ডিওভাস্কুলার সংস্থা উভয়েরই সদস্য ছিলেন।

২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর ১৬ তম প্যান আরব ও ৮ম জর্দানীয় অর্থপেডিক এসোসিয়েশন কনগ্রেসে বার্ষিক স্মারক বক্তৃতা দেন। আম্মানে এই বক্তৃতাপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুষ্ঠানে ৭০০ জন পেশাদার চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Jordanian Senate, "Previous Councils"
  2. "Jordanian surgeon transplants heart", Associated Press/Rome News-Tribune, 11 August, 1985.