দাউদ ইবনে আল-আদিদ
দাউদ ইবনে আল-আদিদ (এছাড়াও দাউদ এবং দাউদ বানান; আরবি: داود بن العاضد ) হাফিজি ইসমাইলিবাদ এর ২৫তম ইমাম এবং ফাতেমীয় খিলাফতের দাবিদার ছিলেন। তার অনুসারীরা তাকে "আল-হামিদ লি’ল্লাহ" (الحامد لله), অর্থাৎ "যিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন" নামে ডাকতেন।
দাউদ আল-হামিদ লিল্লাহ | |
---|---|
ইমাম, হাফিজি ইসমাইলিবাদ | |
অফিসে ১১৭১ — ১২০৭/৮ | |
পূর্বসূরী | আল-আদিদ লি-দিন আল্লাহ (যেমন ফাতেমীয় খলিফা) |
উত্তরসূরী | সুলায়মান বাদর আল-দীন |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | দাউদ ইবন আল-আদিদ |
মৃত্যু | ১২০৭/৮ |
ধর্ম | শিয়া ইসলাম |
পিতামাতা |
|
সম্প্রদায় | হাফিজি ইসমাইলিবাদ |
দাউদ ছিলেন শেষ ফাতিমি খলিফা আল-আদিদের বড় ছেলে। ১১৭১ সালে আল-আদিদ মারা গেলে দাউদ তখনও শিশু ছিলেন। সালাহউদ্দিন তাকে সিংহাসনে বসতে দেননি, বরং আইয়ুবিদ শাসন শুরু করেন। পরিবারের বাকি সদস্যদের মতো দাউদও ১২০৭/৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্দি জীবনযাপন করেন। জানা যায়, তার একটি পুত্র ছিল। তার নাম সুলায়মান বদর আল-দিন। তিনি পরে হাফিজি ইমামদের শেষ প্রতিনিধি হন।
জীবন
সম্পাদনাদাউদ ছিলেন শেষ ফাতেমীয় খলিফা আল-আদিদ লি-দিন আল্লাহর (শাসনকাল: ১১৬০–১১৭১) বড় ছেলে। তার পূর্বসূরিদের মতোই আল-আদিদ ছিলেন নামমাত্র শাসক। তিনি দরবারীদের ও শক্তিশালী নেতাদের হাতে পুতুলের মতো পরিচালিত হতেন। এই নেতাদের মধ্যে শেষ এবং উল্লেখযোগ্য ছিলেন সালাহউদ্দিন। তিনি ১১৬৯ সালের মার্চে উজির এবং মিশরের প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠেন।[১]
সালাহউদ্দিন তার সিরিয়ার শাসক নুর আল-দিনের চাপে ফাতিমি শাসনের ধর্মীয় ভিত্তি দুর্বল করতে শুরু করেন। তিনি ফাতিমি-সমর্থিত হাফিজি ইসমাইলিবাদকে দমন করে মিশরে সুন্নি আধিপত্য ফিরিয়ে আনেন।[২] [৩] [৪] ১১৭১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর শাফিঈ ফকিহ নজম আল-দিন আল-খাবুশানি প্রকাশ্যে ফাতিমি খলিফা আল-আদিদের পরিবর্তে সুন্নি আব্বাসি খলিফা আল-মুস্তাদির নাম ঘোষণা করেন এবং ফাতিমিদের অপরাধের তালিকা পড়েন।[২][৫][৬] কয়েকদিন পর, ১৩ সেপ্টেম্বর ১১৭১ সালে আল-আদিদের মৃত্যু হলে সালাহউদ্দিন ফাতেমীয় খিলাফত বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। [৫] [৭] [৮] মধ্যযুগীয় মিশরীয় ঐতিহাসিক আল-মাকরিজির মতে, আল-আদিদ শিশু দাউদকে উত্তরাধিকারী (ওয়ালি আল-আহদ) হিসেবে বেছে নিতে পারেননি। [৯]
নতুন আইয়ুবীয় শাসক ফাতিমি পরিবারের অনেক সদস্যকে—মোট ২৫২ জন, ৯৮ জন পুরুষ ও ১৫৪ জন নারীকে বারজাওয়ান প্রাসাদে গৃহবন্দি করে রাখে। তাদের বিপুল সম্পদ সালাহউদ্দিন ও নুর আল-দিনের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় এবং বিখ্যাত ফাতিমি গ্রন্থাগারগুলো খণ্ডিত হয়ে বিক্রি বা জব্দ করা হয়।[১০][১১] সালাহউদ্দিন অবশিষ্ট ইসমাইলি বিশ্বাসীদের উপর অত্যাচার চালান। এদের অনেকেই পরে উচ্চ মিশরে পালিয়ে যান।[১০]
বন্দী জীবন
সম্পাদনাদাউদ বন্দি থাকলেও তার অনুসারীরা তাকে "আল-হামিদ লি’ল্লাহ" নামে ইমাম হিসেবে মান্য করত। [১০] [১২] ১১৭৪ সালে একটি ফাতিমি-পন্থী ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। এখানে কেউ কেউ তার প্রাপ্তবয়স্ক চাচাতো ভাইদের খলিফা করতে চেয়েছিল। [১৩] [১৪] একই বছরের গ্রীষ্মের শেষের দিকে উচ্চ মিশরে ফাতিমিদের পক্ষে একটি বিদ্রোহ শুরু হয়। আসওয়ানের বংশগত গভর্নর কানজ আল-দাওলা এটিকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে সালাহউদ্দিনের ভাই আল-আদিল এটিকে দমন করেন। [১৫] [১৬] ১১৭৬ সালে দাউদের নামে একজন ইসমাইলি ধর্মপ্রচারকের মাধ্যমে উচ্চ মিশরের কিফটে আরেকটি ফাতিমি-পন্থী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। আল-আদিল এটি দমন করে প্রায় ৩,০০০ স্থানীয়কে হত্যা করেন। [১৫] [১৬]
১১৮৮ সালে কায়রোতে শিয়া স্লোগান "আলীর পরিবার" নিয়ে একটি বিদ্রোহের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। [১৭] ১২০৭/৮ সালে, ফাতেমীয় বন্দীদের কায়রো দুর্গে স্থানান্তরিত করা হয়। [১৫] একই বছরে দাউদ মারা যান। তার অনুসারীরা মিশরের সুলতান আল-আদিলের কাছ থেকে জনসমক্ষে শোক প্রকাশের অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু সুলতান এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করেন এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। [১৫]
উত্তরাধিকারী এবং পরিণতি
সম্পাদনাবন্দি থাকা সত্ত্বেও দাউদ গোপনে দুই পুত্রের জন্ম দেন। তার বড় ছেলে সুলায়মান বদর আল-দিনের মা উচ্চ মিশরে পালিয়ে যান এবং সেখানে সুলায়মান জন্মগ্রহণ করেন। পরে আল-কামিলের শাসনে সুলায়মান বন্দি হন এবং ১২৪৮ সালে নিঃসন্তান মারা যান। কেউ কেউ দাবি করেন, তার একটি পুত্র "লুক্কায়িত ইমাম" হিসেবে বেঁচে ছিল। [১৫][১৮] ১২৯৮ সালের শেষের দিকে, সুলাইমান ইবনে দাউদের পুত্র বলে দাবি করা এবং নিজেকে দাউদ নামেও পরিচয় দেওয়া একজন উচ্চ মিশরে চলে আসেন। কিন্তু ততদিনে ইসমাইলিরা ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়, যাদের শেষ চিহ্ন ১৪শ শতকে অদৃশ্য হয়ে যায়।[১৯][২০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Brett 2017, পৃ. 291–292।
- ↑ ক খ Daftary 2007, পৃ. 252।
- ↑ Brett 2017, পৃ. 293।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 289–290।
- ↑ ক খ Brett 2017, পৃ. 294।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 290।
- ↑ Daftary 2007, পৃ. 252–253।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 290–291।
- ↑ Walker 1995, পৃ. 264।
- ↑ ক খ গ Daftary 2007, পৃ. 253।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 292–294।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 296।
- ↑ Daftary 2007, পৃ. 253–254।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 296–297।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Daftary 2007, পৃ. 254।
- ↑ ক খ Halm 2014, পৃ. 297।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 298।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 299।
- ↑ Daftary 2007, পৃ. 254–255।
- ↑ Halm 2014, পৃ. 325।