প্রত্যেক বছরে নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবারে আমেরিকায় এবং অক্টোবরের ২য় সোমবারে কানাডায় এই দিনটি পালন করা হয়। থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্যা টার্কি ডে ও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্ঠান।

থ্যাংকস গিভিং ডে পশ্চিমা বিশ্বের লোকেদের কাছে একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এই উৎসবে পরিবারের সকলে একত্র হয়ে তাদের দিন টি পালন করেন, তাদের সাথে থাকেন। প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সহ সকলেই তারা একসাথে টেবিলে বসে তাদের সুস্বাদু খাবার উপভোগ করে থাকেন।

থ্যাংকস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। টার্কি ময়ূরর মতো বড় সাইজের বনমোরগ।এই দিনটি তারা পরিবারের সঙ্গেই উপভোগ করতে বেশি পছন্দ করে।


ইতিহাস সম্পাদনা

১৬২০ সালে ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। কয়েকমাস পর তারা ম্যাসাচুসেটস বেতে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কীভাবে কর্ন চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কীভাবে ম্যাপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।

১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। কর্নের ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভূরিভোজের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করার জন্য। তারপর উপস্থিত সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সরকারি ছুটি সম্পাদনা

১৮১৭ সালে নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ অফিসিয়ালি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম ‘মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব’ রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, যেন ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’-কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৩৬ বছর সারাহ যোসেফা একটানা প্রচারাভিযান চালান থ্যাংকস গিভিং ডের পক্ষে। ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন শেষ পর্যন্ত সারাহ যোসেফের আবেদন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন, কিন্তু ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার লক্ষে এ ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং এরপর থেকে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালিত হয়।