থাল্যাসা (প্রাকৃতিক উপগ্রহ)

থাল্যাসা (ইংরেজি: Thalassa, /θəˈlæsə/) বা নেপচুন ৪ (ইংরেজি: Neptune IV) হল নেপচুনের দ্বিতীয় নিকটতম প্রাকৃতিক উপগ্রহগ্রিক পুরাণের সমুদ্র দেবী থাল্যাসার (এথেরহেমেরার কন্যা) নামানুসারে। গ্রিক ভাষায় "থাল্যাসা" ("Thalassa") শব্দের অর্থ সমুদ্র

থাল্যাসা
ভয়েজার ২ থেকে তোলা থাল্যাসার ছবি, ২৩ অগস্ট, ১৯৮৯
আবিষ্কার
আবিষ্কারকরিচার্ড জে. টেরিল[১] ও ভয়েজার ইমেজিং টিম
আবিষ্কারের তারিখসেপ্টেম্বর, ১৯৮৯
বিবরণ
উচ্চারণ/θəˈlæsə/[২]
নামকরণের উৎসΘάλασσα থাল্যাসা
বিশেষণথাল্যাসিয়ান /θəˈlæsiən/[৩]
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য[৪][৫]
যুগ ১৮ অগস্ট, ১৯৮৯
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ৫০০৭৪.৪৪ কিমি
উৎকেন্দ্রিকতা০.০০১৭৬±০.০০০৫৪
কক্ষীয় পর্যায়কাল০.৩১১৪৮৪৪৪±০.০০০০০০০৬  দিন
নতি
যার উপগ্রহনেপচুন
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
মাত্রাসমূহ০৮x১০০x৫২ কিলোমিটার [৬][৭]
গড় ব্যাসার্ধ৪০.৭±২.৮ কিমি[৮]
গড় ঘনত্ব১.২৩±০.৪৩ g/cm3[৯]
ঘূর্ণনকালসমলয়
অক্ষীয় ঢালশূন্য
প্রতিফলন অনুপাত০.০৯১[৬][৮]
তাপমাত্রা~৫১ কে গড় (আনুমানিক)
আপাত মান২৩.৩২[৮]

আবিষ্কার সম্পাদনা

১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ভয়েজার ২ প্রোবের তোলা ছবিগুলি থেকে থাল্যাসা আবিষ্কৃত হয়। এটির সাময়িক নামকরণ করা হয়েছিল এস/১৯৮৯ এন ৪ (ইংরেজি: S/1989 N 4)।[১০] ১৯৮৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আইএইউ-র ৪৮৬৭ নং সার্কুলারে এই আবিষ্কারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় এবং এই প্রসঙ্গে "১১ দিনে তোলা ২৫টি ছবি"র কথাও উল্লেখ করা হয়। যা থেকে মনে ক্রয়া হয় উপগ্রহটি ১৮ সেপ্টেম্বরের কিছু আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়।[১১]

ভৌত বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

থাল্যাসা একটি অনিয়মিত উপগ্রহ। সম্ভবত নেপচুনের আদি উপগ্রহগুলির ধ্বংসাবশেষের নুড়িগুলি পুনঃসৃজিত হয়ে এই উপগ্রহটিরও উদ্ভব ঘটিয়েছিল। উল্লেখ্য, ট্রাইটন নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণের জালে আবদ্ধ হয়ে প্রাথমিকভাবে একটি উচ্চ উৎকেন্দ্রিকতা-সম্পন্ন কক্ষপথে স্থাপিত হয়ে প্রাকৃতিক উপগ্রহে পরিণত হওয়ার সময় উক্ত আদি উপগ্রহগুলির কক্ষপথ বিঘ্নিত হয় এবং সেগুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন।[১২] এটির আকার কিছুটা চাকতির মতো, যা সচরাচর অনিয়মিত উপগ্রহগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

কক্ষপথ সম্পাদনা

 
নেইয়াডের কক্ষীয় গতি (লাল) ও তার সঙ্গে থাল্যাসার (কেন্দ্রে হলুদ বিন্দু) সম্পর্ক।

থাল্যাসার কক্ষপথটি নেপচুনের সমলয় কক্ষপথ ব্যাসার্ধের অভ্যন্তরে অবস্থিত হওয়ার দরুন জোয়ার-সংক্রান্ত গতিহ্রাসের ফলে এটি ধীরে ধীরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ভিতরের দিকে ঢুকছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, ভবিষ্যতে হয়তো নেপচুনের রচ সীমা পার হওয়ার সময় জোয়ার-সংক্রান্ত প্রসারণের ফলে থাল্যাসার সঙ্গে নেপচুনের বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষ লাগবে এবং থাল্যাসা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে একটি নতুন গ্রহীয় বলয় সৃষ্টি করবে। তার অপেক্ষাকৃত পরেই সম্ভবত ছড়িয়ে পড়তে থাকা ধ্বংসাবশেষগুলির সঙ্গে ডেসপাইনার কক্ষপথের সংঘাত বাধবে।

বর্তমানে একটি "পরিহারের নৃত্যে" নেপচুনের নিকটতম উপগ্রহ নেয়্যাডের সঙ্গে থাল্যাসার কক্ষীয় অনুনাদ ৬৯:৭৩। নেপচুনকে প্রদক্ষিণ করার সময় অধিকতর নতি-যুক্ত নেয়্যাড সফলভাবে প্রথমে উপর থেকে দু’বার ও তারপর নিচ থেকে দু’বার অতিক্রম করে যায়। পৃথিবীর হিসেবে প্রতি ~২১.৫ দিনে এই অতিক্রমণের একটি চক্র সম্পূর্ণ হয়। পরস্পরকে অতিক্রম করার সময় দু’টি উপগ্রহের দূরত্ব থাকে প্রায় ৩৫৪০ কিলোমিটার। এই দু’টির কক্ষীয় ব্যাসার্ধের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ১৮৫০ কিলোমিটার হলেও নেয়্যাড নিকটতম অবস্থানে থ্যালাসার উপরে বা নিচে ~২৮০০ কিলোমিটার ঘুরে যায়। এইভাবে এই অনুনাদ এই ধরনের অন্যান্য অনেক কক্ষীয় পারস্পরিক সম্পর্কের মতো সংযোগস্থলে সর্বাধিক পৃথকীকরণের মাধ্যমে কক্ষপথগুলিকে স্থায়িত্ব দান করছে। যদিও যেখানে উৎকেন্দ্রিকতা যৎসামান্য সেখানে এই এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে কক্ষীয় নতির এহেন ভূমিকা সচরাচর দেখা যায় না।[৯][১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Planet Neptune Data http://www.princeton.edu/~willman/planetary_systems/Sol/Neptune/
  2. "thalassal" অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।  (Sসাবস্ক্রিপশন বা পার্টিশিপেটিং ইনস্টিটিউট মেম্বারশিপ প্রয়োজনীয়.)
  3. The complete poetical works of Robert Browning (1912)
  4. Jacobson, R. A.; Owen, W. M., Jr. (২০০৪)। "The orbits of the inner Neptunian satellites from Voyager, Earthbased, and Hubble Space Telescope observations"Astronomical Journal128 (3): 1412–1417। ডিওআই:10.1086/423037 বিবকোড:2004AJ....128.1412J 
  5. Showalter, M. R.; de Pater, I.; Lissauer, J. J.; French, R. S. (২০১৯)। "The seventh inner moon of Neptune" (পিডিএফ)Nature566 (7744): 350–353। ডিওআই:10.1038/s41586-019-0909-9পিএমআইডি 30787452পিএমসি 6424524 বিবকোড:2019Natur.566..350S 
  6. Karkoschka, E. (২০০৩)। "Sizes, shapes, and albedos of the inner satellites of Neptune"। Icarus162 (2): 400–407। ডিওআই:10.1016/S0019-1035(03)00002-2বিবকোড:2003Icar..162..400K 
  7. Williams, D. R. (২০০৮-০১-২২)। "Neptunian Satellite Fact Sheet"NASA (National Space Science Data Center)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৩ 
  8. "Planetary Satellite Physical Parameters"JPL (Solar System Dynamics)। ২০১০-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৫, ২০১৯ 
  9. Brozović, M.; Showalter, M. R.; Jacobson, R. A.; French, R. S.; Lissauer, J. J.; de Pater, I. (অক্টোবর ৩১, ২০১৯)। "Orbits and resonances of the regular moons of Neptune"। Icarus338 (2): 113462। arXiv:1910.13612 ডিওআই:10.1016/j.icarus.2019.113462 
  10. Green, D. W. E. (সেপ্টেম্বর ২৯, ১৯৮৯)। "Neptune"IAU Circular4867। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২৬ 
  11. Marsden, B. G. (সেপ্টেম্বর ১৬, ১৯৯১)। "Satellites of Saturn and Neptune"IAU Circular5347। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৬, ২০১১ 
  12. Banfield, D.; Murray, N. (অক্টোবর ১৯৯২)। "A dynamical history of the inner Neptunian satellites"। Icarus99 (2): 390–401। ডিওআই:10.1016/0019-1035(92)90155-Zবিবকোড:1992Icar...99..390B 
  13. "NASA Finds Neptune Moons Locked in 'Dance of Avoidance'"Jet Propulsion Laboratory। নভেম্বর ১৪, ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৫, ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা