থাইরয়েড
থাইওয়েড গ্রন্থি বা থাইরয়েড হল দুইটি লোব দ্বারা গঠিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যার অবস্থান গ্রীবাতে। পুরুষের এডাম'স এপলের ঠিক নিচে এর অবস্থান। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো মেটাবলিক রেট ও প্রোটিন সিন্থেসিসকে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোনের মধ্যে ট্রাইডোথাইরোনাইন (T3) ও থাইরক্সিন (T4) আয়োডিন ও টাইরোসিন দ্বারা গঠিত হয়।থাইরয়েড ক্যালসিটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন তৈরি করে যা ক্যালসিয়াম হোমিওস্ট্যাসিসে অবদান রাখে। [১]
Thyroid | |
---|---|
![]() The human thyroid as viewed from the front, with arteries visible. | |
![]() The thyroid as it relates to surface anatomy of the neck and torso. | |
বিস্তারিত | |
অগ্রদূত | Thyroid diverticulum (an extension of endoderm into 2nd pharyngeal arch) |
তন্ত্র | Endocrine system |
ধমনী | Superior, Inferior thyroid arteries |
শিরা | Superior, middle, Inferior thyroid veins |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | Glandula thyreoidea |
টিএ | A11.3.00.001 |
এফএমএ | FMA:9603 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
গঠনসম্পাদনা
থাইরয়েড গ্রন্থি একটি প্রজাপতি আকৃতির অঙ্গ। বাম ও ডানে দুই লোব ইস্থমুস দ্বারা সংযুক্ত থাকে। [২] প্রাপ্ত বয়স্কে মানুষের থাইরয়েডের ওজন ২৫ গ্রাম,[২] প্রতিট লোব ৫ সেমি লমা, ৩ সেমি প্রশ্বস্ত এবং ২ সেমি পুরু। ইস্থমুস উচ্চতায় ও প্রশ্বস্ততায় প্রায় ১.২৫ সেমি হয়।[২] নারীদের পিটুইটারি গ্রন্থি সাধারণত পুরুষের থেকে বড় , গর্ভাবস্থায় এই আকার বেড়ে যায়।[২][৩]
ল্যারিংক্স ও শ্বাসনালী ঘেঁষে থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থিত।[২] ইস্থমুসের গঠন শ্বাসনালীর দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় নালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থির উপরের অংশ থাইরয়েড কার্টিলেজ এবং নিচের অংশ শ্বাসনালীর চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ রিং পর্যন্ত যায়।[৩] থাইরয়েড গ্রন্থি একটি পাতলা আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে।[২] এই আবরণের বহিঃ ও আভ্যন্তরীণ আবরণ থাকে। বহিঃ আবরণ প্রিট্রাকিয়াল ফ্যাসিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে ক্রিকয়েড ও শ্বাসনালীর কার্টিলেজ পর্যন্ত যায়।[৩] [২]
থাইরয়েড হরমোনসম্পাদনা
থাইরয়েড গ্রন্থির প্রধান কাজ আয়োডিন সম্বলিত হরমোন তৈরি। ট্রিথাইরোনিন (T3) ও থাইরক্সিন (T4) হল আয়োডিন সমৃদ্ধ হরমোন।[৪] আয়োডিনের তিনটি অণু থাকায় এর নামকরণ T3 করা হয়েছে। অপরদিকে T4 চার আয়োডিন অণু থাকে। [১] এছাড়া পেপ্টাইড হরমোন ক্যালসিটোনিনও থাইরয়েড গ্রন্থিতে তৈরি হয়।
জিন ও প্রোটিন প্রকাশসম্পাদনা
মানব কোষের প্রায় ২০ হাজার প্রোটিন কোডিং জিন প্রকাশ প্রায় এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই সাধারণ থাইরয়েডে প্রকাশিত। [৫][৬] এসমস্ত জিনের প্রায় ২৫০ টির মতো জিন মূলতঃ থাইরয়েডে প্রকাশিত এব ২০টি জিন অত্যন্ত সুচারুভাবে থাইরয়েড সংক্রান্ত। এই প্রোটিন সংলগ্ন জিনগুলো থাইরয়েড হরমোন সিন্থেসিসে জড়িত। উদাহরণস্বরূপঃ থাইরোগ্লোবিউলিন, টিপিও এবং আইওয়াইডি ফলিকুলার কোষে প্রকাশিত হয়।
ইতিহাসসম্পাদনা
থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ এবং এর চিকিৎসা নিয়ে হাজার বছর আগের দলিল বিদ্যমান। অবশ্য এই গ্রন্থির বর্ণনা ও নামকরণ পাওয়া যায় রেনেসাঁ যুগের পরবর্তী সময়। [৭] খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ তে চৈনিক ভাষায় গলগন্ড রোগ সংক্রান্ত লিপিতে থাইরয়েডের প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে চীনে গলগন্ড রোগের চিকিৎসায় পোড়া স্পঞ্জ ও সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করা হত। এই চিকিৎসাপদ্ধতি পরে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়ও ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদের বই শুশ্রত সমহিতাতে ১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম ও গলগন্ড রোগের ব্যাপারে বর্নিত আছে।[৮] হিপোক্রেটস ও প্লেটো চার শতকের দিকে থাইরয়েড গ্রন্থিকে লালাগ্রন্থি হিসেবে বর্নিত করেন।
১৫০০ সালের দিকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি প্রথম থাইরয়েডের চিত্র অঙ্কন করেন। ১৫৪৩ সালে আন্দ্রেয়া ভ্যাসিলাস প্রথম থাইরয়েড গ্রন্থির চিত্রসহ শারীরস্থানীয় বর্ণনা প্রদান করেন। ১৬৫৬ সালে থমাস হোয়ারটন থাইরয়েড গ্রন্থির নামকরণ প্রাচীন গ্রীক শব্দ (θυρεοειδής, অর্থ বর্মেরন্যায় / বর্মাকৃতি) অনুসারে করেন। এর গঠন প্রাচীন গ্রীসে ব্যবহৃত বর্মের মতো বলে এরূপ নামকরণ করা হয়।[৯][১০]
অন্যান্য প্রাণীতেসম্পাদনা
সকল মেরুদন্ডী প্রাণীতে থাইরয়েড গ্রন্থি বিদ্যমান। মাছের ক্ষেত্রে, সাধারণত এই গ্রন্থি ফুলকার নিচে থাকে এবং সবসময় দুইভাগে বিভক্ত হয় না।অবশ্য, থাইরয়েড কোষকলা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন বৃক্ক, প্লীহা, হৃৎপিন্ড অথবা চোখে পাওয়া যায়। [১১]
অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীতে শুধুমাত্র একটি থাইরয়েড গ্রন্থি পাওয়া যায় এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রেও এর আকৃতি মানুষের থাইরয়েড গ্রন্থির মতোই।
আরো দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ Guyton & Hall 2011।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Gray's Anatomy 2008।
- ↑ ক খ গ Elsevier's 2007।
- ↑ Davidson's 2010।
- ↑ "The human proteome in thyroid gland – The Human Protein Atlas"। www.proteinatlas.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-২৫।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
- ↑ Uhlén, Mathias; Fagerberg, Linn; Hallström, Björn M.; Lindskog, Cecilia; Oksvold, Per; Mardinoglu, Adil; Sivertsson, Åsa; Kampf, Caroline; Sjöstedt, Evelina (২০১৫-০১-২৩)। "Tissue-based map of the human proteome"। Science (ইংরেজি ভাষায়)। 347 (6220): 1260419। আইএসএসএন 0036-8075। ডিওআই:10.1126/science.1260419। পিএমআইডি 25613900।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
- ↑ "Thyroid History Timeline – American Thyroid Association"। www.thyroid.org। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৬।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
- ↑ Niazi, Asfandyar Khan; Kalra, Sanjay; Irfan, Awais; Islam, Aliya (২০১৬-১১-১৩)। "Thyroidology over the ages"। Indian Journal of Endocrinology and Metabolism। 15 (Suppl2): S121–S126। আইএসএসএন 2230-8210। ডিওআই:10.4103/2230-8210.83347। পিএমআইডি 21966648। পিএমসি 3169859 ।
- ↑ Lewis, C.T. & Short, C. (1879). A Latin dictionary. founded on Andrews' edition of Freund's Latin dictionary.Oxford: Clarendon Press.
- ↑ Liddell, H.G. & Scott, R. (1940). A Greek-English Lexicon. revised and augmented throughout by Sir Henry Stuart Jones. with the assistance of. Roderick McKenzie. Oxford: Clarendon Press.
- ↑ Romer, Alfred Sherwood; Parsons, Thomas S. (১৯৭৭)। The Vertebrate Body। Philadelphia, PA: Holt-Saunders International। পৃষ্ঠা 555–556। আইএসবিএন 0-03-910284-X।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)