টমাস মান

জার্মান উপন্যাসিক ও ১৯২৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক
(থমাস মান থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পাউল টমাস মান (জার্মান: Paul Thomas Mann ;জুন ৬, ১৮৭৫ – আগস্ট ১২, ১৯৫৫) ছিলেন একজন জার্মান ঔপন্যাসিক, ছোট গল্প লেখক, প্রাবন্ধিক, সমাজ সমালোচক ও মানব-হিতৈষী; ১৯২৯ সালে মূলত তার প্রথম উপন্যাস বুদেনব্রুকস-এর জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।[১] তার প্রতীকি এবং বিদ্রূপাত্মক মহাকাব্যিক উপন্যাস, ছোটগল্প এবং নভেলাসমুহের মধ্যে মানের শিল্পসত্ত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক মানসের অন্তর্দৃষ্টি লক্ষ্যনীয়। তার বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে সাধারণভাবে ইউরোপীয় ও বিশেষভাবে জার্মান সত্ত্বার স্বরূপ উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন আধুনিক জার্মান গল্প, প্রতীক ও বাইবেলের বিভিন্ন রূপক ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন। তার বহু সাহিত্যকর্মকেই আমরা সাধারণভাবে আধুনিক ইউরোপীয় ও জার্মান সভ্যতার বিশ্লেষণ ও সমালোচনা বলে অভিহিত করতে পারি। গ্যোটে, আর্তুর শোপেনহাউয়ার, নিৎশে প্রমুখ পূর্বসুরী জার্মান কবি, কথাসাহিত্যিকদার্শনিকদের বিভিন্ন চিন্তার গভীর ও বহুমাত্রিক প্রভাব তার লেখায় দেখতে পাওয়া যায়।

টমাস মান
১৯৩৭-এ মান
১৯৩৭-এ মান
জন্মপাউল টমাস মান
(১৮৭৫-০৬-০৬)৬ জুন ১৮৭৫
ল্যুবেক, জার্মান সাম্রাজ্য
মৃত্যু১২ আগস্ট ১৯৫৫(1955-08-12) (বয়স ৮০)
জুরিখ, সুইৎজারল্যান্ড
পেশাঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক
সময়কাল১৮৯৬–১৯৫৪
ধরনউপন্যাস, নভেলা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিবুদেনব্রুকস, দ্য ম্যাজিক মাউন্টেন, ডেথ ইন ভেনিস, জোসেফ অ্যাান্ড হিজ ব্রাদার্স
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার

স্বাক্ষর
সুইজারল্যান্ডের কিলবার্গে থমাস, কাটিয়া, এরিকা, মনিকা, মাইকেল এবং এলিজাবেথ মান এর কবর

১৯০১ সালে তার প্রথম উপন্যাস বুদেনব্রুকস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসেই ঔপন্যাসিক হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এর পরবর্তী বছরগুলিতে তার হাত থেকে একের পর এক বেরোয় আরও নানা বিখ্যাত উপন্যাস, বড়গল্প ও ছোটগল্প - টোনিও ক্রোগার, ত্রিস্তান, ভেনিসে মৃত্যু (Der Tod in Venedig; ড্যের টোড ইন ভেনেডিগ; Death in Venice), প্রভৃতি তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্য ম্যাজিক মাউন্টেন (Der Zauberberg; ড্যের ৎসাউবারবের্গ; জাদুপাহাড়) উপন্যাস; এই উপন্যাসে তিনি মূলত বিল্ডুংসরোমান ধারার অনুসরণ করেন।[২] এই উপন্যাসে উপন্যাসের গঠনকাঠামোগত দিক থেকে মান'এর শৈল্পিকসত্ত্বার পূর্ণ বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। গল্পকথককে আমরা এখানে দেখি গল্পের চরিত্রগুলির থেকে এমন একটা দূরত্ব বজায় রাখতে, যাতে তার বলা গল্পের মধ্য দিয়ে চরিত্রগুলির কাজকর্ম, চিন্তাভাবনার প্রতি আমরা খানিকটা সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠি, সংশয়বাদে আক্রান্ত হই; গল্পকথনের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে নানা আয়রনি, বিভিন্ন দৃশ্য (যেমন রাতের আকাশের তারামণ্ডলেরা) বারে বারে ফিরে এসে তৈরি করে একধরনের লিটমোটিফ, বাক্যবিন্যাসের অদ্ভুত জটিলতা তৈরি করে এক নিঃসঙ্গতা ও নৈঃশব্দের আবহ।[৩] তার লেখার এই বৈশিষ্ট্যসমূহ তার পরবর্তী বহু লেখাতেও দেখতে পাওয়া যায়; মারিও অ্যাান্ড দ্য ম্যাজিসিয়ান (Mario und der Zauberer; মারিও উনদ ড্যের ৎসাউবারার; ১৯২৯), ইয়োজেফ ও তার ভাইয়েরা (Joseph und seine Brüder১৯৩৩-৪৩), ডক্টর ফাউস্টাস (Doktor Faustus; ১৯৪৭), প্রভৃতি উপন্যাস তার উদাহরণ।

রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রশ্নেও তিনি যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। প্রথমদিকে তিনি পশ্চিমী গণতন্ত্র নিয়ে কিছুটা সংশয়বাদী ছিলেন, কিন্তু ১৯২০'র দশকে তিনি ভাইমার রিপাবলিকের সমর্থনে দৃঢ়ভাবেই তার মতামত ব্যক্ত করেন ও তার রক্ষার্থে পাশে দাঁড়ান। কিন্তু ১৯৩৩'এ নাৎসিরা জার্মানির ক্ষমতায় এলে তিনি একরকম বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করেন ও প্রথমে সুইৎজারল্যান্ডে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ১৯৩৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১৯৪৪ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৫২ সালে তিনি আবার সুইৎজারল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করেন। ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট সেখানে জুরিখ শহরে তার মৃত্যু ঘটে।

টমাস মান ল্যুবেক'এর এক অভিজাত ও ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার স্ত্রী কাতিয়া (বিবাহপূর্ব পদবী প্রিংসহাইম) ছিলেন তার লেখা বেশ কিছু চরিত্র ও সাহিত্যকর্মের অন্যতম অনুপ্রেরণা। তার দাদা হাইনরিখ ও তার ছয় সন্তানের মধ্যে চারজনই (এরিকা, ক্লাউস, গোলো ও মোনিকা) সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

জীবন সম্পাদনা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

পাউল টমাস মান জার্মানির ল্যুবেক'এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টমাস ইয়োহান হাইনরিখ মান এবং জুলিয়া দ্য সিলভা ব্রুনস দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তার বাবা ছিলেন ল্যুবেক'এর নামকরা ব্যবসায়ী ও শহর পরিষদের কাউন্সিলর। অন্যদিকে তার মা মা'এর দিক থেকে ছিলেন ব্রাজিলীয়। এই দম্পতির আরও চার সন্তান ছিল - অগ্রজ হাইনরিখ (১৮৭১ - ১৯৫০), ও অনুজ জুলিয়া (১৮৭৭ - ১৯২৭; আত্মহত্যা), কারলা (১৮৮১ = ১৯১০; আত্মহত্যা) ও ভিক্টর (১৮৯০ - ১৯৪৯)। মা রোমান ক্যাথলিক হলেও বাবার ধর্মবিশ্বাস অনুসারে ইভানজেলিস্ট হিসেবে সন্তানদের ব্যাপ্টিজম করা হয়। ১৮৭৫ সালের ১১ জুন, মাত্র ছয়দিন বয়সে শহরের মারিয়েনকির্খেতে টমাসের ব্যাপ্টিজম সম্পন্ন হয়।[৪] তার শৈশবের দিনগুলো ছিল টমাসের নিজের ভাষাতেই যথেষ্ট আদরযত্নে পরিপূর্ণ ও ভাগ্যবান।

১৮৯১ সালে মানের বাবার মৃত্যু হলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে এবং পরিবারের সবাই মিউনিখ পাড়ি জমান। মান বিজ্ঞান বিষয়ে পড়া-শোনার উদ্দেশ্যে লুড্রিকের জিম্যানিসিয়াম স্কুলে ভর্তি হন, এবং পরবর্তিতে সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গঠনের জন্য মান লুড্বিক ম্যাক্সিমিলিয়ানাস ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখট্যাকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখে ইতিহাস, অর্থনীতি, শিল্পের ইতিহাস এবং সাহিত্য বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।[৫]

কর্ম জীবন সম্পাদনা

টমাস মানের সাহিত্যকর্ম প্রথম ইংরেজিতে ভাষান্তর করেন এইচ. টি. লওয়্যি-পর্টার ১৯২৪ সালে।[৬] তবে মান নোবেল পুরস্কার পান মুলত তার মহাকাব্য বাডেনব্রুকস (১৯০১), দ্য ম্যাজিক মাউন্টেন (Der Zauberberg, ১৯২৪) এবং অসংখ্য ছোটগল্প রচনার স্বীকৃতি হিসেবে।[৭] তার আরও একটি বিখ্যাত উপন্যাস ডক্টর ফাউস্তাস (১৯৪৭)।

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

উপন্যাস সম্পাদনা

নভেলা ও ছোটগল্প সম্পাদনা

নাটক সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Nobel Prize in Literature 1929". Nobelprize.org. সংগৃহীত ২৯ অক্টোবর, ২০১৫।
  2. টমাস মান নিজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের সামনে এক বক্তৃতায় ড্যের ৎসাউবারবের্গকে "বিল্ডুংসরোমান" বলে অভিহিত করেন। Heisserer, Dirk. Thomas Manns Zauberberg: Einstieg, Etappen, Ausblick. Königshausen & Neumann: Würzburg, 2006. আইএসবিএন ৩-৮২৬০-৩১৭১-৭ পৃঃ - ১১৩।
  3. Der Brockhaus. Universallexikon in 20 Bänden. Bd. 11, F.A. Brockhaus, Leipzig 2007, পৃঃ - ৪৭৩১।
  4. Mann, Viktor. Wir waren fünf. S. Fischer Verlage. আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৫৯৬-১২২৭৫-২
  5. "Thomas Mann Autobiography"। Nobel Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০০৮ 
  6. Horton, David (2013), Thomas Mann in English. A Study in Literary Translation, London, New Delhi, New York, Sydney: Bloomsbury. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪৪১১-৬৭৯৮-৯
  7. Nobel Prize website. Retrieved 11 November 2007

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা