বিহার ধাপ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। স্থানীয় ভাবে এটি তোতারাম পন্ডিতের ধাপ বা তোতারাম পন্ডিতের বাড়ি নামেও পরিচিত।[১][২]

বিহার ধাপ
স্থানীয় নাম
ইংরেজি: তোতারাম পন্ডিতের ধাপ
বিহার ধাপ
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থানমহাস্থানগড়
অঞ্চলবগুড়া
নির্মিত৪-১২ শতক
পরিচালকবর্গবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
মালিকবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
সূত্র নংBD-E-03-114

অবস্থান সম্পাদনা

এটি বগুড়ার শিবগঞ্জের বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত। এর পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক দিয়ে নাগর নদী প্রবাহিত হয়েছে।[২] এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় চার কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে ও ভাসু বিহার থেকে প্রায় এক কি.মি. দূরে অবস্থিত।[১]

ইতিহাস সম্পাদনা

বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৮-৬৪৫ খ্রি. এই সময়কালে বাংলার এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি মহাস্থানগড় থেকে ৬ কি.মি. পশ্চিমে পো-সি-পো বিহার নামে এক বিহারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ধারণা করা এই বিহার ধাপই সেই পো-সি-পো বিহার। এখানে ১৯৭৯-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে খনন কাজ চলে। এতে পশ্চিম অংশে পাশাপাশি দুইটি বৌদ্ধ বিহার এবং পূর্ব দিকে একটি মন্দিরের অবকাঠামো আংশিকভাবে উন্মোচিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৫-০৬ সালের দিকে পুনরায় খনন কাজ চালানো হয়। তখন পূর্বে আবিস্কৃত মন্দিরের পাশে আরও একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের কিয়দংশ উন্মোচিত হয়। দুইটি মন্দিরই উত্তরমুখী।[২]

বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখানে এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা, কাঁচের পুঁতি, ৬০টি পোড়ামাটির ফলক চিত্র, পোড়া মাটির সীল মোহর, ধুপদানী, পিরিচ, মাটির পাত্র, ১০০টি নকশা অঙ্কিত ইট, লোহার পেরেক ইত্যাদি।

প্রথম নির্মাণ যুগের স্থাপত্যকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ যুগের কাল নির্ধারণ করা হয় চার অথবা পাঁচ শতক। ধারণা করা হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্মাণকাল ছয় থেকে দশ শতকের। চতুর্থ থেকে পঞ্চম নির্মাণ যুগের স্থাপত্যকর্মে অনেক ক্ষেত্রেই পুরানো ইটের পুনর্ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। আরও ধারণা করা হয় আনুমানিক এগারো থেকে বারো শতক এই সময়ের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে এই প্রত্নস্থলটির পতন ঘটে।

অবকাঠামো সম্পাদনা

একসময় ঢিবি আকৃতির এই প্রত্নস্থলটি দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ২২০ মিটার এবং ভূমি থেকে প্রায় ২ মিটার উঁচু ছিল। প্রথম পর্যায়ে এটি খননের ফলে উত্তর-দক্ষিণে ৫৭ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বিহার আবিস্কৃত হয়। যার মাঝখানে রয়েছে একটি উন্মুক্ত আঙ্গিনা, যার চারপাশে ৩৭টি ভিক্ষু কক্ষ দেখা যায়। উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে ১০টি করে কক্ষ, পূর্ব দিকে ৮টি এবং পশ্চিম দিকে ৯টি কক্ষের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। কক্ষগুলোর প্রাচীরের পুরুত্ব ২ মিটার থেকে ২.৬ মিটার। এখানে প্রাপ্ত দুই মন্দিরের একটি ছয় ধাপ বিশিষ্ট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৫ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে সম্ভবত ৬ মিটার দীর্ঘ। এর প্রতিটি ধাপ ২৪ সেঃমিঃ চওড়া, ১.৭০ সেঃমিঃ লম্বা এবং ২৭ সেঃমিঃ উঁচু। এর পলেস্তর ২ সেঃমিঃ পুরু এবং ইটের গুঁড়া ও কাদামাটির তৈরি। একে বজ্রলেপ বলে এবং যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যে পাওয়া যায় নাই। প্রথম নির্মাণ যুগের এই মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে পুরনো এ মন্দিরের সাথে সংযুক্ত করে পশ্চিম পাশে একটি নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয় এবং পুরানো মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। খনন কাজ এখনো সম্পূর্ণ না হওয়ায় দ্বিতীয় মন্দিরের সম্পূর্ণ অবকাঠামো উন্মোচিত হয়নি।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "শিবগঞ্জের দুই বিহার"। ৬ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "বিহার ধাপ - বাংলাপিডিয়া" 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা