তের জমিদার বাড়ি

তের জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। তের জমিদারের বাড়ি থাকায় উক্ত গ্রামটি অনেকের কাছে তের জমিদারের গ্রাম হিসেবে পরিচিত।

তের জমিদার বাড়ি
ভৌমিক জমিদার বাড়ি
প্রাক্তন নামবারো ভূঁইয়া
বিকল্প নামহাঁটুরিয়া, নাকালিয়া জমিদার বাড়ি
বেড়া জমিদার বাড়ি
বেড়া তের জমিদার বাড়ি
বাহাদুরপুর ভৌমিক জমিদার বাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানবেড়া উপজেলা, বাহাদুরপুর
শহরবেড়া উপজেলা, পাবনা জেলা, বাহাদুরপুর, ফরিদপুর জেলা, ডুয়ার্স জলপাইগুড়ি জেলা
দেশবাংলাদেশ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষ
খোলা হয়েছে১৮৬৮
স্বত্বাধিকারীপ্রমথনাথ বাগচী
কাঞ্চীনাথ বাগচী
উপেন্দ্রনাথ বাগচী
ভবানীচরণ বাগচী
কালী সুন্দর রায়
ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়
সুরেন চন্দ্র রায়
সুধাংশু মোহন রায়
শক্তিনাথ রায়
বঙ্কিম রায়
ক্ষুদিরাম পাল
যদুনাথ ভৌমিক
যতীন্দ্রনাথ ভৌমিক
হারাধন ভৌমিক
পঞ্চানন ভৌমিক
শ্রী সুবোধ ভৌমিক
শ্রী সুহৃদ ভৌমিক
শ্রী শুভজিৎ ভৌমিক
কারিগরী বিবরণ
পদার্থইট, সুরকি, রড ও কাঠ

ইতিহাসসম্পাদনা

ভৌমিক,ভূঁইয়া, তালুকদার প্রভৃতি নাম বাংলায় মুঘল শাসনামলের আগেও ভূমির অধিকারিক অর্থেও ব্যবহার করা হতো।এ কারণেই এ অঞ্চলটিকে বারো ভূঁইয়াদের দেশ ও অনেকে বলতেন।উড়িষ্যাতেও প্রাচীন জমির মালিকদের একই নামে উল্লেখ করা হতো।প্রচলিত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে তাদের মতো পরিবর্তন করতে মুঘল শাসকগন তাদের অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই শব্দটি গ্রহণ করেছিলেন।মুঘলশাসনামলে জমিদারি ব্যবস্থাপনা এক নতুন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হতে থাকে।মুঘল প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জমিদারগণ যে ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করতো তা জমিদারির সংজ্ঞাকে আরো জটিল কতে তোলে।জাতিগত পদবী থেকে শাসনকাজে নিয়োজিত বিভিন্নস্তরের ব্যক্তির জমিদারি পদবী গ্রহণ করে প্রায় স্বাধীন রাজোচিত এলাকার শাসক, যেমনঃ রাজা,রানা ইত্যাদি।প্রায় ১৯০০ শতকের শুরু থেকে বর্তমান পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নে এবং ফরিদপুরের বাহাদুরপুর গ্রামে মোট ১৩টি জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। ধারণা করা হয় এই তেরজন জমিদার ছিলেন তিন বংশের। এই তেরজন জমিদার মিলেই উক্ত এলাকার জমিদারী ভাগাভাগি করে পরিচালনা করতেন। উক্ত গ্রামটিতে প্রথমে দুই একজন জমিদার ছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৬৮ সালের পর থেকে জমিদারদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ তেরজন জমিদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাই উক্ত গ্রামটি জনসাধারণের কাছে তের জমিদারের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। গ্রামটির সাথে নদীর সংযোগ থাকায় মূলত ঐসময়ে এটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা বা কেন্দ্র ছিল। তখন ভারতের কলকাতা শহরের সাথে নৌপথে সংযোগ ছিল। তাই এখানে এতো জমিদারের আত্মপ্রকাশ। এখানে তিন বংশের জমিদাররা জমিদারী করেন। তারা হলেন প্রমথনাথ বাগচী, কাঞ্চীনাথ বাগচী, উপেন্দ্রনাথ বাগচী, ভবানীচরণ বাগচী, কালী সুন্দর রায়, ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়, সুরেন চন্দ্র রায়, সুধাংশু মোহন রায়, শক্তিনাথ রায়, বঙ্কিম রায়, ক্ষুদিরাম পাল, যদুনাথ ভৌমিক, যতীন্দ্রনাথ ভৌমিক, হারাধন ভৌমিক এবং পঞ্চানন ভৌমিক। তাদের সকলেরেই আলাদা আলাদা বাড়ি ও জমিদারী ছিল। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত তারা এই জমিদারী পরিচালনা করেছেন।

অবকাঠামোসম্পাদনা

তেরজন জমিদারের আলাদা আলাদা সুন্দর কারুকার্যখচিত বিশাল অট্টালিকা ছিল। এছাড়াও তাদের জলসাঘর, কাছারিঘর ও সাঁন বাঁধানো পুকুরসহ ইত্যাদি ছিল। ভৌমিক পরিবারের শরিক ও বংশধর হারাধন ভৌমিক এর পুত্র পঞ্চানন ভৌমিক (জন্ম ১৮৮০ - মৃত্যু ১৯৩৫) ১৯০১ সালে ফরিদপুরের বাহাদুরপুর জমিদারি এস্টেটে প্রস্থান করেন ও জমিদারি বন্দোবস্তের ও পরিচালনার ভার নেন। পরবর্তীকালে পদ্মা নদীর বন্যায় ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে প্রচুর জমি ও বাস্তুভিটা পদ্মায় নিমজ্জিত হয় ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

বর্তমান অবস্থাসম্পাদনা

তের জমিদার বাড়ির মধ্যে দুই একটি ছাড়া বাকী সবগুলোই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যেগুলো এখনো টিকে আছে। সেগুলোও বেশ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এখনো দুই একটিতে কয়েকটি পরিবার বাস করে। এছাড়াও জমিদারদের তৈরি করা অন্যান্য স্থাপনাও এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যদুনাথ ভৌমিক এর পুত্র যতীন্দ্রনাথ ভৌমিক এর মৃত্যুর পর ভৌমিক পরিবারের শরিক ও বংশধর হারাধন ভৌমিক এর পুত্র পঞ্চানন ভৌমিক (জন্ম ১৮৮০ - মৃত্যু ১৯৩৫) ১৯০১ সালে ফরিদপুরের বাহাদুরপুর জমিদারি এস্টেটে প্রস্থান করেন ও জমিদারি বন্দোবস্তের ও পরিচালনার ভার নেন। পরবর্তীকালে পদ্মা নদীর বন্যায় ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে প্রচুর জমি ও বাস্তুভিটা পদ্মায় নিমজ্জিত হয় ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পঞ্চানন ভৌমিকের দুই পুত্র সুবোধ কুমার ভৌমিক (জন্ম - ১৯০৫) এবং প্রবোধ কুমার ভৌমিক (জন্ম ১৯০১) ১৯৩৬ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতবর্ষের রংপুর ডিভিশনের অন্তর্গত ডুয়ার্স এর রাঙামাটি ও রায়ডাক চা বাগানে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে সংরক্ষণের অভাবে তের জমিদারের বসতভিটা বা অন্যান্য নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এই পরিবারের বর্তমান বংশধর ষষ্ঠ প্রজন্ম সুহৃদ ভৌমিক (১৯৫২ - ২০১৩) এর পুত্রসন্তান তথা সপ্তম প্রজন্ম শ্রী শুভজিৎ ভৌমিক [ SUBHAJIT BHOWMIK ], যিনি একজন বাস্তু কারিগর এবং সরকারি দফতরে কর্মরত। যিনি বর্তমানে এই ভৌমিক জমিদার বংশের শেষ বংশধর।     

তথ্যসূত্রসম্পাদনা