তেতুলিয়া জামে মসজিদ
তেতুলিয়া জামে মসজিদ, খান বাহাদুর সালামতুল্লাহ মসজিদ এবং তেতুলিয়া শাহী মসজিদ নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে অবস্থিত।[১] খান বাহাদুর মৌলভী কাজী সালামাতুল্লাহ খান, তেতুলিয়ার জমিদার কাজী পরিবারের বংশধর এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।[১] তিনি “সালাম মঞ্জিল” (বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত) নামে একটি জমিদার প্রাসাদেরও প্রতিষ্ঠাতা।[২] ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট্য[৩] এই মসজিদটি মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন অনুকরণ ১৮৫৮-৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়। দেখতে অনেকটা টিপু সুলতানের বংশধরদের আমলে তৈরীকৃত বিভিন্ন স্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[১][১][৪]
তেতুলিয়া জামে মসজিদ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
জেলা | সাতক্ষীরা জেলা |
অঞ্চল | খুলনা বিভাগ |
পবিত্রীকৃত বছর | ১৮১৪-১৮১৫ |
অবস্থা | সংরক্ষিত |
অবস্থান | |
অবস্থান | সাতক্ষীরা জেলা, বাংলাদেশ |
দেশ | বাংলাদেশ |
এলাকা | তালা উপজেলা |
স্থাপত্য | |
ধরন | মসজিদ |
প্রতিষ্ঠাতা | মৌলভী কাজী সালামাতুল্লাহ খান |
অর্থায়নে | জমিদার কাজী পরিবার |
বিনির্দেশ | |
গম্বুজসমূহ | ০৬টি |
মিনার | ০৪টি |
উপাদানসমূহ | ইট, টেরাকোটা ও টাইল |
এনএইচএল হিসাবে আখ্যাত | মুঘল স্থাপত্যরীতি |
১৯৮২ সালে সিংহ দরজা (বাংলাঃ প্রধান তোরন) ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যা সালাম মঞ্জিলের প্রবেশপথ ছিল।[৫] এই তোরণ দিয়ে প্রবেশের সময় ভ্রমনকারী সবুজের সমারোহ অবলোকন করতে পারে। কমপাউন্ডে পাশে একটি ঝুলন্ত ছাদের নিচে একটি দীর্ঘ বারান্দা আছে যা দ্বী-স্তম্ভ দ্বারা দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দাটি অনেকটা দেখতে কার্যসভার মত দেখতে। যা পূর্বে দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত হত যখন এই জমিদার বংশ ক্ষমতায় ছিল। পূর্বে এক বা একাধিক বারান্দার কোনার কক্ষ ছিল যেখানে পালকী রাখা হত।
মধ্য ঊনবিংশ শতকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এই ধরনের দ্বী-স্তম্ভবিশিষ্ট্য স্থাপনা খুবই কম ছিল। এই দ্বী-স্তম্ভ সিস্টেমটি পুরো ছাদকে ধরে রাখার প্রয়োজনে নির্মিত হয়। মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা কমপক্ষে ১০.৫ ফুট।
বর্তমানে, “সিংহ দরজা” নতুন ধরনে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। যদিও সালাম মঞ্জিলের বাকি অংশ এখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত।
সালামাতুল্লাহ শাসনামল
সম্পাদনাখান বাহাদুর সালামাতুল্লাহ খান তার পিতা মৌলভী কাজী সানা”আতুল্লাহ’র কাছ থেকে উত্তারাধিকার সূত্র ক্ষমতা প্রাপ্ত হন, যিনি কাজী আমানাতুল্লাহ’র পুত্র ছিলেন।[২] তার পিতা পিতা ছিলেন কাজী-আল-কুজত (প্রধান বিচারক) বাকুল্লাহ খান, যিনি মুঘল সনদ –এর উপাধীপ্রাপ্ত ছিলেন। খান বাহাদুর সালামাতুল্লাহ’র উত্তারাধিকার ছিলেন তার পুত্র মৌলভী কাজী হামিদুল্লাহ খান। তার পুত্র ছিলেন মৌলভী কাজী মুহাম্মদ মিন্নাতুল্লাহ খান। মৌলভী কাজী মুহাম্মদ মিন্নাতুল্লাহ খান তেতুলিয়ার বিখ্যাত কাজী পরিবারের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
মিন্নাতুল্লাহ খানের দুই ছেলে খান সাহিব কাজী রিজোয়ানুল্লাহ খান এবং কাজী মুহাম্মদ শফীউল্লাহ খান। এই পরিবারে এই দুই বংশধরের সময় থেকেই তেতুলিয়ার বিখ্যাত কাজী পরিবারের সম্পদের প্রাচুর্যতা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।
খান সাহিব কাজী রিজোয়ানুল্লাহ খান এবং কাজী মুহাম্মদ শফীউল্লাহ খান উভয়ের কবর তেতুলিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত।
কাজী শফীউল্লাহ খান তৎকালীন প্রেসিডেন্সি মিউনিসিপ্যাল মেজিস্ট্র্যাট এবং ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার ট্রাইবুনাল সেশন জজ খান বাহাদুর আবু নসর মুহাম্মদ আলী’র দ্বিতীয় কন্যা শাইকাতুন্নেসা-কে বিয়ে করেন। তিনি খান বাহাদুর উপাধী অর্জনের পূর্বে ১৯১৪ সালে তিনি খান সাহিব উপাধী অর্জন করেন।[৬] খান বাহাদুর ভারতের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যাদের পূর্বপুরুষের সাথে মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের শাসনামলের আজমীরের কামরুদ্দীন হোসেন খানের সাথে সম্পর্ক পাওয়া যায়। খান বাহাদুরের পিতা সামস-উল-উলামা মৌলভী আবুল খায়ের মুহাম্মদ সিদ্দীক, যিনি তার বিজ্ঞের জন্য ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে শামস-উল-উলামা উপাধী অর্জন করেন।[৭][৮] মৌলভী আবুল খায়ের মুহাম্মদ সিদ্দীক কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের আরবী শিক্ষার অধ্যাপকও ছিলেন। খান বাহাদুর আবু নসর মুহাম্মদ আলীর ভাইদের মধ্যে (আবু মুহামেদ মুহাম্মদ আসাদ) আরেকজনও ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে খান বাহাদুর উপাধী অর্জন করেন এবং তিনি অবিভক্ত বাংলার ডিরেক্টর অব পাবলিক (DPI) ইনস্ট্রাকশনের প্রথম মুসলিম পরিচালকও ছিলেন। ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম পাওয়া যায়। শফীউল্লাহ খানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র (তেতুলিয়ার জমিদার পরিবার) “সিদ্দীক” এবং রিজোয়ানুল্লাহ খানের পুত্র (তেতুলিয়ার জমিদার পরিবার) “কাদের” এর নামকরণ করেন খান বাহাদুর আবু নসর মুহাম্মদ আলী, যিনি শফীউল্লাহ খানের শ্বশুর ছিলেন।
শফীউল্লাহ খানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র আবু সালেহ মুহাম্মদ সিদ্দীক ব্রিটিশ ভারতের খান সাহিব উপাধী প্রাপ্ত খান সাহিব মাকসুদ আহমেদের কন্যাকে বিয়ে করেন। আবু সালেহ মুহাম্মদ সিদ্দীক যুক্তরাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি ২০০৭ মারা যান এবং লন্ডন বোরো অব অ্যালিং এর গ্রিনফোর্ড সামধীক্ষেত্রের মুসলমান অংশে তাকে কবর দেওয়া হয়। শফীউল্লাহ খানের কন্যা বাগেরহাটের খান বাহাদুর সৈয়দ সুলতান আলীর পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ আলীকে বিয়ে করেন। গবেষণা থেকে এই ধরনের আরো কিছু সদস্যের নাম পাওয়া যায় যেমন কাজী-আল-কুজত সায়্যিদ আহমেদ আলী খান, কাজী সাদাতুল্লাহ, নায়েব কাজী ইফাজাতুল্লাহ, মীর জুমলাহ উবায়েদ খান বাহাদুর তুরখান, কাজী-আল-কুজত গোলাম ইয়াহা খান, মুহাম্মদ নাসারাতুল্লাহ, কাজী ইজ্জতুল্লাহ, নাজিবুল্লাহ খান। যারা ব্রিটিশ শাসনামলে যশোর প্রদেশের (সাতক্ষীরা তখন যশোরের অধীনস্থ ছিল) বিভিন্ন স্থানের গভর্নর ছিলেন, সম্ভবত ১৮ শতকে পসচিম বঙ্গ ও উড়িষ্যার বিভিন্ন স্থানের গভর্নর ছিলেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ Chowdhury, Nazly & Ahmed, Babu (2006). Mughal Monuments of Bangladesh, p. 90. Edited by Professor Dr Enamul Haque. Dhaka, Bangladesh: Traditional Photo Gallery. Sponsored by HSBC.
- ↑ ক খ Khalequzzaman, Badru Mohammad (2006). Tala Upojelar Itihash-Oitijjo, "History-Heritage of Tala Upazila", p. 302. Dhaka, Bangladesh: Ittadi Grontho Prokash.
- ↑ Chowdhury, Nazly & Ahmed, Babu (2006). Mughal Monuments of Bangladesh, p. 157. Edited by Professor Dr Enamul Haque. Dhaka, Bangladesh: Traditional Photo Gallery. Sponsored by HSBC.
- ↑ Chowdhury, Nazly & Ahmed, Babu (2006). Mughal Monuments of Bangladesh, p. 33. Edited by Professor Dr Enamul Haque. Dhaka, Bangladesh: Traditional Photo Gallery. Sponsored by HSBC.
- ↑ Khalequzzaman, Badru Mohammad (2006). Tala Upojelar Itihash-Oitijjo, "History-Heritage of Tala Upazila", picture section. Dhaka, Bangladesh: Ittadi Grontho Prokash.
- ↑ Gift of Horace W. Carpentier (1914). Second supplement to Who's who in India [microform]: brought up to 1914. Retrieved from http://www.archive.org/stream/secondsupplement00luckrich/secondsupplement00luckrich_djvu.txt
- ↑ Extraordinary (1897, January 1).The Gazette of India. Published by Authority. Retrieved from http://dspace.wbpublibnet.gov.in:8080/dspace/bitstream/10689/10752/12/Extraordinary_JAN-1.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে
- ↑ Lethbridge, Roper. The golden book of India: a genealogical and biograhical dictionary of the ruling princes, chiefs, nobles, and other personages, titled or decorated, of the Indian empire, with an appendix for Ceylon. Retrieved from http://www.ebooksread.com/authors-eng/roper-lethbridge/the-golden-book-of-india-a-genealogical-and-biograhical-dictionary-of-the-rulin-hci/page-4-the-golden-book-of-india-a-genealogical-and-biograhical-dictionary-of-the-rulin-hci.shtml ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে