তিওয়া জনগোষ্ঠী
তিওয়া আসাম-এর একটি উপজাতি। আসামের নগাঁও, মরিগাঁও এবং কার্বি আংলং জেলাতেই এদের মূল বসতি যদিও কামরূপ জেলা-এর দক্ষিণ-পূর্ব অংশে, লখিমপুর জেলা-এর কয়েকটি গাঁওয়ে এবং যোরহাট-এর কাছে তিতাবরে কিছুসংখ্যক তিওয়ালোক আছে। পূর্বে এই জন-জাতির লোকরা 'লালুং' নামে পরিচিত ছিল যদিও বর্তমানে এরা নিজেকে 'তিওয়া' বলে পরিচয় দেয়। কার্বিদের সাথে তিওয়াদের যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে তাঁদের দুটি বিশেষ উপজাতি হিসাবে মনে করা কঠিন। দুটি উপজাতির সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্যের থেকে সাদৃশ্যই বেশি।
শ্রেণী বিভাজন
সম্পাদনাতিওয়ারা কয়েকটি কুলে বিভক্ত। যেমন: মছরং, কোবঁর, পাটর, মাছেরেং, মাগর, মাদুর, লাদুর, পুরু, ছাগারা, মালৈ, আগারা, চঞ্চর, কচ, চলং, মুনি, মেলাং, লবম ইত্যাদি। এর মধ্যে মছরং এবং মাছরেং কুলকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়। উল্লেখ্য প্রতিটি কুলই বহির্বিবাহী। বিশেষ একটি কুলে অন্য একটি বিশেষ কুলের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করতে এবং রাখতে পারে।
তাঁদের ব্যবহার করা উপাধিসমূহ হচ্ছে:-
বরদ পর্যন্ত , দেউরী ,হুকাই, আমচি ,ড্রঙলি,ফামচঙ,পামচং,মান্তা,লালুং,কোঁয়র,পাটর ইত্যাদি
ধর্ম-বিশ্বাস
সম্পাদনাতিওয়ারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অতীতে তাঁদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ক্রিয়া-কাণ্ড ছিল যদিও বর্তমানে তাঁরা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে। মহাদেব এবং কেঁচাইখাতী গোসাঁনী তাঁদের আরাধ্য দেব-দেবী। বুধবার তিওয়াদের গুরুবার।
অর্থনৈতিক জীবন এবং শিক্ষা-দীক্ষা
সম্পাদনাতিওয়াদের অর্থনৈতিক জীবন আসামের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে এক। তাঁদের বেশিসংখ্যক লোকই কৃষিজীবী। ধান, সরিষা, মাষ, আলু ইত্যাদির চাষ করে তাঁরা জীবন নির্বাহ করেন। অর্থনৈতিক দিকে তিওয়ারা এখনও অনুন্নত। একমতো শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অধিক-সংখ্যক তিওয়ালোক পিছিয়ে পড়া।
ভাষা-দোবান
সম্পাদনাতিওয়াদের নিজস্ব কথিত ভাষা বা দোয়ান আছে যদিও ভৈয়ামর অনেকসংখ্যক তিওয়ালোক তা বদলে ফেলেছে। বর্তমানে অসমীয়া ভাষাকেই তাঁরা মাতৃভাষারূপে ব্যবহার করেছে।
উৎসব-পার্বণ, সাজ-পোশাক ,এবং জীবন-নির্বাহের পদ্ধতি
সম্পাদনাউৎসব-পার্বণের ক্ষেত্রে ভৈয়ামের তিওয়ারা স্থানীয় অন্য অসমীয়াদের পালন করা উৎসবকেই পালন করেন। তিওয়াদের জীবন-নির্বাহের পদ্ধতির অসমীয়া ভাষা-ভাষী হিন্দুদের সাথে অনেকটি মিল আছে।
তিয়াদের পরম্পরাগত সাজ-পোশাক ::
১/জচকাই :- তিওয়া মহিলার পরা দখনার মতো চাদর
২/ফাচকাই :- বুকে পরা ফুলাম চাদর
৩/ফাগুড়ি:- তিওয়া পুরুষের মাথায় পরা পাগুড়ি
৪/ফালি:-তিয়াদের পরম্পরাগত গামোচা
৫/ফুইছা লো:- ডিঙিতে পরা পয়সার মনি বা মালা
জনসংখ্যা
সম্পাদনাবর্তমানে আসামে তিওয়াদের জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। [১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অসম অভিধান, শান্তনু কৌশিক বরুয়া, বনলতা,২০০১,পৃষ্ঠা-১১০-১১১ (১)