মুহাম্মদ তালাত পাশা (উসমানীয় তুর্কি: محمد طلعت پاشا, তুর্কি: Mehmed Talât Pasha, ১৮৭৪ – ১৫ মার্চ ১৯২১) (শুধু তালাত পাশা বলেও পরিচিত) ছিলেন তিন পাশা নামে অবিহিত ব্যক্তিত্রয়ের অন্যতম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা তিনজন উসমানীয় সাম্রাজ্যকে কার্যত শাসন করতেন।[২]

মুহাম্মদ তালাত
উসমানীয় সাম্রাজ্যের উজিরে আজম
কাজের মেয়াদ
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ – ৮ অক্টোবর ১৯১৮
সার্বভৌম শাসকপঞ্চম মুহাম্মদ
ষষ্ঠ মুহাম্মদ
পূর্বসূরীসাইদ হালিম পাশা
উত্তরসূরীআহমেদ ইজ্জত পাশা
অর্থমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
নভেম্বর ১৯১৪ – ৪ নভেম্বর ১৯১৭
সার্বভৌম শাসকপঞ্চম মুহাম্মদ
পূর্বসূরীমুহাম্মদ জাভিদ বে
উত্তরসূরীআবদুর রহমান ভেফিক সায়িন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১২ জানুয়ারি ১৯১৩ – ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭
সার্বভৌম শাসকপঞ্চম মুহাম্মদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মসেপ্টেম্বর 1, 1874
কিরকালি, এদির্ন‌ ভিলায়েত, উসমানীয় সাম্রাজ্য (আধুনিক কার্দ‌জহালি, কার্দ‌জহালি প্রদেশ, বুলগেরিয়া)
মৃত্যু১৫ মার্চ ১৯২১ (৪৭ বছর)
বার্লিন, জার্মানি
জাতীয়তাউসমানীয়
রাজনৈতিক দলকমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস
ধর্মবেকতাশি[১]

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এদির্নে‌র ডেপুটি হওয়ার মাধ্যমে উসমানীয় রাজনীতিতে তার অভিষেক হয়। এরপর তিনি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ও পরবর্তীকালে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে উজিরে আজম হন।[২] ১৯১৮ তে তিনি আনোয়ার পাশাজামাল পাশার সাথে পালিয়ে যান। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে বার্লিনে আর্মেনীয় গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া সোগোমন টেহলিরিয়ান নামক ব্যক্তি তাকে হত্যা করে।[২]

অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী থাকার সময় তালাত পাশা ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল কনস্টান্টিনোপলের আর্মেনীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের আদেশ দেন[৩][৪][৫] এবং সাময়িক স্থানান্তর আইনের অনুরোধ করে। এর ফলে সাম্রাজ্যের ব্যাপক সংখ্যক আর্মেনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়।[৬][৭][৮][৯]

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মুহাম্মদ তালাত ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এদির্ন‌ ভিলায়েতের কিরকালি শহরে একটি তুর্কি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের একজন সরকারি চাকরিজীবী।[১০] তিনি বর্তমান বুলগেরিয়ার দক্ষিণপূর্বের পার্বত্য অঞ্চলের গ্রাম থেকে আসেন। তার কর্কশ ব্যবহারের কারণে তাকে সনদ ছাড়া সিভিল প্রিপারেটরি স্কুল ত্যাগ করতে হয়। ডিগ্রি অর্জন না করে তিনি এদির্নে টেলিগ্রাফ কোম্পানির স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। তার বেতন কম থাকার কারণে তিনি এদির্নের ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি বিদ্যালয়ে তুর্কি ভাষা শিক্ষাদানের কাজ করতেন।[১০]

২১ বছর বয়সে তিনি তার এক ঊর্ধ্বতন প্রধান শিক্ষকের মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একটি টেলিগ্রাম পাঠানোর সময় তিনি ধরা পড়েন। এতে লেখা ছিল, “সব কিছু ঠিকভাবে চলছে। আমি শীঘ্রই আমার গন্তব্যে পৌছাবো।“ ১৮৯৩ এ পোস্ট অফিসের তার বন্ধুসহ তিনি দাপ্তরিক টেলিগ্রাফের ক্ষতি করার দায়ে অভিযুক্ত হন এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দাবি করেন যে বার্তাটি তার বান্ধবীর প্রশ্নের উত্তরে ছিল। এরপর তাকে রক্ষা করতে তার বান্ধবী এগিয়ে আসে। তাকে দুই বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। পরে ক্ষমা করা হলেও তাকে সেলোনিকায় পোস্টাল কেরানি হিসেবে নির্বাসন দেয়া হয়।[১০]

পরবর্তীতে তিনি হায়রিয়া হানিম (পরবর্তীতে হায়রিয়া তালাত বাফরালি বলে পরিচিত পান) নামক আইওনিনার জনৈক মেয়েকে বিয়ে করেন।[১১]

১৮৯৮ থেকে ১৯০৮ এর মধ্যে তিনি সেলোনিকা পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান হিসেবে কাজ করেন। দশ বছর চাকরি করার পর তিনি এর প্রধান হন।

তরুণ তুর্কি বিপ্লব সম্পাদনা

১৯০৮ এ তরুণ তুর্কি আন্দোলনের নিউক্লিয়াস কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়। তবে ১৯০৮ এ বিপ্লবের পর তিনি অটোমান সংসদে এদির্নের ডেপুটি হন এবং ১৯০৯ এর জুলাইয় মাসে তাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তিনি ডাক মন্ত্রী এবং এরপর ১৯১২ তে সিইউপির সেক্রেটারি জেনারেল হন।

১৯১৩ এর জুলাইয়ে উজিরে আজম মাহমুদ শেভকেত পাশার হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পুনরায় অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হন। তালাত পাশা, আনোয়ার পাশা ও জামাল পাশা একটি গ্রুপ গঠন করেন যা পরবর্তীতে তিন পাশা বলে পরিচিতি পায়। তাদের এই সমষ্টি ১৯১৮ এর অক্টোবরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত অটোমান সরকারের শাসন করে।

আর্মেনীয় গণহত্যা সম্পাদনা

তালাত পাশা ১৯১৫ এর ২৪ এপ্রিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভেতরে সকল আর্মেনীয় রাজনৈতিক সংগঠন বন্ধ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আরমেনীয়কে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগ করেন যে এগুলো সাম্রাজ্যের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিল এবং রুশদের সাহায্য করছিল। ২৪/২৫ এপ্রিল রাতে ইস্তানবুলের প্রায় ২৫০ থেকে ২৭০ জন আর্মেনীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ,যাজক,চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও শিক্ষক। কয়েক সপ্তাহ পূর্বে ভান ভিলায়েতে আর্মেনীয় বেসামরিক লোকদের হত্যা শুরু হলেও এই গণগ্রেপ্তার অনেকের মতানুযায়ী আর্মেনীয় গণহত্যার সূচনা ধরা হয়।[১২]

তিনি আর্মেনীয়দের নির্বাসনের জন্য আদেশ জারি করেন যা আর্মেনীয় গণহত্যার একটি বড় নিয়ামক ছিল।[১৩]

তালাত পাশা অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল থেকে সিরিয়ায় আর্মেনীয়দের নির্বাসনের জন্য দায়ী ছিলেন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ তাকে অপারেশনের বর্বরতা ও লক্ষের অধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এদের সবাই আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত ছিল না। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে আনোয়ার পাশাও এর জন্য সমান দায়ী।[১৪][১৫] তার বিষয়ে বলা হয় যে তিনি রাষ্ট্রদূত হেনরি মরগেনথু সিনিয়রকে নিম্নোক্ত কথা বলেন,[১৬]

"I have accomplished more toward solving the Armenian problem in three months than Abdulhamid II accomplished in thirty years!"

তুর্কি নারীবাদী হালিদ এদিপ তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন:

"There are two factors which lead man to the extermination of his kind: the principles advocated by the idealists, and the material interest which the consequences of doing so afford certain classes. The idealists are the more dangerous, for one is obliged to respect them even if one cannot agree with them. Talaat was of that kind. I saw Talaat very rarely after the Armenian deportations. I remember well one day when he nearly lost his temper in discussing the question and said in a severe tone: 'Look here, Halide Hanım. I have a heart as good as yours, and it keeps me awake at night to think of human suffering. But that is a personal thing, and I am here on this earth to think of my people and not of my sensibilities. If a Macedonian or Armenian leader gets the chance and the excuse he never neglects it. There was an equal number of Turks and Muslims massacred during the Balkan war, yet the world kept a criminal silence. I have the conviction that as long as a nation does the best for its own interests, and succeeds, the world admires it and thinks it moral. I am ready to die for what I have done, and I know I shall die for it."[১৭]

উজিরে আজম, ১৯১৭-১৯১৮ সম্পাদনা

 

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তালাত পাশা উজিরে আজম হন। এটি প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদার পদ ছিল। তবে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভাগ্য বিপর্যয় রোধ করতে পারেননি।

পরবর্তী বছর জেরুজালেমবাগদাদ সাম্রাজ্যের হাতছাড়া হয়ে যায়। ১৯১৮ এর ২৫ এপ্রিল কারসের পতন বার্লিন চুক্তি (১৮৭৮) অনুযায়ী রাশিয়ার সর্বশেষ বিজয়কে ঘুরিয়ে দেয় এবং উসমানীয়রা ১৮৭৭ এর সীমানা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। অক্টোবরে ব্রিটিশরা উসমানীয়দের দুইটি বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয় এবং যুদ্ধবিরতির (৩০ অক্টোবর ১৯১৮) ফলে উসমানীয় সেনারা ট্রান্সককেশিয়া ছেড়ে দেয়। পরাজয় নিশ্চিত হলে ১৪ অক্টোবর ১৯১৮ তে তালাত পদত্যাগ করেন।

পলায়ন, ১৯১৯-১৯২১ সম্পাদনা

তালাত পাশা রাজধানী ছেড়ে ৩ নভেম্বর ১৯১৮ জার্মান সাবমেরিন করে বার্লিন চলে যান। এর এক সপ্তাহ পর যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়।

তালাত পাশার দেশত্যাগে জনগণের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।[১৮] তালাত পাশা সাহসী ও দেশপ্রেমিক বলে পরিচিত ছিলেন এবং স্বেচ্ছায় নিজের কাজের ফলাফলের সম্মুখীন হওয়ার মত ব্যক্তি ছিলেন।[১৮] কনস্টান্টিনোপল অধিকারের পর ইজ্জত পাশা পদত্যাগ করেন। গোল্ডেন হর্নে ব্রিটিশ জাহাজ প্রবেশের দিন তৌফিক পাশা উজিরে আজমের দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯১৯ এর ৪ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ফরিদ পাশা তার স্থলাভিষিক্ত হন যার প্রথম আদেশ ছিল কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রোগ্রেসের নেতাদের গ্রেপ্তার করা।

তুর্কি সামরিক আদালত, ১৯১৯-১৯২০ সম্পাদনা

মিত্রশক্তি কনস্টান্টিনোপল অধিকার করার পর ব্রিটিশরা ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ এর মধ্যে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিচারের জন্য চাপ দিতে থাকে। অভিযোগের মধ্যে আর্মেনীয় গণহত্যাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ধরা পড়া ব্যক্তিদের বেকিরাগা ডিভিশনে গ্রেপ্তার করে রাখা হয় এবং পরে মাল্টায় নির্বাসন দেয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যের প্রবেশের কারণে কমিটি অব ইউনিয়ন এন্ড প্রোগ্রেসকে শাস্তি দেয়ার জন্য সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ সামরিক আদালত গঠন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থানে থাকা পাশারা, যারা আর্মেনীয় গণহত্যার জন্য মৃত্যুদন্ড তালিকার সর্বাগ্রে ছিলেন, তারা বিদেশ চলে যাওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়।

১৯১৯ এর জানুয়ারি সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদের কাছে ১২০ জন সন্দেহভাজনের রিপোর্ট পৌছায়। এদের মধ্যে অনেকেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা ইচ্ছাপূর্বক যুদ্ধে সাম্রাজ্যের হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। একইসাথে আর্মেনীয় গণহত্যা ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অভিযোগ আনা হয়।[১৯] ১৯১৯ এর ৫ জুলাই আদালত আদেশ প্রদান করে। তালাত, আনোয়ার, জামাল ও ড. নাজিমকে তাদের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

ব্রিটিশরা তালাত পাশাকে ছেড়ে না দিতে বদ্ধপরিকর ছিল। গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে তারা জানতে পারে যে তিনি জার্মানি চলে গেছে। ব্রিটিশ হাই কমিশনার দামাত ফেরিত পাশাকে চাপ প্রয়োগ করেন এবং তাকে জার্মানির কাছ থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। স্যার এন্ড্রু রায়ানের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে জার্মানি উত্তর দেয় যে যদি এই ব্যক্তিদের দোষী প্রমাণিত হওয়ার কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হয় তবে তারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক। তারা এও যোগ করে যে এই ব্যক্তিদের জার্মানিতে অবস্থান নিশ্চিত না।[২০]

অবরে হার্বা‌র্ট‌ের সাক্ষাতকার, ১৯২১ সম্পাদনা

তিনি তার সর্বশেষ সরকারি সাক্ষাতকার দেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা অবরে হার্বার্টের কাছে।[২১] নিহত হওয়ার নয়দিন পূর্বে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। জার্মানির একটি ছোট শহরে ধারাবাহিক বৈঠকের সময় এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি বিগত দশ বছরের উসমানীয় সাম্রাজ্যের নীতিমালা ব্যাখ্যার সুযোগ পান।

এই সাক্ষাতকারের মাধ্যমে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয় যে তালাত পাশা মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে মিত্রশক্তির বিপক্ষে সাহায্য আশা করছেন এবং তিনি শীঘ্রই আঙ্কারায় আশ্রয় নেবেন। অধিকন্তু তিনি সাবধান করে দেন যে তুরস্কের জন্য সহায়ক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর না করলে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্যান টার্কিজমপ্যান ইসলামিজম আন্দোলনকে সক্রিয় করে তুলবেন।

সাক্ষাতকারের সময় তিনি বেশ কয়েকবার বলেন যে সিইউপি সবসময় ব্রিটিশদের বন্ধুত্ব ও পরামর্শ চেয়েছে; কিন্তু ব্রিটিশরা এসময় কোনো সাহায্য দিতে সম্মত ছিল না।[২২]

হত্যাকাণ্ড, ১৯২১ সম্পাদনা

 
সোগোমন টেহলিরিয়ান কর্তৃক তালাত পাশার হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শিরোনাম, ১৬ মার্চ ১৯২১, নিউ ইয়র্ক টাইমস

হত্যাকাণ্ডের আগে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা স্টকহোমে তালাতকে চিহ্নিত করে। তিনি কিছুদিনের জন্য সেখানে যান। তিনি বার্লিনে ফিরবেন বলে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা প্রথম তাকে বার্লিনে পাকড়াও করার সিদ্ধান্ত নিলেন জার্মানিতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে তা থেকে সরে আসে। গোয়েন্দাদের আরেকটি পরিকল্পনা ছিল যে জাহাজে করে ফিরে আসার পথে রাজকীয় নৌবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করবে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে তাকে বার্লিনে ফিরতে দেয়া হবে, তিনি বিদেশে কী করার চেষ্টা করছেন তা খুজে বের করা হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার আগে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হবে।[২৩] অবরে হার্বার্টের মাধ্যমে একাজ সম্পন্ন হয়।

পরিস্থিতি উদ্‌ঘাটন করতে ব্রিটিশরা উসমানীয়দের প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। তালাত পাশার পরিকল্পনা ব্রিটিশদের মত রুশদেরকেও শঙ্কিত করে তোলে। দুই পক্ষের গোয়েন্দারা সহযোগিতার হাত বাড়ায় এবং তালাত পাশার মৃত্যুর ব্যাপারে একমত হয়। তার শারীরিক বর্ণনা ও কোথায় থাকতে পারেন সে বিষয়ে জার্মানিতে তাদের লোকেদের জানানো হয়।[২৩]

সিদ্ধান্ত হয় যে আর্মেনীয় বিপ্লবীরা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করবে।উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার

সোগোমন টেহলিরিয়ানের বিচার সম্পাদনা

সোগোমন টেহলিরিয়ান হত্যার দায় স্বীকার করেন। দুই দিন ধরে চলা বিচারের পর জার্মান আদালত তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে। গণহত্যার ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটে ধরে আদালত এই সিদ্ধান্ত দেয়।

স্মৃতিকথা সম্পাদনা

হত্যাকাণ্ডের কিছু সময় পর The New York Times Current History এর অক্টোবর সংস্করণে "Posthumous Memoirs of Talaat" প্রকাশিত হয়।[২৪] এই স্মৃতিকথায় তিনি স্বীকার করেন যে নির্বাসন সবক্ষেত্রে আইনানুগভাবে হয়নি। তিনি দাবি করেন যে ঐ অঞ্চলে তিক্ত ইতিহাস থাকা আর্মেনীয় ও কুর্দিদের মধ্যে ঘৃণার পরিবেশ ছিল। সেখানকার কর্মকর্তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং অঞ্চলটির অবস্থার অবনতি হয় ও জনগণ নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়। তিনি স্বীকার করেন যে সরকারের দায়িত্ব ছিল এ সকল অন্যায় দমন করা এবং দাবি করেন যে অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়ীদের আইনানুযায়ী শাস্তি দেয়ার জন্য গ্রেপ্তারের আদেশ দেন।[২৪]

I admit that we deported Armenians from our eastern provinces, and we acted in this matter upon a previously prepared scheme. The responsibility of these acts falls upon the deported people themselves. When we entered the Great War, these bandits began their destructive activities in the rear of the Turkish army on the Caucasus front, blowing up the bridges and killing the innocent Mohammedan inhabitants regardless of age and sex... All these Armenian bandits were helped by the native Armenians.[২৫]

— Mehmed Talaat

সমাধি সম্পাদনা

তালাত পাশাকে বার্লিনের তুর্কি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তার দেহাবশেষ ইস্তানবুলে নিয়ে আসা হয় এবং সিসিলিতে পুনরায় দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার যুদ্ধকালীন স্মৃতি প্রকাশিত হয়।

তুরস্কে বর্তমান অবস্থান সম্পাদনা

বর্তমানে আধুনিক তুরস্কে অনেক রাস্তা তালাত পাশার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. It is certainly definite that a number of Young Turks were members of the Bektashi order and that some were both Freemasons and Bektashis — Talat Pasha, Riza Tevfik, and the Sheyhulislam Musa Kazim Efendi were all in this category. (Ernest Edmondson Ramsaur, The Young Turks: Prelude to the Revolution of 1908, Russell & Russell, 1970, p. 113.)
  2. Sylvia Kedourie, S Tanvir Wasti (1996) Turkey: Identity, Democracy, Politics. আইএসবিএন ০-৭১৪৬-৪৭১৮-৭ p. 96
  3. Akcam, Taner, A Shameful Act, (Holt & Co.: New York, 2006),165, 186-187.
  4. Ussher, Clarence, An American Physician in Turkey, (Boston: Houghton Mifflin Co.,1917),244.
  5. Hartunian, Abraham H., Neither to Laugh nor to Weep,(Boston: Beacon Press, 1968), 62.
  6. Ferguson, Niall. The War of the World: Twentieth-Century Conflict and the Descent of the West. New York: Penguin Press, 2006 p. 177 আইএসবিএন ১-৫৯৪২০-১০০-৫
  7. Kiernan, Ben, Blood and Soil: Genocide and Extermination in World History from Carthage to Darfur, (Yale University Press, 2007), 414.
  8. Rosenbaum, Alan S., Is the Holocaust Unique?, (Westview Press, 2001), 122-123.
  9. Naimark, Norman, Fires of hatred, (Harvard University Press, 2001), 57.
  10. Mango, Andrew (২০০৪)। Atatürk। London: John Murray। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 978-0-7195-6592-2 
  11. গুগল বইয়ে Başverenler, başkaldıranlar, পৃ. ৯২, (তুর্কি)
  12. Demourian, Avet (২৫ এপ্রিল ২০০৯)। "Armenians mark massacre anniversary"The Boston Globe 
  13. Josh Belzman (২৩ এপ্রিল ২০০৬)। "PBS effort to bridge controversy creates more"MSNBC। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০০৬ 
  14. David Fromkin "A Peace to End all Peace", pg 212-213
  15. geocities.com [ত্রুটি: আর্কাইভের ইউআরএল অজানা] The Story of Enver Pasha and his Times ([তারিখ অনুপস্থিত] তারিখে আর্কাইভকৃত) Part 4: Armenians are nothing to me
  16. Ambassador Morgenthau's Story. 1918. Chapter Twenty-Five
  17. Memoirs of Halide Edip by Halide Edip, The Century Company, NY, 1926, p. 387 for further reading ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে
  18. Kedourie, Sylvia (১৯৯৬)। Turkey: Identity, Democracy, Politics। Routledge। পৃষ্ঠা 15আইএসবিএন 0-7146-4718-7 
  19. V. Dadrian, "The History of the Armenian Genocide" p323-324.
  20. Oke, Mim Kemal: The Armenian question 1914-1923. Nicosia: Oxford 1988, ataa.org ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জানুয়ারি ২০০১ তারিখে
  21. Herbert, Aubrey (১৯২৫)। Ben Kendim: A Record of Eastern Travel। G. P. Putnam's sons ltd.। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 0-7146-4718-7 
  22. Kedourie, Sylvia (১৯৯৬)। Turkey: Identity, Democracy, Politics। Routledge। পৃষ্ঠা 41আইএসবিএন 0-7146-4718-7 
  23. Oke, Mim Kemal (১৯৮৮)। The Armenian question 1914-1923। Rustem & Brother। আইএসবিএন 978-9963-565-16-0 
  24. Talaat Pasha, "Posthumous Memoirs of Talaat Pasha", The New York Times Current History, Vol. 15, no. 1 (October 1921): 295
  25. Hovannisian, Richard (১৯৮৭)। The Armenian Genocide in Perspective। Transaction Publishers। পৃষ্ঠা 142। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

{{Succession box|title=অর্থমন্ত্রী|years= নভেম্বর ১৯১৪ – ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭|before=মুহাম্মদ জাভিদ বে|after=আবদুর রহমান ভেফিক সায়িন
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ – ২৩ জানুয়ারি ১৯১৩
উত্তরসূরী
পূর্বসূরী
সাইদ হালিম পাশা
উসমানীয় সাম্রাজ্যের উজিরে আজম
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ – ৮ অক্টোবর ১৯১৮
উত্তরসূরী
আহমেদ ইজ্জত পাশা