তারাবীহ
তারাবীহ (আরবি: تَرَاوِيْحِ, তরাৱীহ়) শব্দটির একবচন 'তারবীহাতুন' (আরবি: تَروِيْحَة)। এর আভিধানিক অর্থ বসা, বিশ্রাম করা, আরাম করা[১]। ইসলাম ধর্মে তারাবীহ বা কিয়ামুল লাইল [২]হল রাতের সালাত যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।[৩] তারাবীহ সালাত দুই দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবীহ সালাতের পর বিতর সালাত পড়া হয়। তারাবীহর নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট করা হয়নি। হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকত তারাবীহ পড়েন।আবার অনেক হানাফিরাও ৮ রাকত তারাবীহ পড়ে থাকেন মসজিদগুলোতে দেখা যায়।
তারাবীহ | |
---|---|
![]() তিউনিশিয়ার গ্রেট মসজিদে তারবীহ নামাজের একটি দৃশ্য | |
আনুষ্ঠানিক নাম | تَرَاوِيْحِ |
পালনকারী | মুসলিম বিশ্ব |
ধরন | সুন্নি ইসলাম |
শুরু | এশার নামাজ |
সমাপ্তি | ভোর |
সম্পর্কিত | নামাজ, সুন্নত নামাজ, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ |
এই নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " .
অনুবাদ; আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। [৪]
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় ।’
— রাসুলে আকরাম (সা.), নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯
‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে ।’
— হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বুখারি, হাদিস: ৩৬
তারাবীহের রাকাত সংখ্যাসম্পাদনা
তারাবোহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ বিদ্যামান আছে।
৮ রাকাতসম্পাদনা
৮ রাকাত তারাবীহের পক্ষেই সবচেয়ে বেশি প্রমাণাদি বিদ্যমান।সালাফি তথা আহলুল হাদিসদের মধ্যে ৮ রাকাত তারাবীহের প্রচলন দেখা যায়।
রাসুল(সা.) এর হাদিস থেকে ৮ রাকাআত তারাবীহ প্রমাণিত হয়।যেমন:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
অনুবাদ:আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর রাসূল(﷽)এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে ও রমাযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক‘আত হতে বৃদ্ধি করতেন না তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাযি.)] বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না। [৫]
উল্লেখ্য যে হাদিসটি সম্পর্কে অনেকে বলতে চেয়েছেন যে হাদিসটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত।যেটি বেশ কয়েকটি কারণে সঠিক নয়।যেমনঃ (১)হাদিসটি ইমাম বুখারি(রহ.) এনেছেন "তারাবীহের সালাত অধ্যায়ে"।বিভিন্ন প্রকাশনীর সকল বুখারিতেই অধ্যায়ের নাম উপস্থিত থাকলেও,ভারতীয়(দেওবন্দি)ছাপা বুখারিতে তা নেই। অথচ আরব বিশ্বের সকল বুখারিতে তা বিদ্যমান।এছাড়া বুখারির বিভিন্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থেও অধ্যায়ের নামটি রয়েছে।যেমনঃফাতহুল বারীতে বিদ্যমান আছে।যেটা বুখারির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বব্যাপী গৃহীত। (২)হাদিসে বিতরের সালাতকেও উক্ত ১১ রাকাতের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।যদি এটাকে তাহাজ্জুদ ধরা হয় তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে এক রাতে রাসুল(সা.) দুইবার বিতর পড়বেন?
উমর(রা.) ২০ রাকাত তারাবীহ চালু করেছিলেন মর্মে যে বক্তব্য প্রচলিত আছে সেটিও সঠিক নয়।কারণ,হাদিস থেকে দেখা যায় উমার(রা.) ৮ রাকাত পড়ারই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যেমনঃ وَعَن السَّائِب بن يزِيد قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً فَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَا مِنْ طُولِ الْقِيَامِ فَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ
অনুবাদঃসায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রা.)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্‘আত তারাবীহের সালাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম (কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্রের (ফজরের) নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম।" [৬]
২০ রাকাতসম্পাদনা
হানাফি মাযহাবে ২০ রাকাত তারাবীহের প্রচলন আছে। ২০ রাকাতের পক্ষে কিছু যঈফ হাদিস বিদ্যমান আছে।অপর দিকে উমর(রা.) ২০ রাকাত চালু করেছেন মর্মে যে বর্ণনা বিদ্যমান তার সনদ মুনকাতি' হিসেবে যঈফ।আর একটি সহিহ আছারের বিপরীতে হওয়ায় সেটিকে অনেকেই গ্রহণ করেন নি।
৩৬ রাকাতসম্পাদনা
কোনো কোনো বিদ্বান ৩৬ রাকাত পড়ারও মত দিয়েছেন।
প্রকারভেদসম্পাদনা
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়।
খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।
টীকাসম্পাদনা
- ↑ দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম । ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা. ২৬৮ আইএসবিএন ৯৮৪-০৬-০৫৬০-৭
- ↑ "কিয়ামুল লাইল ও তারাবীহ নামাজের মধ্যে পার্থক্য কি ? ডাঃ জাকির নায়েক বাংলা"।
- ↑ "The Tarawih Prayer"। albalagh.net। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১০।
- ↑ [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৬৪। হাদিসের মান: সহিহ হাদিস]
- ↑ সহিহ বুখারি(অনুবাদ) (১)তাওহিদ পাবলিকেশন হা/২০১৩ (২)আধুনিক প্রকাশনী হা/১৮৭০ (৩)ইসলামিক ফাউন্ডেশন হা/১৮৮৩
- ↑ মিশকাত হা/১৩০২,হাদিস সহিহ। উল্লেখ্য একই সনদে বুখারির হা/১৮৫৮ বর্ণিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- John L. Esposito: The Oxford Dictionary of Islam. Oxford University Press US 2004, আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫১২৫৫৯-৭, p. 276 (গুগল বইয়ে restricted online version, পৃ. 276,)
ইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |