তায়েফের যুদ্ধ বা তায়েফের অবরোধ ৬৩০ সালে সংঘটিত হয়। মুহাম্মাদের নেতৃত্বে মুসলমানরা হুনাইন এবং আওতাসের যুদ্ধে বিজয়ের পর তায়েফ শহর অবরোধ করে। তায়েফের সর্দার উরওয়া ইবনে মাসউদ সেই অবরোধের সময় শহরের বাইরে ইয়েমেনে ছিলেন।[১] তবে শহরটি প্রাথমিকভাবে অবরোধের কাছে নতি স্বীকার করেনি। মুহম্মদ দুর্গের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য মিনজানিক[২] এবং টেস্টুডো নিয়ে আসেন, কিন্তু মৌলিকভাবে এই অস্ত্রগুলো দিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি।[৩]

তায়েফের যুদ্ধ
তারিখডিসেম্বর ৬৩০
অবস্থান
ফলাফল মুসলিমদের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
মদিনার মুসলিম তায়েফের অমুসলিম
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
মুহাম্মাদ অজ্ঞাত
শক্তি
১২,০০০ ১০,০০০
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
১২ অজ্ঞাত

যুদ্ধ সম্পাদনা

আবু সুফিয়ান সম্পাদনা

তায়েফ অবরোধের বিষয়ে সুন্নি সূত্রে নিম্নোক্ত বক্তব্য রয়েছে:

তায়েফ অবরোধে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব তার প্রথম চোখ হারান। তিনি মুহাম্মাদকে আল্লাহর কাছে তার চক্ষু ফিরিয়ে আনার জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। মুহাম্মাদ বলেছিলেন "আপনি কোনটি পছন্দ করবেন: জান্নাতে একটি চোখ নাকি আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব যে তিনি এটি ফিরিয়ে দিবেন?" এর জবাবে আবু সুফিয়ান বললেন, তিনি বরং জান্নাতে চোখ রাখতে চান। ইয়ারমুকের যুদ্ধে তিনি তার আরেকটি চোখ হারিয়েছিলেন।[৪]

অবরোধ সম্পাদনা

মুহাম্মাদের বাহিনী তায়েফের দরজা ভেদ করার জন্য কয়েকটি ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। মুহাম্মাদ এই অবরোধে রোমান টেস্টুডো ফর্মেশনও ব্যবহার করেন, কিন্তু তায়েফের বাসিন্দারা শহরের দেয়াল থেকে মুসলিম সেনাবাহিনীর উপর গরম লোহা ফেলে এই অবরোধ ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল বলে সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে। কথিত আছে, মুহাম্মাদ তায়েফের লোকদের বলেছিলেন যে- তিনি তাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্র পুড়িয়ে ফেলবেন এবং কেটে ফেলবেন, কারণ তিনি তাদের আত্মসমর্পণ করার আর কোন উপায় দেখতে পাননি। ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণকারী দাসদের স্বাধীনতার প্রস্তাব দিয়ে মুহাম্মাদ তায়েফের নাগরিকদের ক্ষুব্ধ করেছিলেন। তবে মাত্র দশজন ক্রীতদাস এই বিকল্পটি ব্যবহার করতে এবং মুহাম্মাদের অনুসারী হতে সক্ষম হয়েছিল।[৫]

অর্ধমাসের অবরোধের পর সম্মানিত মাসসমূহ চলে আসায় মুহাম্মাদ উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করেন। এছাড়া একটি ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ স্বপ্নের পর মুহাম্মাদ অবরোধ শেষ করেন এবং তার বাহিনী প্রত্যাহার করেন।[৫]

মালিকের সহায়তা সম্পাদনা

তায়েফ অবরোধে সাহায্য করার জন্য মুহাম্মাদ বনু হাওয়াজানের প্রধান মালিককে তার পাশে পেতে চেয়েছিলেন। মালিক ইসলাম গ্রহণ করলে তার পরিবারের মুক্তি এবং তার সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মালিক প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং তায়েফ অবরোধে মুহাম্মাদকে সহায়তা করে মুসলিম হন। মালিক তায়েফের নাগরিকদের শহরের বাইরে তাদের গবাদি পশু চরানোর ক্ষমতা ব্যাহত করে। আর দুর্গের ভিতরে জীবনযাত্রার অসুবিধা আরও বাড়িয়ে দেয়।[৬]

আত্মসমর্পণ সম্পাদনা

যদিও অবরোধ ব্যর্থ হয়েছিল, মুহাম্মাদ পবিত্র মাসগুলোতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ হওয়ায় মাসগুলো শেষ হবার পরে তায়েফে ফিরে যাওয়ার শপথ করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তায়েফের অধিবাসী বনু সাকিফ মক্কায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। তারা তাদের দেবী লাতের উপাসনা তিনবছর পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার শর্ত পেশ করে। পাশাপাশি তারা মুহাম্মাদকে হত্যারও ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ষড়যন্ত্রটি প্রকাশিত হয় এবং তাদের অতর্কিত হামলাও ব্যর্থ হয়। ষড়যন্ত্রের ফলে মুহাম্মাদ তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তাদের সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র হলেই আত্মসমর্পণ গ্রহণ করার কথা বলেন। শেষপর্যন্ত বনু সাকিফরা মুহাম্মাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। তারা আত্মসমর্পণ করে এবং মুসলমানরা শহরে প্রবেশ করেন।[১]

অংশগ্রহণকারীরা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা