তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র নিম্নরূপ:

কার্নোট তাপ ইঞ্জিন

কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা-মাত্রা সময়ের সাথে হ্রাস পায় না এবং প্রক্রিয়াসমূহ যদি এবং কেবল যদি পরিবর্তনীয় হয়, তাহলে এর মান ধ্রুব হবে। []বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা ক্রমেই তাপগতিক ভারসাম্যের দিকে অগ্রসর হয় (যখন বিশৃঙ্খলা-মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে)।

অর্থাৎ, এ সূত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়, তাপগতিক ভারসাম্যে কোন ব্যবস্থা এবং তার পরিপার্শ্বের বিশৃঙ্খলা-মাত্রা সর্বদাই ধ্রুবক হয়। কাল্পনিক পরিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এরূপ হতে পারে। স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা ও এর চতুর্পার্শ্বের বিশৃঙ্খলা-মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাপগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, এ প্রক্রিয়াটি পরিবর্তনযোগ্য নয় - তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার এ পরিবর্তন কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে। মূলত বিশৃঙ্খলা-মাত্রার বৃদ্ধিই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অপরিবর্তনীয়তা ও অপ্রতিসমতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।[]

দ্বিতীয় সূত্রটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ফ্রেঞ্চ পদার্থবিজ্ঞানী সাদি কার্নো সর্বপ্রথম তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তাপ ইঞ্জিনে তাপীয় রূপান্তরের কর্মদক্ষতা পরিমাপের একটি সর্বোচ্চ সীমা বিদ্যমান। সাদি কার্নোর নামানুসারে ঐ ব্যাখ্যা "কার্নোর উপপাদ্য" নামে পরিচিত। []

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র তাপগতিক ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ শক্তির সংজ্ঞা প্রদান করে ও শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বিবৃত করে। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশ নিয়ে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র আলোচনা করে। এ অনুযায়ী,প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া কখনো পরিবর্তনীয় নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পরিবহন ও বিকিরণের জন্য যদি কোন নির্দিষ্ট পথ থাকে, তাহলে সবসময় উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে তাপশক্তির প্রবাহ ঘটে।

 
গরম জলের দিক থেকে ঠান্ডা জলের দিকে তাপ প্রবাহিত হচ্ছে

এই ঘটনা নির্দেশ করতেই এনট্রপি বা বিশৃঙ্খলা-মাত্রা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অভ্যন্তরীণ অভেদ্য পর্দায় যদি অভ্যন্তরীণ তাপগতিক ভারসাম্যে কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা বিরাজ করে,এবং কোনো কারণে যদি পর্দা বা প্রাচীরটির ভেদ্যতা বৃদ্ধি পায়,তাহলে নতুন অভ্যন্তরীণ তাপগতিক ভারসাম্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থাটি ক্রমশ বিবর্তিত হয় এবং এর সর্বমোট বিশৃঙ্খলা-মাত্রা S বৃদ্ধি পায়।

কাল্পনিক পরিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায়, কোনো বদ্ধ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা-মাত্রার অসীম বৃদ্ধির হার (dS) হলো উক্ত ব্যবস্থায় তাপের অসীম (অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু শক্তির স্থানান্তর ঘটছে,পদার্থের স্থানান্তর নয়) স্থানান্তর(δQ) এবং সাম্যাবস্থায় সাধারণ তাপমাত্রার (T) ভাগফলের মানের সমান। বিষয়টিকে গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে এভাবেও প্রকাশ করা যাবে:

 

বিশৃঙ্খলা-মাত্রা প্রকৃতপক্ষে দশার ফাংশন; কিন্তু তাপ বস্তুত কোনো ফাংশন নয়। ভরের বিনিময় ব্যতিরেকে অসীম স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় যে অসমতা সৃষ্টি হয়, দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা-মাত্রার বৃদ্ধি অসমতা পূরণ করে। একে নিম্নরূপে গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়:

 

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৮২৪ সালে বিজ্ঞানী নিকোলাস লিওনার্ড সাদি কার্নো তাপীয় রূপান্তরবিষয়ক তত্ত্ব প্রদান করেন। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন,কোনো একটি ইঞ্জিন ও তার নিকটবর্তী পরিবেশের তাপমাত্রার পার্থক্য তাপীয় রূপান্তরের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে।

জেমস প্রেসকট জুল প্রদত্ত শক্তির সংরক্ষণশীলতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৮৫০ সালে রুডলফ কোসিয়াস দ্বিতীয় সূত্রটি প্রক্রিয়াবদ্ধ করেন। তিনি বলেন, তাপ "স্বতঃস্ফূর্তভাবে" শীতল থেকে উষ্ণ মাধ্যমে সঞ্চারিত হয় না।কোসিয়াসের এ বিবৃতি তাপের ক্যালরিক তত্ত্বের (তাপের ক্যালরিক তত্ত্ব অনুযায়ী সেসময় তাপকে তরল বিবেচনা করা হত) সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। এভাবেই কোসিয়াস কার্নোর মূলনীতি ও বিশৃঙ্খলা-মাত্রার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন (১৮৬৫)।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কেভিন- প্লাংক তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের বিবৃতি প্রদান করেন। তাঁদের মতে, তাপগতি চক্রের উপর ভিত্তি করে কাজ করে এমন যন্ত্রের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট তাপ সংরক্ষক থেকে তাপ গ্রহণ করে কাজ করা সম্ভব নয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "5.2 Axiomatic Statements of the Laws of Thermodynamics"web.mit.edu 
  2. Zohuri, Bahman (২ নভেম্বর ২০১৬)। "Dimensional Analysis Beyond the Pi Theorem"। Springer – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  3. [4] Jaffe, R.L., Taylor, W. (2018). The Physics of Energy, Cambridge University Press, Cambridge UK, pages 150,151,259,772,743