ড্যান ব্রাউন

আমেরিকার লেখক

ড্যান ব্রাউন (জুন ২২, ১৯৬৪) একজন মার্কিন রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখক। পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তোলা উপন্যাস দ্য দা ভিঞ্চি কোড রচনার জন্য তিনি সবচেয়ে পরিচিত যা ২০০৩ সালে প্রকাশিত এবং সর্বাধিক বিক্রি হওয়া উপন্যাস। ব্রাউনের উপন্যাসের মূল উপজীব্য হচ্ছে বর্ণজটীয় সংকেতায়ন বা ক্রিপ্টোগ্রাফি, রহস্যময় সংকেত ও এদের দ্বৈতমানে (ইংরেজি: dual-meaning)। তার উপন্যাসে এ ব্যাপারগুলো ঘুরে ফিরে বারবার আসে। বর্তমানে ব্রাউনের লিখা উপন্যাস ৫৭ টিরও অধিক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

ড্যান ব্রাউন
ড্যান ব্রাউন
জন্ম (1964-06-22) ২২ জুন ১৯৬৪ (বয়স ৬০)
জাতীয়তামার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকান
পেশাঔপন্যাসিক, গীতিকার, গায়ক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
দ্য দা ভিঞ্চি কোড
দাম্পত্য সঙ্গীব্লিথ নিউলন (বিয়ে ১৯৯৭)
পিতা-মাতারিচার্ড জি. ব্রাউন
কনস্টান্স কনি ব্রাউন
ওয়েবসাইটhttps://www.danbrown.com
স্বাক্ষর

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

ড্যান ব্রাউন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক্সিটারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেন। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। তার মা কনস্টান্স (কনি) ছিলেন পেশাদার বাদক যিনি চার্চে অর্গান বাজাতেন। তার বাবা রিচার্ড জি. ব্রাউন ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতশিক্ষক যিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফিলিপ্‌স এক্সিটার একাডেমিতে মাধ্যমিক গণিত পড়াতেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

ফিলিপ্‌স এক্সিটার একাডেমি একটি উঁচুমানের আবাসিক বিদ্যালয় যেখানে নতুন শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের ভেতরেই থাকতে হয়। এই সূত্রেই ড্যান ব্রাউন এবং তার পরিবারের সবাই স্কুলের ভেতরেই থাকতেন। এক্সিটারের সামাজিক প্রতিবেশ ছিল সম্পূর্ণ খ্রিস্টানপন্থী। ব্রাউন চার্চে ঐকতান সঙ্গীত গাইতেন এবং সানডে স্কুল করতেন, আর গ্রীষ্মের সময়টা চার্চেরই শিবিরে কাটাতেন। ব্রাউনের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে পাবলিক স্কুলগুলোতে। নবম গ্রেড পর্যন্ত সেখানে পড়ার পর তিনি ফিলিপ্‌স এক্সিটারে ভর্তি হোন এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার ছোট ভাইবোনের মধ্যে ভ্যালেরিন ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এবং গ্রেগরি ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এক্সিটার থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে।

গীতিকার এবং পপ গায়ক

সম্পাদনা

ফিলিপ্‌স এক্সিটার থেকে স্নাতক শিক্ষা শেষ করার পর ব্রাউন অ্যামহার্স্ট কলেজে যোগ দেন; সেখানে তিনি সাই আপসাইলন নামক ভ্রাতৃসংঘের সদস্য ছিলেন। সেখানে স্কোয়াশ খেলা আর অ্যামহার্স্ট গ্লি ক্লাবে গান গেয়ে দিন কাটতো তার। একইসাথে ঔপন্যাসিক অ্যালান লেলচাকের একজন ছাত্র হিসেবে তার লেখায় সহযোগিতা করতেন। [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে অ্যামহার্স্ট থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর একজন পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মূলত শিশুতোষ ক্যাসেট দিয়ে যাত্রা শুরু তার। প্রথম দিকের ক্যাসেটগুলোর মধ্যে রয়েছে: সিন্‌থঅ্যানিমেল্‌স, হ্যাপি ফ্রগ্‌স এবং সুজুকি এলিফ্যান্ট্‌স যার মাত্র কয়েকশো কপি বিক্রি হয়েছিলো। এরপর তিনি নিজের রেকর্ডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন ড্যালিয়েন্স। তার কোম্পানি থেকে প্রকাশিত প্রথম সিডি ছিলো পার্‌সপেক্টিভ যা মূলত বড়দের জন্য ছিলো। এটিও কয়েকশো কপি বিক্রি হয়।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হলিউডে যান। উদ্দেশ্য ছিলো শিল্পী, গীতিকার এবং চিত্রকর হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য এসময় ব্রেভারলি হিল্‌স প্রিপারেটরি স্কুলে ক্লাস নিতেন।

লস অ্যাঞ্জেল্‌স-এ থাকাকালীন তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সংরাইটার্‌স-এ যোগ দিয়ে এর অনেক কার্যক্রমে সক্রীয় অংশহগ্রহণ করেন। সেখানেই ব্লিথ নিউলনের সাথে ব্রাউনের পরিচয় হয় যিনি তার চেয়ে ১২ বছরের বড়। তিনি একাডেমির আর্টিস্ট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক ছিলেন। নিউলন ব্রাউনের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রভূত সগযোগিতা করেন যদিও তা তার কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। তিনি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাপাতেন, ব্রাউনের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক শিক্ষণের সুযোগ করে দিতেন আর তার ক্যারিয়ারের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে এমন ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতেন। তখন তাদের মাঝে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে উঠে যা ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের আগে কেউই জানতেন না। এই বছরই ব্রাউন নিউ হ্যাম্পশায়ারে ফিরে যান এবং নিউলন তার সঙ্গী হোন। ১৯৯৭ সালে তারা নিউ হ্যাম্পশায়ারের উত্তর কনওয়ের পি পরিজ পন্ডে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন। [২]

সংগীতসংশ্লিষ্ট কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি ব্লিথ, ড্যান ব্রাউনের লেখকজীবনেরও একটি বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। ব্লিথ তার লেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপায় উপকরণ সংগ্রহে অনেক সহযোগিতা করেন। প্রথম দিককার রঙ্গরসাত্মক বইগুলো দুজনে একসাথেই লিখেছিলেন আর পরবর্তী বইগুলোতেও ছিলো ব্লিথের সহায়তা। ডিসেপশন পয়েন্ট বইয়ের একটি অংশে ব্রাবুন ব্লিথ ব্রাউনকে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাউন নিজের নামে অর্থাৎ ড্যান ব্রাউন নামে একটি সিডি বের করেন যাতে "৯৭৬-লাভ" এবং "ইফ ইউ বিলিভ ইন লাভ" নামীয় গানগুলো ছিলো।

নিউ ইংল্যান্ডে শিক্ষকতা

সম্পাদনা

১৯৯৩ সালে ব্রাউন এবং ব্লিথ নিউ হ্যাম্পশায়ারে ব্রাউনের বাড়িতে ফিরে যান। ব্রাউন তার পূর্বতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিলিপ্‌স এক্সিটারে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একই সময় তিনি লিংকন একারম্যান স্কুলের ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের স্পেনীয় ভাষা শিখানোর দায়িত্ব পালন করেন। এটি হ্যাম্পটন ফল্‌স-এ অবস্থিত একটি ছোট বিদ্যালয় যাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২৫০ জন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাউন অ্যাঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডেমন্‌স নামে একটি সিডি প্রকাশ করেন। এই সিডির শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে ছিলো জন ল্যাংডনের দ্বিত্ব প্রতীক বা এম্বিগ্রাম যেগুলো পরবর্তীতে তিনি অ্যাঞ্জেল্‌স অ্যান্ড ডেমন্‌স উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। এই সিডির মন্তব্য করতে যেয়ে প্রভূত সহযোগিতার জন্য তিনি তার স্ত্রী ব্লিথকে ধন্যবাদ জানান; কারণ হিসেবে লিখেছেন: "for being my tireless cowriter, coproducer, second engineer, significant other, and therapist"।

এই সিডির গানগুলোর মধ্যে আছে "Here in These Fields" এবং ধর্মীয় সমবেত সঙ্গীত "All I Believe"। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে অবকাশযাপনের জন্য তাহিতিতে অবস্থানকালে তিনি সিডনি শেলডনের দ্য ডুম্‌সডে কন্সপাইরেসি উপন্যাসটি পড়েন। এর পরই সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি লিখলে এর চেয়ে ভালো লিখতে পারেন। এই সময়ই ডিজিটাল ফোরট্রেস রচনার কাজ শুরু করেন এবং একই সাথে তার স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে "187 Men to Avoid: A Guide for the Romantically Frustrated Woman" নামীয় একটি রসাত্মক বই লিখেন। এই বইয়ের ১৮৭টি নিবন্ধের একটি ছিলো "Men who write self-help books for women"। এক্ষেত্রে অবশ্য তিনি নিজ নাম ব্যবহার করেননি; ড্যানিয়েল ব্রাউন ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। বইয়ের প্রথমে লেখকের জীবনীতে লেখা হয়েছে: "Danielle Brown currently lives in New England: teaching school, writing books, and avoiding men"। বইটির স্বত্ব অবশ্য ড্যান ব্রাউনের নামেই ছিলো। প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়ার আগে বইটির মাত্র কয়েক হাজার কপি বিক্রি হয়।

লেখক ড্যান ব্রাউন লেখার সময়ে ভোর ৪ টায় ঘুম থে উঠে লেখতে বসেন। একটানা কাজ করেন ১০ টা ১১ টা পর্যন্ত। এরপর ব্রেক নিয়ে লাঞ্চ করেন, ব্যায়াম করেন বা গলফ খেলেন। বিকেলের দিকে তিনি প্রকাশক ও তার আইনজীবির সাথে আলাপ আলোচনা সারেন। রাতে স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে খেতে বের হন। তার উপন্যাসগুলো সম্পর্কে তিনি মনে করেন এগুলো কেবলই অন্তসারশূন্য থ্রিলার উপন্যাস নয়।

রচনাবলী ও প্রকাশনা

সম্পাদনা

সিডিসমূহ

সম্পাদনা

ব্যাঙ্গরসাত্মক রচনাসমূহ

সম্পাদনা
  • ১৮৭ মেন টু এভয়েড: অ্যা সারভাইভাল গাইড ফর রোমান্টিক্যালি ফ্রাস্ট্রেটেড , ১৯৯৫, ড্যানিয়েল ব্রাউন ছদ্মনামে তার স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে লিখেন।
  • দি বাল্ড বুক, ১৯৯৮, স্ত্রীর সাথে যৌথভাবে লিখেন।

উপন্যাস

সম্পাদনা

চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা