ডেভিড ম্যাকাচ্চন (জন্ম ১২ আগস্ট ১৯৩০ –মৃত্যু ১২ জানুয়ারি ১৯৭২) একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ। "ডেভিডবাবু" নামে পরিচিত এই গবেষক মাত্র ৪১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে হিন্দু পোড়ামাটি (টেরাকোটা) এবং বাংলার ইটের তৈরি মন্দিরের স্থাপত্য নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত এবং তিনি ছিলেন এই বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় গবেষণাপত্রের প্রথম লেখক।

বাংলার টেরাকোটা মন্দির (পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির)

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

ডেভিড যুক্তরাজ্যের কভেন্ট্রি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাল ইটের তৈরি কিং হেনরি (VIII) স্কুলে লেখাপড়া করেন। জার্মান আক্রমণে স্কুলটি বিধ্বস্ত হলে তিনি কিছুকাল উদ্বাস্তু হিসাবে অতিবাহিত করেন। যুদ্ধের পর এক বছর তিনি সিঙ্গাপুরে জাতীয় সার্ভিসের অধীনে রয়্যাল এয়ার ফোর্স এ ছিলেন। ১৯৫০ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালযয়ের জিসাস কলেজে জার্মানফরাসি ভাষা শিখতে যান। মালয়ে থাকার সময় তাঁর প্রাচ্য বিশ্ব সম্পর্কে আগ্রহ জাগে এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলায় শিক্ষাবিদ সম্পাদনা

জিসাস কলেজে থাকাকালীন প্রাচ্যের প্রতি ডেভিডের আগ্রহ তাঁকে ঠাকুর বলয়ের সদস্য হতে অনুপ্রাণিত করে [১], যার ফলে তিনি বাংলায় চলে আসেন। প্রাথমিকভাবে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ানোর জন্য ছয়মাসের চুক্তিবদ্ধ হন। ক্রমে তিনি কলকাতায় পুরুষোত্তম লালের রাইটার্স ওয়ার্কশপের (লেখকদের কর্মশালা) ভারতীয় লেখকদের সঙ্গে যুক্ত হন। এখান থেকে তাঁর বহু রচনা প্রকাশিত হয়, কিছু মরণোত্তরও। শিক্ষাবিদ হিসেবেও ডেভিড তাঁর ভূমিকা নির্বাহ করেন। ১৯৬০ সালের পরে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হন যেখানে অষ্টাদশ শতকের ফরাসি ও ইংরেজি সাহিত্য পড়াতেন। [২]

পোড়ামাটির মন্দির গবেষণা সম্পাদনা

১৯৬০ সালের দিকে ডেভিড সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয়েই পাশ্চাত্য বারোক সংগীতের গুণগ্রাহী ছিলেন। সত্যজিৎ তাঁকে নিজের চলচ্চিত্রের সংলাপগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করতে অনুরোধ করেন। এতে পরোক্ষভাবে ডেভিডের বাংলা ভাষায় দখল বাড়ে। ১৯৬২ সালে বীরভূম জেলায় সত্যজিতের অভিযান (চলচ্চিত্র) অভিনীত হওয়ার সময় বাংলার ইটের তৈরি মন্দিরের উপর ডেভিডের আগ্রহ জাগে। [৩] পরবর্তী দশকজুড়ে ডেভিড কেবল এসব মন্দিরের শ্রেণিকরণ, সংরক্ষণ, তথ্যসংগ্রহ ও ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টাডি অফ বেঙ্গল আর্ট (আইসিএসবিএ)-এর মাধ্যমে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম (জাদুঘর) ডেভিডের তোলা প্রায় ২০,০০০ ছবি (সাদাকালো ও রঙিন) সংগ্রহ করে। মন্দিরসংশ্লিষ্ট ধর্মীয় শিল্পকলা ছাড়াও তিনি বাংলার পটুয়াদের পটশিল্প নিয়ে গবেষণা করেন ও অনেক চিত্র সংগ্রহ করেন। তাঁর এই সংগ্রহ পরে হার্বার্ট আর্ট গ্যালারিতে হস্তান্তর করা হয়।

অকালমৃত্যু সম্পাদনা

 
ডেভিডের সমাধি, ভবানীপুর কলকাতা

১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে ডেভিড অকালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। [৪] এই অকালপ্রয়াণে পুরুষোত্তম লাল থেকে তাঁর স্মরণে ডেভিড ম্যাকাচ্চন: শ্রদ্ধাঞ্জলি নামে একটি সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। শেষ বছর তিনি সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স) সান্ধ্য ক্লাসে ভারতীয় শিল্পকলার বিভিন্ন বিষয় আলোচনা, প্রদর্শনী ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছাত্রদের নিকট তুলে ধরেন। আলিপুরের ভবানীপুর সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [৫]

 
ডেভিডের সমাধিস্থ শিলালিপি

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • The Temples of Bankura District (Calcutta, Writers Workshop [c1967])
  • Indian Writing in English: Critical Essays (Calcutta: Writers Workshop, 1969)
  • Late Mediaeval Temples of Bengal: Origins and Classification (Calcutta: The Asiatic Society, 1972)
  • The epistles of David-Kaka to Plalm’n [1960-1971]: the record of a friendship (Calcutta: Writers Workshop, 1972)
  • Brick Temples of Bengal: From the Archives of David McCutchion, (Princeton, N.J.: Princeton University Press, 1983), his research collected, interpreted and published by George Michell.
  • Patuas and Patua Art in Bengal by David McCutchion and Suhrid K. Bhowmik, (Calcutta : Firma KLM, 1999).
  • Unpublished Letters & Selected Articles by David J. McCutchion, (Calcutta : Monfakira Books, 2009).

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Rollason, Robert, Obituary from Jesus College Annual report 2005, p117" (পিডিএফ)। ৭ জুন ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০০৯ 
  2. "Rollason, Christopher, "David McCutchion, Pioneer Critic of Raja Rao", published as a chapter in the book Raja Rao: The Master and his Moves, ed. Jaydeep Sarangi, (New Delhi: Authorpress, 2006), pp9-20" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০০৯ 
  3. Ray, Satyajit in 'Introduction' to Brick Temples of Bengal: From the Archives of David McCutchion edited by George Michell, (Princeton University Press, 1983)
  4. W. Andrew Robinson. Satyajit Ray, The Inner Eye - (London: Andre Deutsch, 1989), pp329-331.
  5. Das, Soumitra (১০ জানুয়ারি ২০১০)। "Davidbabu's Data Bank"The Telegraph (Kolkata)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা