ডেভিড পিদি

আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার
(ডেভিড পিথে থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ডেভিড বার্টলেট পিদি (ইংরেজি: David Pithey; জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৯৩৬ - মৃত্যু: ২১ জানুয়ারি, ২০১৮) রোডেশিয়ার সলিসবারিতে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আট টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।

ডেভিড পিদি
২০০৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ডেভিড পিদি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডেভিড বার্টলেট পিদি
জন্ম(১৯৩৬-১০-০৪)৪ অক্টোবর ১৯৩৬
সলিসবারি, রোডেশিয়া
মৃত্যু২১ জানুয়ারি ২০১৮(2018-01-21) (বয়স ৮১)
কিডলিংটন, অক্সফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাবোলার
সম্পর্কটনি পিদি (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২১৭)
৬ ডিসেম্বর ১৯৬৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২০ জানুয়ারি ১৯৬৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৯৯
রানের সংখ্যা ১৩৮ ৩৪২০
ব্যাটিং গড় ১২.৫৪ ২৩.২৬
১০০/৫০ ০/১ ৩/১৪
সর্বোচ্চ রান ৫৫ ১৬৬
বল করেছে ১৪২৪ ১৭৪৯৮
উইকেট ১২ ২৪০
বোলিং গড় ৪৮.০৮ ৩০.৭৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৫৮ ৭/৪৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৬/- ৫৫/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৭ মার্চ ২০১৮

রোডেশিয়া ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে খেলার পাশাপাশি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অক্সফোর্ড ও নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি অফ ব্রেক বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছেন ডেভিড পিদি

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

প্লামট্রি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৫৪ সালে সাউথ আফ্রিকা স্কুলসের সদস্য মনোনীত হন।[১] অফ স্পিন বোলার হিসেবে খেলতেন ও দলের বিভিন্ন অবস্থানে থেকে কার্যকরী ব্যাটিং করে গেছেন।

তার ভাই টনি পিদি দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টনি পিদি ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে খেলেছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে রোডেশিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ফলশ্রুতিতে সাউথ আফ্রিকান ইউনিভার্সিটিজের পক্ষে খেলার সুযোগ হয় তার ও ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে খেলেন। প্রথম ইনিংসে ৫/১০৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রান তুলে দলের পরাজয় রুখে দিতে সমর্থ হন।[২]

রোডস বৃত্তিধারী হিসেবে ঘোষণার পূর্ব-পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ১৯৫৯ সালে অক্সফোর্ডের সেন্ট এডমন্ড হলে পড়াশোনার জন্যে ইংল্যান্ড চলে যান।[৩] ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সময়কাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে ৩৭টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, মে, ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ডে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ১৩৩ রানের মনোজ্ঞ সেঞ্চুরি করেন। দুই সপ্তাহ পর সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ২৭ ওভার বোলিং করে ৭/৪৭ পান। উইজডেনের ভাষায়, বিধ্বংসী বোলিং করেন তিনি যা অস্ট্রেলীয়দেরকে হতবিহ্বল করে দিয়েছিল।[৪] ১৯৬২ সালে সংক্ষিপ্তকালের জন্য কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যেকার সর্বশেষ খেলায় জেন্টলম্যানের প্রতিনিধিত্ব করেন ডেভিড পিদি।

ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি অক্সফোর্ডের পক্ষে হকি খেলায় অংশ নিয়ে ব্লু লাভ করেছিলেন তিনি।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পাদনা

১৯৬২-৬৩ মৌসুমে রোডেশিয়ায় ফিরে আসেন ও কারি কাপে রোডেশিয়া বি দলের সদস্যরূপে অংশ নেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তিনি ৩২.৭০ গড়ে ৫৫৬ রান ও ২৬.৮৮ গড়ে ২৬ উইকেট দখল করেছিলেন। প্রিটোরিয়ায় অনুষ্ঠিত খেলায় নর্থ-ইস্টার্ন ট্রান্সভালের বিপক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধন করেন। ১৬৬ রান তুলে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান তুলেন ডেভিড পিদি।

টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা

দলীয় সঙ্গী অফ স্পিনার কেলি সেম্যুরের সাথে একযোগে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য হন ও ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে অস্ট্রালেশিয়া সফরে যান। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ডেভিড পিদির। প্রথম টেস্টে ৩৪.০৯ গড়ে ১১ উইকেট নিয়ে দলকে সিরিজে এগিয়ে নিয়ে যান। এরফলে প্রথম তিন টেস্ট খেলেন। কিন্তু, পরবর্তী টেস্টগুলোয় কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হন ও সেম্যুরের কাছে স্থানচ্যূতি ঘটে তার। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭.৮০ গড়ে মাত্র ৩৯ রান তোলার সুযোগ হয় তার। তন্মধ্যে, সিডনিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ দূর্ভাগ্যের শিকার হন তিনি। তার বোলিংয়ে বেশ কিছু ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন ফিল্ডারেরা[৫]

এরপর তিনি আবারও দলে ফিরে আসেন। ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টে অংশ নেন তিনি। ১৮.৬৬ গড়ে ১২ উইকেট পান। তন্মধ্যে, ডুনেডিনে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ৬/৫৮ লাভ করেন। ছয় বা ততোধিক উইকেট লাভের ক্ষেত্রে ইনিংসে এটিই দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনারদের মধ্যে একমাত্র ঘটনা ছিল। ৪০ বছরের মধ্যে ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে হিউ টেফিল্ডের ৬/৭৮ ও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে পল অ্যাডামস ৬/৫৫ পেয়েছিলেন এ সাফল্য অর্জন করেছিলেন।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে তিন খেলায় অংশ নিলেও কোন সফলতা পাননি। কিন্তু, ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন ডেভিড পিদি। কারি কাপে রোডেশিয়া এ দলের সদস্যরূপে ৩৭.৬০ গড়ে ৩৭৬ এবং ৩২.১৫ গড়ে ১৩ উইকেট পান তিনি। মৌসুম শেষে নর্থ ভার্সাস সাউথের মধ্যকার প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন তিনি।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের পক্ষে খেলেন। খেলায় ৪৯.৪-২৫-৮৬-৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে স্বাগতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন তিনি। সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্ট খেলার জন্য মনোনীত হন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রান তুলেন। অষ্টম উইকেটে পিটার পোলকের ৮৬ রানের জুটি গড়েন তারা। এরফলে ফলো-অনের কবলে পড়েও দলেও বিজয়ের জন্য কিছুটা সুযোগ এনে দেন।[৬] তবে, কোন টেস্টেই কোন উইকেট পাননি। ফলশ্রুতিতে, জ্যাকি দু প্রিজের কাছে স্থান হারান। অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে পাঁচ টেস্টে খেলে ৩৫৩ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে ট্রান্সভাল এ দলের পক্ষে কারি কাপে অংশ নেন। এরপর তিনি খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ক্রিস্টোফার মার্টিন-জেনকিন্স তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেন যে, ‘পুণঃপুণঃ নিজেকে প্রতিভাধররূপে প্রমাণ করে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন ডেভিড পিদি।’

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নাটালের কিয়ার্সনে কলেজে মার্কেটিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা টনি পিদি দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে অস্ট্রালেশিয়া সফরে একত্রে পাঁচ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও এ সফরেই পোলক ভ্রাতৃদ্বয় - পিটার পোলকগ্রেইম পোলকের সাথে একত্রে খেলেন। এটিই এক টেস্টে কোন দলের পক্ষে দুই জোড়া ভ্রাতৃদ্বয়ের একযোগে খেলায় অংশগ্রহণ ছিল।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ডেভিড পিদি সারি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তাদের সংসারে দুই কন্যা ও এক পুত্র ছিল। বেশ কয়েকবছর ধরে আলঝেইমার’স রোগে ভুগছিলেন তিনি। অতঃপর ২১ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে অক্সফোর্ডশায়ারের কিডলিংটন এলাকায় ৮৪ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে ডেভিড পিদি’র।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Jonty Winch (১৯৮৩), Cricket's Rich Heritage: a History of Rhodesian and Zimbabwean Cricket 1890-1982, Bulawayo: Books of Zimbabwe, পৃষ্ঠা 201 
  2. Wisden 1959, p. 801.
  3. "List of Rhodes Scholars"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৮ 
  4. Wisden 1962, p. 288.
  5. The Age, 15 January 1964, p. 18.
  6. R.S. Whitington, Simpson's Safari, Heinemann, London, 1967, pp. 128–29.
  7. "An obituary for David Pithey"GetItDurban। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা