ডেনিস মরকেল
ডেনিস পল বেক মরকেল (ইংরেজি: Denys Morkel; জন্ম: ২৫ জানুয়ারি, ১৯০৬ - মৃত্যু: ৬ অক্টোবর, ১৯৮০) কেপটাউনের প্লামস্টিডে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২৭ থেকে ১৯৩২ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকা পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন ডেনিস মরকেল।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জন্ম | প্লামস্টিড, কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা | ২৫ জানুয়ারি ১৯০৬|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৬ অক্টোবর ১৯৮০ নটিংহাম, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনকক্রিকইনফো.কম, ৯ মে ২০১৯ |
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনা১৯২৪-২৫ মৌসুম থেকে ১৯৩৮ সময়কাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান ছিল ডেনিস মরকেলের। ১৯২৪ সাল থেকে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তুলনামূলকভাবে কারি কাপে কম অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৩০ ইনিংসে ৪৬.৯৬ গড়ে রান তুলেছেন ও ৪৬ উইকেট পেয়েছিলেন ২৬.৬৫ গড়ে। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। পরের মৌসুমে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যায়ে নাটালের বিপক্ষে অপরাজিত ২০৮ রান তুলেন। এ মৌসুমেই কেপটাউনে বর্ডারের বিপক্ষে ১১৪ রান তুলেন। এস. এস. এল. স্টেইনকে সাথে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ২২২ রান তুলেন। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স বনাম বর্ডারের খেলায় ঐ সংগ্রহটি অদ্যাবধি দক্ষিণ আফ্রিকান রেকর্ডরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে। তবে, ইংল্যান্ডে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৬ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিলেন ডেনিস মরকেল। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল তার। নিজস্ব প্রথম ওভারেই হোমসের উইকেট লাভে সক্ষম হন। তবে, এরপর সিরিজের কোন খেলাতেই তেমন সাফল্য পাননি।
১৯২৭-২৮ মৌসুমে ক্যাপ্টেন আর. টি. স্ট্যানিফোর্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সদস্যরূপে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। সিরিজের পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। কিছু প্রয়োজনীয় রান তুললেও তেমন সফলতা পাননি। তার বোলিংও তেমন ব্যবহার করা হয়নি।
১৯২৯ সালে ইংল্যান্ড সফরে সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সেখানে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। লর্ডস টেস্টে এমসিসির বিপক্ষে ৮৮ ও ৭০ রান এবং মিডলসেক্সের বিপক্ষে ৭/৬১ পান তিনি। সিরিজেপ্রাপ্ত ১৪ উইকেটের মধ্যে লর্ডসেই পেয়েছেন সাত উইকেট। উদ্বোধনী বোলিং প্রচেষ্টায় কিলিক, হ্যামন্ড এবং ও’কনরকে আউট করেছেন। প্রাপ্ত উইকেটের সবগুলোই হ্যামন্ড, সাটক্লিফ, দীলিপ, হেন্ড্রেনের ছিল। তারা বেশ কয়েকবার তার শিকারে পরিণত হন। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ৩৪.৩৫ গড়ে ১৪৪৩ রান ও ২৬.০১ গড়ে ৬৯ উইকেট দখল করেন। টেস্ট খেলায় ব্যাটিং ও বোলিং - উভয় বিভাগে দলের দ্বিতীয় সফলতম বোলারে পরিণত হন। লর্ডস টেস্টে ৮৮ ও অপরাজিত ১৭ রান তোলার পর সাত উইকেট পান। এরপর ওল্ড ট্রাফোর্ডে দল ১৩০ রানে গুটিয়ে গেলেও তিনি করেছিলেন ৬৩ রান এবং ওভালে করেন ৮১ রান। এ সফরে ৩৪.৩৫ গড়ে ১৪৪৩ রান এবং ২৬.০১ গড়ে ৬৯ উইকেট লাভ করেছিলেন। হালে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে একমাত্র শতকটি পেয়েছেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম ইনিংসে দলের অর্ধেকের চেয়েও অধিক রান ৬৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রান করলেও ইনিংসে পরাজয়ের কবলে পড়ে তার দল। টিচ ফ্রিম্যান ১২ উইকেট পেয়েছিলেন। ওভালের চূড়ান্ত টেস্টে ৮১ রান তুলেন।
ইংল্যান্ডে বসবাসের চিন্তা করা থেকেই ১৯৩০-৩১ মৌসুমে এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলতে নামেননি। এরপর তিনি আরও ছয়বার নিজ দেশের পক্ষে খেলেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এ পর্যায়ে দলের সহঃ অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তবে, বেশ হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল করেন। টেস্ট খেলায় ব্যাট হাতে ভূমিকা রাখতে পারেননি ও বল হাতে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ১০ ইনিংসে মাত্র ৯৮ টেস্ট রান তুলতে পেরেছিলেন। বল হাতেও তেমন সাফল্য পাননি। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অপরাজিত ৭০ রান তুলেন। প্রাপ্ত ২৭ উইকেটের মধ্যে মাত্র দুইটি পেয়েছিলেন টেস্ট থেকে। স্বাগতিক দলটিতে ম্যাকাবে ও ব্রাডম্যানের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিল। কেবলমাত্র শেষ খেলাতে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের সেরাটা খেলেন। অপরাজিত ১৫০ রান তুলেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮/১৩ পান। সফরের শুরুরদিকে তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এছাড়াও, বোলিং ভঙ্গীমা নিয়েও সমস্যায় নিপতিত হয়েছিলেন। এভাবেই তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
দেশে ফেরার পূর্বে পার্থের খেলায় আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ১৫০ রান তুলেন ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮/১৩ পান। ১৯৩১, ১৯৩২ ও ১৯৩৪ সালে ওভালে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন। দ্বিতীয় খেলায় ৮৫ রান তুলেন। ১৯৩২ সালে দক্ষিণ আমেরিকা গমন ২৫১ রান তুলেন।
খেলার ধরন
সম্পাদনাদীর্ঘদেহী ও মজবুত গড়নের অধিকারী ডেনিস মরকেল স্বাভাবিক ভঙ্গীমায় ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। পিচে তার বল বেশ পেস বোলিংয়ে পরিণত হতো। খুব সম্ভবতঃ ঐ সময়ে তিনি দলের সেরা বোলার ছিলেন। উইকেটের উভয়দিকেই চমৎকার ভাবে ড্রাইভ মারতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে সুদক্ষ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯২৯ সালের ইংল্যান্ড সফরের শেষদিকে ধনপতি স্যার জুলিয়েন কান একাদশের বিপক্ষে ৭/৬১ নিয়ে তার ভাগ্যের চাকা অনেকাংশেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। কান তাকে দলে খেলার আমন্ত্রণ জানান। ১৯৩২ সালে স্যার জুলিয়েন কান নটিংহামে গাড়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেন। স্যার জুলিয়েন দলের পক্ষে ১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত খেলে প্রায় দশ হাজার রান ও চারশত উইকেট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীতে যুক্ত ছিলেন। তার ভাই রে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে খেলেছেন। এক পর্যায়ে তাকেও সেরা বোলার হিসেবে ভাবা হয়েছিল।
জ্যাক চিদামের মৃত্যুর দুই মাস পর দ্বিতীয় সেরা ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ক্রিকেটার হিসেবে তার দেহাবসান ঘটে। ৬ অক্টোবর, ১৯৮০ তারিখে ৭৫ বছর বয়সে আকস্মিকভাবে ইংল্যান্ডের নটিংহামের হাসপাতালে ডেনিস মরকেলের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর আঠারোদিন পূর্বে স্বীয় পত্নী মার্গেরি’র মৃত্যু ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Denijs Morkel"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ডেনিস মরকেল (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে ডেনিস মরকেল (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)