ডীপ ব্লু

সুপারকম্পিউটার

ডিপ ব্লু (ইংরেজিঃ Deep Blue) দাবা খেলার উপযোগী যন্ত্রচালিত কম্পিউটার বিশেষ। এটি আইবিএম বা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কোং কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়েছিল। ১১ মে, ১৯৯৭ তারিখে এ যন্ত্রটি তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভের বিরুদ্ধে ছয়টি দাবা খেলায় অংশ নেয়। তন্মধ্যে যন্ত্রটি দু'টিতে জয়, তিনটিতে ড্র এবং একটিতে পরাজিত হয়।[১] কাসপারভ আইবিএমের বিরুদ্ধে প্রতারণার দাবী উত্থাপন করেন এবং প্রতিযোগিতাটি পুনরায় অনুষ্ঠানের জন্য দাবী জানান। কিন্তু আইবিএম কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ডিপ ব্লুকেই বিজয়ী হিসেবে চিহ্নিত করেন।[২] উল্লেখ্য, কাসপারভ ১৯৯৬ সালে ডিপ ব্লু'র পুরনো সংস্করণকে পরাজিত করেছিলেন।

ডীপ ব্লু, দাবা খেলার উপযোগী যন্ত্রচালিত কম্পিউটার

উৎপত্তি সম্পাদনা

কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির ফেং জিয়াং সু'র মাধ্যমে প্রজেক্টের কাজ শুরু হয় চিপটেস্ট হিসেবে। এটি তিনি ডিপ থট কম্পিউটার দাবাড়ুর উত্তরসূরী হিসেবে ডিপ ব্লু'তে ব্যবহার করেন। তাদের স্নাতক ডিগ্রী সমাপণের পর কার্নেগী মেলন কর্তৃপক্ষ সু, থমাস অনন্থারমন এবং মুরে ক্যাম্পবেলকে ডিপ থট দল থেকে এনে আইবিএম গবেষণাগারে ধারাবাহিকভাবে একটি দাবা যন্ত্র তৈরী করেন। সু এবং ক্যাম্পবেল ১৯৮৯ সালের শরতে যোগ দেন। অনন্থারমন পরবর্তীকালে এ দলে যোগ দেন।[৩] অনন্থারমন আইবিএম ত্যাগ করে ওয়াল স্ট্রিটে চলে যান। তার পরিবর্তে আর্থার জোসেফ হোয়ান এ দলে যোগ দিয়ে প্রোগ্রামিং কার্যাবলীতে অংশ নেন।[৪] আইবিএম গবেষণাগারে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত জেরী ব্রডি ১৯৯০ সালে এ দলটিতে যোগ দিয়েছিলেন।[৫] প্রথমে দলটিকে রেণ্ডি মৌলিক পরিচালনা করেন এবং পরে চুং-জেন (সিজে) তান তার স্থলাভিষিক্ত হন।[৬]

ডিপ থট দাবা কম্পিউটার ১৯৮৯ সালে কাসপারভের বিরুদ্ধে খেলে। এরপর আইবিএম কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তারা যন্ত্রটির নাম পরিবর্তন করে ডিপ ব্লু নামকরণ করে। বিগ ব্লু নামে আইবিএমের একটি খেলা অনুসরণে এর ডাক নাম রাখা হয় বিগ ব্লু[৭]

ডিপ ব্লু'র নিচের সংস্করণ ছিল ডিপ ব্লু জুনিয়র। এটি গ্র্যান্ডমাস্টার জোয়েল বেঞ্জামিনের সাথে খেলেছিল। সু এবং ক্যাম্পবেল একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেঞ্জামিন ডিপ ব্লু'র উন্নয়নে দাবা প্রোগ্রামকে ডেটাবেজে রূপান্তরের কাজ করবেন। বেঞ্জামিন আইবিএম গবেষণাগারে ডিপ ব্লু'র প্রস্তুতি ও গ্যারী কাসপারভের বিপক্ষে ডিপ ব্লু'র খেলা পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাক্ষর করলেন।[৮]

১৯৯৫ সালে ডিপ ব্লু'র নমুনা সংস্করণটি পরীক্ষামূলকভাবে ৮ম বিশ্ব কম্পিউটার দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেয়। হংকংয়ে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নশীপে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫ সমর্থিত কম্পিউটার প্রোগ্রাম পাওয়ার চেজ বা ডব্লিউচেজের সাথে ড্র করে ডিপ ব্লু।

৫ম রাউন্ডে এটি সাদা ঘুঁটি নিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম সমর্থিত ফ্রিজকে ৩৯ চালে হারিয়ে দেয়। চ্যাম্পিয়নশীপে ডিপ ব্লু'র নমুনা সংস্করণ কম্পিউটার প্রোগ্রাম জুনিয়রের সাথে টাইয়ে অংশ নেয় ও ২য় স্থান অর্জন করে।[৯]

বনাম কাসপারভ সম্পাদনা

  ডীপ ব্লু বনাম গ্যারী কাসপারভ
১ম ম্যাচ
  • ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬: ফিলাডেলফিয়া, পেনিসিলভ্যানিয়ায় অনুষ্ঠিত
  • ফলাফল: কাসপারভ–ডীপ ব্লু (৪–২)
  • রেকর্ড: ১ম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কাছে প্রতিযোগিতার নিয়মানুসারে পরাজিত

২য় ম্যাচ (পুনরায়)

  • ১১ মে, ১৯৯৭: নিউইয়র্ক সিটি, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত
  • ফলাফল: ডীপ ব্লু-কাসপারভ (৩/–২/)
  • রেকর্ড: ১ম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে প্রতিযোগিতার নিয়মানুসারে পরাভূত

১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালে ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভানিয়ায় শুরু হওয়া যন্ত্র বনাম মানুষের মধ্যকার আনুষ্ঠানিক খেলা শুরু হয়। এর মাধ্যমেই ডিপ ব্লু প্রথমবারের মতো ঐ সময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও শীর্ষস্থানীয় ইলো রেটিংধারী দাবাড়ুর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এতে সাদা ঘুঁটিসিসিলিয়ান ডিফেন্স (বি২২) ১ম খেলায়ই এটি নিয়মিতভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভকে পরাভূত করে।

অবশ্য পরবর্তী ৫টি খেলায় কাসপারভ নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে নেন। যাতে তিনি ৩টিতে জয়ী এবং বাকী ২টিতে ড্র করেন। সামগ্রীকভাবে ফলাফল ছিল কাসপারভ (৪) - ডিপ ব্লু (২)। (দাবায় জয়ী হলে ১ পয়েন্ট, ড্র / পয়েন্ট এবং পরাজিত ০ পয়েন্ট হিসেবে নিরূপণ করা হয়।) এর মাধ্যমে নিঃসন্দেহে তিনি যন্ত্রচালিত দাবা কম্পিউটার হিসেবে ডিপ ব্লু'র উপর মানুষের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালে প্রতিযোগিতাটি শেষ হয়।

পরবর্তীকালে ডিপ ব্লুকে আরো উন্নয়ন ও উন্নততর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অনানুষ্ঠানিকভাবে একে ডিপার ব্লু নামে নামাঙ্কিত করা হয়।[১০] মে, ১৯৯৭ সালে ডিপ ব্লু পুনরায় কাসপারভের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ৬ খেলার প্রতিযোগিতায় এটি ৩/-২/ পয়েন্টের ব্যবধানে জয়ী হয়। ১১ মে, ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত সমাপণী খেলার মাধ্যমে ও কাসপারভের শুরুতেই ভুলের কারণে প্রথম কম্পিউটারচালিত প্রোগ্রাম হিসেবে মানুষের বিরুদ্ধে জয় পায়। এ দাবা প্রতিযোগিতার সময় নিয়ন্ত্রণকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছিল।

বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পাদনা

ডিপ ব্লুকে দাবা খেলার উপযোগী লিখিত প্রোগ্রাম হিসেবে সি প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছিল। এআইএক্স অপারেটিং সিস্টেমে এটি পরিচালনা করা যায়। প্রতি সেকেন্ডে ডিপ ব্লু ২০০ মিলিয়ন ঘুঁটি চালনায় সক্ষম ছিল যা ১৯৯৬ সালের সংস্করণ বা ভার্সনের তুলনায় দ্বিগুণ গতিসম্পন্ন। জুন, ১৯৯৭ সালে এটি ছিল বিশ্বের ২৫৯তম সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার। উচ্চ গতিসম্পন্ন লিনপ্যাক বেঞ্চমার্ক অনুসারে টপ৫০০ তালিকায় ডিপ ব্লু ১১.৩৮ জিএসএলওপিএস অর্জন করে।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Saletan, William (২০০৭-০৫-১১)। "Chess Bump: The triumphant teamwork of humans and computers"। Slate। 
  2. Hsu 2002, p.265
  3. Hsu 2002, p.107
  4. Hsu 2002, p.132
  5. IBM। "Deep Blue — Overview"। IBM Research। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-১৯ 
  6. Hsu 2002, p.136
  7. Hsu 2002, pp.126–127
  8. Hsu 2002, pp.160–161, 174, 177, 193
  9. "Deep blue had white and lost to Fritz in 39 moves"। ৭ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২ 
  10. IBM Research Game 2, Deep Blue IBM
  11. TOP500 Super Computer List – June 1997 (201–300) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে Top500.org

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা