ডানবারের সংখ্যা (Dunbar's number) বলতে কোনও ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতজন ব্যক্তির সাথে স্থিতিশীল সামাজিক সম্পর্ক (যে সম্পর্কে প্রতিটি ব্যক্তির পরিচয় এবং প্রতিটি ব্যক্তি অপর প্রতিটি ব্যক্তির সাথে কীভাবে সম্পর্কিত, তা জানা থাকে) বজায় রাখতে পারে, সেই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবিত জ্ঞানগত সীমাকে নির্দেশ করা হয়।[১][২][২] ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী রবিন ডানবার ১৯৯০-এর দশকে প্রথম এই সীমাটি প্রস্তাব করেন। তিনি প্রাইমেট বর্গীয় প্রাণীদের মস্তিষ্কের আকার এবং তাদের গড় সামাজিক দলের আকারের মধ্যে একটি অনুবন্ধ আবিষ্কার করেন।[৩] এরপর তিনি মানব মস্তিষ্কের গড় আকার এবং প্রাইমেট বর্গীয় প্রাণীদের উপরে গবেষণা করে প্রাপ্ত ফলাফলগুলিকে মিলিয়ে প্রস্তাব করেন যে প্রতিটি মানুষ গড়ে আরামদায়কভাবে ১৫০টি স্থিতিশীল সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।[৪] ডানবার ব্যাপারটিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে ডানবার সংখ্যা হল "সেইসব লোকের সংখ্যা যাদের সাথে কোনও পানশালায় অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা হয়ে গেলে তাদের সাথে পানীয় গ্রহণে যোগদান করতে আপনি বিব্রত বোধ করবেন না।"[৫]

ডানবারের সংখ্যা

ডানবার সংখ্যার সমর্থকেরা বলেন যে এই সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যার লোকের সাথে মিলে একটি স্থিতিশীল, সুসমঞ্জস সামাজিক দল গঠন করতে হলে অধিকতর বিধিনিষেধমূলক নিয়ম, আইন ও চাপিয়ে দেওয়া রীতির প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করেছেন যে সংখ্যাটি ১০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে অবস্থিত, তবে সাধারণত ১৫০ মানটিই বেশি ব্যবহার করা হয়।[৬][৭] ডানবারের সংখ্যা কেবল সেইসব লোকের সংখ্যা নির্দেশ করে, যাদেরকে আলোচ্য ব্যক্তিটি চেনেন এবং যাদের সাথে তার সামাজিক সম্পর্ক বজায় আছে। সামাজিক সম্পর্ক বজায় নেই, কিন্তু অতীতে পরিচিত কোনও ব্যক্তিকে এই সংখ্যায় গণনা করা হয় না। এছাড়া আলোচ্য ব্যক্তিটি যেসব লোকের সাথে সাধারণভাবে পরিচিত কিন্তু যাদের সাথে তার কোনও স্থায়ী সামাজিক সম্পর্ক নেই, তাদেরকেও ডানবার সংখ্যায় গণনায় ধরা হয় না; এসব ব্যক্তির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হতে পারে এবং এটি আলোচ্য ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির আকারের উপরে নির্ভর করে।

ডানবার এই তত্ত্ব দেন যে "এই সীমাটি আপেক্ষিক নব-বহিঃমস্তিষ্কের (নিওকর্টেক্স) আকারের সাথে সরাসরি অন্বয়যুক্ত এবং এই সূত্র ধরে সামাজিক দলের আকৃতির উপরেও সীমা প্রযুক্ত হয়...নব্য-বহিঃমস্তিষ্কের প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতার দ্বারা প্রযুক্ত সীমাটি শুধুমাত্র সেইসব মানুষের সংখ্যার উপরে প্রযোজ্য, যাদের সাথে স্থিতিশীল আন্তঃব্যক্তি সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।" সীমান্তবর্তী অবস্থানে এই সংখ্যাটিতে প্রাক্তন সহকর্মী বা বিদ্যালয়ের সহপাঠী ও বন্ধুরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যার সাথে আলোচ্য ব্যক্তিটি দেখা করার সুযোগ পেলে পুনরায় পরিচিত হতে চাবেন।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dunbar, R. I. M. (১৯৯২)। "Neocortex size as a constraint on group size in primates"। Journal of Human Evolution22 (6): 469–493। ডিওআই:10.1016/0047-2484(92)90081-J 
  2. Gladwell, Malcolm (২০০০)। The Tipping Point – How Little Things Make a Big Difference । Little, Brown and Company। পৃষ্ঠা 177–181, 185–186। আইএসবিএন 978-0-316-34662-7 
  3. Reisinger, Don (২৫ জানুয়ারি ২০১০)। "Sorry, Facebook friends: Our brains can't keep up"CNET। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৮Dunbar has now decided to shift focus to see whether Facebook has changed the number. 
  4. Purves, Dale (২০০৮)। Principles of Cognitive Neuroscience। Sunderland, Mass.: Sinauer Associates। আইএসবিএন 9780878936946 
  5. Dunbar, Robin (১৯৯৮)। Grooming, gossip, and the evolution of language  (1st Harvard University Press paperback সংস্করণ)। Cambridge, Massachusetts: Harvard University Press। পৃষ্ঠা 77আইএসবিএন 978-0674363366। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  6. Hernando, A.; Villuendas, D.; Vesperinas, C.; Abad, M.; Plastino, A. (২০০৯)। "Unravelling the size distribution of social groups with information theory on complex networks"PreprintarXiv:0905.3704 বিবকোড:2009arXiv0905.3704H 
  7. "Don't Believe Facebook; You Only Have 150 Friends"NPR। ৪ জুন ২০১১। 
  8. Carl Bialik (১৬ নভেম্বর ২০০৭)। "Sorry, You May Have Gone Over Your Limit Of Network Friends"। The Wall Street Journal Online। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০২