ডগলাস হন্ডো

জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটার

ডগলাস তাফাদজা হন্ডো (ইংরেজি: Douglas Hondo; জন্ম: ৭ জুলাই, ১৯৭৯) বুলাওয়াও এলাকায় জন্মগ্রহণকারী কোচ ও সাবেক জিম্বাবুয়ীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০০-এর দশকের সূচনাকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ডগলাস হন্ডো
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডগলাস তাফাদজা হন্ডো
জন্ম (1979-07-07) ৭ জুলাই ১৯৭৯ (বয়স ৪৪)
বুলাওয়াও, জিম্বাবুয়ে রোডেশিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার, কোচ
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৪)
৭ সেপ্টেম্বর ২০০১ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট১৪ জানুয়ারি ২০০৫ বনাম বাংলাদেশ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৬৬)
৩ অক্টোবর ২০০১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই২৯ জানুয়ারি ২০০৫ বনাম বাংলাদেশ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯৯/২০০০সিএফএক্স একাডেমি
২০০০/০১মিডল্যান্ডস ক্রিকেট দল
২০০১/০২ - ২০০৪/০৫ম্যাশোনাল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৫৬ ৫০ ১০২
রানের সংখ্যা ৮৩ ১২৭ ৬৫১ ২৮৬
ব্যাটিং গড় ৯.২২ ৭.৪৭ ১৩.২৮ ১১.৪৪
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ০/৩ ০/০
সর্বোচ্চ রান ১৯ ১৭ ৮৫* ৩৯*
বল করেছে ১৪৮৬ ২৩৮১ ৭,৩৪৪ ৪,৩৮১
উইকেট ২১ ৬১ ১৩৩ ১২৪
বোলিং গড় ৩৬.৮৫ ৩৫.৫৯ ২৭.২৭ ৩০.২৯
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৫৯ ৪/৩৭ ৬/৫৯ ৪/৩২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫/– ১৫/– ২৮/– ২৯/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ জুন ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ইস্টার্নস, ম্যাশোনাল্যান্ড এ, ম্যাশোনাল্যান্ড ঈগলস, মিডল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট একাডেমি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন ডগলাস হন্ডো

শৈশবকাল সম্পাদনা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেটের সাথে প্রথম পরিচিত হন। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পরিবারের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এ খেলায় যুক্ত হন। পিটার শার্পলেসের পরিচালনায় হন্ডো ও তার ভ্রাতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন ডগলাস হন্ডো দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ পর্যায়ে তিনি ব্যাটিং ও বোলিং - উভয় বিভাগেই উদ্বোধন করতেন। তাতেন্দা তাইবু ও অন্য সহপাঠীদের সাথে তিনিও হারারেভিত্তিক চার্চিল স্কুলে ভর্তি হন। প্রথমে তিনি অনূর্ধ্ব-১৫ ও পরবর্তীতে পুরো দলের অধিনায়ক হন। দূর্দান্ত খেলেন তিনি। গেটওয়ে হাই স্কুলের বিপক্ষে ৭/১০ ও হিলক্রেস্টের বিপক্ষে ১২১ রান তুলেন।

ম্যাশোনাল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৩ ও পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলেন। পিঠের আঘাতের কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এক বছর খেলতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ২০০০ সালে সিএফএক্স একাডেমিতে খেলেন তিনি। একাডেমি থেকে চলে আসার পর কেউইকেউইভিত্তিক মিডল্যান্ডস দলে যুক্ত হন। তবে, সূচনা পর্বটি তার জন্যে সুবিধের হয়নি। ৫০-এর অধিক গড়ে মাত্র ১১ উইকেট লাভ করেন।

এটন কলেজ যেরূপ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সূতিকাগার ছিল; ঠিক তেমনি হারারেভিত্তিক চার্চিল বয়েজ হাই স্কুলও জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের সূতিকাগার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তাতেন্দা তাইবুহ্যামিল্টন মাসাকাদজা’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে তৃতীয় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে চার্চিল স্কুল থেকে বের হয়ে আসেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৯৯-২০০০ মৌসুম থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ডগলাস হন্ডো’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ডানহাতি সুইং বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।[১] এছাড়াও, স্বতন্ত্র জটবাঁধা চুলের জন্যেও তার পরিচিতি রয়েছে।[২]

দর্শনীয় সুইং বোলার হিসেবে বলকে পিচের উভয় প্রান্ত থেকে ঘুরাতে পারতেন। চেন্নাইয়ে ডেনিস লিলি’র পরিচালনায় পেস-বোলিং একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। জিম্বাবুয়ে দল থেকে বাদ পড়ার পর ক্লাব ক্রিকেট খেলতে স্টুয়ার্ট ম্যাটসিকেনিয়েরি’র সাথে অ্যাডিলেডে চলে যান। পোর্ট অ্যাডিলেডে এক মৌসুম খেলাকালীন ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নিজেকে নিচেরসারির সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। এক পর্যায়ের কিছু বড় ধরনের রান তুলেন। তাসত্ত্বেও, নিজ ক্লাব ইউনিভার্সালের পক্ষে সর্বদাই এগারো নম্বরে ব্যাটিং করতে নামতেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টিমাত্র টেস্ট ও ছাপ্পান্নটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন ডগলাস হন্ডো। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে হারারেতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৪ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে ঢাকায় স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে ছয় উইকেট তুলে নেন।

অনেকটা বিস্ময়করভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণের জন্যে তাকে দলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্রাইটন ওয়াতাম্বা’র আঘাতপ্রাপ্তির কারণে তাকে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটানোর সুযোগ এনে দেয়। তিনি তেমন ভালো খেলেননি এবং তদ্রূপ দলও ভালো খেলেনি। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ৬০০/৩ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। গ্যারি কার্স্টেনের ব্যক্তিগত ২১২ রানে থাকাকালে হন্ডো উইকেটটি লাভ করেন। তবে, ব্যাট হাতে নিয়ে কিছুটা পুষিয়ে দেন। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের জোড়া শতকের সহযোগী ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ফ্লাওয়ারের সংগ্রহ ১৯৯* থাকাকালীন আউট হন।

দ্বিতীয় টেস্টে বাদ পড়েন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ হলেও তার খেলায় ছন্দহীনতা লক্ষণীয় ছিল। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকালে বলে নিখুঁততার দিকে নজর দেন। ফলশ্রুতিতে, ভারতের বিপক্ষে পাঁচটি ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে খেলার জন্যে পুনরায় আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। প্রথম দুই খেলায় অংশগ্রহণ করানো হয়নি তাকে। তবে, তৃতীয় খেলায় তিন উইকেট পান। দিনেশ মোঙ্গিয়া, সৌরভ গাঙ্গুলীভিভিএস লক্ষ্মণকে আউট করেন। পমি এমবাঙ্গাকে সাথে নিয়ে ভারতের সংগ্রহ ৫১/৪-এ নিয়ে যান। শেষ উইকেটে ব্যাটিং করে দলকে জয় এনে দেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০২ সালের আইসিসি ট্রফিতেও আবারও ভারতের বিপক্ষে বেশ ভালোমানের খেলা উপহার দেন। আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় সৌরভ গাঙ্গুলী, দিনেশ মোঙ্গিয়া, শচীন তেন্ডুলকরযুবরাজ সিংয়ের উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের সংগ্রহ ৮৭/৫-এ রূপান্তরিত করেন। তবে, মোহাম্মদ কাইফের অপরাজিত ১১১ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ৭১ রানের কল্যাণে ১৪ রানের জয় তুলে নেয় ভারত দল। চার দিন পর প্রতিযোগিতার পরের খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪/৪৫ পান। এ পরিসংখ্যানটি তার ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। তবে, সুবিধে করতে পারেননি তিনি।

অবসর সম্পাদনা

ক্রমাগত পিঠের ব্যথা ও মাংসপেশীতে আঘাতের কারণে জানুয়ারি, ২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে থাকেন। আঘাতের কারণে তাকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। তবে, পিঠের অস্ত্রোপচারের কারণে এক পর্যায়ে চিকিৎসকগণ বেশ সন্দিহান ছিলেন যে আদৌ তিনি খেলার জগতে ফিরে আসতে পারবেন কি-না!

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সাথে মতবিরোধের কারণে ডগলাস হন্ডো ইংল্যান্ডের পথে পাড়ি জমান। এ ঘটনায় সম্পৃক্ত চারজন খেলোয়াড় প্রতিবাদস্বরূপ তাদের মাথার চুল ছেটে ফেলেন কিংবা ন্যাড়া করে ফেলেন।

শেফার্ড নিম লীগে আপমিনস্টার সিসি’র প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন ও ডেভন ক্রিকেট লীগে প্রিমিয়ার সাইড স্যান্ডফোর্ডের পক্ষে খেলেন। এ পর্যায়ে প্রথম খেলায় ৬ ওভারে ২/১০ পান। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগ টু কাউন্টিজ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ইপ্সউইচ ক্রিকেট ক্লাবে খেলোয়াড়/কোচের দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

২০১২ সালে হয়েরা ইউনাইটেড ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন। নিউজিল্যান্ডভিত্তিক ঐ ক্লাবে দুই মৌসুমের অধিক সময় অতিবাহিত করেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://cricketarchive.com/Archive/Players/10/10419/10419.html
  2. "An audacious Indian"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৯ 
  3. "Hondo back to blast ahead for Hawera"Taranaki Daily News। ৫ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৪ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা