টয় স্টোরি ৩

২০১০ সালের মার্কিন আমেরিকান চলচ্চিত্র যার পরিচালক লি উঙ্করিখ

টয় স্টোরি ৩ (জাপানি: খেলনার গল্প ৩) ২০১০ সালের মার্কিন অ্যানিমেশন কমেডি-রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র। পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওজ প্রযোজিত ও ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স পরিবেশিত চলচ্চিত্রটি টয় স্টোরির তৃতীয় কিস্তি এবং টয় স্টোরি ২-এর সিক্যুয়াল।[২] ছবিটি পরিচালনা করেছেন লি উঙ্করিখ, তিনি আগে টয় স্টোরি ছবির সম্পাদক ও টয় স্টোরি ২ ছবির সহ-পরিচালকের কাজ করেছিলেন। ছবিটির গল্প লিখছেন জন ল্যাসেটার, অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন ও লি উঙ্করিখ এবং চিত্রণাট্য লিখেছেন মাইকেল আর্ন্‌ড। ছবিতে দেখানো হয়েছে অ্যান্ডি ডেভিস কলেজে পড়তে যাওয়ার সময় তার খেলনা শেরিফ উডি, বাজ লাইটইয়ারসহ অন্যান্যরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হয় এবং তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।[৩] এই চলচ্চিত্রেও আগের কিস্তির মত প্রধান দুই চরিত্র শেরিফ উডি ও বাজ লাইটইয়ারের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন টম হ্যাঙ্কসটিম অ্যালেন

টয় স্টোরি ৩
পরিচালকলি উঙ্করিখ
প্রযোজকডারলা কে অ্যান্ডারসন
চিত্রনাট্যকারমাইকেল আর্ন্‌ড
কাহিনিকার
  • জন ল্যাসেটার
  • অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন
  • লি উঙ্করিখ
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারর‍্যান্ডি নিউম্যান
চিত্রগ্রাহক
  • জেরেমি ল্যাস্কি
  • কিম হোয়াইট
সম্পাদককেন শ্রেট্‌জম্যান
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওজ মোশন পিকচার্স
মুক্তি
স্থিতিকাল১০৩ মিনিট[১]
দেশযুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
নির্মাণব্যয়$২০০ মিলিয়ন[১]
আয়$১.০৬৭ বিলিয়ন[১]

টয় স্টোরি ৩ ২০১০ সালের ১৮ জুন মুক্তি পায় এবং ডিজনি ডিজিটাল ত্রিডি, রিয়াল ডি, ও আইম্যাক্স ত্রিডি ফরম্যাটে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী চলে। টয় স্টোরি ৩ সর্বপ্রথম ডলবি সারাউন্ড ৭.১ শব্দ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৪] ছবিটি প্রথম অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে $১ বিলিয়নের বেশি আয় করে।[৫]

ছবিটি চারটি বিভাগে - শ্রেষ্ঠ গৃহীত চিত্রণাট্য, শ্রেষ্ঠ শব্দ সম্পাদনা, শ্রেষ্ঠ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র, ও শ্রেষ্ঠ মৌলিক গান বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে এবং শেষোক্ত দুটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।[৬]

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

১৭ বছর বয়সী অ্যান্ডি কলেজের পড়ার জন্য বাড়ি ছেড়ে যাবে। সে দীর্ঘদিন তার খেলনা নিয়ে খেলে না। সে শুধু উডিকে তার সাথে নিয়ে যেতে চায় এবং বাজ, জেসি ও অন্যদের স্টোর রুমে একটি ব্যাগে রেখে দেয়। অ্যান্ডির মা ভুল করে আবর্জনা ভেবে তা আবর্জনার গাড়িতে তুলে দেয়। খেলনাগুলো পালিয়ে যায় এবং অ্যান্ডি ইচ্ছাকৃত তাদের ফেলে দিতে চায় এই ভেবে তারা একটি দান বাক্সে করে সানিসাইড ডে কেয়ারে চলে যায়। উডি তাদের পিছু নেয় কিন্তু এটা যে ভুল ছিল তা তাদের বুঝাতে পারে না।

অ্যান্ডির খেলনাদের সানিসাইডের অন্য খেলনারা স্বাগত জানায়, কিন্তু উডি তাদের নিয়ে অ্যান্ডির কাছে ফিরে আসতে চায়। এসময়ে সানিসাইডের এক ছাত্রী বনি তাকে পায় এবং লুকিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে। সেখানে সে উডির খুব যত্ন করে। অন্যদিকে সানিসাইডে একদল বাচ্চা অ্যান্ডির খেলনাদের নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে খেলে। ফলে তার লটসুর কাছে প্রার্থনা করে তাদের অন্য কোন রুমে দিতে, কিন্তু লটসু তাদের মানা করে দেয়। এই সময়ে মিসেস পটেটো হেড ভুলক্রমে অ্যান্ডির রুমে এসে পৌঁছায় এবং দেখে অ্যান্ডি তার খেলনাদের খুঁজছে। কিন্তু তারা সানিসাইড থেকে বেরিতে আসতে চাইলে লটসুর দল তাদের বাধা দেয় এবং সে দলের সর্দার বাজ লাইটইয়ার, যাকে লটসু ডেমো মোডে নিয়ে গেছে।

বনির বাড়িতে চাকলের কাছ থেকে উডি জানতে পারে লটসু, বিগ বেবি ও সে ডেইজির প্রিয় খেলনা ছিল, তারা তার কোন এক পারিবারিক সফরে গিয়ে হারিয়ে যায়। উডি সানিসাইডে ফিরে আসে এবং জানতে পারে তাদের বাইরে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা হল আবর্জনার সাথে বের হওয়া। তারা সেখান থেকে সফলভাবে বের হতে সক্ষম হয়। বাড়িতে এসে অ্যান্ডির রুমে উডি অ্যান্ডির কলেজের জিনিসপত্রের উপরে একটি নোট রেখে যায়। অ্যান্ডি মনে করে নোটটি তার মায়ের লেখা। সে তার সব খেলনা নিয়ে তার প্রতিবেশী ছোট্ট বনির কাছে যায় এবং তাকে তার সব খেলনাসমূহ দিয়ে আসে।

কণ্ঠ সম্পাদনা

মূল্যায়ন সম্পাদনা

বক্স অফিস সম্পাদনা

টয় স্টোরি ৩ উত্তর আমেরিকায় $৪১৫ মিলিয়ন এবং অন্যান্য দেশে $৬৫২ মিলিয়ন আয় করে এবং বিশ্বব্যাপী মোট $১.০৬৭ বিলিয়ন আয় করে, যা আগের দুই কিস্তির মোট আয়ের চেয়েও বেশি।[১] প্রথম সপ্তাহে ছবিটি ৳১৪৫.৩ মিলিয়ন আয় করে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে শীর্ষে অবস্থান করে।[৭] ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট ছবিটি মুক্তির ৭১তম দিনে $১ মিলিয়ন আয় করে এবং ২০১০ সালে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের পর ডিজনি পরিবেশিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এবং প্রথম অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে এই কীর্তি গড়ে।[৫]

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

 
কোয়েন্টিন টারান্টিনো টয় স্টোরি ৩কে তার ২০১০ সালের চলচ্চিত্রের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন।[৮]

টয় স্টোরি ৩ চলচ্চিত্রটিকে সমালোচকেরা প্রশংসা করেছেন। রটেন টম্যাটোস-এ ২৯০টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে ছবিটির রেটিং স্কোর ৯৯% এবং গড় রেটিং ৮.৯/১০। ওয়েবসাইটটিতে চলচ্চিত্রটির কমেডিতে পটুতা, রোমাঞ্চ ও সত্যিকার আবেগের প্রশংসা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে দ্বিতীয় সিক্যুয়ালের ক্ষেত্রে এটি একটি বিরল ঘটনা।[৯] মেটাক্রিটিক-এ ৩৯টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে চলচ্চিত্রটির স্কোর ১০০-এ ৯২, অর্থাৎ ছবিটি সামগ্রিকভাবে প্রশংসিত।[১০] সিনেমাস্কোর-এ দর্শকদের জরিপে চলচ্চিত্রটি এ+ থেকে এফ স্কেলে "এ" লাভ করে।[১১] পরিচালক কোয়েন্টিন টারান্টিনো টয় স্টোরি ৩কে তার ২০১০ সালের চলচ্চিত্রের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন[৮] এবং টাইম ম্যাগাজিন ছবিটিকে ২০১০ সালের সেরা চলচ্চিত্র" হিসেবে অভিহিত করেছে।[১২] ২০১১ সালে টাইম ছবিটিকে "সর্বকালের সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র"-এর তালিকায় স্থান দেয়।[১৩]

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সমালোচক এ. ও. স্কট লিখেন টয় স্টোরি তিনটি কিস্তি - এই মহাকাব্যিক রোমাঞ্চে কিছু প্লাস্টিকের খেলনার মাধ্যমে ভালোবাসা নামক অদৃশ্য সত্তাটিকে প্রকাশ করা হয়েছে।[১৪] এন্টারটেইনমেন্ট উইকলির ওয়েন গ্লেইবারম্যান চলচ্চিত্রটিকে "এ" দেন এবং বলেন ছবিটি তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল।[১৫] দ্য হলিউড রিপোর্টার-এর মাইকেল রেচ্‌টশ্যাফেন ছবিটির ইতিবাচক সমালোচনা করে বলেন উডি, বাজ এবং অন্য খেলার সাথীরা ফিরে এসে সবাইকে একত্রিত করেছে এবং মানসিক সন্তুষ্টি দিয়েছে।[১৬] বিবিসির মার্ক কেরমোড এই চলচ্চিত্রটিকে এবং এই চলচ্চিত্র ধারাবাহিককে শ্রেষ্ঠ ত্রয়ী চলচ্চিত্র বলে অভিহিত করেছেন।[১৭]

পুরস্কার সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Toy Story 3 (2010)"বক্স অফিস মোজো। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. Scott, Mike (মে ১৮, ২০১০)। "The Pixar way: With 'Toy Story 3' continuing the studio's success, one must ask: How do they do it?"দ্য টাইমস-পিকায়্যুন। NOLA.com। এপ্রিল ২২, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. Reynolds, Simon (জুন ১৭, ২০১০)। "Toy Story 3 - Movies Review"ডিজিটাল স্পাই। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  4. "Dolby Unveils Dolby Surround 7.1 at ShoWest 2010"মার্কেটওয়াচ। ২০২১-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. Subers, Ray (আগস্ট ২৯, ২০১০)। "'Toy Story 3' Reaches $1 Billion"Box Office Mojo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. "Nominees for the 83rd Academy Awards"একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  7. "All time worldwide opening records at box office"Box Office Mojo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  8. Nordyke, Kimberly। "Quentin Tarantino's Surprising Choices for Best Films of 2010"The Hollywood Reporter। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  9. "Toy Story 3 Movie Reviews, Pictures"রটেন টম্যাটোস। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  10. "Toy Story 3 reviews"মেটাক্রিটিক। ১৪ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  11. "Cinemascore :: Movie Title Search"। Cinemascore। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  12. "The Top 10 Everything of 2010"Time। ডিসেম্বর ৯, ২০১০। ডিসেম্বর ১২, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. Richard Corliss (জুন ২৩, ২০১১)। "The 25 All-TIME Best Animated Films - Toy Story 3"Time। মে ২২, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  14. এ. ও. স্কট (জুন ১৮, ২০১০)। "Voyage to the Bottom of the Day Care Center"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  15. Gleiberman, Owen (জুন ১৮, ২০১০)। "Toy Story 3"এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি। এপ্রিল ২৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  16. Rechtshaffen, Michael (অক্টোবর ১৪, ২০১০)। "Toy Story 3 – Film Review"। জুন ১০, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 
  17. "Mark Kermode reviews Toy Story 3"। YouTube। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
"দ্য ওয়্যারি কাইন্ড" (ক্রেজি হার্ট)
শ্রেষ্ঠ মৌলিক গানের জন্য একাডেমি পুরস্কার
"উই বিলং টুগেদার"

২০১০
উত্তরসূরী
"ম্যান অর মাপেট" (দ্য মাপেট্‌স)