জোবেদা খানম চৌধুরী
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
জোবেদা খানম চৌধুরী বা জোবেদা রহিম চৌধুরী মহান ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানীদের একজন।[১] তিনি বাংলাদেশের মহিলাদের রাজনীতির অন্যতম পথিকৃৎ।
জোবেদা খানম চৌধুরী | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯০১ |
মৃত্যু | ১৯৮৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | রাজনীতি |
পরিচিতির কারণ | ভাষা আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | দেওয়ান আব্দুর রহিম চৌধুরী |
সন্তান | আহমদ কবির চৌধুরী |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাজন্ম
সম্পাদনাব্রিটিশ ভারতে আসামের জোরহাটে ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন জোবেদা খানম চৌধুরী। তার বাবা ছিলেন খান বাহাদুর শরাফত আলী এবং মা নূরজাহান বেগম।[২]
শিক্ষা
সম্পাদনাজোবেদা খানম চৌধুরী তার পিতার কর্মস্থল আসামের ডিব্রুগড়ে প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর ঢাকার তৎকালীন ইডেন স্কুলে। এই স্কুলে তিনিই প্রথম মুসলিম ছাত্রী।[২]
সংসার জীবন
সম্পাদনা১৯১৯ সালে আসাম গণপরিষদের সদস্য দেওয়ান আব্দুর রহিম চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।[২] পাঁচ পুত্র ও চার কন্যার জননী তিনি। তার পুত্র আহমদ কবির চৌধুরী একজন ভাষা সংগ্রামী ছিলেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষন শুরু করলে আহমদ কবির চৌধুরী মারাত্মক আহত হন।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাসামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
সম্পাদনা১৯২৮ সালে কবি নজরুল ইসলাম, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, এবং জ্ঞান তাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র উপস্থিতিতে সিলেটে মুসলিম ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নারীরা যে কোনো শৃংখলে আবদ্ধ থাকতে চায় না এজন্য নিজের বোরখা খুলে সম্মেলনে প্রতিবাদ জানান তিনি। সেই রক্ষণশীল সময়ে এমন প্রচন্ড সাহসী কাজ করে ব্যাপক আলোচিত হন। প্রথমে জেলা মহিলা কংগ্রেস এর সভানেত্রী এবং পরে দল ত্যাগ করে ১৯৪৩ এ জেলা মহিলা মুসলিম লিগের সভানেত্রী হন তিনি।[৩]
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
সম্পাদনাবাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুর দিকেই সিলেট জেলার মহিলাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত এবং পরে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। এখানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।[২] এ স্মারকলিপি পাঠানোর পর থেকে বিভিন্ন ভাবে তাদের উপর চাপ আসতে থাকে। এ সময় সিলেটে উর্দু সমর্থক পত্রিকা ইস্টার্ণ হেরাল্ড তাদের সম্পাদকীয়তে নেত্রী জোবেদা খানম চৌধুরী ও স্মারকলিপি সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য প্রকাশ করে। এই অশোভন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন আরেক মহান ভাষা সংগ্রামী সৈয়দা নজিবুন্নেছা খাতুন। সাপ্তাহিক নওবেলালের ১২ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বলেন, "যাহারা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী হইয়া মাতৃভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে তাহারা মাতৃভাষার বিশ্বাসঘাতক কু-পুত্রতুল্য। ...উর্দু ভাষাভিজ্ঞ অপেক্ষা সিলেটের উর্দু অনভিজ্ঞ মুসলমানেরা ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পালনে কোন অংশে হীন ? বরং এ বিষয়ে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে সিলেটের মুসলমানদের তাহজীব ও তমদ্দুন এক বিশিষ্ট স্থান লাভের অধিকারী বলিয়া অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মত প্রকাশ করিয়াছেন।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম জোবেদা খানম চৌধুরীসহ নারী নেত্রীদের এই অনন্য সাহসী ভূমিকার জন্য চিঠি লিখে অভিনন্দন জানান। তিনি লেখেন, "আজ সত্যিই আমরা অভূতপূর্ব আনন্দ এবং অশেষ গৌরব অনুভব করছি। সিলেটের পুরুষরা যা পারেনি তা আপনারা করেছেন।উর্দুর সমর্থনে সিলেটের কোন কোন পত্রিকা যে জঘন্য প্রচার করছে আর সিলেটের কোন কোন পুরুষরা স্মারকলিপি দিয়ে যে কলঙ্কজনক অভিনয় করেছেন তা সত্যিই বেদনাদায়ক। কিন্তু আপনাদের প্রচেষ্টা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। ...তমদ্দুন মজলিশ আজ আপনাদের অকৃত্রিম ধন্যবাদ জানাচ্ছে।"
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ও ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাঙালিরা। এসময় জোবেদা খানমের নেতৃত্বে জিন্নাহ'র কাছে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে তারবার্তা পাঠানো হয়।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ছাত্র ও জনতার উপর পুলিশের নির্মম আক্রোশের প্রতিবাদে ২২শে ফেব্রুয়ারিতে সিলেটে বহু নারী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। উল্লেখ্য, তার ছেলে ভাষা সংগ্রামী আহমদ কবির চৌধুরী পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। জোবেদা খানম সিলেট আঞ্চলিক সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।[৪]
'৫২ পরবর্তী আন্দোলন
সম্পাদনা১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনি অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে ঢাকাতে মহিলাদের মিছিল বের হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষ সহযোগীতা করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতেন।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৮৬ সালে এই ভাষা সংগ্রামী এবং মহিলা রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেন।[২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ভাষা আন্দোলনের বরণীয় তিন নারী"। সিলেটের ডাক। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "জোবেদা খানম চৌধুরী"। www.bhorerkagoj.com। দৈনিক ভোরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারী সমাজের ভূমিকা"। ২৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "মায়ের ভাষার সংগ্রাম ও ভাষা সৈনিক"। দৈনিক আজাদী। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-২২।