জীবাণু নিরোধক

যেসব পদার্থ আণুবীক্ষণিক জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরা, ছত্রাক ও প্রোটোজোয়াকে নিধন করে বা এদে

জীবাণু নিরোধক বলতে এমন কিছু সক্রিয় রাসায়নিক যৌগকে বোঝায় যেগুলি জীবাণু বা অণুজীব নাশ করতে পারে বা এগুলির প্রজনন ও বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।[১][২]

বিচিত্র রকম ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু নিরোধ পরীক্ষা

জীবাণু নিরোধকগুলিকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথম শ্রেণীটি হল সংক্রমণ নিবারক (Disinfectant), যেমন বিরঞ্জক বা ব্লিচ (bleach)। এগুলি বাছবিচারহীনভাবে জীবাণুর সাথে সাথে সজীব মানবকোষ ও প্রাণীকোষেরও ক্ষতি করে বলে এগুলিকে কেবল নির্জীব পৃষ্ঠতলে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক প্রকারের জীবাণু ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করা হয়, যাতে রোগের বিস্তারলাভ প্রতিরোধ করা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণীটি হল পচন নিবারক (Antiseptic); এগুলিও বাছবিচারহীনভাবে জীবকোষ আক্রমণ করে বলে এগুলিকে জীবদেহের বহিঃস্থ পৃষ্ঠতলে প্রয়োগ করা হয় (উদাহরণস্বরূপ শল্যচিকিৎসার সময়) যাতে রোগসংক্রমণ না হয়। তৃতীয় শ্রেণীটি হল জীবাণু নিরোধক ঔষধ যেগুলি জীবদেহের অভ্যন্তরে জীবাণুদের বিরুদ্ধে কাজ করে।[৩]

জীবাণু নিরোধক ঔষধগুলিকে এগুলির উদ্দীষ্ট জীবাণুগুলির উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যেমন ভাইরাস নিরোধক বিভিন্ন ভাইরাসের বিরুদ্ধে, ব্যাকটেরিয়া নিরোধক বা অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে, ছত্রাক নিরোধক ঔষধ বিভিন্ন ছত্রাকের বিরুদ্ধে এবং পরজীবী নিরোধক ঔষধগুলিকে বিভিন্ন পরজীবীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।

আবার জীবাণু নিরোধকগুলিকে এগুলির কর্মপ্রকৃতি অনুযায়ীও শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যেসব সক্রিয় পদার্থ জীবাণুকে নাশ বা হত্যা করতে পারে তাদেরকে জীবাণুনাশক বলে। অন্যদিকে যেসব ক্রিয়াকারক শুধুমাত্র জীবাণুদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে, তাদেরকে জীবাণু জড়কারক বলে। যেমন ব্যাকটেরিয়া নিরোধকদেরকে দুইটি উপশ্রেণীতে ভাগ করা যায় – ব্যাকটেরিয়ানাশক, যাদের কাজ ব্যাকটেরিয়াদের ধ্বংস করা এবং ব্যাকটেরিয়া জড়কারক, যাদের কাজ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর করা বা ব্যাহত করা। এছাড়া কিছু বৃহৎ ব্যাপ্তির নিরাময়মূলক ঔষধ আছে, যেগুলি একাধিক শ্রেণী জীবাণু বিরুদ্ধে কার্যকর (যেমন অ্যাজিথ্রোমাইসিন)।

জীবাণু নিরোধক ঔষধগুলি প্রাকৃতিকভাবে জীবদেহে প্রস্তুত হতে পারে, যেমন ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন, ব্যাকটেরিয়া থেকে টেট্রাসাইক্লিনএরিথ্রোমাইসিন নামক জীবাণু নিরোধকগুলি পাওয়া যায়। আবার এগুলিকে কৃত্রিম উপায়ে (সালফোন্যামাইডফ্লুরোকুইনোলোন) বা অর্ধ-কৃত্রিম উপায়ে (অ্যামক্সিসিলিন, ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন এবং ডক্সিসাইক্লিন) প্রস্তুত করা হতে পারে।[৩]

জীবাণু নিরোধক ঔষধ দিয়ে রোগ সংক্রমণ সারানোকে জীবাণুরোধী রাসায়নিক চিকিৎসা বলা হয়। অন্যদিকে জীবাণু নিরোধক ঔষধ দিয়ে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করাকে জীবাণুরোধী প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা বলা হয়।

পরিভাষা সম্পাদনা

  • অণুজীব - microbe
  • ছত্রাক নিরোধক - antifungal
  • জীবাণু - microbe
  • জীবাণু জড়কারক - microbiostatic agent
  • জীবাণু নিরোধক - antimicrobial
  • জীবাণু নিরোধক ঔষধ - antimicrobial medicine
  • জীবাণুনাশক - microbicide
  • জীবাণুরোধী প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা - antimicrobial prophylaxis
  • জীবাণুরোধী রাসায়নিক চিকিৎসা - antimicrobial chemotherapy
  • পচন নিবারক - antiseptic
  • পরজীবী নিরোধক - antiparasitic
  • বৃহৎ ব্যাপ্তির নিরাময়মূলক ঔষধ - broad-spectrum therapeutic
  • ব্যাকটেরিয়া জড়কারক - bacteriostatic agent
  • ব্যাকটেরিয়া নিরোধক - antibiotic, antibacterial agent
  • ব্যাকটেরিয়ানাশক - bactericidal agent
  • ভাইরাস নিরোধক - antiviral
  • সংক্রমণ নিবারক - disinfectant

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Miquel Porta; John M. Last (২০১৮), "Antimicrobial", A Dictionary of Public Health, Oxford University Press 
  2. "Antimicrobial"Merriam-Webster Online Dictionary। ২৪ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০২ 
  3. Luca Guardabassi; Lars Bogø Jensen; Hilde Kruse (জানু ২২, ২০০৯), Guide to Antimicrobial Use in Animals, John Wiley & Sons, পৃষ্ঠা 1