জিওস্মিন
জিওস্মিন হল সুনির্দিষ্ট মেটে স্বাদ ও সৌরভময় একটি জৈব যৌগ যা এক ধরনের এক্টিনোব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপাদিত হয় এবং বীটগাছের মেটে স্বাদের জন্য দায়ী, তাছাড়া গরমকালের প্রচন্ড তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির পর মাটি থেকে যে সোঁদা গন্ধ এসে মানুষের নাকে লাগে সেই তীব্র গন্ধ এর জন্যই সৃষ্টি হয়।[১][২]রসায়নের পরিভাষায়, এটি একটি দ্বিচাক্রিক এলকোহল যার সংকেত হল C12H22O, এবং ডেকালিন নামক দ্রাবক থেকে জাত। গ্রীক ভাষার শব্দদ্বয় γεω- "মৃত্তিকা" এবং ὀσμή "গন্ধ" থেকে এই শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে।
নামসমূহ | |
---|---|
ইউপ্যাক নাম
(4S,4aS,8aR)-4,8a-Dimethyl-1,2,3,4,5,6,7,8-octahydronaphthalen-4a-ol
| |
অন্যান্য নাম
4,8a-Dimethyl-decahydronaphthalen-4a-ol; Octahydro-4,8a-dimethyl-4a(2H)-naphthalenol
| |
শনাক্তকারী | |
ত্রিমাত্রিক মডেল (জেমল)
|
|
সিএইচইবিআই | |
কেমস্পাইডার | |
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড | ১০০.০৩৯.২৯৪ |
ইসি-নম্বর | |
পাবকেম CID
|
|
| |
| |
বৈশিষ্ট্য | |
C12H22O | |
আণবিক ভর | ১৮২.৩১ g·mol−১ |
স্ফুটনাঙ্ক | ২৭০ °সে (৫১৮ °ফা; ৫৪৩ K) |
ঝুঁকি প্রবণতা | |
ফ্ল্যাশ পয়েন্ট | ১০৪ °সে (২১৯ °ফা; ৩৭৭ K) |
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে। | |
যাচাই করুন (এটি কি ?) | |
তথ্যছক তথ্যসূত্র | |
উৎপাদন সম্পাদনা
এক্টিনোমিচেটালেস বর্গের অন্তর্গত স্ট্রেপটোমিচেস নামের গ্রাম-পজিটিভ এক্টিনোব্যাকটেরিয়ার একটি গণের থেকে জিওস্মিন উৎপাদিত হয় এবং এসব অণুজীবের জীবনাবসানে এই যৌগটি বিমুক্ত হয়। এসব ব্যাকটেরিয়া হঠাৎ করে যখন অধিক হারে মৃত্যুবরণ করে, তাদের মৃত কোষ থেকে জিওস্মিন তৈরী হয়ে স্থানীয় পানি সরবরাহে মিশে যায়, যার ফলে ভূপৃষ্টের সেই পানি সর্বরাহের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী মাঝেমাঝেই পানিতে উৎকট স্বাদ পেয়ে থাকেন। অম্লীয় দশায়, জিওস্মিন বিশ্লেষিত হয়ে গন্ধহীন পদার্থে পরিণত হয়।[৩]
২০০৬ সালে, একটি দ্বৈত ক্রিয়ামূলক স্ট্রেপটোমিচেস সিলিকোলোর উৎসেচকের মাধ্যমে জিওস্মিনের জৈব সংশ্লেষণের পদ্ধতি উন্মোচন করা হয়। [৪][৫] জিওস্মিন সিনথেজ নামের একক একটি উৎসেচক, ফার্নেসিল ডাইফসফেট কে দুই ধাপের বিক্রিয়ায় জিওস্মিনে পরিণত করে। গবেষণাগারে উৎসেচকটির রাসায়নিক কিছু পরিবর্তন করে জিওস্মিন তৈরী করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। [৬]
স্ট্রেপটোমিচেস সিলিকোলোর হল জটিল জীবনচক্র সংবলিত, মাইসেলিয়ামের বৃদ্ধি ও বীজগুটি উৎপাদনশীলতার গুণসম্পন্ন, মাটিতে বসবাসকারি একদল ব্যাকটেরিয়ার প্রতিমান প্রতিনিধি। বাষ্পীয় জিওস্মিন উৎপাদনের পাশাপাশি, এই ব্যাকটেরিয়া ঔষধ উৎপাদন সংক্রান্ত আরো অনেক জটিল অণু প্রস্তুত করে থাকে। স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটে এই ব্যাকটেরিয়ার জিনোম বিন্যাস সংরক্ষিত রয়েছে।[৭]
প্রভাব সম্পাদনা
মানুষের নাক জিওস্মিনের প্রতি চরমভাবে সংবেদনশীল।[৬] বাতাসে এর পরিমাণ এক ট্রিলিয়নের পাঁচ ভাগ উপস্থিত থাকলেও মানুষের নাক এর গন্ধ টের পায়।[৮]
স্বাদুপানির অনেক মাছে, যেমন কার্প ও মাগুর, যে কর্দমাক্ত গন্ধ পাওয়া যায় তা এই জিওস্মিন থেকেই সৃষ্ট। যেহেতু অম্লীয় অবস্থায় জিওস্মিন ভেঙে যায়, মাছ দিয়ে তৈরী খাবারে এই গন্ধ দূর করতে তাই সির্কা এবং অন্যান্য অম্লীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ দ্য আর্থস পারফিউম। সংগৃহীতঃ ৯ মে, ২০১৫
- ↑ Yuhas, Daisy (১৮ জুলাই ২০১২)। "Storm Scents: You Can Smell Oncoming Rain"। সায়েন্টিফিক আমেরিকান।
- ↑ Gerber, NN; Lechevalier, HA (নভেম্বর ১৯৬৫)। "Geosmin, an earthly-smelling substance isolated from actinomycetes."। এপ্লাইড মাইক্রোবায়োলজি। ১৩ (৬): ৯৩৫–৮। পিএমআইডি 5866039। পিএমসি 1058374 ।
- ↑ Jiang, J.; He, X.; Cane, D.E. (২০০৬)। "Geosmin biosynthesis. Streptomyces coelicolor germacradienol/germacrene D Synthase converts farnesyl diphosphate to geosmin"। জার্নাল অভ আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি। ১২৮ (২৫): ৮১২৮–৮১২৯। ডিওআই:10.1021/ja062669x। পিএমআইডি 16787064।
- ↑ Jiang, J.; He, X.; Cane, D.E. (২০০৭)। "Biosynthesis of the earthy odorant geosmin by a bifunctional Streptomyces coelicolor enzyme"। নেচার কেমিক্যাল বায়োলজি advanced online publication। ৩ (১১): ৭১১–৫। ডিওআই:10.1038/nchembio.2007.29। পিএমআইডি 17873868। পিএমসি 3013058 ।
- ↑ ক খ বিজ্ঞান ব্লগসাইটে প্রকাশিত "সোঁদা গন্ধ" নামক প্রবন্ধ
- ↑ স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটে স্ট্রেপটোমিচেস সিলিকোলার জিনোম বিন্যাস
- ↑ Polak, E.H.; Provasi, J. (১৯৯২)। "Odor sensitivity to geosmin enantiomers"। কেমিক্যাল সেন্সেজ। ১৭: ?২৩। ডিওআই:10.1093/chemse/17.1.23।
আরো পড়ুন সম্পাদনা
- Bear, I.J.; R.G. Thomas (১৯৬৪)। "Nature of argillaceous odour"। নেচার। ২০১ (৪৯২৩): ৯৯৩–৯৯৫। ডিওআই:10.1038/201993a0।
- Bear, I.J.; R.G. Thomas (১৯৬৫)। "Petrichor and plant growth"। নেচার। ২০৭ (৫০০৫): ১৪১৫–১৪১৬। ডিওআই:10.1038/2071415a0।