জিওফ চাব

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার

জিওফ্রে ওয়াল্টার অ্যাশটন চাব (ইংরেজি: Geoff Chubb; জন্ম: ১২ এপ্রিল, ১৯১১ - মৃত্যু: ২৮ আগস্ট, ১৯৮২) ইস্টার্ন কেপভিত্তিক পূর্ব লন্ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকের শুরুরদিকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

জিওফ চাব
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজিওফ্রে ওয়াল্টার অ্যাশটন চাব
জন্ম(১৯১১-০৪-১২)১২ এপ্রিল ১৯১১
পূর্ব লন্ডন, ইস্টার্ন কেপ, কেপ প্রদেশ
মৃত্যু২৮ আগস্ট ১৯৮২(1982-08-28) (বয়স ৭১)
পূর্ব লন্ডন, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম-ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
সম্পর্কএপিএ চাব (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৭৮)
৭ জুন ১৯৫১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৬ আগস্ট ১৯৫১ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৯
রানের সংখ্যা ৬৩ ৮৩৫
ব্যাটিং গড় ১০.৫০ ১৮.১৫
১০০/৫০ ০/০ ০/৫
সর্বোচ্চ রান ১৫* ৭১*
বল করেছে ১,৪২৫ ৯,৪২৩
উইকেট ২১ ১৬০
বোলিং গড় ২৭.৪৭ ২৩.৯১
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৫১ ৭/৫৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/– ১২/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩১ জুলাই ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বর্ডারট্রান্সভাল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন জিওফ্রে চাব নামে পরিচিত জিওফ চাব

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৫০-৫১ মৌসুম পর্যন্ত জিওফ চাবের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৩১-৩২ মৌসুমে বর্ডারের পক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটে জিওফ চাবের। কিন্তু, জোহেন্সবার্গে এসে বোলিংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। নিজেকে মিডিয়াম-পেস সিমারে রূপান্তরিত করেন ও বেশ নিখুঁত বোলিংয়ে অগ্রসর হন। কার্যকরী বোলার ও বেশ জনপ্রিয় খেলোয়াড়ে পরিণত হন। উদ্বোধনী বোলার হওয়া সত্ত্বেও অপ্রত্যাশিতভাবে খেলাকালীন চশমা পরিধান করতেন।[১]

১৯৩১-৩২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন জিওফ চাপ। বর্ডারের সদস্যরূপে অভিষেক খেলাটিতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে ৬৪ রান তুলেছিলেন তিনি।[২] ঐ মৌসুমে তিনি পাঁচটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে ট্রান্সভালের পক্ষে দুইটি ও ১৯৩৯-৪০ মৌসুমে একটি খেলায় অংশ নেন। এ পর্যায়ে তিনি মাঝারিসারিতে ব্যাটিং ও বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। তন্মধ্যে, ১৯৩৯-৪০ মৌসুমে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে ইস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে ৪/২৪ ও ৪/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান ও অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস খেলেন। ঐ খেলায় দলটি ইনিংস ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল।[৩]

বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন তিন বছর যুদ্ধবন্দী ছিলেন।[১] যুদ্ধের পর ১৯৪৫-৪৬ থেকে ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ট্রান্সভালের পক্ষে বোলার হিসেবে খেলে বেশ সফলতা পান। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেননি। তবে, ১৯৫০-৫১ মৌসুমে খেলার জগতে ফিরে আসেন। এ মৌসুমেই তিনি তার সেরা খেলা প্রদর্শনে সচেষ্ট হন। ১৪.৬৬ গড়ে ৩৩ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[৪] এরফলে, কারি কাপের শিরোপা বিজয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঐ মৌসুমে রোডেশিয়ার বিপক্ষে ৫/৩৫ ও ২/২৭ নিয়ে খেলা শুরু করেন। ঐ খেলায় তার দল ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে ৫/৩৪ ও ২/৬৬ এবং নাটালের বিপক্ষে ৭/৫৪ ও ২/১০ পান।[৫]

সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৩.৯১ গড়ে ১৬০ উইকেট এবং ১৮.১৫ গড়ে ৮৩৫ রান তুলেন তিনি। এছাড়াও, বারোটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জিওফ চাব। সবগুলো টেস্টই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। ৭ জুন, ১৯৫১ তারিখে নটিংহামে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৬ আগস্ট, ১৯৫১ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৫১ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐ সফরে তিনি যে-কোন খেলোয়াড়ের তুলনায় অধিক ৮০৯.৪ ওভার ও ২৬.৩৮ গড়ে সর্বাধিক ৭৬ উইকেট দখল করেন।[৬] কুয়ান ম্যাকার্থি’র সাথে বোলিং উদ্বোধনে নেমে ২১টি টেস্ট উইকেট লাভ করেন ও ২৭.৪৭ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে শীর্ষস্থান দখল করেন। তাসত্ত্বেও, ইংল্যান্ডের ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে প্রতিবন্ধকতার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেননি। তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬/৫১ নিয়ে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এছাড়াও, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫/৭৭ পান। পঞ্চম টেস্টের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১:৫০ ঘটিকা থেকে ৩:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত একাধারে বোলিং করে যান।[৭]

উইজডেনে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হয় যে, এ সফরে তিনি সর্বদাই অধিনায়ক ডাডলি নোর্সের ইচ্ছে অনুযায়ী এক প্রান্ত ধরে রেখেছেন। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে তিনি ব্যতিক্রমী পন্থায় টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন করেছেন।[৮] টেস্টের বাইরে মে মাসে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫/২১ পান। এছাড়াও, আগস্ট মাসে সমারসেটের বিপক্ষে ৫/২১ পেয়েছিলেন।

৪০ বছর ৫৬ দিন বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার বয়োজ্যেষ্ঠ টেস্ট অভিষেকধারী খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে ৪৮৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় স্বাগতিক দল। নিজস্ব তৃতীয় বলে জ্যাক ইকিনকে স্লিপ অঞ্চলে ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ৪৬ ওভারে ৪/১৪৬ পান। তিনি ও কুয়ান ম্যাকার্থি ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৩৭৫/৩ থেকে ৪১৯ রানে গুটিয়ে দেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইংল্যান্ডের মাটিতে ষোল বছরের মধ্যে প্রথম জয় এনে দেন।

অবসর সম্পাদনা

ইংল্যান্ড সফর শেষে ১৯৫১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর, ক্রিকেট প্রশাসনের দিকে ধাবিত হন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে জাতীয় দল নির্বাচক হন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে সাকা’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বমোট দুই মেয়াদে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

২৮ আগস্ট, ১৯৮২ তারিখে ৭১ বছর বয়সে কেপ প্রদেশের পূর্ব লন্ডন এলাকায় জিওফ চাবের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Louis Duffus, "The South Africans", The Cricketer, Spring Annual 1951, pp. 5–9.
  2. Border v Western Province 1931–32
  3. Transvaal v Eastern Province 1939–40
  4. Bowling by season
  5. Transvaal v Natal 1950–51
  6. Wisden 1952, pp. 210–13.
  7. Wisden 1952, p. 250.
  8. Wisden 1952, p. 210.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা