শহীদ জাহাঙ্গীর হোসেন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

জাহাঙ্গীর হোসেন
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

জাহাঙ্গীর হোসেনের জন্ম বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চর কাউয়া ইউনিয়নের দিনারের পোল এলাকায়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম।

কর্মজীবন সম্পাদনা

জাহাঙ্গীর হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)। ১৯৬৯ সালে তিনি ইপিআরে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকার পিলখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৭০ সালের শেষে যোগ দেন চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরের অধীন ১৪ উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। এই উইংয়ের একটি কোম্পানি সাজেক এলাকায়, একটি ট্যানডং, একটি রামগড়ে এবং একটি উইং হেডকোয়ার্টারে ছিল। ১৯৭১ সালে নবীন সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রামগড়ে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতেই রামগড়ে অবস্থানরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে ওয়্যারলেসে মেসেজ পেয়ে বিদ্রোহ করেন। ২৬ মার্চ সকালে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও ভাটিয়ারির মাঝামাঝি স্থান কুমিরায় অবস্থান নেন। সেখানে ২৬-২৮ মার্চ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে কুমিরার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রাথমিক প্রতিরোধে কুমিরা স্থানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখানে তিন দিন ধরে যুদ্ধ হয়। চট্টগ্রামে অবস্থানরত রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) ২৬ মার্চ সকালে জানতে পারেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই খবর পেয়ে তিনি রামগড়ে অবস্থানরত ইপিআরদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে বলেন। তার নির্দেশ পেয়ে ইপিআর সদস্যরা দ্রুত ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের শুভপুর সেতু অভিমুখে রওনা হন। কিছুদূর যাওয়ার পর ইপিআর সদস্যরা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা শুভপুর সেতু অতিক্রম করে চলে গেছে। তখন তারা দ্রুত কুমিরায় পৌঁছে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। সন্ধ্যার দিকে সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দল হাজির হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছিল ব্যারিকেড। পাকিস্তানি সেনারা ব্যারিকেড অপসারণ করে অগ্রসর হচ্ছিল।

সে জন্য তাদের শুভপুর সেতু অতিক্রম করার পরও কুমিরায় পৌঁছতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। কুমিরাতেও ছিল ব্যারিকেড। সন্ধ্যার দিকে কুমিরার ব্যারিকেডের কাছে এসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়িবহর থেমে যায়। পাকিস্তানি সেনারা ব্যারিকেড অপসারণে ব্যস্ত। ওই সুযোগে ইপিআরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। আকস্মিক আক্রমণে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে দিন প্রায় দুই ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যায়। পরদিন সেখানে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। সারা দিন থেমে থেমে যুদ্ধ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ জোগান ক্রমশ কমে যায়। তার পরও তারা শক্তভাবে তাদের অবস্থান ধরে রাখে। ২৮ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। সড়ক ছেড়ে তারা ডান-বাম দিক দিয়ে এবং নৌবাহিনীর সাহায্যে সাগর থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে।

এতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ১৪ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং অনেকে আহত হন। কুমিরার যুদ্ধে জাহাঙ্গীর হোসেন যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৫-০৬-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৩৪। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা