জামতলার মিষ্টি হলো বাংলাদেশের যশোর জেলার জামতলা বাজারে উৎপন্ন একটি বিখ্যাত মিষ্টি।[৩][৪] [৫] এটি ছানা দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির একটি মিষ্টি যা ঘন চিনির রসে ডুবানো থাকে। এই মিষ্টি রসগোল্লার একটি প্রকরণ। এটি দেখতে কিছুটা লালচে বা বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। জামতলা বাজারের সাদেক আলী নামক জনৈক ব্যক্তি এই মিষ্টি তৈরি করেন বলে এটি সাদেক গোল্লা নামেও পরিচিত।[১]

জামতলার মিষ্টি
অন্যান্য নামজামতলার রসগোল্লা, সাদেক গোল্লা[১]
ধরননাস্তা
প্রকারমিষ্টান্ন
উৎপত্তিস্থলজামতলা বাজার, শার্শা, যশোর, বাংলাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যযশোর জেলা
সংশ্লিষ্ট জাতীয় রন্ধনশৈলীবাংলাদেশ
প্রস্তুতকারীশেখ সাদেক আলী[২]
প্রধান উপকরণছানা, চিনির সিরাপ
অনুরূপ খাদ্যরসগোল্লা, খন্ডলের রসগোল্লা, বরিশালের আদি রসগোল্লা

ইতিহাস সম্পাদনা

জামতলার মিষ্টির ইতিহাস ছয় দশকের বেশি। ১৯৫৫ সালে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে অবস্থিত জামতলা বাজারে চায়ের দোকানদার ছিলেন জনৈক শেখ সাদেক আলী। প্রতিদিন গোয়ালরা দোকানে গরুর দুধ দিয়ে যেত। একদিন প্রয়োজনের তুলনায় দুধের পরিমাণ বেশি হলে সাদেক দুধ কিনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় কুমিল্লার এক ব্যক্তি সাদেক আলীকে বলেন যে দুধের মান খুব ভালো এবং সেই দুধ রেখে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। কুমিল্লার সেই ব্যক্তি আরও বললেন যে তিনি রাতে মিষ্টি তৈরি করে দেবেন। সেই দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরি শুরু হয়। কুমিল্লার সেই ব্যক্তির শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে সাদেক আলী মিষ্টি তৈরি শুরু করেন। সাদেক আলীর এই মিষ্টির স্বাদ ও গুণাগুণের জন্য এর খ্যাতি ছড়াতে সাদেক গোল্লা নামে। পরবর্তীতে এটি এর উৎপত্তিস্থলের নামে জামতলার মিষ্টি হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি লাভ করতে থাকে।[৬] এই মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া রসগোল্লার অনুরূপ তবে ব্যবহৃত উপকরণে কিছুটা বিশেষত্ব রয়েছে। তাই একে জামতলার রসগোল্লাও বলা হয়।

প্রস্তুতি সম্পাদনা

উপকরণ সম্পাদনা

এছাড়া জ্বালানী হিসেবে তেঁতুল কাঠ বা বাবলা কাঠ কিংবা বেলকাঠ।[৬]

প্রণালী সম্পাদনা

জামতলার রসগোল্লা প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে দেশী গরুর দুধের ছানা দিয়ে ছোট ছোট গোল্লা বা বল তৈরি করে নেয়া হয়। এরপর অল্প আঁচে এই ছানার বলগুলোকে চিনির সিরাপে ফুটানো বা সেদ্ধ করা হয়। পর্যায়ক্রমে সেগুলো বাদামী বর্ণের হয়ে আসলেই তৈরি হয়ে যায় সাদেক গোল্লা।[৭] তবে অন্যস্থানে সাদেক গোল্লা প্রস্তুত করতে গিয়ে তাতে স্বাদে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।[৪][৮] সাদেক গোল্লা বা জামতলার রসগোল্লার মূল প্রস্তুতকারী সাদেক আলীর পুত্রের মতে:

"চুলা ও পাত্র অন্যত্র নিয়ে গেলে এই মিষ্টির স্বাদ থাকবে না।"

এর কারণ বোধহয়, দেশী গরুর দুধ হতে প্রস্তুতকৃত ছানা এবং জ্বালানী হিসেবে তেঁতুল কাঠ বা বাবলা কাঠ কিংবা বেলকাঠের ব্যবহার যার কারণে জামতলায় তৈরি এই রসগোল্লার স্বাদে স্বাতন্ত্র্য এসেছে।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বাংলার রস, বাংলার মিষ্টি"রাইজিংবিডি.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ 
  2. "বাংলাদেশের সেরা সেরা মিষ্টির গল্পগাঁথা"। বিডিলাইভ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "বাংলাদেশের মিষ্টি"ডয়চে ভেলে বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ 
  4. "The Concept of Desserts in Bangladesh" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ 
  5. "বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ সব মিষ্টির সম্ভার উত্তরায়"বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৯-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ 
  6. "জামতলার রসগোল্লা বিদেশে যাচ্ছে"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ 
  7. "যেভাবে তৈরি করবেন যশোরের জামতলি স্পঞ্জ রসগোল্লা"। newsbangladesh.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে যশোরের জামতলার রসগোল্লা"। ভোরের কাগজ। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০১