জানকুপাথর ও দোবরাজপাথর

জানকুপাথরদোবরাজপাথর (ইংরেজি: Janku Pather & Dobraj Pather) ছিলেন উনিশ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি-বিরোধী আন্দোলনের দুইজন ব্যক্তিত্ব এবং শেরপুরে সংঘটিত উনিশ শতকের তৃতীয় দশকের দুইজন বিদ্রোহী। তারা ময়মনসিংহের পাগলপন্থি বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক। দোবরাজপাথর ছিলেন জানকুপাথরের সহযোগী আরেকজন বিদ্রোহী। তিনিও গারো-হাজংদের নেতা টিপু শাহের অনুগামী ছিলেন এবং ১৮২৭ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রজাবিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন। শেরপুরের পশ্চিমদিকে করৈবাড়ি পাহাড়ের পাদদেশে জানকুপাথরের এক প্রধান আস্তানা ছিলো।[১] ১৮৩১ সালে ময়মনসিংহের কালেক্টর নতুন বন্দোবস্ত "অষ্টম আইন" হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বিদ্রোহ চালিয়ে যান জানকুপাথর ও দোবরাজ পাথর।[১][২]

তাঁদের নেতৃত্বে শেষ পর্যায়ে সংগ্রামের রূপ চরম আকার ধারণ করে। ১৮৩৩ সন পর্যন্ত জানকুপাথর করৈবাড়ি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ও দোবরাজপাথর নালিতাবাড়ীর নিকটবর্তী কোনো একস্থান থেকে শেরপুর অভিমুখে দ্বিমুখী আক্রমণ পরিচালনা করেন। বিদ্রোহী পাগলপন্থিগণ শেরপুরের জমিদারবাড়ি, কাছারিবাড়ি, জমিদারদের আশ্রিত লাঠিয়াল বাহিনীর সর্বস্ব লুট করে ও থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে শেরপুর জনশূন্য হয়ে পড়ে। এগার-বারটি ক্ষেত্রে সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ইংরেজ সরকার বিদ্রোহ সংশ্লিষ্ট লোকজন ও নিরীহ লোকজনকে পাইকারিভাবে হত্যা শুরু করে এবং বিদ্রোহের নেতাদেরকে ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। অতপর বিদ্রোহের দলপতিরা ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করে। জানকুপাথর উত্তরের পাহাড়ে পালিয়ে যান এবং দোবরাজপাথর পূর্বাঞ্চলে আত্মগোপন করেন। দুর্গাপুর উপজেলার দোবরাজপুর গ্রাম দোবরাজপাথরের স্মৃতি বহন করছে।[৩]

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২৪২ এবং ৩০৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. আবদুল বাছির, বাংলার কৃষক ও মধ্যবিত্তশ্রেণি, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা ১৪০
  3. দরজি আবদুল ওয়াহাব, ময়মনসিংহের চরিতাভিধান, ময়মনসিংহ জেলা দ্বিশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন কর্তৃপক্ষ, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ, এপ্রিল ১৯৮৯, পৃষ্ঠা ২৫১-২৫২।