জয়দ্রথ

মহাভারতে বর্ণিত সিন্ধুদেশের রাজা

জয়দ্রথ (সংস্কৃত: जयद्रथ) সিন্ধুদেশের রাজা ছিলেন। তার পিতার নাম ছিল বৃদ্ধক্ষত্র। তার সাথে ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুর্যোধনের বোন দুঃশলার বিবাহ হয়। তাদের পুত্রের নাম সুরথ।[]

দ্রৌপদীকে অপহরণ

সম্পাদনা

পাণ্ডবদের বনবাসের ১২ বছর পূর্ণ হবার দিন পাণ্ডবদের কাম্যকবনে অবস্থানকালে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হন এবং আশ্রমে পাণ্ডবদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্রৌপদীকে অপহরণ করে পালাতে থাকেন। মূলত পাণ্ডবদের শেষ এক বছরের অজ্ঞাতবাস ভঙ্গ করতে গান্ধার নরেশ শকুনি তাকে দ্রৌপদীকে অপহরণ করতে বলে। এতে পঞ্চপাণ্ডব অজ্ঞাতবাসে প্রকট হবে দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে। কিন্তু ওই সময় পাণ্ডবরা মৃগয়া শেষ করে আশ্রমে প্রত্যাবর্তন করে দ্রৌপদীর ধাত্রীর কন্যার নিকট সমস্ত বিষয় অবগত হয়। এরপর পাণ্ডবরা জয়দ্রথের অনুসরণ করে। অর্জুনের সাথে যুদ্ধে জয়দ্রথের সৈন্যরা পরাস্ত ও নিহত হওয়ায় পর তিনি দ্রৌপদীকে রথ থেকে নামিয়ে দিয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু ভীম ও অর্জুন তাকে বন্দী করে। ভীম হত্যা করতে উদ্যত হলে যুধিষ্ঠির তাকে বোন দুঃসলার বৈধব্যের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং যুধিষ্ঠির ও অর্জুনের অনুরোধে ভীম তাকে হত্যা না করে তার মাথা কামিয়ে ছেড়ে দেয়। ভীম কামানো মাথায় পাঁচটি কেশ স্তম্ভ রেখে দেয় যা পঞ্চপাণ্ডবদের স্মরণ করায়।

তপস্যা

সম্পাদনা

এই অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইনি মহাদেবের তপস্যা করে অর্জুন ভিন্ন সমস্ত পাণ্ডবকে অন্তত একদিনের জন্য জয় করতে পারার বর লাভ করেন। ফলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অভিমন্যুকে বধের জন্য দ্রোণ যে চক্রব্যূহ নির্মাণ করেছিলেন, তার দ্বাররক্ষী ছিল জয়দ্রথ। নকুল ও সহদেবকে ইনি পরাজিত করেন, এমনকি প্রবল চেষ্টা করেও ভীম তাকে অতিক্রম করে ব্যুহে ঢুকতে পারেননি এই একদিনের জন্যে। এই চক্রব্যূহ মধ্যে প্রবিষ্ট অভিমন্যু নিহত হন। এই সময় অর্জুন সংসপ্তকদের সাথে যুদ্ধে নিযুক্ত থাকার জন্য ব্যূহ মুখে উপস্থিত হতে সক্ষম হননি। সন্ধ্যাকালে শিবিরে ফিরে অভিমন্যুবধের সংবাদ শুনে অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেন যে পরের দিনের সূর্যাস্তের পূর্বেই তিনি জয়দ্রথকে হত্যা করবেন অথবা অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করে প্রাণত্যাগ করবেন। এই প্রতিজ্ঞার বিষয় জেনে জয়দ্রথ পালানোর চেষ্টা করলে দুর্যোধন ও দ্রোণ তাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরদিন জয়দ্রথকে রক্ষার জন্য দ্রোণ প্রথমে একটি শকটব্যূহ রচনা করেন। এই ব্যূহের ভিতরে গর্ভব্যূহ এবং গর্ভব্যূহের মধ্যে সুচীব্যূহের বিন্যাস করেন। পরে উক্ত সুচীব্যূহের মধ্যে বিশাল সৈন্যশ্রেণীর ভিতর জয়দ্রথকে লুকিয়ে রাখেন।

মৃত্যু

সম্পাদনা

অর্জুন যথাসাধ্য চেষ্টা করেও জয়দ্রথের কাছে পৌঁছাতে অসমর্থ হলে কৃষ্ণ যোগবলে চক্রদ্বারা সূর্যকে আচ্ছাদিত করে দেন ফলে দিন থাকতেই সন্ধ্যা সৃষ্টি হলে জয়দ্রথ আত্মপ্রকাশ করে নির্ভয়ে সূর্যাস্ত দেখতে থাকে। তখন কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে জয়দ্রথের পিতা বৃদ্ধক্ষত্র জয়দ্রথের জন্মকালে দৈববাণী শুনেছিলেন যে রণস্থলে জয়দ্রথের মুণ্ডুচ্ছেদ হবে, তখন তিনি এই অভিসম্পাত করেন যে যে তার পুত্রের মস্তক ভূলুণ্ঠিত করবে তার মস্তক শতভাগে বিদীর্ণ হবে। যুদ্ধকালে বৃদ্ধক্ষত্র স্যমন্তপঞ্চক দেশের বহির্ভাগে তপস্যা করছিলেন। এই কারণে কৃষ্ণের পরামর্শে অর্জুন কৌতূহলী ও অসতর্ক জয়দ্রথের মাথা এক শরাঘাতে কেটে ফেলেন এবং তা মাটিতে পড়ার আগেই আরও কয়েকটি বাণে মুণ্ডুকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে উলপাহাড়ীতে সন্ধ্যাবন্দনারত রাজা বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে ফেলেন। রাজা বৃদ্ধক্ষত্র না বুঝে উঠে দাঁড়ান। ফলে এই মাথা মাটিতে পতিত হওয়ায় তার নিজের মাথাও শত ভাগে বিদীর্ণ হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. http://ltrc.iiit.ac.in/gwiki/index.php/Mahabharata:Jayadratha[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]