জম্মু ও কাশ্মীর (রাজ্য)
জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের প্রাক্তন রাজ্য। কিন্তু এই অঞ্চলটি প্রধানত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতের এই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলটির দক্ষিণে ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্য দুটি অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরে পাক-অধিকৃত গিলগিত-বালতিস্তান অঞ্চল ও পূর্বে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ অবস্থিত। এই অঞ্চলের পশ্চিমে ও উত্তরপশ্চিমে লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলের ওপারে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর গিলগিত-বালতিস্তান অবস্থিত।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদের উভয় কক্ষে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ভারতীয় সংবিধানের জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও অনুচ্ছেদ ৩৫ক, ৫ই আগস্ট ২০১৯ এ রদ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করে, যথা জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ।
জম্মু ও কাশ্মীর جموں وکشمیر | |
---|---|
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | |
জম্মু ও কাশ্মীরের মানচিত্র | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°০০′ উত্তর ৭৬°৩০′ পূর্ব / ৩৪.০° উত্তর ৭৬.৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
স্থাপিত | ২৬ অক্টোবর, ১৯৪৭ |
রাজধানী | |
বৃহত্তম শহর | শ্রীনগর |
জেলার সংখ্যা | ২২ |
সরকার[*] | |
• উপ রাজ্যপাল | সত্যপাল মালিক |
• মুখ্যমন্ত্রী | বর্তমানে শূন্য |
• বিধানসভা | দ্বিকক্ষীয় (৮৯ + ৩৬ আসন) |
আয়তন | |
• মোট | ২,২২,২৩৬ বর্গকিমি (৮৫,৮০৬ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ৬ষ্ঠ |
উচ্চতা | ৩২৭ মিটার (১,০৭৩ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,২৫,৪৮,৯২৬ |
• ক্রম | ১৮তম |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-JK |
মানব উন্নয়ন সূচক | ০.৬০১ (মধ্যম) |
মানব উন্নয়ন সূচক ক্রম | ১৭তম (২০০৫) |
সাক্ষরতা | ৬৬.৭% (২১তম) |
সরকারি ভাষা | উর্দু |
ওয়েবসাইট | www |
জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকা এই দুই অঞ্চল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি গঠিত। শ্রীনগর এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী এবং জম্মু শীতকালীন রাজধানী। কাশ্মীর উপত্যকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জম্মু অঞ্চলে অনেক হিন্দু মন্দির থাকায় এটি হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯২৫ সালে হরি সিং কাশ্মীরের রাজা হন। [১] ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন, অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে পারবেন। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার বিদ্রোহী নাগরিক এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে।[২][২][৩]
কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে সহায়তা চাইলেন। কাশ্মীরের রাজা ভারতভুক্তির পক্ষে স্বাক্ষর করবেন, এই শর্তে মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরকে সাহায্য করতে রাজি হন।[৪] ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করেন।[৫] ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর-জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়।[৬] চুক্তি সই হওয়ার পর, ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারত বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে উত্থাপন করে। রাষ্ট্রসংঘ ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করে দিয়ে রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের প্রস্তাব দেয়। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচিত গণপরিষদ ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দিলে ভারত গণভোটের বিপক্ষে মত দেয়।[৭] ভারত ও পাকিস্তানে রাষ্ট্রসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধানে আসে। এই গোষ্ঠীর কাজ ছিল, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা ও তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যেক পক্ষ ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের কাছে জমা দেওয়া। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মীর থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ভারত গণভোটে অসম্মত হয় এবং এজন্য পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হয়। ভারত গণভোট আয়োজনে অসম্মত হয় এজন্য যে, এটা নিশ্চিত ছিল যে গণভোটে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ ভোটারই পাকিস্তানের পক্ষে ভোটদান করবেন ও এতে কাশ্মীরে ভারত ত্যাগের আন্দোলন আরো বেশি জোড়ালো হবে।
মুসলিম প্রধান কাশ্মীর ও অন্যান্য কারণকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়। এরপর ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ হয়।
প্রশাসন
সম্পাদনাসংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদ
সম্পাদনাভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারাবলে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়।
ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর।
৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে। জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা এ ধারা পরিবর্তন করতে পারত, একে বিলোপ করতে পারত বা একে ধারণ করতে পারত। বিধানসভা একে ধারণ করার পক্ষে মত দেয়। আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- গণভোট না হওয়া পর্যন্ত ভারতভুক্তির সিদ্ধান্ত সাময়িক বলে গণ্য।
রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ (৩) বিলোপ করা যেতেই পারে। তবে তেমন নির্দেশের জন্য জম্মু কাশ্মীরের গণপরিষদের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৭-তে। ফলে একটা মত হলো, ৩৭০ ধারা আর বিলোপ করা যেতে পারে না। তবে এ ব্যাপারে আরেকটি মতও রয়েছে, সেটা হলো রাজ্য বিধানসভার সম্মতিক্রমে এই বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
৩৭০ ধারার ১ নং অনুচ্ছেদ উল্লিখিত হয়েছে, যেখানে রাজ্যগুলোর তালিকায় জম্মু-কাশ্মীরকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে ৩৭০ ধারার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধান লাগু হবে। তবে ১৯৬৩ সালের ২৭ নভেম্বর নেহরু লোকসভায় বলেছিলেন যে ৩৭০ ধারার ক্ষয় হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর রাখার জন্য অন্তত ৪৫ বার ৩৭০ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভাবে রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রায় নাকচ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্দেশ মোতাবেক প্রায় গোটা সংবিধানই, সমস্ত সংশোধনী সহ জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর করা হয়েছে। ৯৭টির মধ্যে ৯৪টি যুক্তরাষ্ট্রীয় তালিকা জম্মু কাশ্মীরে লাগু, ৩৯৫ টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ২৬০টি রাজ্যে কার্যকর, ১৩টির মধ্যে ৭টি তফশিলও লাগু রয়েছে সেখানে।
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধান সংশোধনের জন্য ৩৭০ ধারাকে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে যদিও ৩৭০ ধারার অন্তর্গত ভাবে রাষ্ট্রপতিরও সে ক্ষমতা নেই। পাঞ্জাবে এক বছরের বেশি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখতে সরকারের ৫৯তম, ৬৪ তম, ৬৭ তম এবং ৬৮তম সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু জম্মুকাশ্মীরের ক্ষেত্রে শুধু ৩৭০ ধারা প্রয়োগ করেই সে কাজ চলে যায়। তালিকাভুক্ত রাজ্যগুলোর জন্য আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪৯ নং অনুচ্ছেদ জম্মু কাশ্মীরে লাগু করার জন্য বিধানসভায় কোনও প্রস্তাব পাশ করানো হয়নি, রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তা কার্যকর হয়ে যায়। এসব দিক থেকে দেখলে ৩৭০ ধারা জম্মু কাশ্মীরের অধিকারকে অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় খর্ব করে। এখন ৩৭০ ধারা, জম্মু কাশ্মীরের থেকে ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে বেশি সহায়ক।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ (ক) ধারা কে অকার্যকর করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা খর্ব করেন। এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে সেই দুটিকে ভারতের দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।[৮]
বিভাগ
সম্পাদনাকেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি ২টি বিভাগে বিভক্ত। বিভাগ দুটি হলো জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকা।
জেলা
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sharma, Vivek। "Kashmir Ki Kahani"। Aajkiawaaz। Arpana Singh Parashar। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ ক খ "Quick guide: Kashmir dispute"। BBC News। ২৯ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৯।
- ↑ "Who changed the face of '47 war?"। Times of India। ১৪ আগস্ট ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০০৫।
- ↑ Stein, Burton. 1998. A History of India. Oxford University Press. 432 pages. আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৫৪৪৬-৩. Page 368.
- ↑ "Rediff on the NeT: An interview with Field Marshal Sam Manekshaw"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "Rediff on the NeT Special: The Real Kashmir Story"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ "With Friends Like These...": Human Rights Violations in Azad Kashmir। United Nations High Commissioner for Refugees। ১৪ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭।
In January 194,
- ↑ "Article 370"।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কার্লিতে জম্মু ও কাশ্মীর (রাজ্য) (ইংরেজি)
- Government of Jammu and Kashmir, India
- Letter of Baroness Nicholson which refers to the 1909 map of Kashmir
- Excerpts of telegram dated 26 October 1947 from Jawaharlal Nehru to the British Prime Minister, Clement Attlee ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুলাই ২০১০ তারিখে
- EU passes Emma Nicholson's Kashmir report with an overwhelming Majority