জন মোফাট (পদার্থবিজ্ঞানী)

জন মোফাট (জন্ম:২৪ মে ১৯৩২) ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া একজন ব্রিটিশ-কানাডীয় পদার্থবিদ। তিনি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক। [১] এছাড়াও তিনি ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক। এছাড়াও তিনি পেরিমিটার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের আবাসিক ফেলো।

২০০৭-এ জন মোফাট

মোফাট অভিকর্ষ ও ভৌত সৃষ্টিতত্ত্বের উপর কাজের জন্য সুপরিচিত। তিনি অপ্রতিসম অভিকর্ষ তত্ত্ব ও স্কেলার-টেন্সর-ভেক্টর অভিকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ২০০৮ সালে সাধারণ পাঠকদের জন্য রচিত "অভিকর্ষ পুনরাবিষ্কার" গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তমোপদার্থের সাহায্য ছাড়াই তাঁর তত্ত্ব গ্যালাক্সির ঘূর্ণন বক্ররেখা ব্যাখ্যা করতে পারে। তিনি মহাজাগতিক সমস্যা সমাধানে আলোর পরিবর্তনশীল বেগের ধারণা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, মহাবিস্ফোরণের সূচনালগ্নে আলোর বেগের মান বর্তমান বেগের চেয়ে সম্ভবত ৩০ গুণ বেশি ছিল। তিনি সম্প্রতি অসমজাতীয় মহাজাগতিক মডেল নিয়ে গবেষণা করেছেন, যার উদ্দেশ্য মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ নিয়ে আলোচনা করা ও মহাবিশ্ব যে ত্বরণে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তার উপর আলোকপাত করা।

মোফাট কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের জন্য একটি নতুন অ-স্থানীয় চলক প্রস্তাব করেন, যা পুনঃঅভিলম্বিকীকরণের (Renormalization) প্রয়োজন দূরীভূত করেছে। এছাড়াও এই চলকের সাহায্যে হিগস কৌশলের ব্যবহার ছাড়াই ভর নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

মোফাট ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জর্জ মোফাট জাতিতে স্কট ও তার মা এস্থার জাতিতে ড্যানিশ। তার বাবা কোপেনহেগেনের একটি নৈশক্লাবে সংগীতবাদক ছিলেন। সেখানে এস্থারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এস্থার পেশায় একজন নর্তকী ছিলেন। তাঁরা তিন সপ্তাহ পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৩৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে জনের বাবা তার পরিবারকে নিয়ে লন্ডন চলে যান। তিনি সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, জার্মানি ডেনমার্ককে আক্রমণ করবে। ১৯৩৯ সালে ব্লিৎসক্রিগ বা ঝটিকা আক্রমণের সময় জনকে তার পিতামহ-পিতামহীর সঙ্গে বসবাস করতে গ্লাসগো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তিনি লেখাপড়ায় বেশি সুবিধা করতে পারেননি। তাই এক বছর পর তিনি বাবা-মার কাছে ফিরে আসেন এবং তারা তিনজন ব্রিস্টলে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি জাহাজে জার্মান গোয়েন্দাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব পান।

ব্রিস্টলে এফটু যুদ্ধবিমান উৎপাদনকারী একটি কারখানার নিকটে তারা বসবাস করতেন। ১৯৪০ সালে ব্রিটেনের লড়াই (Battle of Britain) তীব্রতর হওয়ার সাথে সাথে বিমান হামলাও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। তারা একদিন ওয়েস্টন-সুপার-মেয়ার এলাকায় বেড়াতে যান। জার্মান বিমান তাদের মাথার উপর ঘুরছিল। মোফাট তার বই "আইনস্টাইন প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন" গ্রন্থে এর মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন। জার্মান বাহিনীর নিক্ষিপ্ত বোমা তাকে বাবা-মা সহ রাস্তার ধারে উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাদের নাক থেকে রক্ত পড়ছিল ও বুকে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মোফাটকে আজ-ও তাড়া করে।

জনের বয়স যখন সাত অথবা আট, তখন তার বাবা-মা তাকে একজন মনোবিশারদের কাছে নিয়ে যান। জন উল্টো দিক থেকে লেখা পড়তেন ও ঘড়ির কাঁটার সময় বলতেন।তখন ডাক্তার জনের বাবাকে বলেন,"আপনার ছেলে অত্যন্ত প্রতিভাবান।" এ কথা শুনে জন খুব বেশি আপ্লুত হননি।

যুদ্ধের পর তাঁর পরিবার ডেনমার্ক চলে যায়। জনের বাবা সেখানে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। একজন সহকর্মীর সংস্পর্শে তাঁর যক্ষ্মা রোগ দেখা দেয়। তিনি এক বছর মারাত্মক অসুস্থ ছিলেন। তার পরিবারকে সে সময় অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল।

১৬ বছর বয়সে মোফাট চিত্রশিল্পী হওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া ছেড়ে দেন। কোন রকম আয়-রোজগার ছাড়া প্যারিসে কিছু সময় বসবাসের পর মোফাটের শিল্পী হওয়ার মোহ কেটে যায়। তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আগ্রহী হন এবং গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলেন। এক বছরের ভিতরেই সাধারণ আপেক্ষিকতা ও একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব সম্পর্কে মোফাট বিশদ জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে প্রিন্সটন থেকে আইনস্টাইন মোফাটের লেখা একটি চিঠির প্রত্যুত্তর প্রেরণ করেন। এরূপে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হয়। ড্যানিশ বিজ্ঞানী নিলস বোর-ও এ সম্পর্কে অবহিত হন। মোফাটকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।[২] ১৯৫৮ সালে তিনি ট্রিনিটি কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Einstein's respectful heretic - thestar.com"web.archive.org। ২৪ অক্টোবর ২০১২। Archived from the original on ২৪ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০ 
  2. http://www.canada.com/story_print.html?id=52dae348-83e0-439e-a3fd-01346201e282&sponsor=[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]