জগদিন্দ্রনাথ রায়

নাটোরের জমিদার

নাটোরের মহারাজা হিসেবে পরিচিত মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর (২০ অক্টোবর ১৮৬৮ - ৫ জানুয়ারি,১৯২৬)[১]বাংলার নাটোরের জমিদার ছিলেন। তিনি সংস্কৃত ও ইংরাজী সাহিত্যে দক্ষ ও ক্রীড়ামোদী ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে পুরোপুরি দেশীয় খেলোয়াড় নিয়ে নাটোর ক্রিকেট দল গঠন করেন এবং বিশেষ অবদান রাখেন।[২]

পরিবার বর্গ  সম্পাদনা

নাটোরের মহারাজা গোবিন্দনাথ রায় রাজশাহী রাজ পরিবারের উত্তরসূরি, যিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান এবং তার বিধবা পত্নী ব্রজসুন্দরী জগদিন্দ্রকে দত্তকপুত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৮৭৭ সালে মহারাজা ব্যক্তিগত খেতাব লাভ করেন। পরে তিনি কলকাতায় তার বাড়ি বানিয়ে দেন। নাটোর রাজবাড়ী , নাটোর রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষের বাড়ি যা রাণী ভবানীর সময়ে তৈরি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের একটি সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ ।[৩][৪][৫]

পেশা এবং পৃষ্ঠপোষকতা  সম্পাদনা

তিনি কলকাতা টাউন ক্লাব এবং বেঙ্গল জিমখানাসহ শিল্প ও ক্রীড়াগুলির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।  তিনি একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মানসী ও মর্মবাণী এবং সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

ক্রিকেট সম্পাদনা

জগদিন্দ্রনাথ ছিলেন ক্রীড়ানুরাগী এবং ক্রিকেট খেলতে খুব ভালোবাসতেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব' কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। নাটোরে তিনি নিজের ক্রিকেট দল গঠন করেছিলেন। একজন মহান জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব হিসাবে,তিনি কেবলমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় নিয়ে নাটোর দল গঠন করেন। নাটোরে তিনি ক্রিকেট খেলার জন্য নাটোর স্টেডিয়ামের ব্যবস্থা ও প্রচার করেন, এমনকি কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামকে পাল্লা দিতে কলকাতার বালিগঞ্জে ৪৫ একর জমি কিনে নাটোর গার্ডেন নামে এক স্টেডিয়াম গড়েছিলেন। সমকালের বিশিষ্ট ভারতীয় খেলোয়াড় মেহতা, পালওয়ানকর বালো, পালওয়ানকর শিবরাম, যশোওয়ান্ত, গনপত পালওয়ানকর, পালওয়ানকর ভিটাল, কে শেশাচারি, কে এম মিস্ত্রি, জে এস ওয়ার্ডেন, এইচ এল সেম্পারার, সারদারঞ্জন এবং তার ভাইয়েরা মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন প্রমুখেরা তার ক্রিকেট দলে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়কার আরো এক বাঙালি ক্রিকেটার মণি দাসকে মহারাজা উৎসাহিত করেন। মহারাজা একটি মাত্র চোখে দেখতে পেতেন, তা সত্বেও তিনি একজন ভাল খেলোয়াড় ছিলেন। নিজে ব্যাট এবং ফিল্ডিং করতেন। জাতীয়তাবাদের কারণে তিনি তার দলে শ্রীশচন্দ্রের ন্যায়, বাংলার তরুণ ও দরিদ্র ক্রিকেট প্রতিভার স্থান করে দিয়েছিলেন। [৬] তার নাটোর দলের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলার কোচবিহারের মহারাজা স্যার নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুরের দল। জগদিন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর পুত্রের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেট দল পরিচালিত হলেও এটি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল।[৭][৮][৬][৯][১০][১১]   

রাজনীতি সম্পাদনা

ধনী জমিদার হয়েও জগদিন্দ্রনাথ রাজনীতিতে নির্ভয়ে আত্মপ্রকাশ করে ভূমধ্যধিকারী সমাজের আদর্শস্থানীয় হন। ১৯০১ সালে কলকাতায় তিনি কংগ্রেসের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ভারতের জাতীয় রাজনৈতিক বিষয় ও শিল্পের ওপর উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রাখেন।[১২]১৯১৩ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ১৯২৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন তার পুত্র রাজা জগন্নাথ রায় বেঁচে ছিলেন, যিনি পরে নাটোর রাজে তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

স্মৃতিশালা  সম্পাদনা

তার নামে একটি স্কুল আছে, যা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন, নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় স্কুল নামে নামকরণ করেন।

তথ্যসূত্র  সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ২৩০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. Division, Bangladesh Ministry of Cabinet Affairs Establishment; Ishaq, Muhammad। Bangladesh District Gazetteers: Rajshahi 1976 (ইংরেজি ভাষায়)। Bangladesh Government Press। পৃষ্ঠা 240–41। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৭ 
  3. Bakshi, Shiri Ram। Bangladesh Gazetteer (ইংরেজি ভাষায়)। Cosmo Publication। আইএসবিএন 9788177550184। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. Lorimer, John Gordon। Gazetteer of the Persian Gulf, ʻOmān, and Central Arabia (ইংরেজি ভাষায়)। Gregg। পৃষ্ঠা 251। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  5. Lethbridge, Sir Roper। The Golden Book of India: A Genealogical and Biographical Dictionary of the Ruling Princes, Chiefs, Nobles, and Other Personages, Titled Or Decorated of the Indian Empire (ইংরেজি ভাষায়)। Aakar Books। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 9788187879541। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  6. Majumdar, Boria; Hong, Fan (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। Modern Sport - The Global Obsession (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781317997955 
  7. Mukherji, Raju (২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। Eden Gardens Legend & Romance: Eden Gardens, the heritage cricket venue, celebrated 150 years (ইংরেজি ভাষায়)। Kolkatatoday.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  8. Majumdar, Boria (১৮ অক্টোবর ২০১৩)। Cricket in Colonial India 1780 – 1947 (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781317970132। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  9. Online, Asia Time (৫ মার্চ ২০০৫)। "Asia Times Online :: South Asia news, business and economy from India and Pakistan"www.atimes.com। Archived from the original on ৭ এপ্রিল ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  10. Macaloon, John J. (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। Muscular Christianity and the Colonial and Post-Colonial World (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781317997917 
  11. "On a ground once upon a time"The Telegraph। The Telegraph Kolkata। ১২ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  12. Haqqi, Anwarul Haque; Association, Indian Political Science। Indian Democracy at the Crossroads (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 209। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১৭