ছাগলনাইয়া আক্রমণ

ছাগলনাইয়া আক্রমণ এমন একটি লুঠনার্থক আক্রমণ বোঝায় যা বৃহত্তর ভুলুয়ার সীমান্তাঞ্চল ছাগলনাইয়ায় সংঘটিত হয়েছিল।

ছাগলনাইয়া আক্রমণ
তারিখ১৮৬০ (৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফ্রেব্রুয়ারি)
অবস্থান
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী

গুণাগাজী
সর্দার জকিমল
কমল পোদ্দার
মুন্সী আব্দুল আলী

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
চট্টগ্রাম পুলিশ-সৈন্যদল
নোয়াখালী পুলিশ-সৈন্যদল
ত্রিপুরা (কুমিল্লা) পুলিশ-সৈন্যদল
কুকি রিয়াং
ধরনী সিংহ

পটভূমি সম্পাদনা

কুকিরা একটি চীনা-তিব্বতি জাতিগোষ্ঠী যারা বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাংশে এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তৃত। বাংলাদেশের সিলেটচট্টগ্রাম বিভাগগুলির আঞ্চলিক ইতিহাসে সীমান্তভূমিতে কুকিদের আক্রমণ বেশ প্রচলিত ছিল।[১]

প্রাথমিক আধুনিক যুগে ছাগলনাইয়া পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল, যদিও পূর্ব বাংলা ও বৃহত্তর ভুলুয়ার মতো ছাগলনাইয়া একটি সমভূমি ছিল। কুকিরা ত্রিপুরার পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করতেন, এবং সমভূমিতে ছিল বাঙ্গালীইংরেজদের উপস্থিতি। ছাগলনাইয়ার বাঙ্গালীরা উপসাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ভাবে নোয়াখাইল্লা। বৃহত্তর নোয়াখালী আগে ভুলুয়া রাজ্য নামে পরিচিত ছিল।

বিবরণ সম্পাদনা

১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারিতে, কুকিরা কুকি রিয়াঙ্গের নেতৃত্ত্বে পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে ছাগলনাইয়ার সমভূমিতে হানা দেয়।[২] বখশগঞ্জ এলাকাকে লুটপাট করার পরপরেই কুকিরা বসন্তপুর গ্রামের কমল পোদ্দারকে হত্যা করে এবং তাঁর ঘরের মহিলাদেরকে অসম্মান করে। এই আক্রমণের খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী কোলাপাড়া গ্রামে গুণাগাজীসর্দার জকিমল কুকিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। কুকিরা ৭০০ নারীকে অপহরণ করে এবং মুন্সী আব্দুল আলী ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে কুকিদের নৃশংসতার খবর জানান। যুদ্ধে তবুও কুকিরা এক-দুই দিন ছাগলনাইয়ায় থাকে এবং ১৮৫ ইংরেজদেরকে হত্যা করে ও ১০০ জনকে অপহরণ করে। ইংরেজরা তারপর নোয়াখালী, ত্রিপুরা (কুমিল্লা)চট্টগ্রাম জেলা থেকে পুলিশ-সৈন্যদল পাঠায় কিন্তু কুকিরা তখন দেশীয় রাজ্যের জঙ্গলে ফিরে। এই ঘটনার পর, কুকিরা কখনও ছাগলনাইয়ায় ফিরে আসেনি।[৩]

তৎকালীন নোয়াখাইল্লা কবি গুল বখশ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পূঁথি রচনা করেছিলেন যা বর্তমানে "কুকি কাটার পূঁথি" নামে সুপরিচিত।[৪] রাজমালাতেও এই ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যের ফৌজদার ধরনী সিংহের অবদান উল্লেখ করা হয়েছে।[৫]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. T. Haokip, 'The Kuki Tribes of Meghalaya: A Study of their Socio-Political Problems', in S.R. Padhi (Ed.). Current Tribal Situation: Strategies for Planning, Welfare and Sustainable Development. Delhi: Mangalam Publications, 2013, p. 85.
  2. জন এডোয়ার্ড ওয়েবস্টার (১৯১১)। "History"। Eastern Bengal and Assam District Gazetteers। দ্যা পাইয়োনিয়ার প্রেস। পৃষ্ঠা ৩০। 
  3. আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ; আহমদ শরীফ (১৯৬০)। সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, সম্পাদক। A Descriptive Catalogue Of Bengali Manuscriptsঢাকা: পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৭৪। 
  4. রণজীৎ কুমার সমাদ্দার (১৯৯১)। বাংলার গণসংগ্রামের পটভূমিকা। বনমালী বিশ্বনাথ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১১৪। 
  5. "কোলাপাড়া: গুণাগাজী ও জকিমল প্রসঙ্গ"। ইতিহাস সম্মেলন। পরিষদ। ১৯৬৮। পৃষ্ঠা ৬৭-৬৯।