চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ

ইংলিশ চ্যানেল সামুদ্রিক প্রণালীতে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জ

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ (The Channel Islands) উত্তর ফ্রান্সের নরম্যান্ডি উপকূল হতে কিছুটা দূরে ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। ইংলিশ চ্যানেল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শাখা যা দক্ষিণ ইংল্যান্ডকে উত্তর ফ্রান্স থেকে পৃথক করে। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ ছাড়াও ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত বেশ কিছু দ্বীপ ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত, যেমন- ব্রেহাট, আইল দে ব্যাট্‌জ, চ্যাউসি, আইল্‌স সেইন্ট মার্কুফ ইত্যাদি।

Channel Islands
Îles Anglo-Normandes (ফরাসি)
Îles d'la Manche (নর্মান্ড)
২০১৮ সালে স্যাটেলাইট হতে তোলা চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের চিত্র
চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান
ভূগোল
অবস্থানNorthwestern Europe
স্থানাঙ্ক৪৯°২৬′ উত্তর ২°১৯′ পশ্চিম / ৪৯.৪৩৩° উত্তর ২.৩১৭° পশ্চিম / 49.433; -2.317
সংলগ্ন জলাশয়English Channel
মোট দ্বীপের সংখ্যা7 inhabited
প্রধান দ্বীপসমূহJersey and Guernsey
আয়তন১৯৮ বর্গকিলোমিটার (৭৬ বর্গমাইল)
সর্বোচ্চ বিন্দুLes Platons
প্রশাসন
রাজধানী ও বৃহত্তর settlementSaint Peter Port, Guernsey
অন্তর্ভুক্ত এলাকা৭৮ বর্গকিলোমিটার (৩০ বর্গমাইল; ৩৯.৪‏%)
রাজধানী ও বৃহত্তর settlementSaint Helier, Jersey
অন্তর্ভুক্ত এলাকা১১৮ বর্গকিলোমিটার (৪৬ বর্গমাইল; ৫৯.৬‏%)
জনপরিসংখ্যান
বিশেষণChannel Islander
জনসংখ্যা১৭০,৪৯৯ [১][২] (২০১৮)
জনঘনত্ব৮৪৪.৬ /বর্গ কিমি (২,১৮৭.৫ /বর্গ মাইল)
অতিরিক্ত তথ্য
সময় অঞ্চল
 • গ্রীষ্মকালীন
  (ডিএসটি)
Internet TLD = GG and JE

চ্যানেল দ্বিপপুঞ্জে দু'টি বেইলিউইক অর্থাৎ একজন নাগরিক প্রধান বা বেলিফ দ্বারা পরিচালিত এলাকা বিদ্যমান। এ বেইলিউইকগুলোর ১৩ শতক থেকে নিজস্ব সরকার রয়েছে। বেইলিউইক দু'টি হলো বেইলিউইক অফ জার্সি এবং বেইলিউইক অফ গার্নসি। এদের মধ্যে বেইলিউইক অফ গার্নসি মোট তিনটি এলাকায় বিভক্ত- গার্নসি, অল্ডার্নি ও সার্ক। অবশ্য বেইলিউইক অফ জার্সি এবং বেইলিউইক অফ গার্নসি একই বেইলিউইক এলাকার অন্তর্ভুক্ত। গ্রেট বৃটেনের উপকূলের বাইরে অবস্থিত তিনটি দ্বীপ একত্রে দ্য ক্রাউন নামক একটি আইনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত, এদেরকে 'ক্রাউন ডিপেন্ডেসি' নামে অভিহিত করা হয়। এই তিনটি দ্বীপের মধ্যে দু'টিই চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত। 'বেইলিউইক অফ জার্সি' এবং 'বেইলিউইক অফ গার্নসি' হলো এই ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সির ২টি দ্বীপ। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের সকল দ্বীপ মিলিয়ে মোট জনসংখ্যা ১৭৪,৪২৯ জন। এখানকার সব দ্বীপ ইংল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত নয় যদিও এদের নিরাপত্তা ও বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের সকল দায়িত্ব ইংল্যান্ড পালন করে। এর ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি দ্বীপগুলোও 'কমনওয়েল্‌থ অফ ন্যাশন' বা 'ইউরোপিয়ান ইউনিয়িন'-এর সদস্য নয়।

খুব সম্ভবত রয়্যাল নেভি বা ইংল্যান্ডের প্রধান নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রথম চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ নামটি ব্যবহার করা শুরু করেন ১৮৩০ সালে এবং তাদের মাধ্যমেই এই নামটি প্রচলিত হয়েছে। এই নামটি শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিম ফ্রান্সের উপকূল যা মূলত নরম্যান্ডির একটি উপকূল 'কোটেন্টিন পেনিনসুলা(Cotentin Peninsula)'-তে অবস্থিত দ্বীপমালাকে নির্দেশ করে। যেমন, 'আইল অফ ওয়াইট' ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এটি চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত নয়।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ ইংলিশ চ্যানেলের অন্যতম দ্বীপপুঞ্জ। এর সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য সমুদ্রপ্রেমিক ও ভ্রমণকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানকার ইতিহাসও প্রাচীন এবং বৈচিত্রময়। এর দ্বীপগুলোকে 'ডাচি অফ নরম্যান্ডি' নামক একটি ঐতিহাসিক শাসনামলের অবশিষ্টাংশ বলে ধারণা করা হয়। একারণে ইউরোপের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মধ্যে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকেও একটি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

ভূগোল সম্পাদনা

 
সার্ক
 
গার্নসি

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের দুটি প্রধান দ্বীপপুঞ্জ হলো জার্সি এবং গার্নসি। দ্বীপপুঞ্জের জনসংখ্যার ৯৯% মানুষ এখানে থাকে এবং মূল এলাকার ৯২% জায়াগা এই এলাকায় বিদ্যমান।

দ্বীপের তালিকা সম্পাদনা

জনবসতি সম্পন্ন দ্বীপসমূহ সম্পাদনা

  • বেইলউইক অফ জার্সি:-
    • জার্সি(Jersey): জনসংখ্যা- ১,৭৩,৮৬৩ জন, আয়তন- ১১৮ বর্গকিলোমিটার।
  • বেইলিউইক অফ গার্নসি:-
    • গার্নসি(Guernsey): জনসংখ্যা- ৬৭,০৫২ জন, আয়তন- ৬৫ বর্গকিলোমিটার।
    • অল্ডার্নি(Alderney): জনসংখ্যা- ২,০৩৯ জন, আয়তন- ৮ বর্গকিলোমিটার।
    • সার্ক(Sark): জনসংখ্যা- ৬০০ জন, আয়তন- ৫.৪৫ বর্গকিলোমিটার।
    • হার্ম(Herm): জনসংখ্যা- ৬০ জন, আয়তন- ২ বর্গকিলোমিটার।
    • জেতহাউ(Jethou): জনসংখ্যা- ৩ জন, আয়তন- ০.২ বর্গকিলোমিটার।
    • ব্রেকহাউ(Brecqhou): জনসংখ্যা- ১ জন, আয়তন- ০.৩ বর্গকিলোমিটার।

জনবসতিহীন দ্বীপসমূহ সম্পাদনা

  • বেইলউইক অফ জার্সি:-
    • দ্য মানকিয়ের (The Minquiers)
    • এক্রেহাউস (Écréhous)
    • লেস দিউইয়ে (Les Dirouilles)
    • লেস পিয়েরেস দে লেক (Les Pierres de Lecq বা The Paternosters)
  • বেইলিউইক অফ গার্নসি:-
    • বুরহাউ (Burhou)[অল্ডার্নির নিকটে অবস্থিত]
    • কাসকেট্স‌ (Casquets)[অল্ডার্নির নিকটে অবস্থিত]
    • ওরতাক (Ortac)[অল্ডার্নির নিকটে অবস্থিত]
    • রেনোনকেত (Renonquet)[অল্ডার্নির নিকটে অবস্থিত]
    • কাকুওরোবের্ত (Caquorobert)[গার্নসির নিকটে অবস্থিত]
    • ক্রেভিশন (Crevichon)[গার্নসির নিকটে অবস্থিত]
    • গ্রান্দে আমফোর্ক (Grande Amfroque)[গার্নসির নিকটে অবস্থিত]
    • লেস হুমেত্‌স (Les Houmets)[গার্নসির নিকটে অবস্থিত]
    • লিহাউ (Lihou)[গার্নসির নিকটে অবস্থিত], এই দ্বীপটিতে বছরের কিছু সময়ের জন্য জনবসতি বিদ্যমান থাকে।

নামকরণ সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তর দ্বীপগুলোর নামের শেষে সাধারণত 'এই(-ey)' প্রত্যয়টি যুক্ত থাকে। যেমন, Jersey, Guernsey ইত্যাদি। আবার ক্ষুদ্র দ্বীপের ক্ষেত্রে নামের শেষে 'হাউ(-hou)' প্রত্যয়টি যুক্ত থাকে। যেমন, Burhou, Lihou ইত্যাদি। এই নিয়মটি প্রাচীন নর্স ভাষা থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়, যেখানে ey এর অর্থ হলো দ্বীপ এবং holmr বা hou এর অর্থ হলো ক্ষুদ্র দ্বীপ।

চসি দ্বীপপুঞ্জ সম্পাদনা

চসি দ্বীপপুঞ্জ(The Chausey Islands) নরম্যান্ডি উপকূলের বাইরে ইংলিশ চ্যানেলে অবস্থিত চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের মতোই একটি দ্বীপপুঞ্জ তবে এই দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলো আকারে অনেক ক্ষুদ্র। এই দ্বীপপুঞ্জটি জার্সির দক্ষিণে অবস্থিত। এটিকে সাধারণত চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের ভৌগোলিক সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না তবে একে অনেক সময় 'ফ্রেঞ্চ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ' নামে অভিহিত করা হয়। এই নামের পিছনে কারণ এখানকার ফরাসি বিচারব্যবস্থা। ইতিহাস মোতাবেক, এই দ্বীপপুঞ্জের সাথে ডাচি অফ নরম্যান্ডির সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে এটি মূলত ফ্রান্সের একটি এলাকা যা নরম্যান্ডি প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এটি বৃটিশ আইল্‌স বা চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ- কোনটিরই অন্তর্ভুক্ত নয়। গ্রানভাইল বা মাঞ্চে নামক ফ্রান্সের একটি উপকূলীয় ডিপার্টমেন্টের অন্তর্ভুক্ত এই চসি দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জটিও ফ্রান্সের পর্যটকদের অনেক আকর্ষণ করে। তবে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ থেকে এখানে আসার জন্য নিজস্ব নৌকা বা সরকারি নৌকা ব্যবহার করতে হয় কারণ এটি ছাড়া এই দুই দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াতের অন্য কোন ব্যবস্থা নেই।

জার্সিতে ব্যবহৃত সরকারি ফরাসি উপভাষার নাম জার্সি স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেঞ্চ বা জার্সি ফ্রেঞ্চ। এই ভাষায় চসি দ্বীপপুঞ্জকে 'Îles de la Manche' নামে অভিহিত করা হয়। ফ্রান্সে আবার 'Îles Anglo-normandes' বা অ্যাংলো-নরম্যান আইল্‌স(Anglo-Norman isles) দ্বারা ইংলিশ চ্যানেলের অন্য কোন দ্বীপ নয় বরং শুধু চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে বোঝানো হয় কারণ এই নামের অর্থ হলো বৃটিশ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ। তবে চসি দ্বীপপুঞ্জকে যে 'Île normande বা Îles Normandes কিংবা Archipel Normand' নামে অভিহিত করা হয় তা দ্বারা এক সময় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ ও চসি দ্বীপপুঞ্জকে একত্রে একটি আইল্‌স হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো।

জলভূমি সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে জোয়ার-ভাটার পার্থক্যের কারণে এটির আন্তঃদেশীয় অঞ্চলে বিপুল পরিমাণে জোয়ার সৃষ্টি হয় যার তুলনায় এখানে ভাটার পরিমাণ অনেক কম। এমনকি এখানকার কিছু দ্বীপ যেমন, বুরহাউ, এক্রেহাউস ও দ্য মিনকিয়ের দ্বীপকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমির তালিকা 'রামসার সাইট্‌স(Ramsar sites)-এও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দ্বীপগুলোর আশেপাশের জলভূমিসমূহ:

  • দ্য সুইঞ্জ প্রণালী (The Swinge, অল্ডার্নি ও বুরহাউ-এর মাঝে অবস্থিত)
  • দ্য লিট্‌ল সুইঞ্জ (The Little Swinge, বুরহাউ ও লেস নানেল্‌স-এর মাঝে অবস্থিত)
  • লা দিরুত(La Déroute, জার্সি ও সার্ক এবং জার্সি ও পেনিনসুলার উপকূল কোটেন্টিন-এর মাঝে অবস্থিত)
  • লে রজ ব্লনচার্ড(Le Raz Blanchard বা Race of Alderney, অল্ডার্নি ও কোটেন্টিন-এর মাঝে অবস্থিত)
  • দ্য গ্রেট রাসেল চ্যানেল (The Great Russel, সার্ক, জেতহাউ ও হার্ম-এর মাঝে অবস্থিত)
  • দ্য লিট্‌ল রাসেল চ্যানেল (The Little Russel, গার্নসি,হার্ম ও জেতহাউ-এর মাঝে অবস্থিত)
  • সোয়াসুয়েইয়াস(Souachehouais, জার্সির লা রিগদন, লেএতাক ও মূল জার্সির মাঝে অবস্থিত)
  • লে গুলিওত(Le Gouliot, সার্ক ও ব্রেকহাউ-এর মাঝে অবস্থিত)
  • লা পিয়ের্সে(La Percée, হার্ম ও জেতহাউ-এর মাঝে অবস্থিত)

সর্বোচ্চ এলাকা সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ এলাকা হলো জার্সির লেস প্লাতোন্স(Les Platons)। এই এলাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৬৯ ফিট। এখানকার সর্বনিম্ন এলাকা হলো ইংলিশ চ্যানেল অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ।

আবহাওয়া সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ মূলত শীতপ্রধান এলাকা। এখানকার শীত মৌসুম বেশ আর্দ্র থাকে, শীতে এখানে ৮ থেকে ৪০ মি.মি. পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। গ্রিষ্মকালে বরং এই অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শুষ্ক থাকে। দ্বীপপুঞ্জের সকল দ্বীপের মাঝে গার্নসির আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো বলে গণ্য করা হয় কারণ। গার্নসিতে বিদ্যমান উপসাগরীয় স্রোতের কারণে এই এলাকা অন্যান্য এলাকা থেকে বেশি উষ্ম থাকে। অবশ্য চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ এলাকাকে সমগ্র বৃটিশ আইল্‌সের মাঝে সবচেয়ে গরম এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দ্বীপপুঞ্জে মোট পাঁচটি আঞ্চলিক আবহাওয়া স্টেশন বিদ্যমান। বিভিন্ন মাসে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত,

  • জানুয়ারি: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • ফেব্রুয়ারি: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • মার্চ: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • এপ্রিল: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • মে: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • জুন: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • জুলাই: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • আগস্ট: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • সেপ্টেম্বর: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • অক্টোবর: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিগ্রি ১৪ সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • নভেম্বর: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • ডিসেম্বর: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
La Gran'mère du Chimquière, Statue menhir, Saint Martin, Guernsey

প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে মানুষের প্রথম আগমন ঘটে প্রায় আড়াইশো বছর আগে, সে সময় এ দ্বীপপুঞ্জটি ইউরোপ মহাদেশের প্রধান ভূমির সাথে যুক্ত ছিল। পাথর যুগ(Stone Age)-এর পরবর্তী যুগ নিওলিথিক বা প্রাক-প্রস্তর যুগে এই এলাকার সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে এবং বেশ কিছু অঞ্চল প্রধান ভূমী থেকে আলাদা হয়ে যায়, যাদের বর্তমানে একত্রে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ বলা হয়। এই দ্বীপগুলোর শিলাস্তর বা ভূ-গর্ভস্থ পাথরের প্লেটগুলোর কারণে এগুলো এখনো টিকে আছে এবং বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার পাশাপাশি বিভিন্ন বড় বড় স্থাপনাও এ দ্বীপগুলোতে বিদ্যমান, যেমন, জার্সির 'লা হোগ বি বা La Hougue Bie' নামক সমাধিকেন্দ্র , 'মেনহার্স মূর্তি বা the statue menhirs ' ইত্যাদি।

লৌহযুগ থেকে সম্পাদনা

প্রাচীনকালে পশ্চিম ইউরোপের একটি বড় এলাকাকে 'গল(gaul)' নামে অভিহিত করা হতো, যার একটি অংশের নাম ছিল 'আরমোরিকা'। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর পরিমাণে আরমোরিকান মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে যা এখানে লৌহযুগের ব্যাবসা ও যোগাযোগের প্রমাণ বহন করে। সে তুলনায় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে রোমান উপনিবেশের প্রমাণ অত্যন্ত বিরল, যদিও এখানে রোমান কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের রোমান নাম ছিল 'আই.লেনুরি বা লেনুর দ্বীপপুঞ্জ' এবং প্রাচীন রোমান ম্যাপ 'Tabula Peutingeriana বা পিউটিঙ্গার টেবিল'-এও এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই দ্বীপপুঞ্জগুলোর ল্যাটিন নাম এসেছে আরেকটি জনপ্রিয় রোমান প্রাচীন ম্যাপ থেকে যার নাম ছিল 'অ্যান্টোনাইন আইটিন্যারি (Antonine Itinerary) বা অ্যান্টোনাইন ভ্রমণপথ'। গলে রোমান সাম্রাজ্যের সময় যে রোমান সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল তাকে বলা 'গ্যালো-রোমান' সংস্কৃতি এবং চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে এই সংস্কৃতির উপস্থিতি ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এখানে খিষ্টান ধর্মপ্রচারকদের আগমন ঘটেছিল। স্যামসন অফ ডল, হেলিয়ার, ম্যারকাল্ফ‌ এবং ম্যাগলয়ের এই ধর্মপ্রচারকদের মাঝে ছিলেন অন্যতম। একজন বিশপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কোন জেলাকে বলা হয় ডায়োসিস। আর রোমান খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বলা হয় রোমান ক্যাথোলিক। ফ্রান্সের ক্যুটান্সেস নগরীতে নির্মিত রোমান ক্যাথলিকদের একটি ডায়সিসের নাম ছিল 'রোমান ক্যাথোলিক ডায়োসিস অফ ক্যুট্যান্সেস'। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জগুলো এই ডায়োসিসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ১৬ শতকে রোমান ক্যাথোলিক চার্চগুলোর অপব্যবহারের জন্য ইউরোপে এদের বিরোধী আন্দোলন (আন্দোলনটিকে 'রিফর্মেশন' বলে অভিহিত করা হয়) সংঘটিত হলে দ্বীপপুঞ্জগুলো ডায়োসিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রাক-রোমান যুগে ইউরোপ এবং এশিয়ায় বসবাসকারী একটি জাতির নাম ছিল কেল্ট। এই কেল্ট জাতির মানুষ বা কেল্টিকদের অনেক ধরনের মাঝে একটি ইউরোপিয়ান ধরন ছিল যারা গ্রেট বৃটেনে লৌহযুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত বিরাজ করেছিল এবং এদের নাম ছিল 'কেল্টিক ব্রিটন'। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী আরেকটি জাতি অ্যানজিও-স্যাক্সন এবং এদের আক্রমণ করার লক্ষ্যে কেল্টিক ব্রিটনদের চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জতে আগমন ঘটে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে। কিন্তু তাদের সংখ্যা যথেষ্ট না থাকায় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ জার্মান সম্প্রদায় 'ফ্রাঙ্ক'-দের রাজা দ্বারা শাসিত হতে থাকে এবং এদের চার্চ আবার 'রোমান ক্যাথোলিক ডায়োসিস অফ ক্যুট্যান্সেস' এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

৮ম থেকে ১১ শতক পর্যন্ত দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার নর্স জাতির জলদস্যুরা ইউরপের নানা অংশে প্রভাব বিস্তার করে। নর্সরা মূলত ভাইকিংস ছিল এবং এদের একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের নাম ছিল 'ভাইকিং এক্সপ্যানশন' যার মাধ্যমে এদের দস্যুতা, অন্যায়, অপহরণ এবং লুটতরাজ বিশ্বব্যাপী বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ম শতাব্দীর শুরুর দিকে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে এদের আক্রমন ঘটে এবং এ সময়ের পর থেকেই এখানকার অনেক এলাকার নামকরণ নর্সদের ভাষানুসারে করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এ নামগুলোতেই দ্বীপগুলো অভিহিত করা হয়।

ডাচি অফ নরম্যান্ডি সম্পাদনা

নরম্যান্ডি উত্তর ফ্রান্সের একটি প্রদেশের নাম। আর ডাচি(Duchy) বলতে ডাচদের দ্বারা শাসিত রাজ্যকে বোঝানো হয়। ডাচি অফ নরম্যান্ডি দ্বারা মূলত নরম্যান্ডিতে ডাচদের শাসনকে অভিহিত করা হয়। ফ্রান্সের পশ্চিম ফ্রান্সিয়া প্রদেশের রাজা চার্লস তৃতীয়ের আমলে(৮৯৮-৯২২) ডাচি অফ নরম্যান্ডি গঠিত হয়। এর মূল দলিলের নাম ছিল 'ট্রিটি অফ সেইন্ট-ক্লেয়ার-সুর-এপ্তে (Treaty of Saint-Clair-sur-Epte)' এবং এ দলিল অনুযায়ী নর্স জাতির একজন সেনাপতি ও ভাইকিং 'রোলো'-কে নরম্যান্ডির প্রথম নৃপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই ডাচিটির প্রথম দিকের অধিবাসীদের নাম ছিল নরম্যান। এই নামানুসারে ডাচি অফ নরম্যান্ডির নামকরণ করা হয়-'নরম্যান্স'।

৯৩৩ সালে, পশ্চিম ফ্রান্সিয়ার তৎকালীন রাজা রাউল, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে নরম্যান্ডির ২য় শাসক 'উইলিয়াম ১ম লংসোর্ড'-এর হাতে অর্পণ করেন এবং একে ডাচি অফ নরম্যান্ডির অন্তর্ভুক্ত করেন। ১০৬৬ সালে নরম্যান্ডির 'উইলিয়াম ২য়' ইংল্যান্ডকে আক্রমণ করে শাসন করতে শুরু করেন, ফলে তিনি ইংল্যান্ডের 'উইলিয়াম ১ম'-এ পরিণত হন। ১২ থেকে ১৩ শতকের শুরু পর্যন্ত ইংল্যান্ডের শাসনকারী একটি ফরাসি রাজবংশীয় প্রতিষ্ঠান ছিল অ্যানগেভিন। ১২০৪-১২১৪ সালের সময়ে ইংল্যান্ডের রাজা 'জন' ফ্রান্সের আরেক রাজা 'ফিলিপ ২য়'-এর কাছে উত্তর ফ্রান্সের অ্যানগেভিনদের যে অঞ্চলগুলো ছিল সেগুলোসহ নরম্যান্ডির রাজত্ব হারিয়ে ফেললেও চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে সে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তার উত্তরাধিকারী ইংল্যান্ডের 'হেনরি ৩য়', ফ্রান্সের 'লুইস ৯ম' এর সাথে করা আনুষ্ঠানিক চুক্তি 'ট্রিটি অফ প্যারিস'-এর মাধ্যমে 'হেনরি ৩য়' ডাচি অফ নরম্যান্ডির কাছে নিজের দাবি সমর্পণ করেন এবং পাশাপাশি ফ্রান্সের রাজা যিনি তৎকালীন নরম্যান্ডির নৃপতি ছিলেন, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের উপর থেকে তার দাবি তুলে নেন। এরপর থেকেই চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ স্ব-শাসিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল এবং ইংল্যান্ডের কোন রাজ্য, গ্রেট বৃটেন বা যুক্তরাজ্য দ্বারা শোষিত হয় নি।

১৩৩৮ সালে এই দ্বীপপুঞ্জে ফরাসিরা আক্রমণ করে যারা ১৩৪৫ সাল পর্যন্ত কিছু এলাকা শাসন করেছিল। ১৩৪১ সালের জুলাই-এ ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড ৩য়, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জার্সি, গার্নসি, সার্ক এবং অল্ডার্নি দ্বীপকে এদের রীতিনীতি এবং আইনসহ একটি সনদ প্রদান করেন যা মূলত ইংরেজদের প্রতি তাদের আনুগত্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে করা হয়েছিল। ১২ থেকে ১৪ শতকের সময়ে, বিদেশী সৈন্যদলে কর্মরত বেতনভোগী সৈনিকদের এক ধরনের সৈন্যবাহিনী গঠিত হতো যাদের নাম ছিল 'ফ্রি কোম্পানি বা Free company'। ১৩৭২ সালে, ফ্রান্সের ফ্রি কোম্পানির তৎকালীন নেতা ওয়েলস বংশোদ্ভূদ সৈনিক ওয়েইন লগোছ জার্সি এবং গার্নসি আক্রমণ করে। এরপর পরই পশ্চিম ফ্রান্সের প্রদেশ ব্রিটানি হতে আগত ফ্রেঞ্চ মিলিটারি কমান্ডার বারত্রান্দ-দু-গুয়েসলিন ১৩৭৩ সালে জার্সির একটি প্রাসাদ 'মন্ট অরগুয়েল'-কে অবরুদ্ধ করে ফেলে। ইংল্যান্ডের তরুণ রাজা রিচার্ড ২য়, ১৩৭৮ সালে তার দাদ এডওইয়ার্ডের প্রণীত সনদটির নিয়মগুলো পুনরায় নিশ্চিত করেন এবং ১৩৯৪ সালে ইংরেজদের দ্বারা প্রণীত সকল শুল্ক, রীতিনীতি এবং আইন হতে চিরকালের জন্য অব্যাহতি দিয়ে একটি ২য় সনদ প্রদান করেন।

ফ্রান্সের আনজু প্রদেশের একটি রাজবংশ বা রয়্যাল হাউসের নাম ছিল 'হাউস অফ প্লান্টাগেনেট ( House of Plantagenet)'। এই হাউসের দু'টি সামরিক শাখা বা ক্যাডেট ব্রাঞ্চ ছিল- দ্য হাউস অফ ল্যানকেস্টার এবং দ্য হাউস অফ ইয়র্ক। ল্যানকেস্টার এবং ইয়র্ক দু'টোই ইংল্যান্ডের শহর। এর মধ্যে হাউস অফ ল্যানকেস্টারের প্রতীক ছিল-লাল গোলাপ এবং হাউস অফ ইয়র্কের প্রতীক ছিল-সাদা গোলাপ। ১৫ শতকে ইংল্যান্ডের রাজত্ব নিয়ে এই দুই হাউসের মাঝে যে ইংলিশ গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয় তাকে 'ওয়ার্স অফ দ্য রোসেস বা The Wars of the Roses' নামে অভিহিত করা হয়। ১৪৬১ সালে জার্সি দ্বীপে ফরাসি শাসনের আমলে এর শাসকেরা এই যুদ্ধে ইয়র্কিস্টসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ও ল্যানকেস্ট্রিয়ানদের সহযোগীতা করতে শুরু করে। কিন্তু ১৪৬৮ সালে ইয়র্কিস্টরা এই দ্বীপ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। এরপর ১৪৮৩ সালে একটি ' পাপাল বুল সনদ বা কোন ক্যাথোলিক চার্চের ধর্মযাজক দ্বারা জারিকৃত সনদ'-এর মাধ্যমে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের ফলে দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা একই সাথে ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের সাথে বাণিজ্য করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ১৬৮৮ সালে গ্রেট বৃটেনে ডাচদের দ্বারা সংঘঠিত বিপ্লব(যা 'গ্লোরিয়াস রেভোলুশন' নামে পরিচিত)-এর পর ১৬৮৯ সালে কাউন্সিলের অর্ডারের মাধ্যমে এই আদেশটি বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়।

১৪ শতকে দ্বীপগুলোকে ডায়োসিস অফ ক্যুট্যান্সেসের পরিবর্তে বিভিন্ন এলাকার অধীনস্থ করার চেষ্টা করা হয়। ১৪০০ সালে পশ্চিম ফ্রান্সের নান্তেস শহরে, ১৪৯৬ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের স্যালসবারি শহরে এবং ১৪৯৯ সালে ইংল্যান্ডের উইনচেস্টারের অধীনস্থ করার প্রচেষ্টা চালানোর পর অবশেষে ১৫৬৯ সালে কাউন্সিলের অর্ডারের মাধ্যমে সবগুলো দ্বীপকে একত্রে ডায়োসিস অফ উইনচেস্টারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই ডায়োসিসের বিশপের কোন শাসন দ্বীপগুলোতে কার্যকর হচ্ছিল না কারণ এই দ্বীপগুলোতে ক্যালভিনিস্ট(ফরাসি ধর্মতাত্বিক জন ক্যালভিন এবং তার উত্তরসূরীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রোমান ক্যাথোলিক বিরোধী ধর্মব্যবস্থার অনুগামী)-দের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি ১৬২০ সালের আগে জার্সিতে এবং ১৬৬৩ সালের আগে গার্নসিতে চার্চের কোন বিশপ সম্প্রদায়ও ছিল না।

এরপর ১৫৬৫ সালে ইংল্যান্ডের রাণী 'এলিজাবেথ ১ম' সার্ক দ্বীপে সেইনিউরশিপ(seigneurship) বা সেইনিউর নামক ফ্রান্সের ততকালীন এক প্রকার জমিদারী ব্যবস্থা প্রদান করেন। এই জমিদারী ব্যবস্থাই মূলত বর্তমানে সার্ক দ্বীপের যে সংবিধান রয়েছে তার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে আসছে।

১৭ শতক ও ১৮ শতক সম্পাদনা

১৬৩৯ থেকে ১৬৫৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজ্যগুলোতে সংঘাতের সৃষ্টি হয় যেখানে এই প্রতিটি রাজ্যের একই রাজা বা একমাত্র শাসক ছিলেন চার্লস ১ম, এই সংঘাতটি 'ওয়ার অফ দ্য থ্রি কিংডম বা বৃটিশ গৃহযুদ্ধ' নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের সময় ১৬৪৬ থেকে ১৬৫০ সাল পর্যন্ত জার্সি দ্বীপ এর রাজতন্ত্রবাদের জন্য চার্লসের (মূলত চার্লস ২য়ের) বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করে। অন্যদিকে গার্নসি দ্বীপ সংসদীয় শাসনকেই বেশি সমর্থন করেছিল যদিও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাসাদ করনেট(Castle Cornet), রাজতন্ত্রবাদীদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল যারা ১৬৫১ সালে অবশেষে আত্নসমর্পণ করে।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলির সাথে বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করে। এমনকি উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের দ্বীপ নিউফাউন্ডল্যান্ডের সাথে মৎস্য-ব্যবসায়ও তারা যুক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জার্সি দ্বীপে চার্লস ২য় নির্বাসনে থাকার সময় তাকে যথেষ্ট সহযোগীতা করার কারণে তিনি জার্সি এবং ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রবাদী রাষ্ট্রনায়ক- জর্জ কার্টারকে উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলো হতে একটি বড় এলাকা প্রদান করেন যা জর্জ কার্টার 'নিউ জার্সি' নামে নামকরণ করেন। এই নিউ জার্সি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রদেশ। উত্তর আমেরিকার শুরুর দিকের একজন ঔপনিবেশিক শাসক ছিলেন গার্নসির ইংলিশ ঔপনিবেশিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর স্যার এডমন্ড অ্যানড্রস, এছাড়াও তিনি 'ডমিনিয়ন অফ নিউ ইংল্যান্ড'-এর তৎকালীন প্রধান ছিলেন। উত্তর-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি প্রদেশ একত্রে নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চল নিউ ইংল্যান্ড নামে পরিচিত। ডমিনিয়ন অফ নিউ ইংল্যান্ড, এই নিউ ইংল্যান্ডের একটি স্বল্পস্থায়ী(১৬৮৬ থেকে ১৬৮৯ সাল পর্যন্ত) প্রশাসনিক সমিতি ছিল।

১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক মৌলিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে যা ১৭৯৯ সালে 'ফ্রেঞ্চ কনস্যুলেট(ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সরকারি ব্যবস্থা)' প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়, এই সময়কালটিকে 'ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন(French Revolution) নামে অভিহিত করা হয়। এই রেভল্যুশনের পর ফ্রান্সে বসবাসকারী প্রাভাবশালী প্রবাসীরা চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে আশ্রয় নেওয়ার আবেদন জানায়। ফলে ১৮ শতকের পর থেকে এই দ্বিপপুঞ্জকে 'ফ্রেঞ্চ দ্বীপপুঞ্জ বা The French Isles' নামে ডাকার চল শুরু হয়। একই কারণে এখানকার শহরগুলোতে এখন পর্যন্ত যে আবাসস্থলগুলো দেখা যায় তা ঐ আমলেই তৈরী। গার্নসির সেইন্ট পিটার পোর্ট শহরে যে বন্দর বিদ্যমান, তার বেশিরভাগ অংশও একই সময়ে (১৮৬৫ সালের মধ্যে) নির্মিত হয়েছিল।

২০ শতক সম্পাদনা

 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নির্মিত জার্মান দুর্গ
 
১৯৪৫ সালে সেইন্ট পিটার পোর্টে জনতার বিজয় উল্লাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জগুলো বৃটিশ আইল্‌স(উত্তর আটলান্টিকে অবস্থিত ইউরোপের একটি দ্বীপপুঞ্জ)-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসময় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে জার্মান সৈনিকেরা দখল করে নেয়। কিন্তু ১৯৪০ সালের জুন মাসে বৃটিশ সরকার এই দ্বীপপুঞ্জ হতে সকল সামরিক বাহিনী সরিয়ে ফেলে এবং ২১ জুন এখানকার তৎকালীন লিউট্যানেন্ট গভর্নরও তার অবস্থান হতে প্রাত্যাহতি জানায়। শুধুমাত্র তাদের অন্তরক প্রশাসন(insular administration) এখানে থেকে যায় এবং আগাম জার্মান সৈনিকদের আগমনের ব্যবস্থা করতে থাকে যার পাশাপাশি তারা দ্বীপপুঞ্জের শাসনও চালাতে থাকে।

পরবর্তী জার্মান সেনাবাহিনীর আগমনের আগেই, ১৯৪০ এর ৩০ জুন হতে ৪ জুলাই-এর মাঝে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ জনগণ এখান থেকে পালিয়ে যায়। এই দ্বীপপুঞ্জের অসংখ্য যুবক মিত্রবাহিনীতে যোগ দেয়। জার্সি দ্বীপের ৫০,০০০ জনগণের মাঝে ৬,৬০০ যুবক এবং গার্নসি দ্বীপের ৪২,০০০ জনগণের মাঝে ১৭,০০০ জন যুবক মিত্রবাহিনীতে যোগ দেয়। ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের হাজার হাজার শিশু-কিশোরকে স্কুল-কলেজ হতে সরিয়ে নেওয়া হয়। অন্যদিকে, সার্ক দ্বীপের জনগণের কেউ তাদের বসতি ছেড়ে যায় নি। আবার অল্ডার্নি দ্বীপের মাত্র ৬ জন মানুষ ছাড়া সবাই অন্যত্র পাড়ি জমায়।

অল্ডার্নি দ্বীপে জার্মানরা মোট ৪টি ক্যাম্প স্থাপন করে। এই ক্যাম্পে দ্বীপপুঞ্জের ৬,০০০ জন শ্রমিকের মাঝে ৭০০ জন মৃত্যুবরণ করে। নথি ও কাগজপত্রের সবই ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে অন্যান্য দ্বীপগুলোতে কতজনের মৃত্যু ঘটেছে তার কোন হিসাব পাওয়া সম্ভব হয় নি। বৃটেনের মাটিতে একমাত্র অল্ডার্নিতেই নাৎসিদের বন্দিশিবির ছিল। যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী প্রায়ই চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থানরত শত্রুবাহিনীতে হামলা চালিয়ে তাদের সরবরাহ, যুদ্ধের অস্ত্র ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতো(এই কাজটি 'ব্লকেড' নামে পরিচিত)। বিশেষত ১৯৪৪ সালের জুনে এখানে নরম্যান্ডি হতে আক্রমণ ঘটলে ব্লকেডের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। সে সময় জার্মান সেনাদের দ্বীপপুঞ্জটি দখল করার পাঁচ বছর পেরিয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে অভাব-অনটনের পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে শেষ ৫ মাসে সেখানে প্রায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে মানবিক প্রতিষ্ঠান 'রেড ক্রস' থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাঠানো হয় যা 'এস.এস.ভেগা' জাহাজের মাধ্যমে ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে এসে পৌঁছায়।

১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে জার্মানদের কঠোর দখলদারি ও শোষণ চলতে থাকে। ২,০০০ জনের বেশি মানুষকে তারা নির্বাসনে পাঠয়ে দেয়। ইহুদিদেরকে কখনো বন্দিশিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হতো, কখনো 'পার্টিসান(Partisan)' নামের এক অস্বাভাবিক অদ্ভুত ধরনের সামরিক বাহিনীতে যোগ করিয়ে দিতো, অনেক সময় জোরপূর্বক শত্রুবাহিনীর সহযোগীতার মাধ্যম হিসেবে, এছাড়াও দাস হিসেবে তাদেরকে ব্যবহার করা হতো। ১৯৩৯ সালে ৪ বছরব্যাপী স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটার পর অনেক স্পানিশ শরণার্থীকে এই দ্বীপপুঞ্জে এনে সামরিক স্থাপনা কিংবা দুর্গ নির্মাণের শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত করা হয়। পরবর্তীতে অবশ্য সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান অর্থাৎ 'সেন্ট্রাল ইউরোপ(Central Europe) বা ইউরোপের কেন্দ্রীয় অঞ্চল' হতে আগত জনগণ এবং রাশিয়ানরা একত্রে এই নির্মাণকার্যটি চালিয়ে নিয়ে যায়। সে সময় এখানে প্রচুর পরিমাণে মাইন স্থাপন করা হয়। শুধুমাত্র জার্সিতেই ৬৫,৭১৮ টি মাইন স্থাপন করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে কোন প্রতিরোধমূলক আন্দোলন ঘটেনি যেখানে ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে নাৎসি বিরোধী আন্দোলন ঘটছিল যারা একত্রে 'ফ্রেঞ্চ রেসিস্ট্যান্স' নামে পরিচিত ছিল। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জার্মান সেনাবাহিনীতে কোন 'গেস্তাপো (গোপন নাৎসি পুলিশ)' উপস্থিত ছিল না। তারপরেও এখানে এই আন্দোলনগুলো না ঘটার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। দ্বীপগুলো সবই বিচ্ছিন্ন ছিল এবং এদের আকার অনেক ছোট হওয়ায় আন্দোলনকারীদের লুকানোর যথেষ্ট জায়গা ছিল না, জার্মান সৈনিকদের সংখ্যা বরাবরই এখানে অনেক বেশি ছিল(প্রতি দুইজন দ্বীপবাসীর জন্য একজন করে সৈনিক ছিল), এছাড়াও যুদ্ধের শুরুর দিকে দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ জনগণ বৃটিশ আর্মিতে যোগদান করে ফেলেছিল। সব মিলিয়ে এখানে আর কোন প্রতিরোধমূলক আন্দোলন ঘটানো সম্ভব হয় নি।

৮ মে, ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডের স্বাধীনতার পরপরই চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে জার্মান দখলদারিদের অবসান ঘটে। পরদিন ৯ মে, ১৯৪৫ সালে জার্সি ও গার্নসি তাদের স্বাধীনতা এবং বিজয় উদযাপন করে। তবে এর পুরো ৭ দিন পর অল্ডার্নিতে অবস্থানকারী জার্মান সেনারা মের ১৬ তারিখে অল্ডার্নি ত্যাগ করে। এই সেনাবাহিনী সর্বশেষ অত্নসমর্পণকারী জার্মান নাৎসিদের মাঝে একটি ছিল। ২৩ জুন গ্রেট বৃটেন হতে আগত প্রথম জাহাজে করেই প্রথম দিকে যারা দ্বীপপুঞ্জ ত্যাগ করেছিল তারা ফিরে আসে। তবে অল্ডার্নির জনগণ ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসের আগে ফিরে আসতে সক্ষম হয় নি। এ সময়, ৫ বছরের মতো এত লম্বা সময় ধরে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে অনেকের কাছেই ফিরে আসার পর চারপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ সময় লেগে গিয়েছিল।

১৯৪৫ সালের পর সম্পাদনা

যুদ্ধের পরপর চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে যেসব পুনঃনির্মানের কাজ ঘটেছিল সেগুলো এখানকার অর্থনীতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন এনে দেয়। পাশাপাশি এখানে অভিবাসী এবং দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান 'অফশোর ফাইন্যান্স সেন্টার বা ও.এফ.সি'-এর সাহায্যের মাধ্যমে এখানকার নির্দলীয় সরকারগুলো বেশ কিছু সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করে যা ১৯৬০ সালের সময় থেকে বৃদ্ধি লাভ করে। এখানকার আইনসভাও নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ 'ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক কম্যুনিটি (European Economic Community)'-তে যোগদান করেনি, যদিও যুক্তরাজ্য এই কম্যুনিটির অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০ সাল থেকে কৃষি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে দ্বীপগুলোর অর্থনৈতিক লাভের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় বিষয়টি দ্বীপগুলোর সরকারের কাছে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যদিও ফ্রান্সের অন্যতম দ্বীপপুঞ্জ হিসেবে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জনপ্রিয়তা এখনো লক্ষণীয়।

শাসন ব্যবস্থা সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে ২টি স্বশাসিত বেইলিউইক(একজন নাগরিক প্রধান বা বেলিফ দ্বারা পরিচালিত এলাকা) রয়েছে- বেইলিউইক অফ গার্নসি এবং বেইলিউইক অফ জার্সি। এরা উভয়ই বৃটিশ ক্রাউন ডিপেন্ডেসি(ক্রাউন নামক আইনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত এলাকা) কিন্তু কেউই যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১০ শতক থেকে এই দ্বীপপুঞ্জ 'ডাচি অফ নরম্যান্ডি'-এর অংশ হিসেবে রয়েছে এবং রাণী এলিজাবেথ ২য়কে অনেক সময় নরম্যান্ডির নৃপতি বা ডিউক হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু 'ট্রিটি অফ প্যারিসে'-এর নিয়ম অনুসারে তিনি মূলত জার্সি এবং বেইলিউইক অফ গার্নসির ডিউক বা নৃপতি নন, তিনি এই এলাকার রাণী হিসেবেই দ্বীপগুলো পরিচালনা করছেন।

গ্রেট বৃটেনে অবশ্য বেলিফ শব্দটির অর্থ বেশ ভিন্ন। গ্রেট বৃটেনে বেলিফ হলেন আদালত হতে নিযুক্ত এমন একজন ব্যক্তি যিনি ব্যক্তিগতভাবে ঋণ সংগ্রহ করেন। অন্যদিকে, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে বেলিফ হলেন কোন বেইলিউইকের নাগরিক প্রধান, রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষ এবং বিচার বিভাগের প্রধান, যা তাকে কোন বেইলিউইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকে পরিণত করে।

২১ শতকের শুরুর দিকে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন পদের বেলিফদের বিষয়ে প্রচুর তদন্ত শুরু হয়। এই তদন্তের কারণ ছিল গার্নসির একটি কোর্ট কেস যা বিভিন্ন ক্ষমতার বিচ্ছেদ নিয়ে শুরু হয়। এই কেসটির নাম ছিল McGonnell -v- United Kingdom (2000) 30 EHRR 289। এই কেসটির বিচারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্য়ের সহ বেশ কিছু সংবিধানের পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাশাপাশি লর্ড চ্যান্সেলরের পদ হতে চ্যান্সেলরকে বিচ্যুত করণ, 'হাউস অফ লর্ডস'-এর বিচার বিভাগীয় ভূমিকা বিলুপ্তকরণ এবং এই হাউসের পরিবর্তে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠাও গার্নসির এই কেসের ফলে ঘটে। তবে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বেলিফেরা তাদের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা মূলত নরম্যানদের সময় থেকে আগত। এ কারণেই অনেক আইনসভা এবং রাজ্য়ের নামওঁ নরম্যানদের ভাষা হতে এসেছে। যেমন, ৫ শতক হতে ১৫ শতকের সময়ে ইউরোপের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলোর সমাজে এক ধরনের শ্রেণিবিন্যাসের বা শ্রেণীভেদের আদেশ ছিল যার নাম 'এসটেট্‌স বা 'এসটেট্‌স অফ রিয়াম (Estates of the realm)' নরম্যান ভাষার 'এতাত্‌স' শব্দটি হতে এসেছে। এই এসটেট্‌স অবশ্য পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে পরবর্তিত হয়ে একটি গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টে পরিণত হয়।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট বা সংসদ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখলেও সংসদের আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বীপগুলোতে প্রণয়ন করা সম্ভব না। সাধারণত কাউন্সিলের পরামর্শপূর্বক আদেশের পরই কোন আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্বীপগুলো নিজের থেকেই এদের কোন আইন প্রণয়ন করে থাকে। প্রতিটি দ্বীপেরই তাদের নিজস্ব প্রাথমিক আইনসভা রয়েছে। যারা হলো 'স্টেট্‌স অফ গার্নসি', 'স্টেট্‌স অফ জার্সি', সার্কের মুখ্য কমিশনারগণ যারা 'চিফ প্লিস বা Chief Pleas' নামে অভিহিত হন এবং 'স্টেট্‌স অফ অল্ডার্নি'। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জগুলো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে কোন প্রতিনিধিত্ব করে না। মূলত 'রয়্যাল অ্যাসেন্ট' নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে রাজ্যের শাসনকর্তা দ্বারা অনুমোদিত একটি আইন যদি কাউন্সিলের রাণীও অনুমোদন করেন তবে সেই আইনের কাছে এবং সর্বদাই এই কাউন্সিলের কাছে দ্বীপগুলোর সরকার দায়বদ্ধ থাকে।

এই দ্বীপপুঞ্জ কখনো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অংশ ছিল না যার ফলে ২০১৬ সালে সংঘটিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেম্বারশিপের সদস্য হিসেবেও চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ ছিল না। অবশ্য 'ট্রিটি অফ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন'-এর একটি প্রোটোকল- প্রোটোকল থ্রি -এর শর্তানুসারে দ্বীপপুঞ্জটি ইউরোপিয়ান কমিউনিটির শুল্ক অঞ্চলগুলোর অন্তর্ভুক্ত। তবে, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে, দ্বীপপুঞ্জের বেইলিউইক দু'টি একত্রে মিলে একটি অফিস প্রতিষ্ঠা করে যার নাম ছিল 'ব্রাসেল্‌স অফিস'। এই অফিসটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের প্রভাব বিস্তারের জন্য, ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে দ্বীপপুঞ্জের সরকারগুলো অবগত থাকার জন্য এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে দ্বীপপুঞ্জের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য কাজ করতো। চ্যানেল দ্বিপপুঞ্জের উভয় বেইলিউইক বৃটিশ-আইরিশ কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের প্রতিটি দ্বীপের আলাদা আইনী আদালত রয়েছে। দ্বীপগুলোর আলাদা আলাদা আপিলের আদালত এখানে ১৯৬১ সাল থেকে বিদ্যমান। এখানকার ঐতিহ্যবাহী আইন হলো একটি নরম্যান আইন যার নাম Clameur de haro। ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলেশনের আগ পর্যন্ত ফ্রান্সে প্রচলিত একটি আইন 'কোটিউম' বা নরম্যান কাস্টোমারি আইন, দ্বীপপুঞ্জের বেইলিউইক দু'টির আইন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে আসছে, যেখানে সাধারণত 'ইংলিশ সাধারণ আইন বা ইংলিশ সিভিল আইন' এ ধরনের আইন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে অবশ্য বেইলিউক দু'টির আইন ব্যবস্থায় আধুনিকিকরণ ঘটে।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জনগণ মূলত বৃটিশ কিন্তু যুক্তরাজ্যের বংশদ্ভুত না হলে তাদেরকে ইউরোপিয়ান নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় না। কোন বৃটিশ নাগরিক জার্সি বা গার্নসির পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে তার পাসপোর্টে 'বৃটিশ আইল্যান্ড, বেইলিউইক অফ জার্সি' বা 'বৃটিশ আইল্যান্ড, বেইলিউইক অফ গার্নসি'- কথাটি লেখা থাকে। প্রোটোকল থ্রি-এর শর্তানুসারে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের কোন বাসিন্দার যদি যুক্ত্রাজ্যের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকে অর্থাৎ পরিবারের কেউ যুক্তরাজ্যের বংশোদ্ভুত না, ৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে কখনো যুক্তরাজ্যে বসবাস করে নি- এরকম হলে, তারা সরাসরি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সুবিধাসমূহ ভোগ করতে পারে না এবং তাদের পাসপোর্টের অনুমোদনেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটি খুব কম সংখ্যক দ্বীপবাসীর মাঝে প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাজ্যের সংসদীয় আইন 'ইন্টারপ্রিটেশন অ্যাক্ট ১৯৭৮' অনুযায়ী, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং বৃটিশ আইল্‌স একই নয়, ভুলবশত অনেকেই এদেরকে এক মনে করেন। ইউরোপের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের বাইরে উত্তর আটলান্টিকের একটি দ্বীপপুঞ্জ হলো বৃটিশ আইল্‌স। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের আরেকটি সংসদীয় আইন 'বৃটিশ ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট ১৯৮১' অনুযায়ী- যুক্তরাজ্য(মূলত গ্রেট বৃটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ড),'দ্য আইল অফ ম্যান(গ্রেট বৃটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যবর্তী আইরিশ সমুদ্রের একটি দ্বীপ ও স্বশাসিত বৃটিশ ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি)' এবং চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জকে একত্রে বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ বলা হয়।

সংস্কৃতি সম্পাদনা

১৯ শতক পর্যন্ত চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে নরম্যান ভাষা প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইংরেজি ভাষাভাষী অধিবাসীদের আগমনের ফলে এবং বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এখানকার ভাষায় 'অ্যাংলিসাইজেশন(Anglicisation) ঘটতে শুরু করে। অ্যাংলিসাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন ভাষার একাধিক শব্দ, নাম বা বাক্য এমনভাবে পরিবর্তন করা হয় যেন তা ইংরেজিতে বলতে এবং লিখতে সহজ হয়। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের শুধু তিনটি দ্বীপে বর্তমানে নরম্যান ভাষা ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে জার্সির জনগণের ভাষা জারিয়াস এবং গার্নসির জনগণের ভাষা গার্নেসিয়াস এই দ্বীপপুঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে পরিচিত। সার্কে প্রচলিত ভাষা সার্কেইয়াস মূলত জারিয়াস ভাষা হতে উদ্ভূত। নরম্যান ভাষা হতে আগত আরেকটি ভাষা অরেনিয়াস অল্ডার্নিতে প্রচলিত ছিল যা বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ভিক্টর হুগো প্রথমে জার্সি এবং পরবর্তীতে গার্নসিতে নির্বাসনে থাকাকালীন তার বিখ্যাত 'লা মিজারেবল' উপন্যাসটি শেষ করেন। হুগোর আরেকটি উপন্যাস 'লেস ত্রাভালেয়াস দে লা মের' -এর পটভূমি গার্নসি থেকেই আগত। হার্মান মেলভিলের কালজয়ী উপন্যাস 'মবি ডিক'-এর ৯১তম চ্যাপ্টারে একটি চরিত্র পাওয়া যায় যিনি গার্নসির বাসিন্দা ছিলেন।

অল্ডার্নি, গার্নসি এবং জার্সি দ্বীপের মাঝে ১৯০৫ সালে থেকে প্রচলিত পুরুষদের একটি ফুটবল ম্যাচের মুরাটি বা মারাটি(Muratti)। এটি চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের একটি বার্ষিক ক্রীড়া হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে যথেষ্ট সম্প্রচারের অভাবের কারণে এটির জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে যেখানে বিংশ শতাব্দীতে এটি ভীষণ বিখ্যাত ছিল।

 
গার্নেসিয়াস ভাষায় বিজ্ঞাপিত একটি সমুদ্র উৎসব

কোন সমুদ্র সৈকতে, উপকূলীয় অঞ্চলে কিংবা বন্দর নগরীতে উদযাপিত সমুদ্র বিষয়ক একটি উৎসবের নাম 'সি ফেস্টিভাল(sea festival) বা সমুদ্র উৎসব'। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জও এ থেকে কোন ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবছরই এই উৎসব বেশ বড় আকারে এখানে পালিত হয়।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে ক্রিকেট সে তুলনায় বেশ জনপ্রিয়। জার্সি ক্রিকেট টিম এবং গার্নসি ক্রিকেট টিম উভয়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল(ICC)-এর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৫৭ সাল থেকে এই দুই দলের মাঝে একটি ক্রিকেট ম্যাচের প্রচলন ঘটে যা 'ইন্টার ইনসুলার ম্যাচ' নামে পরিচিত। ক্রীড়াসহ নানা ক্ষেত্রে গার্নসির ঐতিহ্যবাহী প্রতীকী রঙ হলো সবুজ এবং জার্সির রঙ হলো লাল। এ কারণে এই ম্যাচটিকে 'reds vs greens' ম্যাচও বলা হয়। এই খেলাটির দর্শকের সংখ্যা এখনও ১,০০০ জনকে ছাড়িয়ে যায়। ২০০১ এবং ২০০২ সালে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ হতে একটি দল 'MCCA Knockout Trophy'-তে অংশগ্রহণ করেছিল, এই MCCA Knockout Trophy মূলত একটি একদিনব্যাপী টুর্নামেন্ট যা ইংল্যান্ড এবং ওয়েল্‌সের ক্ষুদ্র প্রদেশগুলোতে বিদ্যমান দলগুলোর মাঝে সংঘটিত হয়।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের পুরুষ ও মহিলা উভয় ক্রীড়াবিদ কমোনওয়েলথ গেমস(Commonwealth Games) এবং আইল্যান্ড গেমস(Island Games)-এ অংশগ্রহণ করে প্রশাংসা কুড়িয়েছেন। শুটিং(Shooting)-ও এখানে ভালোই জনপ্রিয়, এমনকি কমোনওয়েলথ গেমস হতে অনেকে শুটিং-এ মেডেলও জিতেছেন।

 
সেন্ট হেলিয়ারে অবস্থিত les crapauds এর একটি মূর্তি

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের প্রধান দ্বীপগুলোর অধিবাসীদের প্রাণীভিত্তিক ডাকনাম রয়েছে। যথা-

  • গার্নসি: 'ল্যজ্ আঁ (les ânes)', ফ্রেঞ্চ এবং নরম্যান ভাষায় যার অর্থ হলো গাধা। গার্নসির রাজধানী সেইন্ট পিটার পোর্টের রাস্তাগুলো ভীষণ খাড়া হওয়ায় এখানে বোঝা বওয়ার জন্য গাধার মতো কোন পরিশ্রমী ও শক্তিশালী প্রাণীর প্রয়োজন। তাই গার্নসির জনগণ এই নামকে শক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করে। যদিও জার্সির জনগণের মতে এই নাম জেদ বা জেদী মনোভাবের প্রতীক।
  • জার্সি: 'ল্য ক্রাপো (les crapauds)', ফ্রেঞ্চ ও জারিয়াস ভাষায় এর অর্থ হলো ব্যাঙ। জার্সিতে গার্নসির চেয়ে বেশি সাপ ও ব্যাঙ থাকায় এই নামের মাধ্যমে এখানে এই প্রাণীদের প্রাচুর্যকে নির্দেশ করা হয়।
  • সার্ক: 'ল্য কর্বাঁ (les corbins)', সার্কিয়াস, জারিয়াস ও গার্নেসিয়াস ভাষায় এটির অর্থ হলো কাক। সমুদ্র থেকে এই দ্বীপের উপকূলে অনেক কাক দেখা যায় বলে এই নাম দেয়া হয়েছে।
  • অল্ডার্নি: 'ল্য লাপাঁ (les lapins)', ফ্রেঞ্চ ও অরেনিয়াস ভাষায় যার অর্থ খরগোশ। অল্ডার্নি দ্বীপে 'ওয়ারেন্স(warrens)' নামক একটি বিশেষ প্রজাতির খরগোশ দেখা যায় বলে অল্ডার্নির জনগণের ব্যবহৃত ডাকনাম খরগোশ উপস্থাপন করে।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে ৬ষ্ঠ শতকে খ্রিষ্টান ধর্মের আগমন ঘটে। এখানে প্রচলিত ঐতিহ্য অনুযায়ী, জার্সির খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক ছিলেন সেইন্ট হেলিয়ার, গার্নসির খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক ছিলেন সেইন্ট স্যামসন অফ ডল এবনফ অন্যান্য ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে বিভিন্ন সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে যারা কেল্টিক খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার শুরু করে। তবে ১৬ শতকে রিফর্মেশনের পর দ্বীপপুঞ্জের রোমান ক্যাথোলিক ধর্মবলম্বীরা ক্যালভিনিস্টে পরিণত হয়, অবশ্য এই ঘটনায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রকাশিত একটি ফরাসি পুস্তিকার প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়। ১৭ শতকে এখানে অ্যাংলিক্যানিসম(খ্রিষ্টান ধর্মের একটি ধরন হলো পশ্চিমা খ্রিষ্টান ধর্ম, আবার এই ধর্মের একটি ধরন বা শাখা হলো অ্যাংলিক্যানিসম)-এর আগমন ঘটে কিন্তু প্রচলিত সমাজের রীতিবিরোধী হয়ে যায় জন্য এখানকার জনগণ মেথোডিসম নামক এক ধরনের খ্রিষ্টান ধর্মকে অনুসরণ করতে থাকে। বিংশ শতকের শেষের দিকে এখানে রোমান ক্যাথোলিক ধর্মের পুনর্গমন ঘটে। এর পিছনে কারণ ছিল পর্তুগাল এবং পর্তুগালের মাদেইরা প্রদেশের দ্বীপপুঞ্জ হতে আগত শ্রমিকেরা। এই শ্রমিকদের জনসংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী পোল্যান্ড এবং উত্তর ইউরোপের অভিবাসীদের ফলে। বর্তমানে এখানে এভাঞ্জেলিকাল(Evangelical) চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এভাঞ্জেলিকালিসম(Evangelicalism) আন্তর্জাতিকভাবে অনুসারিত খ্রিষ্টান ধর্মের একটি শাখা। এমনকি একাধিক ভাষায় এর সেবা বা সার্ভিস পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান মোতাবেক, এখানকার ৩৯% জনগণ নাস্তিক বা অধার্মিক।

অর্থনীতি সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতির অন্যতম অংশ এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলো। ১৯৬০ সাল থেকে জার্সি ও গার্নসি দ্বীপ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান 'ও.এফ.সি(Offshore financial centre)' -এর একটি বড় অংশে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, গার্নসির বাগান এবং গ্রীনহাউস সংক্রান্ত কর্মকান্ডের পরিমাণ জার্সি থেকে অনেক বেশি ছিল। এছাড়াও গার্নসির অর্থনীতির একটি বিশাল অংশ হলো ক্ষুদ্র শিল্প। জার্সিতে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি শস্য যার বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যে চলে যায়।

অর্থনৈতিক সেবার দিক থেকে অবশ্য জার্সি বেশ নির্ভরযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮ সালে জার্সির অর্থনীতিতে এই সেবার Gross Value Added বা GVA ছিল ৩৯.৪%। GVA-এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিভিন্ন ভাড়া হতে প্রাপ্ত আয়(১৫.১%), ৩য় অবস্থানে আছে অন্যান্য ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড(১১.২%)। এছাড়াও পর্যটনকেন্দ্র হতে আসে ৪.৫%, কৃষি থেকে আসে মাত্র ১.২% এবং সবচেয়ে কম আসে শিল্পক্ষেত্র হতে(১.১%)। ২০ বছরে এখানকার GVA ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের মাঝে বিদ্যমান ছিল।

জার্সির জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা এর GVA তে প্রভাব ফেলছে। ২০০০ সালে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৯০,০০০-এরও কম যা ২০১৮ সালের মাঝে ১,০৫,০০০ জনে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে এর জনসংখ্যা প্রায় ১,৭৪,০০০ জন। এর ফলে জনপ্রতি GVA ৫৭,০০০ পাউন্ড থেকে ৪৪,০০০ পাউন্ডে নেমে এসেছে।

গার্নসির Gross Domestic Product বা GDP এর পরিমাণ ২০১৮ সালে ছিল ৩.২ বিলিয়ন পাউন্ড। এখানকার জনসংখ্যা(৬৭,০৫২ জন) তুলনামূলকভাবে অধিক স্থিতিশীল হওয়ায় এর GDP ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে গার্নসির GDP ৫২,০০০ পাউন্ডের চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

উভয় বেইলিউইকের নিজস্ব ব্যাংক-নোট এবং মুদ্রা রয়েছে। এই নোট ও মুদ্রা স্বাধীনভাবে যেকোনো দ্বীপে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও এখানে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নোট এবং স্কটিশ ব্যাংক-নোটও ব্যবহার করা যায়।

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এখনো ডাকের চল রয়েছে, পাশাপাশি গণমাধ্যম, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তো আছেই। সড়কপথ, সমুদ্রপথ, আকাশপথ এবং রেলপথ এখানকার পরিবহনের মূল ব্যবস্থা।

ডাক সম্পাদনা

১৯৬৯ সাল থেকে জার্সি এবং গার্নসি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মেইল(UK's Royal Mail)-এ স্বাধীনভাবে তাদের ডাক প্রশাসন চালিয়ে আসছে। এদের নিজস্ব পোস্ট স্ট্যাম্পও আছে যা শুধুমাত্র এদের বেইলিউইক দু'টিতে ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাজ্যের স্ট্যাম্প এখানে আর বৈধ নেই, তবে চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে এবং আইল অফ ম্যানে মেইল করা হলে সে মেইলের কর যুক্তরাজ্যের অন্তর্দেশীয় করের সাথে যোগ করা হয়। ১৯৯০ সালের পর দ্বীপগুলো যুক্তরাজ্যের পোস্টকোড সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়। এদের মধ্যে জার্সির পোস্টকোড হলো 'জি.ই.(JE)' আর গার্নসির পোস্টকোড হলো 'জি.ওয়াই.(GY)'।

সড়কপথ সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ তিনটির গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের নিয়ম হলো-

  • গার্নসি (GBG): নাম্বার ৫ সংখ্যাবিশিষ্ট হয়।
  • জার্সি (GBJ): নাম্বার শুধু 'J' বা 'JSY' দিয়ে শুরু হয় এবং ৬ সংখ্যাবিশিষ্ট হয়।
  • অল্ডার্নি (GBA): নাম্বার AY দিয়ে শুরু হয় এবং ৫ বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪ সংখ্যাবিশিষ্ট হয়।

সার্ক দ্বীপে যদিও বেশিরভাগ যান চলাচল নিষিদ্ধ, কিছু যানবাহন, বিশেষত ট্র্যাক্টরগুলোর কোন নাম্বার প্লেট থাকে না এবং সাইকেলগুলোতে নাম্বার প্লেটের পরিবর্তে ট্যাক্স ডিস্ক ব্যবহার করা হয়।

সমুদ্রপথ সম্পাদনা

১৯৬০ এর দশকে, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ এবং ওয়েমাউথ(ইংল্যান্ডের ডরসেট শহরের একটি সমুদ্র সৈকত)-এর মধ্য দিয়ে চলাচলকারী ফেরীগুলো দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলোকে ল্যাটিন নামে অভিহিত করতো। যেমন, জার্সির নাম ছিল 'কায়সারেয়া', গার্নসির নাম ছিল 'সার্নিয়া' এবং অল্ডার্নির নাম ছিল 'রিদুনা'। ৫০ বছর পর, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী ফেরীপথ জার্সির রাজধানী সেইন্ট হেলিয়ার এবং গার্নসির রাজধানী সেইন্ট পিটার পোর্ট হতে Condor Ferries বা যুক্তরাজ্য, বেইলিউইক অফ জার্সি, বেইলিউইক অফ গার্নসি এবং ফ্রান্সের ফেরী সার্ভিস দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে। এই ফেরীপথে এখান থেকে 'কাটামারান' বা দ্রুত গতিসম্পন্ন পাল তোলা দুই হালবিশিষ্ট নৌকা ডরসেটের উপকূলীয় শহর এবং সমুদ্রবন্দর 'পুলে'-তে যেতো। সাধারণ ফেরী সার্ভিসের অধীনে কমোডর ক্লিপার জাহাজ নিয়মিত যাত্রী ও মালামালসহ চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ হতে ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার প্রদেশের বন্দরনগর পোর্ট্‌সমাউথ পর্যন্ত যাতায়াত করে। নরম্যান্ডি থেকে যাতায়াতকারী ফেরীগুলো 'Manche Îles এক্সপ্রেস' এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জার্সি ও ব্রিটানির একটি ফরাসি বন্দর 'সেইন্ট মালো'-এর মধ্যে যাতায়াতকারী নৌযানগুলো 'কম্পানি কোরসেয়ার (Compagnie Corsaire)' নামক একটি ট্যুর এজেন্সি এবং কন্ডর ফেরীস দ্বারা পরিচালিত হয়। সার্ক দ্বীপে 'দ্য আইল অফ সার্ক শিপিং কোম্পানি' নামক একটি কোম্পানি সার্কে ছোট ছোট ফেরী নির্মাণ করে।

'হুয়েলিন-রেনউফ' নামক একটি কারগো সার্ভিস ৮০ বছর ধরে জার্সি বন্দর এবং ইংল্যান্ডের সাউথাম্পন বন্দরে তাদের 'লিফট অন-লিফট অফ' কারগো সেবা প্রদান করে। লিফট অন-লিফট অফ কারগো সেবায় এমন কারগো জাহাজ অর্থাৎ মালবাহী জাহাজ ব্যবহার করা হয় যেটিতে ক্রেন সংযুক্ত করা থাকে এবং এই ক্রেন একই সাথে মাল উঠানো এবং মাল অপসারণের কাজ করে। হুয়েলিন-রেনউফ তাদের এই সেবা ২০১৩ সালের ২০ আগস্টে বন্ধ করে দেয়। জার্সির একজন রাজনীতিবিদ অ্যালেন ম্যাকক্লিন, এই সেবায় স্বল্প বেতনের যেসব চাকরি ছিল এরকম ৯০টি চাকরি রক্ষার চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বরে, আরেকটি প্রতিষ্ঠান 'চ্যানেল আইল্যান্ড লাইন্‌স' এই সেবাটি চালিয়ে যাওয়ার এবং 'অ্যাসোসিয়েটেড বৃটিশ পোর্ট' নামের একটি কোম্পানি হতে একটি কারগো জাহাজ 'এম.ভি. হুয়েলিন ডিসপ্যাচ' কেনার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এটি কেনার জন্য গ্রাহক দেউলিয়ায় পরিণত হয়। নতুন যে পরিচালক আসেন তাকে জার্সির ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি 'রকেইন লিমিটেড' হতে পুঁজি প্রদান করা হয়।

আকাশপথ সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে তিনটি বিমানবন্দর রয়েছে- অল্ডার্নি বিমানবন্দর, জার্সি বিমানবন্দর এবং গার্নসি বিমানবন্দর। বৃটেনের একটি আঞ্চলিক এয়ারলাইন বা বিমান সংস্থা 'Blue Islands' এবং বেইলিউইক অফ গার্নসির একটি এয়ারলাইন 'অরিনি'-এর মাধ্যমে দ্বীপপুঞ্জের বিমানবন্দর তিনটি একে অপরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে।

রেলপথ সম্পাদনা

এক সময় চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জার্সি, গার্নসি এবং অল্ডার্নিতে রেলসংযোগ ছিল কিন্তু বর্তমানে জার্সি এবং গার্নসির সবকটা রেলপথই বন্ধ এবং পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এখানে একমাত্র অল্ডার্নিতেই তিনটি রেলপথ চালু আছে। এদের মাঝে শুধু একটি রেলপথ নিয়মিত সময়সূচী মেনে যাত্রীবহনের সেবা প্রদান করে। বাকি দু'টি রেলপথ মাত্র ১৮৪ মিলিমিটার বা 71⁄4 in gauge মাপের ক্ষুদ্রাকার রেলপথ। জার্সির শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাষ্পচালিত রেলটি এখনো 'Pallot Heritage Steam যাদুঘর'-এর অংশ হিসেবে কাজ করে আসছে।

গণমাধ্যম সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে আঞ্চলিক টেলিভিশন এবং রেডিও সম্প্রচার বিদ্যমান। বিবিসি রেডিও জার্সি, বিবিসি রেডিও গার্নসি, বিবিসি চ্যানেল আইল্যান্ডস, আই.টি.ভি. চ্যানেল টেলিভিশন, আইল্যান্ড এফ.এম. এবং চ্যানেল ১০৩ এর মাধ্যমে এখানে এই গণমাধ্যমের সেবা পাওয়া যায়। গার্নসির হাসপাতালগুলোতে জুবিলি হসপিটাল রেডিও এবং জার্সির হাসপাতালগুলোতে রেডিও লায়ন্স সকল রেডিওর সার্ভিস প্রদান করে। বেইলিউইক রেডিওর দু'টি অনলাইন মিউজিক সার্ভিস রয়েছে যা অ্যাপল অ্যাপ্‌স, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্‌স এবং টিউন-ইন -এও বিদ্যমান।

দ্বীপপুঞ্জের টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলো 'ফ্রেমন্ট পয়েন্ট ট্রান্সমিটিং স্টেশন' হতে প্রচার করা হয়। জার্সির রাজধানী সেন্ট হেলিয়ারের ডরসেট স্ট্রিটের স্টুডিওগুলো ২০১৬ সালের শুরুর দিকে 'চ্যানেল আইল্যান্ডস লাইভ' নামের একটি স্থানীয় টেলিভিশন সার্ভিস চালু করে।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে বেশ কিছু স্থানীয় খবরের কাগজ রয়েছে। গার্নসি প্রেস ও জার্সি ইভনিং পোস্ট এদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া এখানে ম্যাগাজিনও পাওয়া যায়।

টেলিফোন সম্পাদনা

জার্সির সবসময়ই নিজস্ব টেলিফোন সার্ভিস এবং এটি কখনোই বৃটেনের জাতীয় টেলিফোন সার্ভিসের সাথে যুক্ত ছিল না। ১৯৬৮ সালে গার্নসিরও নিজস্ব টেলিফোন সার্ভিস চালু হয়। উভয় দ্বীপই 'বৃটিশ টেলিফোন নাম্বারিং প্ল্যান'-এর অংশ হিসেবে কাজ করে তবে যুক্তরাজ্যের টেলিযোগাযোগ এবং সম্প্রচারের সরকারি কর্তৃপক্ষ 'অফকম', চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে না এবং কোন লাইসেন্সের দায়িত্বেও এটি নেই। তবে দ্বীপপুঞ্জে বেতার টেলিগ্রাফির লাইসেন্সিং এবং বৃহত্তম দ্বীপ দু'টিতে শুধু প্রচারের কোন নিয়ম ভঙ্গ হলে তার দায়িত্বে রয়েছে অফকম। এছাড়াও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপগুলো পরস্পরের সাথে এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাথে যুক্ত রয়েছে।

ইন্টারনেট সম্পাদনা

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের সব দ্বীপেই আধুনিক ব্রডব্যান্ড রয়েছে। জার্সিতে ফুল-ফাইবার ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক অর্থাৎ FTTH ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কও বিদ্যমান যা এখানকার সকল ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি ১ Gbps পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। গার্নসিতে VDSL সাব্‌স্ক্রাইবার লাইন সহ কিছু ব্যবসায়িক ফাইবার সংযোগ রয়েছে। দ্বীপগুলোর এই ব্রডব্যান্ড সংযোগ সরবরাহকারী কোম্পানি দু'টি হলো- টেলিযোগাযোগ কোম্পানি 'Sure' এবং টেলিকম কোম্পানি 'জে.টি. গ্রুপ লিমিটেড বা JT'।

বেইলিউইক দু'টির প্রত্যেকেরই নিজস্ব ইন্টারনেট ডোমেইন রয়েছে। গার্নসি, অল্ডার্নি এবং সার্কের জন্য .GG এবং জার্সির জন্য .JE ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। এই ডোমেইন দু'টি 'channelisles.net' দ্বারা পরিচালিত হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ""World Population prospects – Population division""population.un.orgUnited Nations Department of Economic and Social Affairs, Population Division। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৯, ২০১৯ 
  2. ""Overall total population" – World Population Prospects: The 2019 Revision" (xslx)population.un.org (custom data acquired via website)। United Nations Department of Economic and Social Affairs, Population Division। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৯, ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা