চিরায়ত তড়িচ্চুম্বকত্বতে, চুম্বকায়ন বা চৌম্বকীয় মেরুকরণ হল সদিক ক্ষেত্র যা চৌম্বকীয় পদার্থে স্থায়ী বা প্রণোদিত চৌম্বক দ্বিমেরু ভ্রামকের ঘনত্ব কে প্রকাশ করে। চৌম্বকায়নের জন্য দায়ী হলো চৌম্বক ভ্রামকের উৎস, অণু মধ্যস্থ ইলেকট্রনের গতির ফলে আণুবীক্ষণিক তড়িৎ প্রবাহ, অথবা ইলেকট্রন বা নিউক্লিয়াসগুলির স্পিন। বহিঃস্থ চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি কোনও উপাদানের প্রতিক্রিয়াই হলো মোট চুম্বকায়ন। একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে প্যারাচৌম্বক পদার্থগুলির দুর্বল, প্রণোদিত চুম্বকায়ন হয়, চৌম্বক ক্ষেত্রটি সরানো হলে এই চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। ফেরোচৌম্বক এবং ফেরিচৌম্বক পদার্থগুলি চৌম্বক ক্ষেত্রে শক্তিশালী চুম্বকায়ন হয় এবং বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলেও চুম্বকায়ন করে। চৌম্বকীয় থাকতে পারে, এগুলি স্থায়ী চুম্বক হতে পারে। কোনও উপাদানের মধ্যে চুম্বকায়ন অপরিহার্যভাবে সুষম হয় না, বরঞ্চ বিভিন্ন বিন্দুর মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। চুম্বকায়ন থেকে জানা যায় যে, প্রয়োগকৃত চৌম্বক ক্ষেত্রে কোনও উপাদান কীরকম প্রতিক্রিয়া জানায়, এবং উপাদানটি চৌম্বক ক্ষেত্রকে কীভাবে পরিবর্তিত করে। সেই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলের পরিণাম যে বল সেটি গণনা করতে চুম্বকায়নকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি তুলনা করা যেতে পারে বৈদ্যুতিক মেরুকরণের সাথে, যেটি স্থির তড়িৎবিজ্ঞানে তড়িৎ ক্ষেত্রে কোনও উপাদানের অনুরূপ প্রতিক্রিয়ার পরিমাপ। পদার্থবিদ এবং প্রকৌশলীরা সাধারণত চুম্বকায়নকে একক আয়তনে চৌম্বক ভ্রামকের পরিমাণ হিসাবে হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন।[১]

এটিকে একটি অলীক ভেক্টর M দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সংজ্ঞা সম্পাদনা

চৌম্বক ক্ষেত্র বা M-ক্ষেত্রকে নিম্নলিখিত সমীকরণ অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে:

 

যেখানে   হল মৌলিক চৌম্বক ভ্রামক এবং   হল আয়তন উপাদান; অন্য কথায়, M-ক্ষেত্র হল এই অঞ্চলে চৌম্বক ভ্রামকের বিন্যাস বা সংশ্লিষ্ট বহুভাঁজ। নিম্নলিখিত সম্পর্কের মাধ্যমে এটি আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

 

যেখানে m হল একটি সাধারণ চৌম্বক ভ্রামক এবং ত্রৈধ সমাকলন আয়তনের উপর সমাকলনকে বোঝায়। এটি M-ক্ষেত্রকে বৈদ্যুতিক মেরুকরণ ক্ষেত্র বা P-ক্ষেত্রের সাথে সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ করে তোলে। P-ক্ষেত্রকে বৈদ্যুতিক দ্বিমেরু ভ্রামক p নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়, যেটি একই ধরনের অঞ্চল দ্বারা উৎপাদিত বা এইরকম মেরুকরণ সহ বহুভাঁজ:

 

যেখানে   মৌলিক বৈদ্যুতিক দ্বিমেরু ভ্রামক।

P এবং M এর "একক আয়তনে ভ্রামক" এই সংজ্ঞা ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে তারা অস্পষ্টতা এবং আপাতবৈপরীত্য সৃষ্টি করতে পারে।[১]

M-ক্ষেত্রকে এসআই পদ্ধতিতে প্রতি মিটারে অ্যাম্পিয়ার (অ্যাম্পিয়ার/মিটার) এককে প্রকাশ করা হয়।[২]

অধিকন্তু, চুম্বকায়নের জন্য একটি পদ যুক্ত করে (কণার সংখ্যা এবং আয়তন স্থির ধরে) সেটিকে মুক্ত শক্তি   এর একটি অবকলন হিসাবে লেখা যেতে পারে:

 

যেখানে   হল বিশৃঙ্খলা-মাত্রা,   হল তাপমাত্রা, এবং   হল চৌম্বক ক্ষেত্র। চুম্বকায়নটি তখন দাঁড়ায়

 ,

এইভাবে বিশৃঙ্খলা-মাত্রা, চাপ এবং রাসায়নিক বিভবের মত একই তাপগতীয় স্তরে চুম্বকায়নকে স্থাপন করা হয়।[৩] এই কারণে কোনও উপাদান পরিমাপ করার জন্য চুম্বকায়ন একটি প্রয়োজনীয় রাশি।

পদার্থবিজ্ঞানে প্রয়োগ সম্পাদনা

বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ ফেরোচুম্বকগুলির জন্য চুম্বকায়নকে কোনও উপাদান স্থিতিমাপ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয় না। এর পরিবর্তে তালিকাভুক্ত স্থিতিমাপটি হল অবশেষ প্রবাহ ঘনত্ব, যাকে প্রকাশ করা হয়   দিয়ে। ফেরোচুম্বকের ভ্রামক গণনা করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানীদের প্রায়শই চুম্বকায়নের প্রয়োজন হয়।

দ্বিমেরু ভ্রামক m (অ্যাম্পিয়ার⋅মি) গণনা করা হয় নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে:

 ,

আমরা জানি যে,

 ,

সুতরাং

 ,

যেখানে:

  •   অবশেষ প্রবাহ ঘনত্ব, একে প্রকাশ করা হয় টেসলা (T) দিয়ে।
  •   হল চুম্বকের আয়তন (মি)।
  •   H/m হল শূন্যস্থানের তাড়িতচৌম্বক প্রবেশ্যতা।[৪]

ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণে সম্পাদনা

চৌম্বক ক্ষেত্র (B, H), তড়িৎ ক্ষেত্র (E, D), আধান ঘনত্ব (ρ), এবং তড়িৎ ঘনত্বের (J) আচরণ ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণসমূহ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। চুম্বকায়নের ভূমিকা নিচে বর্ণিত হয়েছে।

B, H, এবং M এর মধ্যে সম্পর্ক সম্পাদনা

চুম্বকায়ন সহায়ক চৌম্বক ক্ষেত্র H কে সংজ্ঞায়িত করে এই ভাবে।

  (এসআই একক)
  (গাউসিয়ান একক)

যা বিভিন্ন গণনার জন্য সুবিধাজনক। শূন্যস্থানের প্রবেশ্যতা μ0 হল, সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৪π×১০−৭ ভোল্ট·সেকেন্ড/(অ্যাম্পিয়ার·মিটার)।

বহু পদার্থে M এবং H এর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াচৌম্বক এবং প্যারাচৌম্বক পদার্থগুলিতে, এই সম্পর্ক সাধারণত সরলরৈখিক হয়:

 

যেখানে χ হল আয়তন চৌম্বকগ্রাহিতা, এবং μ হল পদার্থের চৌম্বক প্রবেশ্যতা। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্যারাচৌম্বকের (বা ডায়াচৌম্বক) একক আয়তনের চৌম্বক বিভব শক্তি ([চৌম্বকীয় শক্তি ঘনত্ব) হল:

 

এর ঋণাত্মক নতি হল একক আয়তনে (অর্থাৎ শক্তি ঘনত্ব) প্যারাচুম্বকগুলির (বা ডায়াচুম্বক) ওপর চৌম্বকীয় বল

ডায়াচুম্বকগুলিতে ( ) এবং প্যারাচুম্বকগুলিতে ( ), সাধারণত  , এবং তাই  

ফেরোচুম্বকগুলির মধ্যে চুম্বকীয় শৈথিল্যের কারণে M এবং H এর মধ্যে এক থেকে একের মধ্যে সাযুজ্য থাকেনা।

চুম্বকায়ন প্রবাহ সম্পাদনা

 
চুম্বকায়ন (কালো তীর) দ্বারা প্রণোদিত আণুবীক্ষণিক তড়িৎপ্রবাহ যখন সামঞ্জস্য বজায় রাখে না, মাধ্যমের মধ্যে আবদ্ধ আয়তন প্রবাহ (নীল তীর) এবং আবদ্ধ পৃষ্ঠ প্রবাহ (লাল তীর) দেখা যায়।

চুম্বকায়ন M প্রবাহ ঘনত্ব J তে অবদান রাখে, যাকে বলা হয় চুম্বকায়ন প্রবাহ[৫]

 

এবং আবদ্ধ পৃষ্ঠের প্রবাহের জন্য:

 

যাতে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলিতে প্রবেশ করা মোট তড়িৎ ঘনত্ব হয়ে যায়

 

যেখানে Jf হল মুক্ত আধানের বৈদ্যুতিক তড়িৎ ঘনত্ব (এটি মুক্ত প্রবাহ নামেও পরিচিত), দ্বিতীয় পদটি চুম্বকায়নের অবদান, এবং শেষ পদটি বৈদ্যুতিক মেরুকরণ P এর সাথে সম্পর্কিত।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. C.A. Gonano; R.E. Zich; M. Mussetta (২০১৫)। "Definition for Polarization P and Magnetization M Fully Consistent with Maxwell's Equations" (পিডিএফ)Progress in Electromagnetics Research B64: 83–101। ডিওআই:10.2528/PIERB15100606। ১৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২০ 
  2. "Units for Magnetic Properties" (পিডিএফ)। Lake Shore Cryotronics, Inc.। ২০১৯-০১-২৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-১০ 
  3. Young, Peter (মার্চ ৫, ২০১২)। "Magnetic Phase Transitions, and Free Energies in a Magnetic Field" (পিডিএফ)young.physics.ucsc.edu। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৫, ২০১৯ 
  4. "K&J Magnetics - Glossary"www.kjmagnetics.com 
  5. A. Herczynski (২০১৩)। "Bound charges and currents" (পিডিএফ)American Journal of Physics81 (3): 202–205। ডিওআই:10.1119/1.4773441বিবকোড:2013AmJPh..81..202H। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২০