চিনাব সেতু
চেনাব রেল সেতু বা চেনাব সেতু[৪] হল ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার একটি ইস্পাত ও কংক্রিট খিলান যুক্ত রেল সেতু।[৫] এটি বাক্কাল ও কৌরির মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
চেনাব সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ৩৩°৯′৩″ উত্তর ৭৪°৫২′৫৯″ পূর্ব / ৩৩.১৫০৮৩° উত্তর ৭৪.৮৮৩০৬° পূর্ব |
বহন করে | ভারতীয় রেল |
অতিক্রম করে | চন্দ্রভাগা (চেনাব) |
স্থান | বাক্কাল ও কৌরি, জম্মু ও কাশ্মীর |
বৈশিষ্ট্য | |
নকশা | খিলান সেতু |
উপাদান | ইস্পাত ও কংক্রিট |
মোট দৈর্ঘ্য | ১,৩১৫ মি (৪,৩১৪ ফু)[১] |
উচ্চতা | ৩৫৯ মি (১,১৭৮ ফু) (নদীর তলদেশ থেকে সেতুর পাটাতন) [১] |
দীর্ঘতম স্প্যান | ৪৬৭ মি (১,৫৩২ ফু) |
স্প্যানের সংখ্যা | ১৭ |
ইতিহাস | |
নকশাকার | কোঙ্কণ রেলওয়ে, এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ডিআরডিও |
নির্মাণকারী | এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার |
উদ্বোধন হয় | ১৩ আগস্ট ২০২২[২] |
চালু হবে | জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২৪[৩] |
অবস্থান | |
যদিও চেনাব সেতুর নির্মাণের প্রস্তাব ২০০২ সালে করা হয়েছিল, তবে অনুমোদন ২০০৩ সালে প্রদান করা হয়েছিল। সেতুর নকশা কোঙ্কণ রেলওয়ে, এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও ডিআরডিও দ্বারা করা হয়েছিল, এবং ২০২২ সালের ১৩ই আগস্ট উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেতুর খিলানের নির্মাণ কাজ ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে শেষ হয়েছিল। সেতুতে রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু ও মার্চ মাসে সম্পন্ন হয়েছিল, এবং এটির উপর একটি ট্রায়াল রান ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পরিচালনা করা হয়েছিল।
সেতুটি চন্দ্রভাগা নদীর উপর ৩৫৯ মিটার (১,১৭৮ ফুট) উচ্চতায় বিস্তৃত রয়েছে, যা এটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতুতে পরিণত করে।[৬] সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার (৪,৩১৪ ফু)। চেনাব নদীর (চন্দ্রভাগা নদীর অপর নাম) নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ₹১,৪০০ কোটি। প্রকল্পটি উত্তর রেলের (এনআর) নিয়ন্ত্রণে সরকারি খাতের প্রচেষ্টা ছিল।
বিবরণ
সম্পাদনানান্দনিকতা, অর্থনীতি ও স্থানীয় দক্ষতা এবং নির্মাণ সামগ্রীর প্রাপ্যতা বিবেচনা করে চেনাব রেল সেতুটিকে একটি বৃহৎ পাটাতন বিশিষ্ট ইস্পাত নির্মিত একক খিলানের সেতু হিসাবে নকশা করা হয়েছিল, যার উভয় পাশে পার্শ্ব পাটাতন সংযুক্ত রয়েছে। সেতুর কৌরি প্রান্তের দিকে একটি সংযোগ সেতু রয়েছে।
পাটাতন
সম্পাদনাসেতুর পাটাতন চন্দ্রভাগা নদীর জলতল থেকে ৩৫৯ মিটার (১,১৭৮ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, পাটাতনের কৌরি প্রান্তে সংযোগ সেতু বা ভাইডাক্ট যুক্ত রয়েছে। বাক্কাল প্রান্ত থেকে কৌরি প্রান্ত পর্যন্ত সেতুর পাটাতনটি মোট ১,৩১৫ মিটার (৪,৩১৪ ফু) দীর্ঘ, এবং এটি ১৭ টি স্তম্ভের উপরে স্থাপন করা হয়েছে।[৭]
খিলান পাটাতন
সম্পাদনাখিলান পাটাতনটি একটি ইস্পাত নির্মিত খিলান ও ৭ টি স্তম্ভের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে, এটি ৭৮৫ মিটার (২,৫৭৫ ফু) লম্বা। সেতুর ৪৬৭ মিটার (১,৫৩২ ফুট) লম্বা ও ১৩.৫ মিটার (৪৪ ফু) চওড়া মূল স্প্যান বা পাটাতনটি ইস্পাত নির্মিত খিলানের উপরের রয়েছে।[৮] ইস্পাত নির্মিত ৪৮০ মিটার (১,৫৭০ ফুট) দৈর্ঘের একটি খিলানের মধ্যমে মূল খিলান পাটাতনকে ধরে রাখা হয়েছে। মূল স্প্যান বা পাটাতনের কৌরি প্রান্তে পার্শ্ব পাটাতন ১২০ মিটার ও বাক্কাল প্রান্তের পার্শ্ব পাটাতন ১৮৫ মিটার দীর্ঘ।[৯]
খিলান
সম্পাদনাখিলানটি দ্বৈত-পাঁজরযুক্ত বৃহৎ ইস্পাত নির্মিত ট্রাস দ্বারা তৈরি হয়েছে, এবং এটি ৪৮০ মিটার (১,৫৭০ ফুট) দীর্ঘ। ট্রাসের কর্ডগুলি হল এক প্রকার বদ্ধ ইস্পাত বাক্স, যা অভ্যন্তরীণভাবে শক্ত শক্তিশালী করতে ও সেতুতে বায়ু প্রবাদের প্রবাহের ধাক্কা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য কংক্রিট দিয়ে ভরাট করা। কংক্রিট ভরাটের আরেকটি সুবিধা হল যে ভবিষ্যতে অভ্যন্তরীণ রঙলেপনের প্রয়োজন হবে না।
খিলানের নিকটকে কংক্রিট স্তম্ভ নির্মাণ ভারতীয় নির্মাণ মান -যেমন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্ট্যান্ডার্ডস (আইআরএস), ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস (আইআরসি) ও ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (আইএস) - অনুযায়ী বৃহৎ স্প্যানগুলির জন্য অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হয়েছিল। ফলে, খিলানের নিকটবর্তী স্তম্ভগুলি ইস্পাত দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, এবং ইস্পাতের স্তম্ভগুলি কংক্রিট নির্মিত ভিতের উপরে স্থাপন করা হয়েছিল।
সংযোগ সেতু
সম্পাদনাসেতুর খিলান পাটাতনের কৌরি পার্শ্বে একটি সংযোগ সেতু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংযোগ সেতুটি ৫৩০ মিটার লম্বা, এবং ১১ টি কংক্রিট স্তম্ভের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে।[১০]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রেক্ষাপট
সম্পাদনাউত্তর রেলওয়ে কাশ্মীর উপত্যকার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে জম্মু ও বারামুল্লার কাছে উধমপুর শহরের মধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের জুড়ে একটি নতুন রেলপথ নির্মাণের অতিবৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পটি ২০০২ সালে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল।[১১] এটি উত্তর রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত হয়।
নির্মাণ
সম্পাদনাচেনাব রেল সেতুটি মূলত ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[১২] যাইহোক, সেতুর স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক আশঙ্কার কারণে প্রকল্পটি ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থগিত করা হয়েছিল।[১৩] সেতুর কাজ ২০১০ সালে পুনরায় শুরু হয়েছিল,[১৪] সেই সঙ্গে ২০১৫ সালে সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[১৫]
আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোরের সহায়তায় ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম নির্মাণ গোষ্ঠী শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর একটি অংশ, এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে নকশা ও নির্মাণ চুক্তি প্রদান করা হয়েছিল।[১৬] কোঙ্কন রেলওয়ে কর্পোরেশন দ্বারা প্রধান নির্মাণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) সেতুটির নকশা তৈরিতে সাহায্য করেছিল, বিশেষ ইস্পাত ব্যবহার করে সেতুকে বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী করে তোলে।[১৭]
রক্ষণাবেক্ষণ
সম্পাদনাএই ধরনের সেতুর নিয়মিত রঙ করা একটি ভয়ঙ্কর কাজ; অতএব, প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় টেকসই একটি রঙের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ ভারতীয় রেল সেতুতে রঙের আয়ু ৫ থেকে ৭ বছর।[১৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Salient Features of the Chenab and Anji Khad Bridges" (পিডিএফ)। Official Webpage of the Konkan Railway Corporation Limited। ২০০৩-১২-০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-১৪।
- ↑ "Chenab Bridge, World's Highest Rail Bridge Taller Than Eiffel Tower, Inaugurated Today | All You Need to Know"। India.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৮-১৩। ১৩ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Trains to ply on 'world's highest rail bridge' in 2024: Railway Minister"। www.thehindu.com (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য হিন্দু। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ আনজের আইয়ুব। "Chenab Rail Bridge: A Marvel of Engineering and the Highest Railway Bridge in the World"। www.thechenabtimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য চেনাব টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Worlds Tallest Railway Bridge On Chenab To Complete By May 2019"। ৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "World's highest rail bridge to come up across Chenab river"। Hindustan Times। ২০১৩-০২-১৭। ২০১৩-০২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৭।
- ↑ "DESIGN OF CHENAB BRIDGE IN INDIA" (পিডিএফ)। media.neliti.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Chenab Bridge An Iconic Masterpiece in the Making" (পিডিএফ)। nopr.niscpr.res.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "World's highest railway bridge in J&K is 35 meters taller than Eiffel Tower"। www.livemint.com (ইংরেজি ভাষায়)। লাইভমিন্ট। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Chenab Bridge: Construction of the World's Highest Rail Bridge"। www.theconstructor.org (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য কন্সট্রাক্টর। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "J&K Rail Link Project"। Northern Railway Website: Official Page on the Kashmir Railway Project। ৬ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "J&K to have world's tallest bridge"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। PTI। ২০০৭-১১-০৫। ২০১২-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Chenab bridge plan back on track despite safety worries | India News - Times of India"। The Times of India। ২৩ জুন ২০০৯। ১৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Work Resumes on Tallest Rail Bridge in India"। Railway Technology। ১০ জুন ২০১০। ২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ Singh, Mahendra Kumar (১৮ জুন ২০১২)। "Highest railway bridge in J&K to be ready by 2015"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১১ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Chenab Rail Bridge, Jammu and Kashmir, India"। Railway Technology। ১৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "Kashmir To Get "Blast-Proof" World's Highest Railway Bridge Over River Chenab"। The Eurasian Times। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। ২১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ Tiwari, Neelam (২০১৭-০৫-০৩)। "J&K The railway bridge being built on the Chenab river will be 35 meters higher than the Eiffel Tower."। Dainik Bhaskar (হিন্দি ভাষায়)। ২৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৩।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- স্ট্রাকচারে চিনাব সেতু (ইংরেজি)
- Video simulation of the construction process ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে
- Report on bridge's progress including photo, June 2012