চিদানন্দ দাশগুপ্ত

চিদানন্দ দাশগুপ্ত (২০ নভেম্বর ১৯২১ - মৃত্যু: ২২ মে, ২০১১) ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সমালোচক, চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ এবং কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার মেয়ে অপর্ণা সেন একজন নামী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র পরিচালক।

চিদানন্দ দাশগুপ্ত
চিদানন্দ দাশগুপ্ত.jpg
জন্ম২০ নভেম্বর ১৯২১
শিলং(বর্তমানে মেঘালয়)
মৃত্যু২২ মে, ২০১১[১]
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্ব ভারত
পরিচিতির কারণচলচ্চিত্র নির্মাতা, সমালোচক
দাম্পত্য সঙ্গীসুপ্রিয়া দাশ
সন্তানঅপর্ণা সেন

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

চিদানন্দ দাশগুপ্তর জন্ম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে নভেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা মেঘালয়ের শিলংয়ে। পিতা মন্মথনাথ দাশগুপ্ত ও মাতা শান্তিলতা। ১৯৪০-এর দশকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লে বাড়ি থেকে তাকে জোর করে হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে কলকাতায় এসে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের স্রষ্টা প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের আপ্তসহায়ক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ওই বছরেই তিনি জীবনানন্দ দাশের ভ্রাতা ব্রহ্মানন্দ দাশগুপ্তর কন্যা সুপ্রিয়া দাশকে বিবাহ করেন।[২]

কর্মজীবনসম্পাদনা

কিছুদিন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের আপ্তসহায়ক হিসাবে কাজ করার পর কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। তারপর বিজ্ঞাপন সম্বন্ধীয় কাজে যোগ দেন ইম্পিরিয়াল টোব্যাকো ও পরে ডি জি কিমারে। এই সূত্রেই তার সঙ্গে আলাপ হয় চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টজনের সঙ্গে।

চলচ্চিত্র জীবনসম্পাদনা

চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসাতেই তিনি উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে কয়েকটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে হরিসাধন দাশগুপ্ত, বংশী চন্দ্রগুপ্ত, কালীসাধন দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সত্যজিৎ রায়, বিজয়া ম্যুলে, আবুল হাসান প্রমুখ ব্যক্তি সঙ্গে একযোগে প্রতিষ্ঠা করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি । কলকাতায় আসার সময় থেকেই তিনি রবীন্দ্রনাথ,মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জীবনানন্দ দাশের রচনা ও কবিতা ইংরাজীতে অনুবাদ করেন। ভারত সরকারের ফিল্ম ডিভিশনের হয়ে কয়েটি তথ্যচিত্রের এবং দুটি মাত্র কাহিনীচিত্রের পরিচালনা করেন। সেগুলি হল -

তথ্যচিত্র-
  • দি স্টাফ অফ স্টিল
  • দি ড্যান্স অফ শিভা
  • পোট্রেট অফ এ সিটি
  • জরুরত কি পূর্তি প্রভৃতি
কাহিনীচিত্র-
  • বিলেত ফেরত (১৯৭২)
  • আমোদিনী (১৯৯৫)

তাঁর কন্যা অপর্ণা সেনের সতী ছবির সংগীতের দায়িত্ব ছিল তার। সত্যজিৎ রায়ের সময়কালেই তিনি চলচ্চিত্রবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যুগ্মসম্পাদনায় প্রকাশ করেন ইন্ডিয়ান ফিল্ম কোয়ার্টার্লি। বৃটিশ ফিল্ম পত্রিকা সাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। তার রচিত ইংরাজী গ্রন্থ হল-

  • দ্য পোয়েট্রি অব জীবনানন্দ দাশ (১৯৭২)
  • দ্য সিনেমা অফ সত্যজিৎ রায় (১৯৮০)
  • টকিং অ্যাবাউট ফিল্মস্ (১৯৮১)
  • দ্য পেইন্টেড ফেস (১৯৯২)

তিনি চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট সমালোচনামূলক প্রবন্ধের জন্য ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের রাষ্ট্রপতির পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, ফ্রান্স,জার্মানি, ইটালি, অস্ট্রেলিয়া সহ বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

শেষ জীবনসম্পাদনা

চিদানন্দ দাশগুপ্ত শান্তিনিকেতনের পশ্চিমপল্লীতে আশাবরি নামে একটি বাড়ি করেছিলেন। তবে বেশিরভাগ সময়েই কলকাতায শহরে কন্যা অপর্ণা সেনের বাড়িতেই থাকতেন। তিনি শেষ বয়সে পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন। ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে মে পরলোক গমন করেন।

চিদানন্দ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্টসম্পাদনা

তার স্মরণে গঠিত হয়েছে চিদানন্দ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।[৩]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. V. K. Cherian (৩১ অক্টোবর ২০১৬)। India’s Film Society Movement: The Journey and its Impact। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 86–। আইএসবিএন 978-93-85985-62-1 
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১২৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. পালিত হবে চিদানন্দ দাশগুপ্তের জন্মবার্ষিকী

বহি:সংযোগসম্পাদনা