চারণ গান
বাংলার কবি, গীতি নাট্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে নানা ভাবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাতে, দেশের পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা জোগাতে যেসব কবিরা গান গেয়ে ও যাত্রাভিনয় করে স্থানে স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাদেরকে চারণ কবি বলা হয়। ব্যাকরণগত ভাবে চারণ শব্দের অর্থ স্তুতি পাঠক।[১]
চারণ গান | |
---|---|
অর্থ | স্তুতি পাঠকের গান |
বিখ্যাত গায়ক | মুকুন্দ দাস, বিজয় সরকার |
বাদ্যযন্ত্র | একতারা, দোতারা, ডুগডুগি |
পরিবেশনা | স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বাংলাকে জাগিয়ে তলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা ছিল চারণ গানের |
এছাড়া | |
বাংলা সাহিত্যে চারণ কবি মুকুন্দ দাসের নাম সবার আগে আসে। তার প্রকৃত নাম যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাক নাম যজ্ঞা। এছাড়া বিজয় সরকার প্রমুখরা বাংলার চারণ কবিতার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তবে বাংলা সাহিত্যে চারণ কবিরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে গেছেন। গ্রাম বাংলায় নানা পালা গানের মধ্যে দিয়ে চারণ কবিরা মানুষের মধ্যে বেঁচে আছেন।
উপজীব্য
সম্পাদনাধর্মের নানা কাহিনী থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা বিষয় চারণ কবিদের গানের মাধ্যমে প্রচারিত ছিল।
রাম সীতার উপাখ্যান
সম্পাদনাচারণ কবিদের গানের মধ্যে দিয়ে রামের নানা উপাখ্যান প্রচলিত ছিল। চারণ কবিরা নানা স্থানে ঘুরে এই সকল গান শোনাতেন। তবে মুখে মুখে প্রচারিত বলে উপকথার মধ্যে অনেক অতিকথাও যুক্ত হয়ে যেত। তা ক্রমে বছরের পর বছর ধরে প্রাচিরিত হয়ে ক্রমে কিংবদন্তিতে পরিনত হয়।[২]
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন
সম্পাদনাবঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় চারণ কবি মুকুন্দ দাসের অনেক গুলি গান লোকমুখে প্রচারিত ছিল তার মধ্যে উল্লেকযোগ্য গানটি হলো বন্দেমাতরম।[৩]
“ | বন্দেমাতরম বলে নাচ রে সকলে ক্রিপান লইয়া হাতে। দেখুক বিদশি হাসুক উট্টাহাসি কাঁপুক মেদিনী ভীম পদাঘাতে। |
” |
মহাত্মা অশ্বিনী দত্ত সেই তার চারণ গানের শক্তিকে বুঝে যাত্রা দল তৈরী করতে বলেছিলেন। তার এই ৩৬ লাইনের গানে প্রতি দুই লাইন অন্তর বন্দেমাতরম শব্দটি রেখেছিলেন।
ইতিহাসে চারণ গানের অনুষ্ঠান
সম্পাদনাভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চারণ কবিদের অনুষ্ঠান খুবই তাৎপর্যপূর্ন ছিল।
১৯১৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আমন্ত্রণে মুকুন্দ দাস তার যাত্রার দল নিয়ে কলকাতা যান। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট হলে সে দলের অভিনয় হয়।[৪]
মুকুন্দ দাস; শিলিগুড়িতে ১৯২৪ সালে চারণ গানের অনুষ্ঠান করেছিলেন। সাত দিন ব্যাপী সেই অনুষ্ঠান হয়। তখন তার প্রত্যেক দিনের দক্ষিণা ছিল ৫১ টাকা। তিনি অনুষ্ঠান শেষে ৭ টাকা গুরু দক্ষিণা রেখে বাকি ৩৫০ টাকা কালী মন্দির তৈরীতে দান করে দেন। ১৯২৬ সালে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়; মুকুন্দ দাস তার নাম করণ করেন আনন্দময়ী কালী এবং তারপরে সেখানে দুর্গা পূজাও শুরু হয়।[৪]
এছাড়া মুকুন্দ দাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িসহ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিচারপতি এ চৌধুরী প্রমুখের বাড়িতেও তার যাত্রাভিনয় হয়।[৪]
কয়েকটি বিখ্যাত চারণ গান
সম্পাদনা- একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
- বল শ্যামা সঙ্গিনী যোগিনী সঙ্গিনী
- কি আনন্দদধ্বনি ভারত ভূমে
- কে ও রণ রঙ্গিনী, প্রেম তরঙ্গিনী
- জাগ মা কুলকুন্ডলিনী
- পাঠিয়ে দে মা আনন্দময়ী
- বিশ্ব প্রসবিনী ত্রিলোক পালিনী
- শ্যামা মা তর পাগলা ছেলে
বিখ্যাত চারণ কবি
সম্পাদনা- মুকুন্দ দাস
- বিজয় সরকার
- গৌতম মজুমদার বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় বাড়ি
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "চারণ - শব্দের বাংলা অর্থ at english-bangla.com"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৮।
- ↑ আজকাল (২০১৬-০৮-২৯)। নন্দীগ্রাম ২০০৭। আজকাল পাবলিসার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
- ↑ বন্দে মাতরম প্রেরণা ও বিতর্ক। পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৭-০৭-২৪। আইএসবিএন 9789386708533।
- ↑ ক খ গ "চারণ কবি মুকুন্দ দাস - TheTimesInfo"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]