চাঁদের পাহাড় (উপন্যাস)

বাংলা উপন্যাস

চাঁদের পাহাড় প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা রোমাঞ্চকর উপন্যাস[২] ১৯৩৭ সালে গ্রন্থাকারে বের হওয়া এই উপন্যাসটি শঙ্কর নামক ভারতবর্ষের সাধারণ এক তরুণের আফ্রিকা মহাদেশ জয় করার কাহিনী। বাংলা ভাষায় অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ রোমাঞ্চকর উপন্যাস।[৩]

চাঁদের পাহাড়
সিগনেট প্রেস কর্তৃক গ্রন্থিত গ্রন্থের মুদ্রণ।
লেখকবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অঙ্কনশিল্পীশ্যামালিকা বসু
প্রচ্ছদ শিল্পীসত্যজিৎ রায়
দেশভারত
ভাষাবাংলা
ধরনরোমাঞ্চকর উপন্যাস
প্রকাশকএম. সি. সিরকার এন্ড সনস লিমিটেড (আসল বাংলা),
কথা বুকস (ইংরেজি অনুবাদ)
প্রকাশনার তারিখ
১৯৩৭[১]
ইংরেজিতে প্রকাশিত
১ জুলাই ২০০২
মিডিয়া ধরনগ্রন্থিত (হার্ডব্যাক ও পেপারব্যাক)
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৭৫ পৃ (ইংরেজি অনুবাদে)
আইএসবিএন[[বিশেষ:বইয়ের_উৎস/নেই (ইংরেজি অনুবাদঃ আইএসবিএন 81-87649-30-5)|নেই (ইংরেজি অনুবাদঃ আইএসবিএন ৮১-৮৭৬৪৯-৩০-৫)]] {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ অক্ষর

কাহিনী সম্পাদনা

চাঁদের পাহাড়-এর কাহিনী এক বাঙালি অভিযাত্রীর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যে ১৯০৯-১৯১০ সাল নাগাদ আফ্রিকা যায়। শঙ্কর রায় চৌধুরী, এই উপন্যাসের নায়ক, গ্র্যাজুয়েশন করার পর পাটকলে চাকরি পায়। কিন্তু সে রোমাঞ্চ খোঁজে। সে আফ্রিকার দুর্গম স্থানে যেতে চায়।

অবশেষে তার গ্রামের এক অধিবাসী, যে আফ্রিকায় কাজ করে, তার সহায়তায় সে আফ্রিকায় ক্লার্ক হিসেবে কাজ পায় এবং উগান্ডা রেলওয়েতে চাকরি পায়। কিন্তু সেখানে মানুষখেকো সিংহ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর আগের সমস্যা থাকে। ইতিমধ্যে সিংহের সাথে তার যুদ্ধ হয়। এছাড়াও এখানে ব্ল্যাক মাম্বা সাপের আক্রমণ হয়। এখানেই সে পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী ডিয়েগো আলভারেজ-এর দেখা পায়। আলভারেজ তাকে তার সময়ের ঘটনা বলে। সে এবং তার সঙ্গী জিম কার্টার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরক খনির সন্ধান পায়। কিন্তু ভয়ংকর জন্তু বুনিপ জিমকে মেরে ফেলে এবং আলভারেজ ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

সব শুনে শঙ্কর ক্লার্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আলভারেজের সাথে খনি অনুসন্ধানে বের হয়। তারা ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করে। পথে তাদের অবর্ণনীয় অসুবিধা হয়। জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি তাদের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে আলভারেজকেও সেই বুনিপ মেরে ফেলে। শঙ্কর একা হয়ে পড়ে।

সে সত্যতার খোঁজে বের হয়। সে বুনিপের গুহা খুঁজে পায়। সে নিজের অজান্তেই হীরকের খনি খুঁজে পায়। সেই গুহায় সে পথ হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে কিছু পাথরের সহায়তায় সে গুহা থেকে বের হতে সক্ষম হয়। সে সাথে করে কিছু পাথর নিয়ে আসে। আসলে সেই পাথরগুলো আর কিছুই নয়, কাঁচা হীরা। সে ইতালীয় অভিযাত্রীক আত্তিলীয় গাত্তির নোট থেকে জানতে পারে, আসলে সে যেই গুহায় পৌছেছিল, সেই গুহায়ই বিখ্যাত হীরক খনি, যার জন্য জিম ও আলভারেজ তাদের জীবন হারিয়েছে।

কিন্তু সে ততক্ষণে কালাহারি মরুভূমিতে পথ হারিয়েছে। নিজের প্রাণ বাঁচানোই তখন দুষ্কর। মরুভূমিতে সে জলের অভাবে প্রায় মৃত্যুবরণ করেছিল। তার মাথার উপর শকুনেরা ঘোরাফেরা শুরু করে। পথে সিংহের সাথে তার যুদ্ধ হয়। অবশেষে এক সার্ভে টিম তাকে খুঁজে পায় এবং মুমূর্ষু অবস্থায় সলসবেরি,রোডেশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বাঁচায়।

শঙ্কর বইয়ের শেষে বলে যে সে আবার বড় দল নিয়ে এসে এই হীরক খনির সন্ধান করবে, যার জন্য আলভারেজ,কার্টার ও আত্তিলীয় জীবন দিয়েছে।

চরিত্রসমূহ সম্পাদনা

  • শঙ্কর রায় চৌধুরী - উপন্যাসের নায়ক, বাংলার এক সাধারণ গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ। সে বুদ্ধিমান, আত্মপ্রত্যয়ী এবং রোমাঞ্চইচ্ছুক।
  • ডিয়েগো আলভারেজ - পর্তুগিজ অভিযাত্রীক ও স্বর্ণসন্ধানী। সে শঙ্করের বন্ধু ও পরামর্শদাতা ছাড়াও হিরের অনুসন্ধানে তার সাথে যায়। তারা চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে রিখটারসভেলড-এর গহীনে প্রবেশ করে।
  • জিম কার্টার - ব্রিটিশ অভিযাত্রীক। প্রথমবারে সেই আলভারেজের সাথে হিরের খনীর সন্ধানে বেরিয়েছিল। কার্টার চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়ে বুনিপের হাতে মারা যায়।
  • আত্তিলিও গাত্তি - ইতালীয় অভিযাত্রীক। সে ১৮৭৯ সালে সি তে নয়টি হিরের খনী আবিষ্কার করে, কিন্তু পরবর্তীতে এক গুহায় (শঙ্কর পথ হারিয়েই আবিষ্কার করে গুহাটি) খাবার-পানি হারিয়ে মৃত্যুবরণ করে।

বিভূতিভূষণ কোনদিনও ভারতবর্ষের বাইরে পা রাখেননি। তিনি বিভিন্ন ভ্রমণ-বিষয়ক ম্যাগাজিন ও গাইড গ্রন্থ পড়েই আফ্রিকার এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে এ বর্ণনা একেবারেই যথার্থ এবং আফ্রিকার রহস্যময়তাকেই যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলচ্চিত্র সম্পাদনা

 
চলচ্চিত্রের পোস্টার।

উপন্যাসের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে প্রখ্যাত পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এর পরিচালনায় ও শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত হয় বাংলা চলচ্চিত্রের (চলচ্চিত্রটি মুক্তির সময় পর্যন্ত) সর্বাধিক বাজেট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন (US$ ১.৮৩ মিলিয়ন)) এর চলচ্চিত্র চাঁদের পাহাড়। এতে প্রধান ভূমিকা, শঙ্কর-এর চরিত্রে অভিনয় করেন দেব। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[৪] চলচ্চিত্রটি প্রচুর প্রশংসা পায় এবং সর্বকালের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়ে অল-টাইম ব্লকবাস্টার হয়।

এর সিজিআই ও ভিজ্যুয়াল এফেক্ট হলিউডবলিউড এর কথা মাথা রেখে করা হয়। দেবের প্রথম অবাণিজ্যিক চলচ্চিত্রটি তাকে এই ধরনের চলচ্চিত্রের জন্যও উপযুক্ত করে তোলে।[৫] অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন ডিয়েগো আলভারেজ চরিত্রে জেরার্ড রুডলফ, জিম কার্টার চরিত্রে মার্টিন সিটো ওটো ও শঙ্করের মা চরিত্রে লাবনী সরকার

চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ণ করা হয় ক্রুগার জাতীয় পার্ক, ড্রাকেনসবার্গের সৌধ ও কালাহারি মরুভূমিতে[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৪ 
  2. Sunīlakumāra Caṭṭopādhyāẏa (১ জানুয়ারি ১৯৯৪)। Bibhutibhushan Bandopadhyaya। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 17–। আইএসবিএন 978-81-7201-578-7। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১২ 
  3. গাফফার, আবদুল (২৩ জুন ২০২১)। হক, আনিসুল, সম্পাদক। "ইছামতীর তীর থেকে বুনিপের দেশে"কিশোর আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০২১ 
  4. "Film on Chander Pahar - Times Of India"। Articles.timesofindia.indiatimes.com। ২১ নভেম্বর ২০১২। ৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৩ 
  5. "Kamaleshwar Mukherjee's Trip To South Africa For Chander Pahar, Starring Dev"The Telegraph। Calcutta, India। ৯ জানুয়ারি ২০১৩। 
  6. "Kamaleswar's African safari"The Times of India। ২০১৩-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা