চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন।পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়।[২] ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে ।[৩] ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়।[৪] পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়, বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-কে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। [৫] এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা।
চট্টগ্রাম বন্দর | |
---|---|
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীতে। | |
অবস্থান | |
দেশ | বাংলাদেশ |
অবস্থান | চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিভাগ |
স্থানাঙ্ক | ২২°১৮′৪৭″ উত্তর ৯১°৪৮′০০″ পূর্ব / ২২.৩১৩° উত্তর ৯১.৮০০° পূর্ব |
বিস্তারিত | |
চালু | ১৮৮৭ |
পরিচালনা করে | চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ |
মালিক | বাংলাদেশ সরকার |
পোতাশ্রয়ের ধরন | কৃত্রিম নদী বন্দর ও সমুদ্র বন্দর |
উপলব্ধ নোঙরের স্থান | ৫১ |
পোতাশ্রয়ের গভীরতা | সর্বোচ্চ- ৯ মিটার (৩০ ফু) সর্বনিম্ন-৬ মিটার (২০ ফু) |
রপ্তানি দ্রব্য | তৈরি পোশাক,পাট জাত দ্রব্য, চা, চাল, ঔষধ, |
আমদানি দ্রব্য | খনিজ তেল, রাসায়নিক সার, ইষটিল যন্ত্রপাতি, পাথর, সিমেন্ট, কয়লা, |
পরিসংখ্যান | |
বার্ষিক কার্গো টন | ৪৩.৩৭ মিলিয়ন (২০১২-১৩)[১] |
বার্ষিক কন্টেইনারের আয়তন | ২ মিলিয়ন টিইইউএস (২০১৪-২০১৫) |
ওয়েবসাইট বন্দরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট |
আইনসম্পাদনা
চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৯ ধারা মোতাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃর্ক একটি শুল্ক বন্দর হিসাবে ঘোষিত। এটি আমদানী ও রপ্তানীর জন্য একটি সরকারী রুট।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসম্পাদনা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সরকারী স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যেটি চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এর শীর্ষে রয়েছে একজন চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্যের সমবায়ে গঠিত একটি বোর্ড।
অবস্থানসম্পাদনা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে অবস্থিত। এর উত্তরে অক্ষাংশ ২২° ১৮' ৪৫" উত্তর, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৪৬' ৩০" পূর্ব, দক্ষিণে অক্ষাংশ ২২° ০৮' ১৩" উত্তর, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৫০' ০০" পূর্ব।
সমুদ্র সীমাসম্পাদনা
চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্র সীমা হলো পতেঙ্গা সংকেত কেন্দ্র থেকে সমুদ্রাভিমুখে সাড়ে ৫ মাইল। আর কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে উজানে হালদা নদীর মোহনা অবধি ২৩ মাইল এলাকা চট্টগ্রাম বন্দর এর অধিকারভুক্ত এলাকা। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে উজানে ১০ মাইল পর থেকে জেটি আরম্ভ [৬]
জেটির বিবরণসম্পাদনা
স্থায়ী পাকা জেটী-১৫ টি
পন্টুন জেটি - ২ টি
বেসরকারি জেটি - ৩ টি
লাইটার জেটি - ৮ টি
মুরিং বার্থ - ১১ টি
মাল্টি পারপাস বার্থ ( কন্টেইনার জেটি) - ১২ টি
পন্টুন জেটিসহ মোট ১৭ টি জেটির মধ্যে ১৩ টি জেটিতে শোরক্রেন ও রেলওয়ে লাইনের সংযোগ আছে। ১১ টি জেটিতে রয়েছে শেড। ১৬ টি ট্রানজিড শেডের মধ্যে মোট আয়তন ১২,৩০,৮৫০ বর্গফুট। ওয়্যার হাউসের মোট আয়তন ৬,৭৭,৫৪০ বর্গফুট , মাল ধারণ ক্ষমতা ২৭,৬০০ টন। [৭][৮]
বে-টার্মিনালসম্পাদনা
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হালিশহর উপকূলে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতামুক্ত এলাকায় বে-টার্মিনালটি নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করে। এর জন্য ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। বে-টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে প্রায় ৬০০ মিটার। সমুদ্রে জেগে ওঠা চরে বে-টার্মিনালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ১৯৯০ সালের পর চরটি জেগে ওঠে। তীর থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরের চরটি নতুন একটি চ্যানেলের সৃষ্টি করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই চরকে ঘিরে সৃষ্ট চ্যানেলে টার্মিনালটি নির্মাণ করতে চায়। ড্রেজিং করে চ্যানেলটিতে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেয়া যাবে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তারা।
বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ সবগুলো জেটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশকি ৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়। বে-টার্মিনাল হলে ১০-১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বন্দরে সর্বোচ্চ ১৮শ টিইইউএস কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যায়, বে-টার্মিনালে ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
বাতিঘরসম্পাদনা
রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগরে চলন্ত জাহাজকে সংকেত প্রদর্শণের জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ও সামুদ্রিক এলাকায় ৫ টি বাতিঘর আছে।
কুতুবদিয়া বাতিঘরসম্পাদনা
১৮২২ খ্রিস্টাব্দে কর্ণফুলি মোহনার ৪০ মাইল দুরে কুতুবদিয়া দ্বীপে এটি নির্মাণ করা হয়। ক্যাপ্টেন হেয়ার এর পরিচালনায় ও ইঞ্জিনিয়ার জে.এইচ.টুগুড এর নির্দেশনায় এই বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। পাথরের ভিত্তির উপর নির্মিত এই বাতিঘরের উচ্চতা ১২১ ফুট। ১৮৪৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৪২৮ টাকা। পাকিস্তান আমলে লৌহ নির্মিত টাওয়ারের উপর আধুনিকে বাতিঘর নির্মাণ করে প্রাচীন বাতিঘরটি বাতিল করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত বাতিঘর ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়।[৯]
সেন্টমার্টিন বাতিঘরসম্পাদনা
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১৭ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
কক্সবাজার বাতিঘরসম্পাদনা
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ২১.৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
নরম্যানস পয়েন্ট বাতিঘরসম্পাদনা
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১১ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
পতেঙ্গা বাতিঘরসম্পাদনা
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত সবুজ আলো ১৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।[১০]
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Economic Importance"। Chittagong Port Authority। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৫।
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ইয়ার বুক ১৯৮০, পৃঃ১৭
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ইয়ার বুক ১৯৮০, পৃঃ১৮
- ↑ মাহবুবুল হক, চিটাগাং গাইড, পৃঃ১৫
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ইয়ার বুক ১৯৮২, পৃঃ ২১
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ , ইয়ার বুক ১৯৮১, পৃঃ১৪
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ , ইয়ার বুক ১৯৮২ , পৃঃ ২২
- ↑ বন্দর চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত (প্রবন্ধ) - জাফর ওসমান, বাংলাদেশের ইতিহাস সমিতি স্মরণিকা ১৯৮৪ , পৃঃ ২২
- ↑ বন্দর শহর চট্টগ্রাম - আব্দুল হক চৌধুরী প্রকাশকাল - ২০০৯, পৃঃ ৬৬
- ↑ বন্দর শহর চট্টগ্রাম - আব্দুল হক চৌধুরী প্রকাশকাল - ২০০৯, পৃঃ ৬৭
- ↑ আবুল মনসুর আহমেদ , বাংলাদেশ কালচার, পৃঃ ২৪৯
- ↑ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ , ইয়ার বুক ১৯৮৩, পৃঃ১৫