চক্র (যোগশাস্ত্র)

ভারতীয় ধর্মের গুপ্ত ঐতিহ্যে সূক্ষ্ম দেহের মানসিক-শক্তি কেন্দ্র

চক্র (সংস্কৃত: चक्र, IAST: cakra, পালি: চাক্কা, lit. চাকা, বৃত্ত) হল সূক্ষ্ম শরীরের বিভিন্ন কেন্দ্রবিন্দু যা বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন ধ্যানের অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়, যাকে সমষ্টিগতভাবে চিহ্নিত করা হয় তন্ত্র হিসাবে, বা ভারতীয় ধর্মের অভ্যন্তরীণ বা গুহ্য ঐতিহ্য, চীনা টাওবাদ, তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম, সেইসাথে জাপানি গুহ্য বৌদ্ধধর্ম হিসেবে, এবং যা উত্তরাধুনিকতায়, নতুন যুগের ওষুধ এবং মূলত কার্ল জি ইয়ুঙের সহায়তার মাধ্যমে পাশ্চাত্য মননে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহীত।[২][৩][৪] এর ধারণা হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্মজৈনধর্মের প্রাথমিক ঐতিহ্যের মধ্যে পাওয়া যায়। এরা অনুশীলনকারীর সূক্ষ্ম শরীরের কেন্দ্রবিন্দু বা কল্পিত সংযোগস্থল হিসাবে বিবেচিত।[৫] এই তত্ত্বগুলি ভারতীয় ধর্মগুলির মধ্যে পার্থক্য দেখায় — অনেক গুহ্য বৌদ্ধ গ্রন্থ ক্রমাগত পাঁচটি চক্রের উল্লেখ করে, যেখানে ভিন্ন হিন্দু সূত্রগুলি ছয়টি, এমনকি সাতটি প্রদান করে। [২][৩] তারা প্রকৃত ভৌত শরীরের মধ্যে সমাহিত বলে মনে করা হয়, এমনকি যখন মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের বা তড়িচ্চুম্বকীয় বৈচিত্রের জটিলতাসমূহের প্রসঙ্গে, সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি এবং যেগুলির প্রকার সকল ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় তথাকথিত "ক্ষেত্র" নামে পরিচিত সংশ্লেষিত গড় থেকে সরাসরি উৎপন্ন হয়, এই জটিল নাড়িতে ঘটিত। [৩][৬] কুণ্ডলিনী যোগের শ্বাস অনুশীলন, দর্শন, মুদ্রা, বাঁধা, ক্রিয়া এবং মন্ত্রগুলিতে "চক্র"-এর মাধ্যমে সূক্ষ্ম শক্তির রূপান্তরের প্রতি মনোনিবেশ করা হয়। [৫][৭]

Sapta Chakra, an early 19th-century manuscript (above) illustrates the esoteric correspondence(s) between subtle energy and Tibetan psycho-physiology.[১]

পরিভাষা সম্পাদনা

 
সাত চক্রের প্রদর্শন সহ যোগীর উদাহরণ, কাংড়া ঘরানা, ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে।

যোগশাস্ত্রে কথিত সাতটি প্রাথমিক চক্র নিম্নরূপ:

  1. মূলাধার, (সংস্কৃত: मूलाधार, Mūlādhāra) ভূমি বা মূল চক্র (মেরুদণ্ডের অন্তিম হাড় *কোক্সিক্স*)
  2. স্বাধিষ্ঠান, (সংস্কৃত: स्वाधिष्ठान, Svādhiṣṭhāna) ত্রিক চক্র (অণ্ডাশয়/পুরস্থ গ্রন্থি)
  3. মণিপুর, (সংস্কৃত: मणिपुर, Maṇipūra) সৌর স্নায়ুজাল চক্র (নাভি ক্ষেত্র)
  4. অনাহত, (সংস্কৃত: अनाहत, Anāhata) হৃদয় চক্র (হৃদয় ক্ষেত্র)
  5. বিশুদ্ধ, (সংস্কৃত: विशुद्ध, Viśuddha) কণ্ঠ চক্র (কণ্ঠ ও গর্দান ক্ষেত্র)
  6. আজ্ঞা, (সংস্কৃত: आज्ञा, Ājñā) ললাট বা তৃতীয় নেত্র (তৃতীয় নেত্র)
  7. সহস্রার, (সংস্কৃত: सहस्रार, Sahasrāra) শীর্ষ চক্র (মাথার শীর্ষে; একটি নবজাত শিশুর মাথার 'কোমল স্থান')
 
সাতটি চক্র নিচ থেকে উপরে মেরুদন্ডের সংলগ্নতায় সাজানো হয়েছে: ১. মূলাধার ২. স্বাধিষ্ঠান ৩. নাভি-মণিপুর ৪. অনাহত ৫. বিশুদ্ধি ৬. আজ্ঞা ৭. সহস্রার[৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sapta Chakra, The British Library, MS 24099
  2. Chakra: Religion, Encyclopaedia Britannica
  3. John A. Grimes (১৯৯৬)। A Concise Dictionary of Indian Philosophy: Sanskrit Terms Defined in English। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 100–101। আইএসবিএন 978-0-7914-3067-5 
  4. James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: A-M। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 137। আইএসবিএন 978-0-8239-3179-8 
  5. Constance Jones; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 102। আইএসবিএন 978-0-8160-7564-5 
  6. Wendy., Doniger,; inc., Encyclopaedia Britannica, (২০০৬-০১-০১)। Britannica encyclopedia of world religions। Encyclopaedia Britannica, Inc। আইএসবিএন 9781593394912ওসিএলসি 319493641 
  7. Robert Beer (২০০৩)। The Handbook of Tibetan Buddhist Symbols। Serindia Publications, Inc.। পৃষ্ঠা 242–243। আইএসবিএন 978-1-932476-03-3