ঘূর্ণিঝড় মোরা
প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা একটি ঘূর্ণিঝড় যা উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর সংকেত দেখাতে বলে।[১] ৩০ মে ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ কিমি বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় 'মোরা'[২]।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল) | |
---|---|
শ্রেণী ১ (স্যাফির-সিম্পসন মাপনী) | |
গঠন | ২৮ মে ২০১৭ |
বিলুপ্তি | ৩১ মে ২০১৭ |
সর্বোচ্চ গতি | ৩-মিনিট স্থিতি: ১১০ কিমি/ঘণ্টা (৭০ mph) ১-মিনিট স্থিতি: ১৫০ কিমি/ঘণ্টা (৯০ mph) দমকা বাতাস: ১৭৫ কিমি/ঘণ্টা (১১০ mph) |
সর্বনিম্ন চাপ | ৯৭৮ hPa (mbar); ২৮.৮৮ inHg |
হতাহত | 9 total (as of May 31) |
প্রভাবিত অঞ্চল | বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মায়ানমার। |
নামকরণ
সম্পাদনাথাইল্যান্ডের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে 'মোরা'।[৩] 'মোরা' শব্দটি একটি থাই শব্দ। এর ইংরেজি হচ্ছে- 'স্টার অব দ্য সি'। বাংলা করলে শব্দটির অর্থ 'সাগরের নক্ষত্র' বা 'সাগরের তারা'[৪]।
বাংলাদেশে প্রভাব
সম্পাদনাসরকারি ঘোষণা
সম্পাদনাবাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (২৯ মার্চ ২০১৭) মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ ২০১৭) সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি বয়ে যেতে পারে।[৫]
প্রাক প্রস্তুতি
সম্পাদনাদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের দায়িত্বে) গোলাম মোস্তফা ২৯ মে ২০১৭ তে বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা-উপজেলার সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পর্যাপ্ত নৌযান প্রস্তুত রাখতে জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী সমুদ্রে অবস্থানরত সব জাহাজ ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলা ও দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুত আছে। রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।[৬]
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দর বিমান ওঠা-নামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।[৭]
ক্ষয়ক্ষতি
সম্পাদনা৩০ মে ২০১৭ ভোর চারটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করে। এসব এলাকায় তখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।[৮]
কক্সবাজারে আঘাত হানার সময় বাতাসে এর গতিবেগ শুরুতে কম থাকলেও পরে সেই গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৪ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় পতেঙ্গায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার। সেন্টমার্টিন্সে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৪ কিলোমিটার এবং টেকনাফে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
আক্রান্ত জেলাসমূহে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। কক্সবাজারে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টেকনাফের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জমির ফসল এবং লবণ চাষীদের জমাকৃত লবণ নষ্ট হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসন সুত্রে কক্সবাজারে দুজন নারীসহ তিনজন এবং রাঙামাটিতে দুজন মারা গেছে।
শ্রীলঙ্কায় প্রভাব
সম্পাদনাঘূর্ণিঝড়টি গঠনের প্রাক্কালে শ্রীলঙ্কায় প্রবল বৃষ্টিপাতে বন্যা এবং ভূমিধ্বস দেখা দেয়। এর ফলে প্রায় ১৮০ জন লোক মারা গেছে।[৯] এটা বিগত ১৪ বছরের মধ্যে দ্বীপের সব থেকে খারাপ বন্যা।