ঘুড্ডি

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত ১৯৮০ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র
(ঘুড্ডি (চলচ্চিত্র) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ঘুড্ডি হচ্ছে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ১৯৮০ সালের সাদাকালো রোমান্টিক-নাট্য চলচ্চিত্র।[২] ছবিটির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক সালাহউদ্দিন জাকী নিজেই। এটি সালাহউদ্দিন জাকীর প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা।[৩] এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা এবং অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, তারিক আনাম খান, নায়লা আজাদ নূপুর, সৈয়দ হাসান ইমাম[৪] এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়।[৫] এছাড়া ছবির সকল চরিত্রে নাম তাঁদের প্রকৃত নামেই।[৬]

ঘুড্ডি
পরিচালকসৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী
রচয়িতাসৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারলাকী আখন্দ
চিত্রগ্রাহকশফিকুল ইসলাম স্বপন
সম্পাদকসাইদুল আনাম টুটুল
প্রযোজনা
কোম্পানি
সিনেমা কমিউন
পরিবেশকসিনেমা কমিউন
মুক্তি১৯ ডিসেম্বর ১৯৮০ (1980-12-19)[১]
স্থিতিকাল১৪৫ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা

ঘুড্ডি ১৯৮০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পায়। সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী এই ছবির জন্য ৬ষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা এবং শফিকুল ইসলাম স্বপন শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।[৭]

কাহিনিসংক্ষেপ সম্পাদনা

আসাদ নামক এক যুবক, ঢাকা শহরের হাতিরপুল কিংবা ফকিরাপুলের পানির ট্যাংকের কাছে একটি টিনের ঘরে বাস করে, শিক্ষিত কিন্তু বেকার এবং বাউন্ডুলে-ভবঘুরে এবং তার কাছে টাকাপয়সা প্রায় থাকেনা বললেই চলে, সকালে তার এক বন্ধুর লন্ড্রিতে সময় কাটায়, দুপুরে বন্ধুর মতিঝিলের অফিসে খায় এবং আড্ডা দেয়। বন্ধুর লন্ড্রি থেকে সে জামা নিয়ে বাইরে ঘুরতে বেরোয়, সে তার রিকশা ভাড়াও তার বন্ধুর কাছ থেকে নেয়।

আসাদ তার বন্ধুর সাথে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যায় গাড়িতে করে, যেটা তার বন্ধুরই গাড়ি, আসাদের বন্ধু হোটেলের ভেতরে চলে গেলে আসাদ গাড়ির বাইরে দাঁড়ায় এবং এক তরুণী তাকে বলে যে তার গাড়িটি বের করার জন্য আসাদের গাড়িটি সরাতে হবে, আসাদ তার বন্ধুকে গাড়ির ড্রাইভার সাজায়, বলে যে তার কাছ থেকে চাবি আনতে হবে, তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসে, দেখা যায় তরুণীটির গাড়ি স্টার্ট হচ্ছেনা, তারপর আসাদ তরুণীটিকে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ি চালিয়ে তার বন্ধুর সামনে দিয়েই চলে যায়। আসাদের বন্ধুর লন্ড্রিতে গাড়ি থামাতে বলে সে তরুণীটি, আসা গাড়ি থামায় এবং তরুণীটি কাপড় বদলে আসে। রাস্তায় এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ঐ তরুণীটির এবং সে তাকে 'ঘুড্ডি' বলে ডাকছিলো। আসাদ ঘুড্ডির বাড়ি সামনে এসে পড়লে ঘুড্ডি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করে, আসাদ মিথ্যে নাম বলে যে, 'মহাব্বাত আলী'।

ঘুড্ডি পুনরায় একদিন আসাদের বন্ধুর লন্ড্রিতে যায় এবং আসাদ তাকে অনুসরণ করতে করতে শ্যামলী সিনেমা হলে চলে যায়, তার কাছে টাকা থাকেনা। ওখানে ক্যান্টিনে পেপসি আর ভেজিটেবল রোলের বিল সে দিতে গিয়ে থতমত খায়।

এভাবে আসাদ আর ঘুড্ডি অনেক ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিতে দিতে একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়।[৮]

কুশীলব সম্পাদনা

নির্মাণ সম্পাদনা

ঘুড্ডির চিত্রসমূহ ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল। ঢাকা ছাড়াও সোনাকান্দা দুর্গ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হিমছড়িতে দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল।[৯]

সঙ্গীত সম্পাদনা

ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন লাকী আখন্দ। গীত রচনা করেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন হ্যাপী আখন্দ, শাহনাজ রহমতুল্লাহশিমুল ইউসুফলিনু বিল্লাহ

গানের তালিকা সম্পাদনা

নং.শিরোনামরচয়িতাকণ্ঠশিল্পীদৈর্ঘ্য
১."ঘুম ঘুম চোখে"এস.এম. হেদায়েতশাহনাজ রহমতুল্লাহ৪:৫০
২."যেমন নদীর বুকে নাও ভাইসা চলে"কাওসার আহমেদ চৌধুরীশিমুল ইউসুফলিনু বিল্লাহ:
৩."সখী চল না"কাওসার আহমেদ চৌধুরীহ্যাপী আখন্দ৩:৫১
৪."আবার এলো যে সন্ধ্যা"কাওসার আহমেদ চৌধুরীহ্যাপী আখন্দ৪:২১

মূল্যায়ন সম্পাদনা

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

চলচ্চিত্র সমালোচক নাজমুল হাসান দারাশিকো সাপ্তাহিক অনন্যায় এক সমালোচনায় এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে লিখেছেন, "এটি বাজারী চলচ্চিত্র নয়, তবে তা তৃপ্তিদায়ক এবং সত্যিকারের একটি বাংলাদেশী প্রেমের ছবি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে এর সংলাপ, চরিত্রায়ণ এবং ঘটনাপ্রবাহে।"[১০] বিডিনিউজের লেখক নাদির জুনাইদ ছবিটিকে "বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী ও প্রতিবাদী চলচ্চিত্র" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ছবিটি সম্পর্কে আরও বলেন "নান্দনিক নির্মাণশৈলী, রাজনৈতিক সমালোচনা, অভিনয় এবং কাহিনির অগতানুগতিকতা, বক্তব্যের গভীরতা বিভিন্ন বিচারেই ছিল সমসাময়িক বাংলাদেশী ছবি থেকে ভিন্ন। কাহিনি, নির্মাণপদ্ধতি, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রভৃতি দিক থেকে ছবিটিকে গতানুগতিক বাংলাদেশী ছবি থেকে ব্যতিক্রমী করে তোলার ক্ষেত্রে পরিচালকের সফলতার কারণে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নির্মিত বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে ঘুড্ডি অন্যতম শক্তিশালী ছবি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।"[১১]

পুরস্কার সম্পাদনা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ঘুড্ডি (১৯৮০)"বাংলা মুভি ডেটাবেজ। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "'ঘুড্ডি' উড়িয়ে শুরু হচ্ছে এশিয়ান সিনেমা রেট্রোস্পেক্টিভ"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৬-০৭-১১। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. "শিল্পকলায় চলচ্চিত্র উৎসবে 'ঘুড্ডি'"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  4. ইবনে সারওয়ার, ফাহিম (৪ জুলাই ২০১৫)। "চলচ্চিত্র কথা: মোহাব্বত আলীর ঘুড্ডি"এনটিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. "ঘুড্ডি (১৯৮০) ট্রিভিয়া"বাংলা মুভি ডেটাবেজ। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. "৭১কে সামনে নিয়ে এল শিল্পকলার 'ঘুড্ডি'"আমাদের সময়। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫। ১১ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  7. "সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী লাইফ সাপোর্টে"দৈনিক মানবজমিন। ২০১৪-০৩-১৬। ২০১৪-০৬-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ 
  8. ফাহিম ইবনে সারওয়ার (৪ জুলাই ২০১৫)। "চলচ্চিত্র কথাঃ মোহাব্বত আলীর ঘুড্ডি"এনটিভি 
  9. "এক শটে ওকে হয়েছিল অসাধারণ সে দৃশ্য"প্রথম আলো। ২০২০-১২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২০ 
  10. দারাশিকো, নাজমুল হাসান (ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)। "শত শত ঘুড্ডি চাই"দারাশিকো'স ব্লগ। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  11. জুনাইদ, নাদির (৫ নভেম্বর ২০১৪)। "ঘুড্ডি: বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী ও প্রতিবাদী চলচ্চিত্র"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২১ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা